📖 শিক্ষক-অভিভাবকের সম্পর্ক: বর্তমান অবস্থা, কাঙ্ক্ষিত রূপ এবং উন্নয়নের পথ
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভ হলো শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্ক। এক সময় এই সম্পর্ক ছিল গভীর শ্রদ্ধা, বিশ্বাস আর পারস্পরিক দায়িত্ববোধে পরিপূর্ণ। বর্তমানে নানাবিধ কারণে এই সম্পর্কের বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো- বর্তমান পরিস্থিতি, কাঙ্ক্ষিত সম্পর্কের রূপ, কী গ্রহণ ও বর্জন করা উচিত এবং সম্পর্ক উন্নয়নে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর দায়িত্ব কেমন হওয়া দরকার।
📌 বর্তমান বাংলাদেশে শিক্ষক ও অভিভাবকের সম্পর্ক
আজকের দিনে শিক্ষক-অভিভাবকের সম্পর্ক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপূর্ব আস্থাহীনতায় ভুগছে। আগে যেখানে অভিভাবকরা শিক্ষকের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা দেখাতো, এখন অনেক সময়ই দেখা যায় শিক্ষকের ন্যায্য শাসনকেও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়।
বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়:
-
শিক্ষক শাসন করলে অভিভাবক এসে তর্ক জুড়ে দেন।
-
শিক্ষকের পরামর্শ উপেক্ষা করে অভিভাবক একতরফা সিদ্ধান্ত নেন।
-
অভিভাবকরা বিদ্যালয়ের কাজে আগ্রহ কম দেখান।
-
ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যকার দূরত্ব বেড়েছে।
-
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকের ছোট ছোট ভুলকেও ভাইরাল করে অপমান করা হয়।
ফলে শিক্ষকরা দায়িত্ব পালনে নিরুৎসাহিত হন। এভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক আবহ দুর্বল হয়ে পড়ছে।
📌 শিক্ষক-অভিভাবকের সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত?
শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষক ও অভিভাবক একে অন্যের পরিপূরক। সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে এই দুই পক্ষের সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন।
সম্পর্ক হওয়া উচিত:
-
পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত
-
উন্মুক্ত ও গঠনমূলক আলোচনা নির্ভর
-
শিক্ষকের শাসন ও পরামর্শের প্রতি সম্মান রেখে সন্তানকে শেখানো
-
সন্তানের সমস্যা ও দুর্বলতা শিক্ষককে জানানো
-
উভয় পক্ষের নিয়মিত যোগাযোগ ও মতবিনিময়
শিক্ষক ও অভিভাবক যদি একে অপরকে শত্রু মনে না করে সহযোগী ভাবে এগিয়ে যান- তবে শিক্ষার পরিবেশ অনেক সুন্দর হবে।
📌 কী কী গ্রহণ এবং বর্জন করা উচিত?
🟢 গ্রহণযোগ্য বিষয়:
-
শিক্ষকের প্রতি সম্মান
-
শিক্ষকের পরামর্শ মেনে চলা
-
সন্তানের ভুল নিয়ে শিক্ষকের সাথে আলোচনা
-
স্কুলের সকল কার্যক্রমে অভিভাবকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
-
একে অপরের অবস্থান বুঝে সহযোগিতা করা
🔴 বর্জনীয় বিষয়:
-
শিক্ষকের অপমান করা
-
সন্তানকে অকারণে পক্ষ নেওয়া
-
শিক্ষকের শাসনকে নেতিবাচকভাবে দেখা
-
সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষক অপদস্থ করা
-
একতরফা অভিযোগ তোলা
📌 সম্পর্ক উন্নয়নে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকের দায়িত্ব
📌 শিক্ষকের ভূমিকা:
-
ছাত্রের মানসিকতা বুঝে দায়িত্বশীল আচরণ করা
-
অহেতুক শাস্তি দেওয়া থেকে বিরত থাকা
-
সময়মতো অভিভাবকের সাথে সন্তানের অগ্রগতি ও সমস্যা নিয়ে আলোচনা
-
ছাত্রদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস চালানো
📌 অভিভাবকের ভূমিকা:
-
সন্তানের সমস্যা খোলামেলা শিক্ষককে জানানো
-
সন্তানের পড়াশোনা, আচরণ ও আগ্রহের বিষয়ে শিক্ষককে অবহিত রাখা
-
বিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন মেনে চলা ও সন্তানকে মান্য করানো
-
স্কুলের কার্যক্রম ও মিটিংয়ে অংশ নেওয়া
📌 ছাত্রের ভূমিকা:
-
শিক্ষক-অভিভাবকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা
-
কোনো সমস্যা হলে শিক্ষক ও অভিভাবককে জানানো
-
দায়িত্বশীল আচরণ করা
-
শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন করা
📌 বর্তমানে বাস্তব অবস্থা ও করণীয়
বর্তমানে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকের মধ্যে বিশ্বাসের অভাব দেখা দিয়েছে। পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি বেড়েছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দরকার:
-
নিয়মিত প্যারেন্টস-টিচার মিটিং
-
সন্তানের সুষ্ঠু আচরণ ও পারিবারিক শিক্ষার জোরদারকরণ
-
স্কুল কর্তৃপক্ষের নীতিনির্ধারণে অভিভাবকের অংশগ্রহণ
-
সমাজে শিক্ষকের সম্মান পুনঃস্থাপন
📌 শেষ কথা
একটি উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষক ও অভিভাবকের সম্পর্ক মজবুত হওয়া জরুরি। এ সম্পর্ক শুধু শিক্ষার্থী নয়, পুরো সমাজকে আলোকিত করে। এই বন্ধন যদি বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে- তবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করবে।
চলুন, শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থী- সবাই মিলে শ্রদ্ধা-ভালোবাসা-জবাবদিহিতা ও সম্মানবোধের ভিত্তিতে একটি সুন্দর শিক্ষাবান্ধব সমাজ গড়ে তুলি।
Leave A Comment