-মো: জামিল আহমেদ (রনি)

ভূমিকা

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্’র জন্য , তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং চিরন্তন ও নতুন নি’আমাত সমূহের জন্য । অতঃপর সলাত ও সালাম বিশ্বনাবী হযরত মুহাম্মাদ( সা .) এর উপর এবং তাঁর পরিবার – পরিজনের উপর । কথা হলো আজ পৃথিব্যপী একটি মাস’আলা নিয়ে মুসলিমদের মাঝে মতবিরোধ হচ্ছে যেই বিষয়ে অনেক সাধারন মুসলিম বিশেষ করে ইসলাম প্রেমী যুবকরা সংশয় এ ভূগে। আর আমি যেহেতু এই মাসআ’লায় আমার সমাজে প্রায় সবার চেয়ে আলাদা মতপোষন করি ও আমল করি তাই অনেকের কমন জিজ্ঞাসা আমার বা আমাদের এমন মতের ভিত্তি কী?  আর তা’হলো

বিশ্বব্যাপী একই দিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করবে  না’কি নিজ – নিজ দেশের নতুন চাঁদ অনুযায়ী সওম (রোজা) ঈদ পালন করবে।

গোটা বিশ্বের মুসলমানদের একই দিনে সিয়াম ও ঈদ পালন করা বাধ্যতামূলক 1

তাই এই মতবিরোধপূর্ণ মাস’আলা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে মহান আল্লাহ্’র নির্দেশ পালন করতে হবে । এসম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন ,
… فَإِن تَنَزَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ … )
” … যদি তোমাদের মাঝে কোনো একটি বিষয় নিয়েও মতবিরোধ হয় তাহলে তা আল্লাহ্ এবং রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও । ” [-সূরা নিসা , ৪/৫৯] এই আয়াত অনুযায়ী সকল মতবিরোধ মিটাতে হবে আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের ব্যাখ্যার আলোকে । কোনো আলিমের ফাতওয়ার আলোকে নয় । এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন ,

اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ … )
” তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার অনুসরণ করো তাছাড়া অন্যকোন অভিভাবকের অনুসরণ করো না । ” [-সূরা আ’রাফ , ৭/৩ ,] এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে , আল্লাহ্ যা অবতীর্ণ করেছেন শুধুমাত্র তাই মেনে নিতে হবে । আর আল্লাহ্’র নাযিলকৃত বিষয় ছাড়া অন্যকিছু মান্য করা যাবে না ।

আল্লাহ তা’লা আরো কঠিন ভাষায় অন্যত্র বলেছেন,

فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤمِنونَ حَتّى يُحَكِّموكَ فيما شَجَرَ بَينَهُم ثُمَّ لا يَجِدوا في أَنفُسِهِم حَرَجًا مِمّا قَضَيتَ وَيُسَلِّموا تَسليمًا

অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়। [৪:৬৫] আন নিসা

অত্র আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে শরীয়তের যেকোন বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে  মতবিরোধ দেখা দিলে তার একমাত্র সমাধান হবে আল কুরআনুল কারিম ও সহীহ হাদিস। এগুলো ব্যতীত ভিন্ন পথ ও মত তালাশ করা সুস্পষ্ট কুফুরী যার মাধ্যমে মানুষ কাফের হয়ে যায়।

মহান আল্লাহ্  অন্যত্র বলেছেন,

… وَأَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ …
” আল্লাহ্ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ( কুরআন ) এবং হিকমাহ ( হাদিস ) । ” -সূরা নিসা , ৪/১১৩
এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন , তিনি নাযিল করেছেন কুরআন এবং হাদিস তাই আমি এই ব্লগে/আর্টিকেলে  কুরআন এবং সহীহ সনদে বর্ণিত হাদিসের উদ্ধিতি ছাড়া কোনো আলিমের ফাতওয়া নিয়ে আলোচনা করিনি । তথাপিও কোনো মানুষ নির্ভুলভাবে বলতে পারবে না , তিনিই একমাত্র কুরআন এবং হাদিস সঠিকভাবে
বুঝেছেন । তাই কোনো ভাই ও বোনদের  যদি মনে হয় যে , আমার উদ্ধিতির কোনো ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে তাহলে দয়া করে কুরআন এবং সহীহ হাদিসের উদ্ধিতি দিয়ে শুধরিয়ে দিবেন । আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ অনুযায়ী চলার তৌফিক দিন । আমীন ।

আলোচ্য বিষয়ের শিরোনামসমূহঃ

  1. চাঁদ দেখে তারিখ নির্ধারণ করা
  2. সওম (রোজা ) ও ঈদ পালনের জন্য চাঁদ দেখা জরুরী
  3. কতজন মুসলিমের চাঁদ দেখা গ্রহণীয়
  4. চর্মচোখে বা প্রযুক্তি দিয়ে চাঁদ দেখা উভয় মাধ্যমেই শারী’আতে বৈধ
  5. এক অঞ্চলে নতুন চাঁদ দেখা না গেলে অন্য অঞ্চল থেকে নতুন চাঁদ দেখার সংবাদ আসলে করণীয়
  6. বিশ্বব্যাপী সকল মুসলিমের একই দিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন
  7. একই দিনে সওম ( রোজা ) এবং ঈদ পালন করা ফরজ
  8. সংশয়মূলক প্রশ্নোত্তর
  9. যারা নিজ – নিজ দেশের চাঁদ অনুযায়ী সওম ও ঈদ পালন করে থাকেন তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন 
____________________❤️❤️❤️_______________________
চাঁদ দেখে তারিখ নির্ধারণ করা

মহান আল্লাহ বলেন,

يَسْـَٔلُوْنَكَ عَنِ ٱلْأَهِلَّةِ ۖ قُلْ هِىَ مَوَٰقِيتُ لِلنَّاسِ وَٱلْحَجِّ….

“তারা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তুমি বলো, (নতুন চাঁদসমূহ) তা মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হাজ্জের সময়েরও (তারিখ) নির্ধারক।” – সূরা বাকারা, ২/১৮৯

এই আয়াতটি দ্বারা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, মানব জাতিকে চাঁদের হিসেবেই তারিখ ও হাজ্জের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

هُوَ ٱلَّذِى جَعَلَ ٱلشَّمْسَ ضِيَآءً وَٱلْقَمَرَ نُورًۭا وَقَدَّرَهُۥ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا۟ عَدَدَ ٱلسِّنِينَ وَٱلْحِسَابَ….

“তিনি সূর্যকে করেছেন দীপ্তিময় এবং চন্দ্রকে করেছেন আলোকময় এবং তার (চাঁদের) জন্য নির্ধারণ করেছেন মনজিল, যেন তোমরা জানতে পারো বছর গণনা এবং (তারিখের) হিসাব।” – সূরা ইউনুস, ১০/৫

এই আয়াতটি বলছে যে, মানবজাতিকে চাঁদের হিসেবেই বছর ও তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

শিক্ষা:

১। চাঁদের ওপর নির্ভর করে মানুষকে সময় নির্ধারণ করতে হবে। এটাই আল্লাহর বিধান।
২। চাঁদের হিসেবেই হাজ্জের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
৩। চাঁদের হিসেবেই বছর গণনা করতে হবে।

সওম (রোজা) ও ঈদ পালনের জন্য চাঁদ দেখা জরুরি

ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلَاثِينَ.

“তোমরা চাঁদ দেখে সওম (রোজা) পালন কর এবং চাঁদ দেখে ফিতরের (ঈদুল ফিতর) উদযাপন করো। যদি চাঁদ গোপন থাকে তবে ৩০ পূর্ণ করো।” [নাসাঈ, সহীহ, আরাবি মিশর ২২৪৮, ২২৫২, ২২৮৯, ২৩৩০, ই.ফা.বা. ২২৪৮; তিরমিযী, সহীহ, আরাবি রিয়াদ ৮৮৮ হা.বা. ৮৮৮, ই.ফা.বা. ৮৮৮]

আর হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلَاثِينَ، ثُمَّ أَفْطِرُوا.

“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে সওম (রোজা) পালন কর এবং চাঁদ দেখে ফিতরের (ঈদুল ফিতর) উদযাপন করো। যদি চাঁদ গোপন থাকে তবে ৩০ পূর্ণ করো। অতঃপর, ঈদুল ফিতর উদযাপন করো।’”

• বুখারী, আরাবি মিশর ১৯০৯, ত.বা. ১৯০৯, ই.ফা.বা. ১৯০৯, আ.হ. ১৪৯৭
• মুসলিম, জা.বা. ১০৮০, ত.বা. ১০৮০, ই.ফা.বা. ১০৮০
• নাসাঈ, সহীহ, আরাবি মিশর ২১৯৭, ২২৮৯, ২২৯২, ২৩৩০, ২৩৩১, ই.ফা.বা. ২১৯৭
• তিরমিযী, সহীহ, আরাবি রিয়াদ ৮৮৮ হা.বা. ৮৮৮, ই.ফা.বা. ৮৮৮
• ইবনে মাজাহ, আরাবি মিশর ১৬৫৪, ই.ফা.বা. ১৬৫৪, আ.হ. ১৫৫৫

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,

إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ ذَكَرَ رَمَضَانَ فَقَالَ: لَا تَصُومُوا حَتَّى تَرَوُا الْهِلَالَ وَلَا تُفْطِرُوا حَتَّى تَرَوُا فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَاقْدُرُوا لَهُ.

“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) রমজানের কথা আলোচনা করে বলেছেন, তোমরা সওম (রোজা) পালন করবে না এবং চাঁদ না দেখে ফিত্র (ঈদুল ফিতর) উদযাপন করবে না। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় (৩০) পূর্ণ করবে। [ বুখারী, আরবী মিশর ১৯০০, ১৯০৬, ১৯০৭, তা.পা. ১৯০০, ১৯০৬, ১৯০৭, ই.ফা.বা. ১৭৭৬, ১৭৮২, ১৭৮৩, আ.প্র. ১৭৬৫, ১৭৭১, ১৭৭২, মুসলিম, আ.লা. ১৭৯৫, ১৭৯৬, ১৭৯৮, ১৭৯৯, ১৮০০, নাসাঈ, সহীহ, ই.ফা.বা. ২১২৪, ২১২৫, ২১২৬,] এই হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায় যে, সওম (রোজা) এবং ঈদ পালনের জন্য চাঁদ দেখা জরুরি।
“আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত,
قال رسول الله احصوا هلال شعبان لرمضان.
রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা রমজান মাস নির্ধারণের জন্য শা’বানের চাঁদের হিসাব রাখো।” -[তিরমিযী, হাসান, আরবী রিয়াদ, ৬৮৭, হু.মা. ৬৮৭, ই.ফা.বা. ৬৮৪] এই হাদীসটি থেকেও বুঝা যায় যে, রমজান সঠিকভাবে পাওয়ার জন্য তার আগের মাসের চাঁদেরও হিসাব রাখতে হবে।
শিক্ষা:
১. সওম (রোজা) ও ঈদ পালনের জন্য চাঁদ দেখা শর্ত।
২. রমজান মাস সঠিক সময়ে পাওয়ার জন্য শা’বানের চাঁদের হিসাব রাখা জরুরি।

কতজন মুসলিমের চাঁদ দেখা গ্রহণীয়ঃ

আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
ان رسول الله ﷺ فان شاهدان فصوموا وافطروا
“নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যদি তোমাদের দুজন সাক্ষ্য দেয় যে, তারা (নতুন) চাঁদ দেখেছে তাহলে তোমরা সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করো।” -[নাসাঈ, সহীহ, আরবী মিশর ২১১৬, ই.ফা.বা. ২১২০] এই হাদিসটি থেকে বুঝা যায় যে, যদি দু’জন মুসলিম রমজানের বা শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখেছে বলে সাক্ষ্য দেয়, তাহলে তা সকল মুসলিমের জন্য প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ দু’জন মুসলিম নতুন চাঁদের সাক্ষ্য দিলেই তা অনুযায়ী সকল মুসলিম সওম (রোজা) এবং ঈদ পালন করবে।
حدثنا حسين بن الحارث الجدلى من جديلة قيس ان امير مكة خطب ثم قال عهد الينا رسول الله الله ان ننسك للرؤيته فان لم نره وشهد عدل نسكنا بشاهد هما فسالت الحارث من امير مكة قال لا ادرى ثم لقينى بعد فقال هو الحارث بن حاطب اخو محمد بن حاطب ثم قال الامير ان فيكم من هو اعلم بالله ورسوله منى وشهد هذا من رسول الله واو ما بيده الى رجل قال الحسين فقلت لشيخ الى جنبى من هذا الذى او ما اليه الامير قال هذا عبد الله بن عمر وصدق كان اعلم بالله منه فقال ذالك امرنا رسول الله
“হুসাইন ইবনুল হারিস আল-জাদালী (রহ.) সূত্রে বর্ণিত, একদা মক্কার আমীর ভাষণ প্রদানের সময় বলেন যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে চাঁদ দেখে হাজ্জের সময় নির্ধারণ করতে বলেছেন। যদি চাঁদ না দেখি তাহলে নিষ্ঠাবান দু’জন ব্যক্তির (চাঁদ দেখার) সাক্ষ্যের ভিত্তিতে যেন আমাদের হাজ্জ পালন করি। আবু মালিক বলেন, আমি হুসাইন ইবনুল হারিস (রহ.)কে জিজ্ঞেস করি, মক্কার আমীর কে? তিনি বললেন আমার জানা নেই।

