ছেলেটিকে মনে করতে পারছি না। তবে কোথায় যেন দেখেছিলাম।
নাম বলে পরিচয় দিল। কোন . . . .
বলল- ঐযে আপনার ঐ কাজটা করে দিয়েছিলাম স্যার . . .
ও হ্যাঁ মনে পড়েছে . . .
 
স্যার, আপনার কাছে এসেছি একটা কাজ নিয়ে। আমাকে একটু হেল্প করবেন।
বললাম অবশ্যই।
বাসায় নিয়ে গেলাম।
 
ওর কাজটি করে দিচ্ছি আর দু’জনে চা খাচ্ছি- গল্প করছি।
 
মনে করতে লাগলাম-
বছর দুই আগেকার কথা।
 
প্রায় দেড়মাস ধরে করা আমার একটা কাজ ফাইনাল মানে ফিনিশিং টাচ দে’য়ার আগ মুহূর্তে আমার সাধের কম্পুটা বিগড়ে গেল। মহা চিন্তায় পড়ে গেলাম।
 
কম্পু হারা হয়ে ঘুরতে ঘুরতে একদিন একটি ছেলের সাথে পরিচয় হলো। হ্যাংলা- পাতলা। মনে হয় দিনে একবেলা কিছু একটু খায় কিংবা কোনদিন হয়তো না খেয়েও দিন পার করে দেয়। যেন ফুঁ দিলে উড়ে যাবে- পড়ে যাবে। না। অভাবের তাড়নায় না। কাজের চাপে সময়মতো খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করা হয়ে উঠেনা। ছেলেটি ভ্রাম্যমাণ ফ্রীল্যান্সার। আজ এ দোকানে তো কাল ও দোকানে। বললো- ইনকাম মোটামুটি বেশ। দু’ভাইবোনকে পড়ালেখা করাচ্ছি . . . কথা বলতে বলতে আমার অভিপ্রায়টি জানালাম। সে আমাকে একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে আমার কাজটির অর্ডার চাইল।
 
সব শুনে ছেলেটি আমার কাজটি তুলে দে’য়ার দায়িত্ব নিল। কিছুটা শংকিত থেকেই পরের দিন ডাটাগুলো তুলে দিলাম তার হাতে।
 
আসার সময় বললো- স্যার একদম চিন্তা করবেন না। আপনার কাজ আপনার মনের মতো করেই করে দেব।
 
চলে আসলাম।
 
যথা সময়ের একদিন আগে গিয়ে দেখি কাজটা কমপ্লিট ! তারচে’ বড় কথা কাজটা অনেক সুন্দর হয়েছে। যা আশা করেছিলাম তারচে’ ঢের বেশি। খুশি হয়ে ফিরে আসার সময় সামান্য একটু বখশিস দিয়ে বললাম- যে কোন সময় প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করো। পারলে সাহায্য করার চেষ্টা করব।
 
তাই হয়তো এতদিন পর আমাকে মনে করেছে।

কিছু ছবি আছে,
দেখতে পারেন- এখানে ক্লিক করে

 
জানতে চাইলাম ভালো কোথাও জয়েন করনা কেন ? তুমি যা জান তাতো এক হাজারেও কেউ জানে কি না আমি জানিনা। তোমারতো পরীক্ষাও দে’য়া লাগবেনা। কাজগুলোইতো তোমার যোগ্যতা প্রমাণ করবে !
 
দীর্ঘ একটা নিঃশাস ছেড়ে, একরাশ হতাশা ঢেলে ছেলেটি জানাল- স্যার, যারা আমার পরীক্ষা নিবে আমিতো তাদেরই কতজনকে কত কিছু শিখাই ! কিন্তু আমিতো পরীক্ষা দিতে পারিনা।
 
বললাম পরীক্ষা কেন দিতে পার না !
 
স্যার আমিতো পড়ালেখা জানি না। পড়া লেখা না জানলে, পরীক্ষায় পাশ না করলে আমাকে চাকরি দিবে কে ?
 
আরে দক্ষতা যোগ্যতা থাকলে চাকরির তোমাদের মতো প্রতিভাবান ছেলেদের চাকরির অভাব ? হাতের কাজের সাথে পড়ালেখার কী সম্পর্ক ? তুমি কি জান বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম কী ?
 
বললো জানিনা মানে !!! জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় !!!
 
হেসে দিয়ে বললাম- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আছেন যিনি ব কলম- নিজের নামটা কলম দিয়ে লিখতে পারেন না। বিশ্বাস হয় ? বললাম তাঁর অনেক ছাত্র পিএইচডি করা আছে। তাহলে তিনি কি সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নিয়েছেন ?
 