পরবর্তীতে তাঁর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বলেন, মক্কার আমীর হলেন মুহাম্মাদ ইবনুল হাতিবের ভাই হারিস ইবনুল হাতিব। অতঃপর উক্ত আমীর বললেন, তোমাদের মাঝে এমন একজন আছেন যিনি আমার চেয়েও আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে অধিক জানেন। আর তিনিই একথাটি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে সাক্ষ্য দিয়েছেন। একথা বলে তিনি একজন লোকের দিকে ইঙ্গিত করলেন। হুসাইন (রহ.) বলেন, আমার পাশে বসা এক বৃদ্ধ লোককে জিজ্ঞেস করলাম, আমীরের ইঙ্গিতকৃত এই লোকটি কে? তিনি বললেন, আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমার (রাঃ)। তিনি যে, বলেছেন উনি (ইবনে ওমার (রাঃ)) আমার চেয়েও অধিক জ্ঞাত এবং তাও সঠিক (কথা)। এরপর আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে উক্ত নির্দেশ দিয়েছেন। -[আবু দাউদ, সহীহ, আরবী রিয়াদ ২৩৩৮, হু.মা. ২৩৩৮, ই.ফা.বা. ২৩৩১] এই হাদিসটি থেকেও বুঝা যায় যে, চাঁদ দেখার স্বাক্ষ্য দু’জন ব্যক্তি থেকে হতে হবে।

শিক্ষা:
১. দু’জন মুসলিম নতুন চাঁদের স্বাক্ষ্য দিলেই তা সমস্ত মুসলিমকে মেনে নিতে হবে। সকল মুসলিমের চাঁদ দেখা শর্ত নয়।

চর্মচোখে বা প্রযুক্তি দিয়ে চাঁদ দেখা উভয় মাধ্যমই শারী’আতে বৈধ

আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
ان رسول الله ذكر رمضان فقال لا تصوموا حتى تروا الهلال ولا تفطروا حتى تروه فان غم عليكم فاقدروا له
“রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের কথা আলোচনা করে বললেন, চাঁদ না দেখে তোমরা সওম (রোজা) পালন করবেন না এবং চাঁদ না দেখে ফিত্র (ঈদুল ফিতর) উদযাপন করবে না। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় (৩০) পূর্ণ করবে।” [-বুখারী, আরবী মিশর ১৯০০, ১৯০৬, ১৯০৭, তা.পা. ১৯০০, ১৯০৬, ১৯০৭, ই.ফা.বা. ১৭৭৬, ১৭৮২, ১৭৮৩, আ.প্র. ১৭৬৫, ১৭৭১, ১৭৭২, মুসলিম, আ.লা. ১৭৯৫, ১৭৯৬, ১৭৯৮, ১৭৯৯, ১৮০০, নাসাঈ, সহীহ, ই.ফা.বা. ২১২৪, ২১২৫, ২১২৬,]

এখানে আরবী শব্দ “তারও” শব্দটির মাসদার رؤية “রু’ইয়াতুন” যার অর্থ দেখা। رؤية “রু’ইয়াতুন (দেখা) দিয়ে অনেকেই বুঝেছেন সরাসরি চর্মচোখে দেখা কোনো দূরবীন বা টেলিস্কোপ দ্বারা দেখ নয়। আসলে তাদের দাবী মোটেই ঠিক নয়। কারণ, رؤية “রু’ইয়াতুন” (দেখা) এই শব্দটি দিয়ে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মাধ্যমে দেখতে বলা হয়েছে। এসম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন,
أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَهُمَا ….. (২১/৩০)

“কাফিররা কি দেখে না যে, আকাশ এবং পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশেছিলো। অতঃপরঃ আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম।” -সূরা আম্বিয়া, ২১/৩০
এই আয়াতে “ইয়ার” শব্দটিও رؤية “রু’ইয়াতুন” মাসদার থেকে এসেছে যার অর্থ দেখা। কিন্তু এখানে আল্লাহ্ “ইয়ার” শব্দটি দিয়ে  সরাসরি চক্ষু দিয়ে দেখতে বলেননি। কারণ, শুধুমাত্র চর্মচোখ দিয়ে আকাশ এবং পৃথিবী মিশেছিলো তা দেখা সম্ভব নয়। আর এই দেখাটা আল্লাহ্ বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মাধ্যমে দেখতে বলেছেন। বিজ্ঞানের বিগ ব্যাংগ আবিষ্কারের আগে কেউ আকাশ এবং পৃথিবী যে ওতপ্রোতভাবে মিশেছিলো তা প্রমান পায়নি। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের পরে মানুষ তা জানতে পেরেছে।

অতএব, رؤية “রু’ইয়াতুন” (দেখা) শব্দটি দ্বারা শুধুমাত্র চর্মচোখ দিয়ে দেখতে হবে তা সঠিক নয় বরং দেখা শুধু চোখ দিয়েও হতে পারে আবার প্রযুক্তির মাধ্যমেও হতে পারে। অতএব, হাদিসটিতে যে বলা হয়েছে, “তোমরা চাঁদ দেখে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করো।” এই দেখা হবে প্রযুক্তি বা শুধুমাত্র চর্মচোখ দিয়ে।

শিক্ষা:
১। চাঁদ দেখা খালি চোখেও হতে পারে আবার প্রযুক্তির মাধ্যমেও হতে পারে।

এক অঞ্চলে নতুন চাঁদ দেখা না গেলে অন্য অঞ্চল থেকে নতুন চাঁদ দেখার সংবাদ আসলে করণীয়

আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত
قال حدثني عمومتى من الانصارى من اصحاب رسول الله ﷺ قالوا اعنى علينا هلال شوال فاصبحنا صياما فجاء ركب من اخر النهار افطروا و ان يخرجوا الى عيدهم من الغد .
“তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবী আমার কতিপয় আনসার পিতৃব্য আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, একবার শাওয়ালের নতুন চাঁদ আমাদের উপর গোপন থাকে। আমরা (পরের দিন) সওম (রোজা) পালন করি। এমতাবস্থায়, ঐ দিনের শেষভাগে একটি কাফেলা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে গতকাল চাঁদ দেখার স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের রোজা ভাঙ্গতে নির্দেশ দিলেন এবং তার পরে দিন ঈদের সলাতের জন্য আসতে বলেছেন।” -[আবু দাউদ, সহীহ, আরবী রিয়াদ, ১১৫৩,
২৩৩৯, ই.ফা.বা. ১১৫৭, ২৩৩২, হু.মা. ১১৫৭, ২৩৩৯, ইবনে মাজাহ্, সহীহ, আরবী মিশর, ১৬৫৩, ই.ফা.বা. ১৬৫৩, আ.প্র. ১৬৫৩ (হাদিসের কথাগুলো ইবনে মাজাহ্’র ভাষ্য)]
এই হাদিসটি থেকে বুঝা যায় যে, মাদিনায় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ কেউই শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখেনি। তাই তাঁরা সকলে পরেরদিন সওম (রোজা) পালন করছিলেন। কিন্তু ঐ দিনের শেষভাগে অর্থাৎ ইফতারের কিছু সময় পূর্বে মদিনার বাহিরে থেকে একটি কাফেলা এসে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জানাল যে, তাঁরা গতকাল সন্ধায় নতুন চাঁদ দেখেছে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন জানতে পারলেন যে, তাঁরা মুসলিম তখন তিনি  সকলকে সওম (রোজা) ভাঙ্গতে নির্দেশ দিলেন।
অর্থাৎ বুঝা গেল যে, নিজ শহরে নতুন চাঁদ দেখা না গেলেও বাহিরের শহরের নতুন চাঁদ উঠার খবর আসলে তা গ্রহণ করতে হবে। কারণ, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বয়ং নিজেই অন্য শহরের নতুন চাঁদের সংবাদ গ্রহণ করে আমাদের তা শিখিয়ে দিয়েছেন।
শিক্ষা:
১. নিজ অঞ্চলে ঈদের নতুন চাঁদ দেখা না গেলে সওম (রোজা) পালন করতে হবে। কিন্তু যদি বাহিরের অঞ্চল থেকে নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাওয়া যায় তাহলে নিজ অঞ্চলের চাঁদ না দেখা গেলেও সওম (রোজা) ভেঙ্গে ফেলতে হবে। অর্থাৎ বাহিরের অঞ্চলের নতুন চাঁদ আমাদের অঞ্চলের নতুন চাঁদ হিসেবে গণ্য হবে।
২. নিজ অঞ্চলের নতুন চাঁদ দেখা না গেলে অন্য অঞ্চলের নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ আসলে তা গ্রহণ করা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিয়ম।
বিশ্বব্যাপী সকল মুসলিমের একই দিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন
আয়েশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
قالت قال رسول الله ﷺ الفطر يوم يفطر الناس والاضحى يوم يضح الناس.
“রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ঈদুল ফিতর হলো ঐ একদিন যেদিন সকল
মানুষ ঈদুল ফিত্র উদযাপন করে থাকে এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঐ একদিন যেদিন সকল মানুষ ঈদুল আযহা পালন করে থাকে।” -[তিরমিযী, সহীহ, আরবী রিয়াদ, ৮০২, হু.মা. ৮০২, ই.ফা.বা. ৮০০]
এই হাদিসে يوم “ইয়াওমা” শব্দটি একবচন, যার অর্থ একদিন। আর الناس “আন্নাসু” শব্দটি انسان “ইনসান” শব্দের বহুবচন হওয়ায় সকল মানুষ তথা সকল মুসলিমদের বোঝানো হয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ্ বলেন,
يَتَأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ … ﴿٤/١﴾
“হে মানবজাতি তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো।” -সূরা নিসা, ৪/১
এই আয়াতটিতেও الناس “আন্নাসু” শব্দটির দ্বারা সকল মানুষকে বুঝানো হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে হাদিসটিতেও الناس “আন্নাসু” শব্দটি দ্বারা সকল মানুষকে অর্থাৎ সকল মুসলিমকে বলা হয়েছে।
অর্থাৎ হাদিসটিতে বলা হয়েছে যে, সকল মানুষ (মুসলিম) একই দিনে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা (কুরবানীর ঈদ) পালন করবে। যদি ভিন্ন- ভিন্ন দিনে ঈদুল ফিত্র বা ঈদুল আযহা পালন করা শারীআহ্’র বিধান হতো তাহলে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) يوم “ইয়াওমা” শব্দটি অর্থাৎ একবচন এর পরিবর্তে ایام “আইয়্যাম” বহুবচন শব্দ ব্যবহার করতেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) يوم “ইয়াওমা” শব্দটি একবচন ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, সকল মুসলিমকে একই দিনে ঈদ পালন করতে হবে। যেমন: মহান আল্লাহ্ বলেন,
يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ ﴿৬﴾
“সেদিন ভূমিকম্প প্রকম্পিত করবে।” -সূরা নাযিআত, ৭৯/৬
এই আয়াতে বলা হয়েছে যে, যেদিন ভূকম্পন হবে অর্থাৎ ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে। আয়াতটিতে يوم “ইয়াওমা” শব্দটি একবচন, অর্থাৎ একইদিনে পৃথিবীতে ভূকম্পন হবে। এই বিষয়টি আরো ভালোভাবে বুঝতে নিম্নোক্ত হাদিসটি লক্ষ্য করুন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
لا تقوموا الساعة الا يوم الجمعة
“জুমুআহ্’র দিনে ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে।” -মুসলিম, আ.লা. ১৪০১
এই হাদিসটি বলছে যে, জুমুআহ্’র দিনে ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে। আর এখানে আরবী শব্দ يوم “ইয়াওমা” একবচন ব্যবহৃত হয়েছে। যার অর্থ একদিন। অর্থাৎ যখন ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে তখন পৃথিবীর সকল জায়গায় জুমাবার (শুক্রবার) থাকবে অর্থাৎ বুঝে নিতে হবে যে, يوم “ইয়াওম” শব্দটি বিভিন্ন দিনকে বুঝায় না বরং, একদিনকে বুঝায়। তাই মা আয়েশাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসটি আবারও লক্ষ্য করুন,
قال رسول الله ﷺ الفطر يوم يفطر الناس والاضحى يوم يضح الناس .
“রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ঈদুল ফিতর হলো ঐ একদিন যেদিন সকল মানুষ ঈদুল ফিত্র উদযাপন করে থাকে এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঐ একদিন যেদিন সকল মানুষ ঈদুল আযহা পালন করে থাকে।” -[তিরমিযী, সহীহ, আরবী রিয়াদ, ৮০২ হু.মা. ৮০২, ই.ফা.বা. ৮০০] এই হাদিসটিতে বলা হয়েছে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা হচ্ছে সেইদিন যেদিন সকল মুসলিমগণ ঈদ উদযাপন করেন। আর হাদিসটিতে يوم “ইয়াওমা” শব্দটি একবচন ব্যবহার হওয়ায় বুঝে নিতে হবে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বুঝাচ্ছেন যে, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা সকল মুসলিম একইদিনে উদযাপন করবে।
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত,
ان النبي ﷺ قال الصوم يوم تصومون والفطر يوم تفطرون والاضحى يوم تضحون .
“নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যেদিন তোমরা সওম (রোজা) পালন কর সেদিন হলো সওম (রোজা)। যেদিন তোমরা ফিতর (ঈদুল ফিতর) পালন কর সেদিন হলো ফিতর (ঈদুল ফিতর), যেদিন তোমরা কুরবানী (ঈদুল আযহা) পালন কর সেইদিন আযহা (ঈদুল আযহা)।” -[তিরমিযী, সহীহ, আরবী রিয়াদ, ৬৯৭ হু.মা. ৬৯৭, ই.ফা.বা. ৬৯৫, ইবনে মাজাহ্, সহীহ, আরবী মিশর, ১৬৬০, ই.ফা.বা. ১৬৬০, আ.প্র. ১৬৬০]
এই হাদিসটিও পূর্বের হাদিসের মতো يوم “ইয়াওমা” একবচন শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। আর يوم “ইয়াওমা” দিয়ে একদিনকে বুঝানো হয় যা পূর্বে হাদিসের আলোকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
আর হাদিসটিতে আরবী শব্দ تصومون তোমরা সওম (রোজা) পালন কর, تفطرون তোমরা ফিতর (ঈদুল ফিতর) পালন কর, تضحون তোমরা কুরবানী (ঈদুল আযহা) পালন কর। এখানে “তোমরা” সর্বনামটি উহ্য রয়েছে। এই তোমরা কথাটি সকল মুসলিমদের বুঝানো হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ্ বলেন,
وَأَنفِقُواْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا ….. (২/১৯৫)
“তোমরা আল্লাহ্’র পথে ব্যয় কর এবং তোমরা নিজেদেরকে স্বহস্তে ধ্বংস করোনা এবং তোমরা কল্যাণকর কাজ করো।” -সূরা বাক্বারাহ্, ২/১৯৫
لَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ” ” أَنْفِقُوا এই আয়াতে “তোমরা আল্লাহ্’র পথে ব্যয় কর”, “তোমরা নিজেদেরকে স্বহস্তে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করোনা”, أَحْسِنُوا “তোমরা কল্যাণকর কাজ কর”। এই আয়াতটিতেও “তোমরা” সর্বনামটি  উহ্য রয়েছে। আর এই “তোমরা” শব্দটি সকল মুসলিমদেরকে বুঝানো হয়েছে। ঠিক তেমনি, আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসটিতে “তোমরা” সকল মুসলিমদেরকে বুঝানো হয়েছে। হাদিসটি আবারো লক্ষ্য করুন,
ان النبي ﷺ قال الصوم يوم تصومون والفطر يوم تفطرون والاضحى يوم تضحون .
“যেদিন তোমরা সওম (রোজা) পালন কর সেদিন হলো সওম (রোজা)। যেদিন তোমরা ফিতর (ঈদুল ফিতর) পালন কর সেদিন হলো ফিতর (ঈদুল ফিতর), যেদিন তোমরা কুরবানী (ঈদুল আযহা) পালন কর সেইদিন আযহা (ঈদুল আযহা)।” -[তিরমিযী, সহীহ, আরবী রিয়াদ, ৬৯৭, হু.মা. ৬৯৭, ই.ফা.বা. ৬৯৫, ইবনে মাজাহ্, সহীহ, আরবী মিশর ১৬৬০, ই.ফা.বা. ১৬৬০, আ.প্র. ১৬৬০]
অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বুঝাচ্ছেন যে, একইদিনে সকল মুসলিম সওম ও ঈদ উদযাপন করতে হবে। যদি ভিন্ন-ভিন্ন দিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করা ইসলামের বিধান হতো তাহলে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) يوم “ইয়াওমা” একবচন শব্দ ব্যবহার না করে ایام “আইয়্যাম” বহুবচন শব্দ ব্যবহার করতেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) يوم “ইয়াওমা” একবচন শব্দ ব্যবহার করে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, সকল মুসলিমগণকে একইদিনে সওম (রোজা) এবং ঈদ পালন করতে হবে।
শিক্ষা:
১. সকল মুসলিমগণকে একইদিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করতে হবে।
একইদিনে সওম (রোজা) এবং ঈদ পালন করা ফরজ
পূর্বের শিরোনামে আমরা প্রমাণ করে এসেছি যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শিক্ষা হচ্ছে একইদিনে সওম (রোজা) এবং ঈদ পালন করতে হবে। এখন যদি আমরা একইদিনে সওম (রোজা) এবং ঈদ পালন না করি, তাহলেতো রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ফায়সালাকে অমান্য করা হয়। আর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ফায়সালা অমান্য করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَن يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُّبِينًا ﴿৩৩/৩৬﴾
“আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল কোনো হুকুম প্রদান করলে কোনো মু’মিন নারী-পুরুষ সেই হুকুম অমান্য করার অধিকার রাখেনা। আর যে কেউ, আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলের হুকুম অমান্য করবে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।” [সূরা আহযাব, ৩৩/৩৬]
এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দেয়া শারী’আতের বিধান মানা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক অর্থাৎ ফরজ।