একবার তাঁর কাছে তার বাসায় গেলাম আমার জরুরি একটা কাজের জন্য আমার একটি কাগজ তৈরি করে আনতে তাঁর এক নাতীকে (আমার ক্লাসমেট) সাথে নিয়ে। শত অনুরোধ করার পরও তিনি একটা কাজ করলেনই না। রাগে দুঃখে বেরিয়ে আসার সময় ক্লাসমেটকে জিজ্ঞাস করলাম তিনি এটা করে দিলেন না কেন ? সে জবাব দিলো দাদুতো লেখতে জানেনা- পড়ালেখা জানেনা !!!
 
দাদুর দক্ষতা- অভিজ্ঞতা- প্রতিভা দেখে অমুক স্যার তাকে ধরে এনে নিজ হাতে যোগদান করিয়েছেন। তাঁর মৃত্যুর পর চাকরি ছেড়ে দিলে দাদুর ছাত্ররা তাঁকে এনে আবার চাকরি দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে।
 
আজই প্রথম জানলাম তাঁর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। বংশগত হাতের কাজ ছাড়া।
 
জানিনা স্বর্গীয় মরণ চাঁদ পাল কেমন আছেন !!!
 
বললাম- আমাদের এখানে তুমি উন্মুক্ততে ভর্তি হও।
 
বলল- পড়া লেখাই যদি করতাম স্যার, তাহলে আর এই লাইনে আসছি !!! আমি বাকী জীবন ডেস্কটপ নিয়াই কাটাতে চাই। স্যার, পড়া লেখা করলেও কোন লাভ নাই। আমার কাজের জন্য পরীক্ষ দিতে গেলে আমার কাজের- মেধার কোন মূল্যায়ন করবেনা। পরীক্ষা নিবে বাংলা ইংরেজির। কাজের বিষয়ের কোন প্রশ্নই করবেনা। তারচে’ এই ভালো আছি। আপনাদের দো’য়ায় ইনশা আল্লাহ দোকান দিয়েছি। চারটা কম্পিউটার কিনেছি। দুইজন লোক নিয়েছি . . .
 
আপনিওতো পড়ালেখা কম করেন নাই স্যার, কাজওতো কম জানেননা !!! আপনি এখানে পড়ে আছেন কেন ? আপনারতো জগন্নাত ভার্সিটিতে থাকার কথা !!! আপনারতো ইন্টারনেটে অনেক কাজ দেখি . . . অনেক ওয়েবসােইট আপনি তৈরি করেছেন . . . স্যার, শুধু কাজ জানলেই হবেনা স্যার . . .

আসলে স্যার, পরিচিত লোক না থাকলে কোথাও কোন কাজ হবেনা স্যার . . .

মনের কথাটিই বলেছ।
আইসিটি মাস্টার ট্রেইনার হওয়ার পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখি প্রশ্ন সব গণিত থেকে। যাক, ভালো কথা। ইন্টারনেটে পরীক্ষা। তা-ই এমসিকিউ। যখন পরীক্ষা তখনই রেজাল্ট। ডিজিটাল যুগ। ডিজিটাল পরীক্ষ। খাতা দেখার ঝামেলা নেই। পরীক্ষা দিয়ে বাইরে এসেই বোর্ডে রেজাল্ট পাওয়ার কথা। সেখানে রেজাল্ট প্রকাশ হয় প্রায় মাস পর। কী হয় সেখানে সন্দেহটা আমার থাকতেই পারে। যেটা শেখার জন্য পরীক্ষা দিলাম আরে সেটা ভাঙ্গিয়েইতো সংসার চালাচ্ছি প্রায় এগার বার বছর . . . C++++++ – – – – – -, Jaba- Aashba এগুলোতো শিখাচ্ছি নাইনটেনের পোলাপাইনরে !!! আর ঐটা শিখতে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল !!! তুমি আমার মাতাডা টেবিলের নিচে ঢুকায়া দেওনা ক্যারে . . . !!!
 
আরে, ওটা কিছু না।
দেখনা কম্পিউটারের উপর প্রশিক্ষণ দে’য়াতে বিদেশ পাঠায় তাদেরকে যারা, কম্পিউটার ON করার সুইচ কোনটা জানেনা। মানে তারা বিদেশ থেকে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হয়ে বুয়েটের প্রফেসর হবে। আর যারা প্রকৃতই দক্ষ তারা জানেইনা . . . জানবেইবা কেন ? তারা কি আর ঐগুলোর ধান্দায় থাকে নাকি ?
 
এ্যাই তোমার কাজ কম্প্লিট। দেখ ঠিক আছে কি না ??? ভালো করে দেখে নাও, চেক কর . . .