তাই যেহেতু একইদিনে সওম (রোজা) এবং ঈদ পালন করা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দেয়া শারী’আতের নিয়ম আর এই নিয়ম মেনে নেয়া আমাদের জন্য ফরজ। তাছাড়া একইদিনে সওম (রোজা) এবং ঈদ পালন করার কথা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন। এখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দেয়া শারী’আতের নিয়ম বাদ দিয়ে ভিন্ন নিয়ম উদ্ভাবন করা অর্থাৎ ভিন্ন-ভিন্ন দিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করা নিশ্চয়ই একটি বিদ’আহ্। এসম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
من احدث فى أمرنا هذا ما ليس فيه فهو رد .
“যে আমাদের দ্বীনের মাঝে এমন বিষয় উদ্ভাবন করল যা তাতে (শারী’আতে) নেই তাহলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।” -[বুখারী, আরবী মিশর ২৬৯৭, তা.পা. ২৬৯৭, ই.ফা.বা. ২৫১৪, আ.প্র. ২৫০১]
তাই ভিন্ন – ভিন্ন দিনে সওম (রোজা) এবং ঈদ পালন করা শারী’আতের অনুমোদন না পাওয়াতে এইভাবে ভিন্ন – ভিন্ন দিনে সওম (রোজা) এবং ঈদ পালন করা একটি বিদ’আহ্। আর বিদ’আহ্ থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যই ফরজ। তাই এই বিদ’আহ্ থেকে বাঁচতে হলে একইদিনে সওম (রোজা) এবং ঈদ পালন করা অবধারিত অর্থাৎ ফরজ।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত,
نهى عن صيام يومين يوم الفطر ويم النحر . ان رسول الله ﷺ
“রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুইদিন সওম (রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন, ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন।” [-বুখারী, আরবী মিশর, ১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৩, ১৯৯৫, ৫৫৭১, তা.পা. ১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৩, ১৯৯৫, ৫৫৭১, ই.ফা.বা. ১৮৬৪, ১৮৬৫, ১৮৬৬, ১৮৬৮, ৫০৬০, আ.প্র. ১৮৫১, ১৮৫২, ১৮৫৩, ১৮৫৫, ৫১৬৪ মুসলিম, আ.লা. ১৯২০, ১৯২১, ১৯২২, ১৯২৩, ১৯২৫]
যেহেতু একইদিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করার বিধান রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দিয়েছেন, তাই ভিন্ন-ভিন্ন দিনে ঈদ পালন করলেতো কাউকে না কাউকে ঈদের দিন সওম (রোজা) পালন করতে হবে। যেমন- সৌদি আরবে যেদিন ঈদ সেদিন আমাদের বাংলাদেশে আমরা সওম (রোজা) পালন করছি।
অথচ আয়েশাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত,
قالت قال رسول الله ﷺ الفطر يوم يفطر الناس والاضحى يوم يضح الناس .
“রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ঈদুল ফিতর হলো ঐ একদিন যেদিন সকল মানুষ ঈদুল ফিত্র উদযাপন করে থাকে এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঐ একদিন যেদিন সকল মানুষ ঈদুল আযহা পালন করে থাকে।” -[তিরমিযী, সহীহ, আরবী রিয়াদ ৮০২, হু.মা. ৮০২, ই.ফা.বা. ৮০০] এই হাদিসটি আমাদের সকল মুসলিমকে একইদিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করতে বলেছে, কিন্তু আমরা তা করছি না। তাই, ভিন্ন-ভিন্ন দিনে সওম পালন করলে ঈদের দিন সওম (রোজা) পালন করা হবে। আর ঈদের দিন সওম (রোজা) পালন করা হারাম। তাই, এই হারাম কর্ম থেকে  বাঁচতে হলে আমাদের জন্য একইদিনে সওম এবং ঈদ পালন করা অবধারিত হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ ফরজ হয়ে গেছে।
তাছাড়া, সকল মুসলিম একইদিনে সওম (রোজা) পালন না করলে প্রত্যেক বছর কোনো না কোনো মুসলিমের একটি করে সওম ছুটে যাচ্ছে। কারণ, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, একইদিনে সওম (রোজা) পালন করতে হবে। অথচ আমরা ভিন্ন-ভিন্ন দিনে সওম (রোজা) পালন করে থাকি। যেমন ধরুন সৌদি আরবে যেদিন প্রথম সওম (রোজা) সেইদিন আমরা বাংলাদেশীরা সওম (রোজা) পালন করিনা। বরং তার পরেরদিন বা দু’দিন পর থেকে সওম (রোজা) পালন করে থাকি। অথচ, সকল মুসলিমকে একইদিনে সওম (রোজা) পালন করার শিক্ষা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দিয়েছিলেন। আর একইদিনে সওম (রোজা) পালন না করার কারণে প্রতি বছর একটি বা দুটি করে সওম (রোজা) ছুটে যাচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহ্ বলেন,
يَتَأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ … ﴿২/১৮৩﴾
“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর সিয়াম (রোজা) ফরজ করা হয়েছে।” -[সূরা বাক্বারাহ্, ২/১৮৩]
সিয়াম পালন করা যেহেতু মহান আল্লাহ্ আমাদের জন্য ফরজ করেছেন তাই আমাদেরকে কোনো সিয়াম ছাড়া যাবে না। আল্লাহ্’র এই নির্দেশ পালন করা তখনি সম্ভব হবে যখন সকল মুসলিম একইদিনে সওম (রোজা) পালন করবে। যদি ভিন্ন-ভিন্ন দিনে সওম (রোজা) পালন করা হয় তাহলে ফরজ সওমের (রোজা) একটি বা দুটি ছুটে যাবে।  অতএব, সকল মুসলিমের একইদিনে সওম (রোজা) পালন করা ফরজ।
শিক্ষা:
১. একইদিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করা ফরজ।
২. ভিন্ন-ভিন্ন দিনে সওম ও ঈদ পালন করলে একটি বা দুটি সওম ছুটে যায়।
৩। একইদিনে সওম (রোজা) পালন না করলে হারাম দিনে সওম (রোজা) পালন হয়ে যায়। অর্থাৎ ঈদের দিন সওম (রোজা) পালন করা হয়।
৪। ভিন্ন-ভিন্ন দিনে সওম (রোজা) বা ঈদ উদযাপন করলে রসূলুল্লাহ্ (দ.) এর বিরুদ্ধাচরণ করা হয়।
৫। ভিন্ন-ভিন্ন দিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করার বিধান একটি বিদ’আহ।
সংশয়মূলক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন (১) :
اخبرنی کریب ان ام الفضل الحارث بعثته الى معاوية بالشام قال فقدمت الشام فقضية حاجتها واستهل على هلال رمضان وانا بالشام فرأينا الهلال ليلة الجمعة ثم قدمت المدينة في اخر الشهر فسانی ابن عباس ثم ذكر الهلال فقال متى رايتم الهلال ؟ فقلت راينه ليلة الجامعة فقال أانت رايته فقلت راه الناس وصامو وصام معاوية قال لكن راينه ليلة السبت فلا نزال نصوم حتى نكمل ثلاثين يوم او ناره فقلت على تكتفى برؤيته معاوية ؟ لا هكذا أمرنا رسول الله الله
কুরাইব (রহ.) হতে বর্ণিত, মুয়াবিয়া (রাঃ) এর উদ্দেশ্যে উম্মুল ফাযল বিনতুল হারিস (রাঃ) তাকে শামে (সিরিয়া) প্রেরণ করেন। কুরাইব (রহ.) বলেন সিরিয়ায় পৌঁছানোর পর আমি উম্মুল ফাযল (রাঃ) এর কাজটি শেষ করলাম। আমি সিরিয়ায় থাকাবস্থায় রমজান মাসের নতুন চাঁদ দেখতে পাওয়া গেল। আমরা জুমুয়ার রাতে (বৃহস্পতিবার রাত) চাঁদ দেখতে পেলাম। রমজানের শেষের দিকে মদীনায় ফিরে আসলাম। ইবনে আব্বাস (রাঃ) আমাকে (কুশলাদি) জিজ্ঞেস করার পর চাঁদ দেখার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বললেন কোনদিন তোমরা নতুন চাঁদ দেখতে পেয়েছিলে? আমি বললাম জুমুয়ার রাতে (বৃহস্পতিবার রাত) নতুন চাঁদ দেখতে পেয়েছি। তিনি বললেন (ইবনে আব্বাস (রাঃ) জুমুয়ার রাতে (বৃহস্পতিবার রাত) তুমি কি স্বয়ং চাঁদ দেখতে পেয়েছ? আমি বললাম লোকেরা দেখতে  পেয়েছে এবং তারা সওম (রোজা) পালন করছে এবং মুয়াবিয়া (রাঃ) ও  সাওম (রোজা) পালন করছেন।
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমরা কিন্তু  শনিবার রাতে (শুক্রবার রাতে) চাঁদ দেখেছি। অতএব, ৩০ দিন পূর্ণ না  হওয়া পর্যন্ত অথবা নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত আমরা সওম পালন করতে থাকবো। আমি বললাম (কুরাইব (রহ.) মুয়াবিয়া (রাঃ) এর সওম (রোজা)  পালন করা এবং চাঁদ দেখা আপনার জন্য কি যথেষ্ট নয়। তিনি (ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, না, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের এরূপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ” [-মুসলিম, আ.লা. ১৮১৯, আবু দাউদ, সহীহ, আরবী রিয়াদ ২৩৩২, হু.মা. ২৩৩২, ই.ফা.বা. ২৩২৬, তিরমিযী, সহীহ, আরবী রিয়াদ, ৬৯৩, হু.মা. ৬৯৩, ই.ফা.বা. ৬৯১]
এই হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, এক দেশের চাঁদ অন্য দেশের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।
উত্তর :
এই ব্যাখ্যাটি সঠিক নয়। হাদিসটির প্রতি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন, “আমি কুরাইব (রহ.) বললাম মুয়াবিয়া (রাঃ) এর সওম (রোজা) পালন করা এবং চাঁদ দেখা আপনার জন্য কি যথেষ্ট নয়। তিনি (ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, না, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের এরূপ করতেই নির্দেশ দিয়েছেন।” হাদিসটি থেকে দুটি বিষয় বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় :
১। মুয়াবিয়া (রাঃ) এর চাঁদ দেখাকে না মেনে ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, هكذا امرنا رسول الله ﷺ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে এরূপ নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে কি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুয়াবিয়া (রাঃ) এর চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন? নিশ্চয়ই না। কারণ, মুয়াবিয়া (রাঃ) একজন উঁচুমানের সাহাবী। এই ধরণের কথা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনই বলতে পারেন না।
২। তাহলে কি ইবনে আব্বাস (রাঃ) বুঝিয়েছেন যে, মদীনার বাহিরে থেকে চাঁদের সংবাদ নিয়ে আসলে সেটা গ্রহণ করতে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিষেধ করেছেন? এমন হওয়াও সম্ভব নয়। কারণ, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্বয়ং নিজেই মদীনার বাহিরের সংবাদ গ্রহণ করেছেন।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قال حدثني عمومتى من الانصارى من اصحاب رسول الله ﷺ قالوا اغنى علينا هلال شوال فاصبحنا صياما فجاء ركب من اخر النهار افطروا و ان يخرجوا الى عيدهم من الغد .
“রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবী আমার কতিপয় আনসার পিতৃব্য আমার  নিকট বর্ণনা করেছেন যে, একবার শাওয়ালের নতুন চাঁদ আমাদের উপর গোপন থাকে। আমরা (পরের দিন) সওম (রোজা) পালন করি। এমতাবস্থায়, ঐ দিনের শেষভাগে একটি কাফেলা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে বিগতকাল চাঁদ দেখার স্বাক্ষ্য প্রদান করেন। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)  আমাদের রোজা ভাঙ্গতে নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন ঈদের সলাতের  জন্য আসতে বললেন।” -[ইবনে মাজাহ্, সহীহ, আরবী মিশর ১৬৫৩, ই.ফা.বা
১৬৫৩, আ.প্র. ১৬৫৩]
রিসেলারদের জন্য আকর্ষণীয় অফার 1
এখন তাহলে বুঝা গেল ইবনে আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কোন আদেশের কথা বুঝিয়েছেন তা সুস্পষ্ট নয়। কারণ, ইবনে আব্বাস (রা.)  রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হুবহু কথাটি কি তা উল্লেখ করেননি। তাই এই হাদিস  থেকে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর  অন্য হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, রমজানের চাঁদের স্বাক্ষীও দু’জন লাগবে।
“আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
ان رسول الله ﷺ فان شاهدان فصوموا وافطروا .
“নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যদি তোমাদের দুজন স্বাক্ষ্য দেয় যে,  তারা (নতুন) চাঁদ দেখেছে তাহলে তোমরা সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করো।” [-নাসাঈ, সহীহ, আরবী মিশর ২১১৬, ই.ফা.বা ২১২০]

কুরাইব (রহ.) যেহেতু একজন ব্যক্তি যিনি সিরিয়ার চাঁদের সংবাদ মদীনায় নিয়ে এসেছিলেন আর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের চাঁদের স্বাক্ষী দু’জন লাগবে বলে শর্ত দিয়েছিলেন। তাই, ইবনে আব্বাস (রা.) মুয়াবিয়া (রা.) এর চাঁদ দেখার স্বাক্ষ্য গ্রহণ না করে বলেছেন, هكذا امرنا رسول الله ﷺ “রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে এরূপই নির্দেশ দিয়েছেন।” অর্থাৎ ইবনে আব্বাস (রা.) বুঝিয়েছেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’জন ব্যক্তির স্বাক্ষ্য গ্রহণ করতে আদেশ করেছেন, একজন ব্যক্তির নয়। যে কারণে তিনি কুরাইব (রহ.) এর স্বাক্ষটি মানলেন না। আর এভাবে বুঝ নিলেই এই হাদিসটি বুঝা সম্ভব হবে।

অতএব, এই হাদিসটি কোনোভাবেই যার যার দেশের চাঁদ অনুযায়ী সওম (রোজা) পালন করার দালিল নয়।

প্রশ্ন (২) :
ইবনে ওমার (রা.) হতে বর্ণিত,
قال تراى الناس الهلال فاخبرت رسول الله ﷺ اني رأيته فصامه وامر الناس بصيامه .
“তিনি বলেন (ইবনে ওমার (রা.)) লোকেরা রমজানের নতুন চাঁদ অন্বেষণ করছিল। আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জানালাম যে, আমি (নতুন চাঁদ) দেখেছি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেও সওম রাখলেন এবং লোকদেরকেও রমজানের সওম পালনের আদেশ দিলেন।” -[আবু দাউদ, সহীহ্, আরবী রিয়াদ ২৩৪২, হু.মা. ২৩৪২, ই.ফা.বা. ২৩৩৫]

এই হাদিসটি বলছে যে, রমজানের নতুন চাঁদ দেখার স্বাক্ষী একজন হলেও যথেষ্ট। তাহলে, আপনি কোন যুক্তিতে বলছেন যে, ইবনে আব্বাস (রা.) সিরিয়ার নতুন চাঁদ গ্রহণ করেননি একজন স্বাক্ষ্য ছিল বিধায় আর রমজানের নতুন চাঁদ দেখার স্বাক্ষী দু’জন প্রয়োজন? আপনার এই ব্যাখ্যাটি কি অযৌক্তিক নয়?

উত্তর:
না ভাই, এই ব্যাখ্যাটি অযৌক্তিক নয়। কারণ, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর قولی (যা বলেছেন) হাদিস যখন فعلی (যা করেছেন) হাদিসের বিপরীত হয় তখন قولی (যা বলেছেন) হাদিস-ই গ্রহণযোগ্য হয়। আর فعلی (যা করেছেন) হাদিসটি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্য খাস হয়ে যায়। রমজান এবং ঈদের নতুন চাঁদ দেখার স্বাক্ষী দু’জন লাগবে, এই হাদিসটি قولی (যা বলেছেন) হাদিস। আর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের নতুন চাঁদ দেখার একজনের স্বাক্ষী গ্রহণ করেছেন। এই হাদিসটি فعلی (যা করেছেন) তাই, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে যা বলেছেন আমরা তাই মানবো অর্থাৎ রমজান এবং ঈদের নতুন চাঁদ দেখার স্বাক্ষী দু’জন লাগবে। একজনের স্বাক্ষ্য মানবো না। আর একজনের নতুন চাঁদ দেখার স্বাক্ষ্য গ্রহণযোগ্যতা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্য খাস ধরতে হবে। এ বিষয়টি একটু বিস্তারিত বলছি। আবু হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত,
رسول الله ﷺ قال اذا جلس احدكم على حاجته فلا يستقبل القبلة ولا يستدبرها .
“রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা করতে বসলে কখনো যেন সে ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে না বসে।” [-মুসলিম, আ.লা. ৪৯৮, ই.ফা.বা. ৫০১, ই.সে. ৫১৭]

এই হাদিসটি বলছে যে, আমরা যেন ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা না করি। অথচ আরেকটি হাদিস বলছে,
“ইবনে ওমার (রা.) হতে বর্ণিত,
قال رقية على بية اختى حفصة فرايت رسول الله ﷺ قاعدا لحاجته مستقبل الشام مستدبر القبلة .
তিনি বলেন (ইবনে ওমার), আমি একদা আমার বোন হাফসা (রা.) এর ঘরের ছাদে উঠলাম তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রস্রাব-পায়খানায় বসা অবস্থায় দেখলাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শামের (সিরিয়া) দিকে মুখ করে এবং ক্বিবলার দিকে পীঠ করে বসে ছিলেন।” -[মুসলিম, আ.লা. ৫০০, ই.ফা.বা. ৫০৩, ই.সে. ৫১৯, নাসাঈ, সহীহ্, আরবী মিশর ২৩, হু.মা. ২৩, ই.ফা.বা. ২৩ তিরমিযী, সহীহ্, আরবী রিয়াদ ৯, ১১, হু.মা. ৯,১১, ই.ফা.বা. ৯, ১১]

এই হাদিসটি বলছে যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার ক্বিবলার দিকে পীঠ করে ইস্তেঞ্জা করছিলেন। তাই কেউ যদি বলে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ক্বিবলার দিকে পীঠ করে ইস্তেঞ্জা করেছেন তাই আমরাও ক্বিবলার দিকে পীঠ করে ইস্তেঞ্জা করতে পারবো। তার কথা কি ঠিক হবে? নিশ্চয়ই না। কারণ, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাই, এখানে ক্বিবলার দিকে পীঠ করে প্রস্রাব বা পায়খানা করার ব্যাপারে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে অনুসরণ করা যাবে না।

তাই, বুঝতে হবে যে, ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা না করা আদেশটি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর قولی কুণ্ডলী (যা বলেছেন) হাদিস। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ক্বিবলার দিকে পীঠ করে প্রস্রাব-পায়খানা করেছেন তা فعلی ফে’লী (যা করেছেন) হাদিস। আর قولی কুওলী (যা বলেছেন) হাদিসের বিপরীতে فعلی ফে’লী হাদিস আমাদের পালনীয় নয়। ঠিক তেমনি, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’জন মুসলিমের রমজানের বা ঈদের নতুন চাঁদ দেখার স্বাক্ষী নিতে বলেছেন।

এই হাদিসটি قولی কুওলী (যা বলেছেন)। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজানের নতুন চাঁদ দেখার স্বাক্ষী একজন নিয়েছেন তা ফে’লী (যা করেছেন) হাদিস। তাই, قولی কুওলী (যা বলেছেন) হাদিস বলছে দু’জন মুসলিমের নতুন চাঁদ দেখার স্বাক্ষ্য হতে হবে। এই আদেশটি-ই আমাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। আর একজন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করার বিধান রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্য খাস।

তাই বুঝতে হবে যে, ইবনে আব্বাস (রা.) কুরাইব (রহ.) এর স্বাক্ষ্য গ্রহণ না করে বলেছিলেন যে هكذا امرنا رسول الله ﷺ “রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের এই আদেশ-ই দিয়েছেন অর্থাৎ ইবনে আব্বাস (রা.) বুঝিয়েছেন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে দু’জন মুসলিমের নতুন চাঁদ দেখার স্বাক্ষ্য গ্রহণ করতে বলেছেন, একজন থেকে নয়। আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন।

প্রশ্ন (৩) :
আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত,
ان النبي ﷺ قال الصوم يوم تصومون والفطر يوم تفطرون والاضحى يوم تضحون .
“নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যেদিন তোমরা সওম (রোজা) পালন কর সেদিন হলো সওম (রোজা)। যেদিন তোমরা ফিতর (ঈদুল ফিতর) পালন কর সেদিন হলো ফিতর (ঈদুল ফিতর), যেদিন তোমরা কুরবানী (ঈদুল আযহা) পালন কর সেইদিন আযহা (ঈদুল আযহা)।” -[তিরমিযী, সহীহ, আরবী রিয়াদ ৬৯৭, হু.মা. ৬৯৭, ই.ফা.বা. ৬৯৫, ইবনে মাজাহ্, সহীহ, আরবী মিশর, ১৬৬০, ই.ফা.বা. ১৬৬০, আ.প্র. ১৬৬০]

এই হাদিসে তোমরা বলতে সকল মুসলিমদের বোঝানো হয়নি বরং স্থানীয় মুসলিমদের বোঝানো হয়েছে। যেমন, আবু আয়ুব আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
قال رسول الله الله اذا اتيتم الغائط فلا تستقبلوا القبلة بغائط ولا بول ولكن شركوا او غربوا .
“রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমরা প্রস্রাব-পায়খানাতে যাবে তখন ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করোনা বরং তোমরা পূর্ব কিংবা পশ্চিমে মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করবে।” -[বুখারী, আরবী মিশর ১৪৪, ৩৯৪, তা.পা. ১৪৪, ৩৯৪, ই.ফা.বা. ১৪৬, ৩৮৬, আ.প্র. ১৪১, ৩৮০, মুসলিম, আ.লা. ৪৯৭, ই.ফা.বা. ৫০০, ই.সে. ৫১৬, নাসাঈ, সহীহ্, আরবী মিশর ২১,২২, হু.মা. ২১,২২, ই.ফা.বা. ২১, ২২, তিরমিযী, সহীহ্ আরবী রিয়াদ ৮, হু.মা. ৮, ই.ফা.বা. ৮]

এই হাদিসে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে ফিরে প্রস্রাব-পায়খানা করো” এখানে তোমরা বলতে কি সকল মুসলিমকে বুঝানো হয়েছে? তাহলে কি, আমরা যারা বাংলাদেশী তারা কি পূর্ব-কিংবা পশ্চিম দিকে ফিরে প্রস্রাব-পায়খানা করবো? নিশ্চয়ই না। কারণ, আমাদের বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম দিকে ক্বিবলা। তাহলে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) “তোমরা” শব্দটি দ্বারা কি সকল মুসলিমদেরকে বুঝিয়েছেন না’কি স্থানীয় মুসলিমদেরকে বুঝিয়েছেন? নিশ্চয়ই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্থানীয় মুসলিমদেরকেই বুঝিয়েছেন। কারণ, মাদীনা থেকে কা’বা উত্তর দিকে তাই উত্তর কিংবা দক্ষিণ দিকে ফিরে প্রস্রাব-পায়খানা করা যাবে না। বরং পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফিরে প্রস্রাব-পায়খানা করতে হবে।

অতএব, “তোমরা” শব্দ দ্বারা সব সময় সকল মুসলিমকে বুঝায় না। ঠিক তেমনি, আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে “তোমরা” শব্দটি স্থানীয় মুসলিমদের বুঝানো হয়েছে, সকল মুসলিমকে নয়। হাদিসটি আবার লক্ষ্য করুন,
ان النبي ﷺ قال الصوم يوم تصومون والفطر يوم تفطرون والاضحى يوم تضحون .

“নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যেদিন তোমরা সওম (রোজা) পালন কর সেদিন হলো সওম (রোজা)। যেদিন তোমরা ফিতর (ঈদুল ফিতর) পালন কর সেদিন হলো ফিতর (ঈদুল ফিতর), যেদিন তোমরা কুরবানী (ঈদুল আযহা) পালন কর সেইদিন আযহা (ঈদুল আযহা)।” -[তিরমিযী, সহীহ, আরবী রিয়াদ ৬৯৭, হু.মা. ৬৯৭, ই.ফা.বা. ৬৯৫, ইবনে মাজাহ্, সহীহ, আরবী মিশর, ১৬৬০, ই.ফা.বা. ১৬৬০, আ.প্র. ১৬৬০]

উত্তর :
এই ব্যাখ্যাটি একেবারেই মনগড়া। যাদের দ্বীনি জ্ঞানের স্বল্পতা রয়েছে তারাই শুধু এভাবে হাদিসের অপব্যাখ্যা করে থাকে। হাদিসটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন,
قال رسول الله ﷺ اذا اتيتم الغائط فلا تستقبلوا القبلة بغائط ولا بول ولكن شركوا او غربوا .
“রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমরা প্রস্রাব-পায়খানাতে যাবে তখন ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করোনা বরং তোমরা পূর্ব কিংবা পশ্চিমে মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করবে।” [-বুখারী, আরবী মিশর-   ১৪৪, ৩৯৪, তা.পা. ১৪৪, ৩৯৪, ই.ফা.বা. ১৪৬, ৩৮৬, আ.প্র. ১৪১, ৩৮০, মুসলিম, আ.লা. ৪৯৭, ই.ফা.বা. ৫০০, ই.সে. ৫১৬, নাসাঈ, সহীহ্, আরবী মিশর ২১,২২, হু.মা. ২১,২২, ই.ফা.বা. ২১, ২২, তিরমিযী, সহীহ্ আরবী রিয়াদ ৮, হু.মা.৮, ই.ফা.বা. ৮]

হাদিসের প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে,
اذا اتيتم الغائط فلا تستقبلوا القبلة بغائط ولا بول
“যখন তোমরা প্রস্রাব-পায়খানা করতে যাবে তখন ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করোনা।”
তাহলে বুঝা গেল ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা না করার কথাটি সকল মুসলিমদেরকে বুঝানো হচ্ছে। হাদিসের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে।
لكن شركوا او غربوا
“বরং তোমরা পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে ফিরে প্রস্রাব-পায়খানা করো”

হাদিসের এই অংশ থেকে বুঝা যায় যে, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যেসকল মুসলিমগণকে পূর্ব-পশ্চিম দিকে পীঠ বা মুখ করে প্রস্রাব পায়খানা করতে বলেছেন তারা মূলত উত্তর বা দক্ষিণে অবস্থান করছেন। কারণ, প্রথম অংশেই বলা হয়েছে যে, “ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে প্রস্রাব পায়খানা করো না।” হাদিসের প্রথম অংশের কারণে আমরা বুঝতে পারলাম হাদিসের দ্বিতীয় অংশে “তোমরা” বলতে স্থানীয় মুসলিমগণকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদিসটি হতে আপনি কিভাবে বুঝলেন এই হাদিসটি দ্বারা “তোমরা” বলতে স্থানীয় মুসলিমগণকে বুঝানো হয়েছে! তার কোনো প্রমাণ কি আপনি নিয়ে আসতে পারবেন? ইনশাআল্লাহ্ এর প্রমাণ আপনি কখনই নিয়ে আসতে পারবেন না। আপনার বোধগম্যতার জন্য আরো একটু বিস্তারিত বলছি।

আপনি যে হাদিসটি পেশ করেছেন, তার প্রথম অংশটি লক্ষ্য করুন,
اذا اتيتم الغائط فلا تستقبلوا القبلة بغائط ولا بول
“যখন তোমরা প্রস্রাব-পায়খানা করতে যাবে তখন ক্বিবলার দিকে পীঠ বা মুখ করে প্রস্রাব-পায়খানা করো না।”[ -বুখারী, আরবী মিশর ১৪৪, ৩৯৪,  তা.পা. ১৪৪, ৩৯৪, ই.ফা.বা. ১৪৬, ৩৮৬, আ.প্র. ১৪১, ৩৮০, মুসলিম, আ.লা. ৪৯৭, ই.ফা.বা. ৫০০, ই.সে. ৫১৬, নাসাঈ, সহীহ্, আরবী মিশর ২১,২২, হু.মা. ২১, ২২, ই.ফা.বা. ২১, ২২, তিরমিযী, সহীহ্ আরবী রিয়াদ ৮, হু.মা. ৮, ই.ফা.বা. ৮ ]

এই হাদিসে “তোমরা” শব্দটি কি স্থানীয় মুসলিমদেরকে বুঝানো হয়েছে? নিশ্চয়ই না। কারণ, এই হাদিসে “তোমরা” শব্দটি স্থানীয় মুসলিমদেরকে বুঝানো হয়েছে তার কোনো প্রমাণ নেই। তাই হাদিসে “তোমরা” শব্দটি আমভাবে ধরতে হবে যে, এখানে “তোমরা” বলতে সকল মুসলিমগণকে বুঝানো হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে “তোমরা” শব্দটি স্থানীয় লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে এর কোনো প্রমাণ না থাকায় এই “তোমরা” শব্দটিকে আমভাবে ধরতে হবে। অর্থাৎ “তোমরা” শব্দ দ্বারা বুঝ নিতে হবে যে, সকল মুসলিমগণকেই বুঝানো হয়েছে।
হাদিসটি আবারো লক্ষ্য করুন,
ان النبي ﷺ قال الصوم يوم تصومون والفطر يوم تفطرون والاضحى
يوم تضحون .
“নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যেদিন তোমরা সওম (রোজা) পালন কর সেদিন হলো সওম (রোজা)। যেদিন তোমরা ফিতর (ঈদুল ফিতর) পালন কর সেদিন হলো ফিতর (ঈদুল ফিতর), যেদিন তোমরা কুরবানী (ঈদুলআযহা) পালন কর সেইদিন আযহা(ঈদুল আযহা)।” [-তিরমিযী, সহীহ, আরবী রিয়াদ ৬৯৭, হু.মা. ৬৯৭, ই.ফা.বা. ৬৯৫, ইবনে মাজাহ্, সহীহ, আরবী মিশর ১৬৬০, ই.ফা.বা. ১৬৬০, আ.প্র. ১৬৬০]

প্রশ্ন (৪) :
মদীনায় নতুন চাঁদ দেখা গেলে কি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাঠিয়েছেন? নিশ্চয়ই না। কারন, মদীনা থেকে মক্কায় যেতে প্রায় ১২/১৩ দিন সময় লাগতো। এতেইতো বুঝা যায় যে, এক অঞ্চলের নতুন চাঁদ অন্য অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য নয়।

উত্তর :

ভাই আপনার প্রশ্নের উত্তরটি আপনি নিজেই দিয়ে দিয়েছেন । আপনি নিজেই বলছেন যে , মদীনা থেকে মক্কায় যেতে প্রায় ১২ / ১৩ দিন সময় লাগতো তাহলে কিভাবে চাঁদের সংবাদ মক্কায় পৌঁছানো যাবে ? মহান আল্লাহ্ বলেন ,
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا .
” আল্লাহ্ কারোর উপর সাধ্যের অতিরিক্ত চাপিয়ে দেন না । ” -[ সূরা বাক্বারাহ্ ,২/২৮৬]

আল্লাহ্ যেখানে সাধ্যের অতিরিক্ত চাপিয়ে দেন না তাহলে আপনি কেন সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ চাপাতে চাচ্ছেন ! এই ধরণের কথাতো বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয় ।

আর বর্তমানে তো আমরা বিশ্বের সকল জায়গায় মুহূর্তের মধ্যেই নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ পৌঁছাতে সক্ষম । তাহলে আপনি কেন এই নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ সারা বিশ্বে প্রচার করবেন না । রসূলুল্লাহ্ ( ) থেকে আপনি এমন প্রমান কি আনতে পারবেন , রসূলুল্লাহ্ ( দ . ) নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ কোনো মুসলিমগণকে জানাননি অথচ ঐ সকল মুসলিমদের কাছে নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ পৌছানোর ক্ষমতা রসূলুল্লাহ্ ( ) এর ছিল ? ইনশাআল্লাহ্ , এমন কোনো প্রমাণ আপনি আনতে পারবেন না ।

আপনার বোধগম্যতার জন্য আরো একটি যুক্তি দিচ্ছি, ঢাকায় নতুন চাঁদ দেখা গেলে আপনি কেন তা চট্টগ্রামে প্রচার করছেন ?

উটের যুগে বা ঘোড়ার যুগে একদিনে সর্বোচ্চ ৪৮ মাইল পর্যন্ত যাওয়া যেত । আর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামতো প্রায় ২৬৪ কিলোমিটার অর্থাৎ প্রায় ১৬৪ মাইল । রসূলুল্লাহ্ ( ) এর যুগে এই ১৬৪ মাইল পথ অতিক্রম করতে প্রায় ৪ দিন লেগে যেত । এত দূরত্বে কেন আপনি প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন চাঁদের সংবাদ পৌঁছাচ্ছেন ? রসূলুল্লাহ্ ( ) এর যুগেতো এত দূরে কখনোই এক অঞ্চলের নতুন চাঁদের খবর অন্য অঞ্চলে পৌঁছানো সম্ভব ছিলো না । এভাবে যদি আপনি চিন্তা করেন তাহলে আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই পেয়ে যাবেন ।

যদি বলেন , চট্টগ্রামতো আমাদের দেশের অন্তর্ভূক্ত তাহলে ভাই আপনি বলুনতো দেশে সীমানা নির্ধারণ কি আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূলুল্লাহ্ (সা.) করে থাকেন ? নিশ্চয়ই না । বরং মানুষ নিজেরাই করে থাকে এক সময় এই বাংলাদেশ ভারতের অন্তর্ভূক্ত ছিলো । পরবর্তীতে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করে দেশের সীমানা নির্ধারণ করেছে । তাই এখন যদি চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে কি চট্টগ্রামের জন্য আলাদা চাঁদ কমিটি গঠিত হবে ! নিশ্চয়ই এই ধরণের অযৌক্তিক মন্তব্য আপনি করবেন না।

অতএব , দেশের সীমানা দেখা শারী’আহ্’র বিধান নয় । বরং নতুন চাঁদের সংবাদ যতদূর সম্ভব প্রচার করতে হবে এবং যে অঞ্চল পর্যন্ত নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ পৌঁছবে ততদূর পর্যন্ত ঐ নতুন চাঁদের হিসাবটি গণ্য হবে ।

প্রশ্ন ( ৫ ) :
মহান আল্লাহ্ বলেন ,
يَسْتَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ … )
” লোকেরা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে । তুমি তাদেরকে বলে দাও তা ( নতুন চাঁদসমূহ ) মানুষের জন্য সময়ের নির্ধারক এবং হাজ্জের সময়ও নির্ধারক । ” -সূরা বাক্বারাহ্ , ২/১৮৯

এই আয়াতে আল্লাহ্ । নতুন চাঁদসমূহ বলে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন । কিন্তু প্রত্যেক আরবী মাসতো একটি নতুন চাঁদ উদিত হয় তাহলে আল্লাহ্ কেন هلة । নতুন চাঁদসমূহ বলে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন । মূলতঃ একবচন ১১ নতুন চাঁদ শব্দ ব্যবহার করাই কি যুক্তি সংগত ছিলো ? না , আসলে আল্লাহ্ বুঝাতে চাচ্ছেন যে , একেক দেশে একেক দিনে নতুন চাঁদ ওঠবে । তাই এই আয়াতে মাত্র । নতুন চাঁদসমূহ বহুবচন শব্দ আল্লাহ ব্যবহার করেছেন ।
অতএব , এই আয়াত দ্বারা প্রমাণ হয়েছে যে , যার যার দেশের নতুন চাঁদ অনুযায়ী আমাদের তারিখ নির্ধারণ করতে হবে । সমগ্র বিশ্বকে একটি নতুন চাঁদ দিয়ে পরিচালনা করা যাবে না।

উত্তর :
এই ধরণের ব্যাখ্যা শুনে সত্যিই আমার বড় দুঃখ হচ্ছে!😥 আমি হাসবো নাকি কাঁদবো!  মানুষ কিভাবে এরকম জাহেলের মতো কুরআনের ব্যাখ্যা করতে পারে !
মহান আল্লাহ্ এই আয়াতটিতে هلة । নতুন চাঁদসমূহ বলে বহুবচন শব্দ
ব্যবহার করেছেন , তার কারণ হচ্ছে , আরবী মাস ১২ টি আর ১২ মাসে ১২ টি নতুন চাঁদ উদিত হবে । মহান আল্লাহ্ বলেন ,
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ …

” নিশ্চয় আল্লাহ্’র বিধানে ও গণনায় মাস ১২ টি আসমান এবং যমীন সৃষ্টির দিন থেকেই । ” -[সূরা তাওবাহ্ , ৯/৩৬] যদি আয়াতটিতে هلة । নতুন চাঁদসমূহ শব্দটি বহুবচন হওয়ায় বিভিন্ন দেশের চাঁদসমূহ ধরা হয় তাহলে আয়াতটির অর্থ হবে-
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ … )

“ লোকেরা তোমাকে নতুন চাঁদসমূহ ( বিভিন্ন দেশের নতুন চাঁদসমূহ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে । তুমি তাদেরকে বলে দাও তা ( বিভিন্ন দেশের নতুন চাঁদসমূহ ) মানুষের জন্য সময় নির্ধারক এবং হাজ্জের সময়েরও নির্ধারক । ” -[সূরা বাক্বারাহ্ , ২/১৮৯]

এখন কি আপনি বলবেন বিভিন্ন দেশের هلة । নতুন চাঁদসমূহ দিয়ে হাজ্জের সময় নির্ধারণ হয় ! নিশ্চয়ই এধরণের বিভ্রান্তমূলক ব্যাখ্যা আপনি করবেন না । মূলতঃ هلة । নতুন চাঁদসমূহ বহুবচন শব্দটি দ্বারা ১২ মাসের ১২ টি নতুন চাঁদকে বুঝানো হয়েছে । ১২ মাসের ১২ টি নতুন চাঁদের হিসাব রাখলেই হাজ্জের সঠিক সময় জানা যাবে।

অতএব , কোনোভাবেই এই আয়াতে বিভিন্ন দেশে প্রতি মাসে নতুন চাঁদ  উঠবে একথা আল্লাহ্ বলেননি ।

রিসেলারদের জন্য আকর্ষণীয় অফার

প্রশ্ন ( ৬ ) :

যদি আপনারা বলেন যে , বাংলাদেশের সূর্য অনুযায়ী সলাত , ইফতার ,সাহরী করবে এবং সৌদি আরবের মানুষ সৌদি আরবের সূর্যানুযায়ী
সলাত , ইফতার , সাহরী করবে । তাহলে বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশের চাঁদ অনুযায়ী সওম ( রোজা ) পালন করবে আর সৌদি আরবের মানুষ সৌদি আরবের চাঁদ অনুযায়ী সওম ( রোজা ) পালন করবে।
উত্তর :
এই কথাটি সঠিক নয় । কারণ , আপনি যদি বাংলাদেশকে ভালো করে লক্ষ্য করেন , তাহলে দেখতে পাবেন যে , বাংলাদেশের একেক অঞ্চলে একেক সময় সূর্যের হিসাব ভিন্ন থাকে । যেমন ধরুন , ঢাকার সাথে চট্টগ্রামের সময়ের পার্থক্য ৯ মিনিট , এখন কেউ যদি বলে চট্টগ্রামের মানুষ নিজ শহর সূর্যের সময় অনুযায়ী ইফতার , সলাত , সাহরী করে আর ঢাকা শহরের সূর্যের সময় অনুযায়ী ইফতার , সলাত , সাহরী করে তাই চট্টগ্রামের মানুষ ঢাকার নতুন চাঁদকে হিসাব করে সওম ( রোজা ) বা ঈদ পালন করতে পারবে না । এই কথার উত্তর আপনি কি দিবেন ! তাই ভাই আপনাকে বুঝতে হবে সূর্যের হিসাব আর নতুন চাঁদের হিসাব এক নয় । যে কারণে , আমাদের বাংলাদেশের সূর্যের হিসেবে সময়ের পার্থক্য থাকলেও নতুন চাঁদ দেখাকে আমরা পার্থক্য করি না । ঠিক তেমনি সৌদি বা অন্য যেকোনো দেশের সাথে সূর্যের হিসেবে সময়ের পার্থক্য থাকলেও আমরা নতুন চাঁদ দেখার পার্থক্য ঐ সকল দেশের সাথে করিনা । আশা করি উত্তরটা পেয়েছেন ।

প্রশ্ন ( ৭ ) :
যদি আমরা একইদিনে সওম বা ঈদ পালন করি তাহলেতো ভিন্ন সম্প্রদায়ের মতো একই দিনে ধর্মীয় উৎসব পালন করার দিক থেকে সামঞ্জস্য হয়ে গেল না ? যেমন ধরুন , মেরী ক্রিসমাস ডে , দূর্গাপূজা , মাঘ-ঈ পূর্ণিমা ইত্যাদি ।

এ সম্পর্কে আয়েশাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত ,
ان ابى بكر دخل عليها والنبي الله عندها يوم فطر او اضحى وعندها قينتان تغليان تقاذفت الانصار يوم بعاث فقال ابو بكر مزمار الشيطن مرتين فقال النبي دعهما يا ابا
بكر ان لكل قوم عيدا وان عيدنا هذا اليوم .
আবু বাকার ( ) ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আযহার দিনে আমাকে দেখতে এলেন , তখন নাবী ( ) আমার গৃহে অবস্থান করছিলেন ঐ সময় দু’জন বালিকা ( দফ ) বাজিয়ে গান গাইছিলো যা আনসারগণ বুয়াস যুদ্ধে গিয়েছিলেন । তখন আবু বাকার ( রা:) বললেন এটা হলো শয়তানের বাদ্যযন্ত্র । নাবী ( ) বললেন , হে আবু বাকার তাদেরকে ছেড়েদিন , কেননা প্রত্যেক ক্বাওমেরই ঈদ রয়েছে আজকের দিন হলো আমাদের ঈদ । ” [বুখারী , আরবী মিশর ৯৫২ , ৩৯৩১ , তা.পা. ৯৫২ , ৩৯৩১ , ই.ফা.বা. ৯০৪ ,৩৬৪৪ , আ.প্র . ৮৯৮ , ৩৬৪১]

এই হাদিসটিতে রসূলুল্লাহ্ ( ) বলেছেন , ” প্রত্যেক জাতির ঈদ রয়েছে আর আজকে হচ্ছে আমাদের ঈদ । ” এখন তাহলে কি আপনি বলবেন , প্রত্যেক জাতির ঈদ রয়েছে তাই আমরাও যদি ঈদ পালন করি তাহলেতো অন্যান্য জাতির সাথে আমাদের সামঞ্জস্য হয়ে যাচ্ছে ! নিশ্চয়ই না । কারণ , আল্লাহ্ – ই আমাদের ঈদের দিন অর্থাৎ উৎসবের দিন দিয়েছেন , তা অন্য জাতির সাথে সামঞ্জস্য হউক বা না হউক তা দেখার বিষয় নয় । বরং আমাদের শারী’আতে ঈদ অর্থাৎ উৎসবের দিন রয়েছে এটাই মেনে নিতে হবে । ঠিক তেমনিভাবে , একই দিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করার বিধান রসূলুল্লাহ্ ( ) দিয়েছেন । এখন তা অন্য জাতির সাথে সামঞ্জস্য হউক বা না হউক তা দেখার বিষয় নয় । বরং একই দিনের সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালনের বিধান ইসলাম দিয়েছে আর এটাই মেনে নিতে হবে ।

প্রশ্ন ( ৮ ) :
সারাবিশ্বের মুসলিমগণকে একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করা কুরআন এবং সুন্নায় বিধান রয়েছে । কিন্তু এই একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করা রাষ্ট্রীয়ভাবে হতে হবে । অর্থাৎ দেশের শাসক যদি  একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন আমরাও একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে পারবো । আর  নতুবা নয় ।

উত্তর :
এই কথাটি সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব মনগড়া । কারণ , আপনি নিজেই স্বীকার করছেন যে , একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করার বিধান কুরআন এবং সুন্নায় রয়েছে । তাহলে দেশের শাসক যদি এই কুরআন এবং সুন্না’র সিদ্ধান্ত না মেনে ভিন্ন সিদ্ধান্ত দেয় তা’কি আমাদের জন্য গ্রহণীয় ? নিশ্চয়ই না ।

এসম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ ( ) বলেছেন ,
السمع والطاعة على المرء المسلم فى ما احب وكره مالم يؤمر بمعصية اذا امر بمعصية فلا سمع ولا طاعة .
” প্রত্যেক মুসলিমের উপর ( শাসকের কথা ) শুনা এবং আনুগত্য করা অবশ্যই কর্তব্য যদিও তা তার পছন্দ বা অপছন্দ হয় । যতক্ষণ না , আল্লাহ্’র নাফরমানীর নির্দেশ দেয়া হয় । আল্লাহ্’র নাফরমানীর ব্যপারে ( শাসকের কথা ) শুনা এবং আনুগত্য করা যাবে না । ” -[বুখারী , আরবী মিশর ৭১৪৪ , ৭১৪৫ , ৭২৫৭ , তা.পা. ৭১৪৪ , ৭১৪৫ , ৭২৫৭ , ই.ফা.বা. ৬৫৫৯ , ৬৬৬০ , ৬৭৬৩ , আ.প্র . ৬৬৪৫ , ৬৬৪৬ , ৭১৪৪ , মুসলিম , আ.লা. ৪৬৫৭ , ৪৬৫৯ , ৪৬৬০ , ই.ফা.বা. ৪৬১১ , ৪৬১৩ , ৪৬১৪ , ই.সে. ৪৬১৩ , ৪৬১৫ , ৪৬১৬]
এই হাদিসটি সুস্পষ্ট ভাষায় বলছে যে , শাসক যদি আল্লাহ্’র নাফরমানীর নির্দেশ দেয় তাহলে সেই শাসকের কথা মানা যাবে না । তাহলে আল্লাহ্ বিধান পাঠালেন , একইদিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করতে হবে । আর শাসক এই বিধান না মানার জন্য যদি আদেশ করে তবে তা অবশ্যই আল্লাহ্’র নাফরমানী হবে। তাই, শাসক যদি একইদিনে সওম (রোজা) ও ঈদ পালন করার নিয়ম না মানে তাহলে আমরা শাসকের আনুগত্য করতে পারিনা। আর এই কথাটি রসূলুল্লাহ্ (সা.) আমাদেরকে বুঝিয়েছেন এভাবে যে ,
اذا امر بمعصية فلا سمع ولا طاعة .
” নাফরমানীর কাজে শাসকের কোনো শ্রবণ ও আনুগত্য নেই । ”[-মুসলিম , আ.লা. ৪৬৯৪ , ই.ফা.বা. ৪৬৪৭ , ই.সে. ৪৬৪
উম্মে সালমা ( রা . ) হতে বর্ণিত ,
يكون عليكم امرا تعرفون وتنكرون فمن انكر فقد برئ ومن كره فقد سلم ولاكن رضى وتابع .
“ রসূলুল্লাহ্ ( ) বলেছেন , তোমাদের উপর এমনসব শাসক নিযুক্ত হবে যারা ভালো – মন্দ উভয় প্রকারের কাজ করবে । সুতরাং , যে ব্যক্তি তাদের মন্দ কাজের প্রতিবাদ করলো সে দায়িত্ব হতে মুক্ত হয়ে গেল । আর যে ব্যক্তি মনে – মনে উক্ত কাজটিকে খারাপ জানলো সে ব্যক্তিও নিরাপদ হলো । আর যে ব্যক্তি তাদের কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করলো এবং তাদের আনুগত্য করলো ( সে পাপে জড়িয়ে পড়লো ) । ” [-মুসলিম , আ.লা. ৪৬৯৪ , ই.ফা.বা. ৪৬৪৭ , ই.সে. ৪৬৪৯]
এই হাদিসটি থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় , যে ব্যক্তি শাসকের মন্দ কাজের আনুগত্য করবে সে মূলত পাপে জড়িয়ে পড়লো । তাই , শাসক যদি একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন না করে যার – যার দেশের চাঁদ অনুযায়ী সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করে তাহলে অবশ্যই এই কাজটি কুরআন – সুন্নাহ্’র বিপরীত হওয়ায় মন্দ কাজ হবে । আর আমরা যদি শাসকের মন্দ কাজের আনুগত্য করি তাহলেতো আমরা পাপে জড়িয়ে পড়বো ।
অতএব , আমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহ্ অনুযায়ী একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে হবে । দেশের শাসক যদি তা না মানে তারপরেও একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে হবে ।
**উল্লেখ্য,  বাংলাদেশের কথায় ধরুন আমাদের দেশে কী মুসলিম শাসক বিদ্যমান,  এখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে কী শরীয়াহ আইন চালু আছে?  নিসন্দেহে উত্তর বলবেন না।  তাহলে ভাই কুরআন ও সহীহ হাদিসে তো ইসলামি রাষ্ট্র প্রধানকে মানতে বলা হয়েছে কোন গনতান্ত্রিক তাগুত শাসকগোষ্ঠীকে নয়। তারা তো কুরআন মাজিদ ও সহীহ হাদিস অনুযায়ী সুস্পষ্ট তাগুত/কাফের।  সূরা তাওবা-৯/৩১  ও মায়েদা-৫/৫০ নং আয়াত ও তাফসীরে ইবনে কাসিরের তাফসীর গ্রন্থ দেখতে পারেন। যাই হোক এটা আলোচনা করার জায়গা নয় শুধুমাত্র প্রসঙ্গক্রমে ইংগিত করলাম।**
প্রশ্ন ( ৯ ) :
দেশের বেশিরভাগ মানুষ নিজ দেশের নতুন চাঁদ অনুযায়ী সওম ( রোজা )ও ঈদ পালন করে থাকে । তাই , দেশের মানুষের বিপরীতে গিয়ে একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করলেতো দেশে ফেৎনাহ্ সৃষ্টি হবে । আর ফিৎনাহ্ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন,
الۡفِتۡنَۃُ اَكۡبَرُ مِنَ الۡقَتۡلِ ؕ
“ফিৎনাহ্ হত্যার চেয়েও বড় পাপ । ” [-সূরা বাক্বারাহ , ২/২১৭]
উত্তর :
ভাই , কুরআন ও সুন্নাহ্ অনুযায়ী চলাকে ফিৎনাহ্ বলেনা । বরং কুরআন ও সুন্নাহ্’র বিপরীতে আ’মাল – ই হচ্ছে ফিৎনাহ । যার – যার দেশের নতুন চাঁদ অনুযায়ী সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালনের বিধান কুরআন – সুন্নাহ্’য় নেই । বরং একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালনের বিধান ইসলাম দিয়েছে । তাই , যারা এই বিধানের বিপরীতে আ’মাল করছে অর্থাৎ যার – যার দেশের নতুন চাঁদ অনুযায়ী ঈদ পালন করছে তারাই মূলত : ফিৎনাহ্ করেছে আমরা নই । আপনাদের বোধগম্যতার জন্য আরও একটু বিস্তারিত বলছি । প্রত্যেক নাবী ও রসূল ( আ . ) যখন ইসলামের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন , তখন ঐ সব এলাকার বেশীর ভাগ লোক তা মানতে রাজি ছিল না । এখন কি আপনি বলবেন যে , এ সকল নাবী ও রসূল ( আ . ) বেশীরভাগ মানুষের বিপরীতে বক্তব্য দিয়ে ফিৎনাহ করেছে ? নিশ্চয়ই এত বড় কুফরী বিশ্বাস আপনাদের নেই ।
তাই ভাই , কুরআন ও সুন্নাহ্’র পথে চলতে গেলে বেশীরভাগ মানুষ তার বিরুদ্ধে যাবেই । সত্যের বিপরীতে মিথ্যার অনুসারীদের সংখ্যা অতীতেও বেশী ছিল , বর্তমানেও আছে , ভবিষ্যতেও থাকবে । হক – বাতিলের লড়াই চলবেই । অতএব , কুরআন ও সুন্নাহ্’র অনুযায়ী আ’মাল করলে ফিৎনা’হ হয়না , বরং কুরআন ও সুন্নাহ্’র বিপরীতে আ’মাল করলেই ফিৎনা’হ হয় । তাই আপনাদের সংশোধনের জন্য বলছি আপনারা যার যার দেশের নতুন চাঁদ অনুযায়ী সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করে কুরআন ও সুন্নাহ্’র বিপরীতে আ’মাল করে ফিৎনাহ করবেন না । কারণ ফিৎনাহ্’র সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন ,
… وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ … )
” ফিৎনাহ্ হত্যার চেয়েও বড় অপরাধ । ” -[সূরা বাক্বারাহ্ , ২/২১৭]
প্রশ্ন ( ১০ ) :
যদি সারা বিশ্বে একই সময়ে যদি সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করা সম্ভব হতো তাহলে আমরা তা পালন করতাম । কিন্তু সারা বিশ্বে একই সময়ে সাওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করা সম্ভব নয় । কারণ , এক দেশের সাথে আরেক দেশের সময়ের পার্থক্য রয়েছে । যেমন- সৌদি আরবের সাথে আমাদের দেশের সময়ের পার্থক্য ৩ ঘন্টা ।
উত্তর :
আমরা আপনাদের কখনই বলিনি একই সময়ে সারাবিশ্বের সকল মুসলিমগণকে সওম ( রোজা ) ঈদ পালন করতে হবে । বরং আমরা বলেছি একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে হবে । আর একই সময়ে আমাদের বাংলাদেশেই সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করা সম্ভব নয় । কারণ , ঢাকার সাথে চট্টগ্রামের সময়ের পার্থক্য রয়েছে প্রায় ৯ মিনিট । আর হাদিসের কথাও একই দিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে হবে , একই সময়ে নয় । হাদিসটি লক্ষ্য করুন , আবু হুরাইরাহ্ ( ) হতে বর্ণিত ,
ان النبي ﷺ قال الصوم يوم تصومون والفطر يوم تفطرون والاضحى يوم تضحون .
” নাবী (সা.) বলেছেন , যেদিন তোমরা সওম ( রোজা ) পালন কর সেদিন হলো সওম ( রোজা ) । যেদিন তোমরা ফিতর ( ঈদুল ফিতর ) পালন কর সেদিন হলো ফিতর ( ঈদুল ফিতর ) , যেদিন তোমরা কুরবানী ( ঈদুল আযহা ) পালন কর সেইদিন আযহা ( ঈদুল আযহা ) । ” -[তিরমিযী , সহীহ ,আরবী রিয়াদ , ৬৯৭ হু.মা. ৬৯৭ , ই.ফা.বা. ৬৯৫ , ইবনে মাজাহ্ , সহীহ , আরবী মিশর , ১৬৬০ , ই.ফা.বা. ১৬৬০ , আ.প্র . ১৬৬০]
প্রশ্ন ( ১১ ) :
যদি আপনারা বলেন যে , একইদিনে সারা বিশ্বে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে হবে । তাহলে বলুন , সৌদি আরবে সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ দেখা  গেলে তা যদি ১ ঘন্টার মধ্যে সারা বিশ্বে প্রচার করা হয় ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের , ড্যানেডিন শহরে ফজরের সলাতের সময় হয়ে গেছে ।কারণ , সৌদি আরবের সাথে নিউজিল্যান্ডের ড্যানেডিন শহরের সময়ের পার্থক্য হচ্ছে ১০ ঘন্টা । এখন নিউজিল্যান্ডের ড্যানেডিন শহরের মুসলিমগণ সৌদি আরবের সাথে একইদিনে কিভাবে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করবে ?
উত্তর :
ভাই আপনি যদি ৫ মিনিটের মধ্যে যদি সারা বিশ্বে সৌদি আরবে নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ প্রচার করে দেন তাহলেইতো নিউজিল্যান্ডের ড্যানেডিন শহরের মুসলিমগণ সারা বিশ্বের মুসলিমদের সাথে একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে পারবেন । আর আপনি যদি তা প্রচার করতে না পারেন তাহলে নিউজিল্যান্ডের ড্যানেডিন শহরের মুসলিমগণ নতুন চাঁদের সংবাদ না পাওয়ার কারণে একটি সওম ( রোজা ) রমজানের পরে কাযা আদায় করে নিবেন ।
এবিষয়টি বুঝতে নিম্নোক্ত হাদিসটি লক্ষ্য করুন , আনাস ইবনু মালিক ( ) হতে বর্ণিত,
قال حدثني عمومتي من الانصارى من اصحاب رسول الله ﷺ قالوا اغنى علينا هلال شوال فاصبحنا صياما فجاء ركب من اخر النهار افطروا و ان يخرجوا الى عيدهم من الغد .
” তিনি বলেন , রসূলুল্লাহ্ ( ) এর সাহাবী আমার কতিপয় আনসার পিতৃব্য আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে , একবার শাওয়ালের নতুন চাঁদ আমাদের উপর গোপন থাকে । আমরা ( পরের দিন ) সওম ( রোজা ) পালন করি । এমতাবস্থায় , ঐ দিনের শেষভাগে একটি কাফেলা নাবী ( ) এর কাছে এসে বিগতকাল চাঁদ দেখার স্বাক্ষ্য প্রদান করেন । তখন রসূলুল্লাহ্ (সা: ) আমাদের রোজা ভাঙ্গতে নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন ঈদের সলাতের জন্য আসতে বলেছেন । ” [-আবু দাউদ , সহীহ , আরবী রিয়াদ , ১১৫৩ , ২৩৩৯ ,ই.ফা.বা. ১১৫৭ , ২৩৩২ , হু.মা. ১১৫৭ , ২৩৩৯ , ইবনে মাজাহ্ , সহীহ , আরবী মিশর , ১৬৫৩ , ই.ফা.বা. ১৬৫৩ , আ.প্র . ১৬৫৩ ( হাদিসের কথাগুলো ইবনে মাজাহ্’র ভাষ্য )]
এই হাদিসটির প্রতি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন , রসূলুল্লাহ্ (সা: ) ও সাহাবীগণ শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখতে না পেয়ে ঈদের দিন সওম ( রোজা )পালন করছিলেন । কিন্তু ঐ দিনের শেষভাগে মদিনার বাহিরে থেকে একটি মুসলিম কাফেলা থেকে যখন তিনি ( ) জানতে পারলেন তাঁরা ( রা . ) শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখেছেন , তখন রসূলুল্লাহ্ (সা.) নিজেতো সওম ( রোজা ) ভঙ্গ করলেনই এবং সাহাবাদেরকেও আদেশ দিলেন সওম ভঙ্গ করার জন্য । তাহলে একইভাবে কোনো অঞ্চল , শহর বা দেশের লোক যদি নতুন চাঁদের সংবাদ না পায় তাহলে উল্লেখিত হাদিস অনুযায়ী নিজ – নিজ অঞ্চল, শহর বা দেশের নতুন চাঁদ অনুযায়ী চলবে । কিন্তু যখনি বাহিরের অঞ্চল , শহর বা দেশ থেকে নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবে তখন উল্লেখিত হাদিস অনুযায়ী নিজ অঞ্চল, শহর বা দেশের চাঁদ অনুযায়ী মাস হিসাব করবে না । বরং যে অঞ্চল থেকে নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ আসবে তা সাথে – সাথে গ্রহণ করে নিতে হবে । ঠিক তেমনিভাবে নিউজিল্যান্ডের ড্যানেডিন শহরের মুসলিমগণ যদি নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ না পায় তাহলে নিজ দেশের নতুন চাঁদের হিসেব করবে । আর যখনি জানতে পারবে অন্য দেশে তাদের আগেই নতুন চাঁদ উঠেছে তখনি ঐ নতুন চাঁদ অনুযায়ী মাসের হিসেব করবে এবং ছুটে সওম ( রোজা ) টি ঈদের পরে আদায় করে নিবে ।
প্রশ্ন ( ১২ ) :
ইবনে ওমার ( ) হতে বর্ণিত ,
عن النبي ﷺ انه قال انا امة امية لا نكتب ولا نحسب الشهر هكذا وهكذا يعنى مرة تسعة وعشرين ومرة ثلاثين .
” নাবী ( ) বলেছেন , আমরা উম্মী জাতি আমরা লিখিনা হিসাবও করিনা । মাস এরূপ অর্থাৎ কখনো ২৯ দিন হয় আবার কখনো ৩০ দিন হয়ে থাকে । ” [-বুখারী , আরবী মিশর , ১৯১৩ , তা.পা. ১৯১৩ , ই.ফা.বা. ১৭৮৯ ,আ.প্র . ১৭৭৮]
এই হাদিসটি রসূলুল্লাহ্ ( ) বলেছিলেন , জোতিষশাস্ত্র থেকে সাহাবীগণকে ফিরিয়ে রাখার জন্য । তাই আমরা জ্যোতিষশাস্ত্রের মতো চাঁদের হিসেব করবো না । বরং আমরা চর্মচোখে নতুন চাঁদ দেখাকেই প্রাধান্য দিব ।
উত্তর :
আমরাও জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর বিশ্বাসী নই । বরং আমরা জ্যোতির্বিদ্যার উপর বিশ্বাসী । রসূলুল্লাহ্ ( ) জ্যোতিষশাস্ত্রকে হারাম করেছেন , জ্যোতির্বিদ্যাকে নয় । জ্যোতিষশাস্ত্রকে ইংরেজীতে Astrology“ এ্যাস্ট্রোলজি ” এবং আরবীতে বলা হয় علم التنجيم ” ইলমুত তানজীম ” ।আর জ্যোতির্বিদ্যাকে ইংরেজীতে Astronomy “ এ্যাস্ট্রোনোমি ” এবং আরবীতে علم الفلك ” ইলমুল ফুলক্ ” বলা হয় । জ্যোতির্বিদ্যা এবং জ্যোতিষশাস্ত্রকে একইরকম ভাবার কোনো সুযোগ নেই । এ বিষয়টি বুঝতে নিম্নোক্ত আয়াতটি লক্ষ্য করুন ।
মহান আল্লাহ্ বলেন ,
صلے أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَهُمَا …. )
” কাফিররা কি দেখে না যে , আকাশ এবং পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে
মিশেছিলো । অতপরঃ আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম । ”[ -সূরা আম্বিয়া ,২১/৩০]
এই আয়াতে আল্লাহ্ কাফিরদের বলেছেন আকাশ ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশেছিলো তা’কি তারা দেখে না অর্থাৎ গবেষণা করেনা ? এই কথাটি দ্বারা কি আল্লাহ্ কাফিরদেরকে জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার কথা বলেছেন ? নিশ্চয়ই না । বরং আল্লাহ্ কাফিরদেরকে জ্যোতির্বিদ্যার মাধ্যমে গবেষণা করতে বলেছেন । তাই ভাই জ্যোতিষশাস্ত্রকে এবং জ্যোতির্বিদ্যাকে একরকম ভাবার কোনোই সুযোগ নেই । অতএব , প্রযুক্তির মাধ্যমেও নতুন চাঁদের হিসেব করা শারী’আতে বৈধ ।
যারা নিজ – নিজ দেশের নতুন চাঁদ অনুযায়ী সওম ও ঈদ পালন করে থাকেন তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন ?
প্রশ্ন ( ১ ) :
দেশের সীমানা কতটুকু হবে তা কুরআন এবং সুন্নাহ্ অনুযায়ী পেশ করবেন ? কোনো আলিমের বক্তব্য বা ফাতওয়া গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ , মহান আল্লাহ্ বলেছেন ,
اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ … )
” তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়ছে তা মেনে চলো এবং তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যকাউকে অভিভাবক মেনোনা । ” [-সূরা আ’রাফ , ৭/৩]
প্রশ্ন ( ২ ) :
রসূলুল্লাহ্ ( ) সরাসরি বলেছেন , একইদিনে বিশ্বের সকল মুসলিম সওম( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে হবে বুঝিয়েছেন । [তিরমিযী , সহীহ , আরবী রিয়াদ , ৮০২ , হু.মা. ৮০২ এবং তিরমিযী , সহীহ , আরবী রিয়াদ , ৬৯৭, হু.মা. ৬৯৭ , ইবনে মাজাহ্ , সহীহ , আরবী মিশর , ১৬৬০ ] এই হাদিসের কি ব্যাখ্যা আপনারা দিবেন ?
প্রশ্ন ( ৩ ) :
নিজ – নিজ দেশের নতুন চাঁদ অনুযায়ী সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে হবে এর স্বপক্ষে সরাসরি আল্লাহ্’র কিতাব থেকে বা রসূলুল্লাহ্ ( সা:) এর হাদিস থেকে দালিল পেশ করবেন ? যেমনিভাবে আমরা পেশ করেছি ।
প্রশ্ন ( ৪ ) :
ইবনে আব্বাস ( ১ ) সিরিয়ার নতুন চাঁদ গ্রহণ না করার কারণ , হিসেবে আমরা যে ব্যাখ্যা দিয়েছি তা যদি না মেনে থাকেন তাহলে তা কেন মানেন না তা দালিলসহ ব্যাখ্যা দিবেন ? যেমনিভাবে আমরা দিয়েছি ।
প্রশ্ন ( ৫ ) :
রসূলুল্লাহ্ ( ) এর যুগে এক অঞ্চলের নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ একদিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৮ মাইল পর্যন্ত পৌঁছানো যেত কিন্তু আপনারা কেন প্রায় ২৫৮ মাইল ( ঢাকা থেকে দিনাজপুর ) পর্যন্ত নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ পৌঁছাচ্ছেন ? রসূলুল্লাহ্ ( ) এর যুগে এতদূর পর্যন্ত সংবাদ পৌঁছাতে প্রায় ৬ দিন সময় লেগে যেত । আপনারাতো প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ প্রচার করাতে বিশ্বাসী নন । যদি বলেন ,আপনার প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ প্রচারে বিশ্বাস করেন তাহলে সৌদি আরব থেকে নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ আসলে আপনার কেন তা গ্রহণ করেন না ?
প্রশ্ন ( ৬ ) :
যদি আপনারা বলেন যে , সৌদি আরবের সাথে আমরা ইফতার , সাহরী ও সলাহ্ আদায় করিনা এই জন্য আমরা তাদের সাথে ঈদ পালন করতে পারিনা । তাহলে আপনাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন ? ঢাকার মানুষের সাথে চট্টগ্রামের মানুষ একসাথে ইফতার , সাহরী ও সলাহ্ আদায় করেন না । তবে কেন সওম ( রোজা ) ও ঈদ একইসাথে পালন করে ?
সূর্যের সময়ের হিসাবে উল্লেখিত দুই শহরের পার্থক্য বজায় রেখে যদি আপনারা একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে পারেন তাহলে সৌদি আরবের সাথে সূর্যের সময়ের হিসাবটি বজায় রেখে একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে পারেন না কেন ?
প্রশ্ন ( ৭ ) :
যদি আপনারা বলেন , সৌদি আরবের সাথে আমাদের দেশের পার্থক্য প্রায় ৩ ঘন্টা কিন্তু আমাদের নিজ দেশের শহরের মধ্যে পার্থক্য সর্বোচ্চ প্রায় ১৮ মিনিট তাই সময়ের কম পার্থক্য হলে একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করা যাবে কিন্তু সময়ের পার্থক্য বেশী হলে একইদিনে সাওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করা যাবে না । তাহলে আপনাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন , বেশী সময় পার্থক্য হলে একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করা যাবে না আর কম সময়ের পার্থক্য হলে একইদিনে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন যাবে এর স্বপক্ষে কুরআন বা হাদিস থেকে একটি দালিল পেশ করুন । আর আরও একটি দালিল পেশ করবেন যে , এই কম সময়ের পরিমাণ কতটুকু ?
প্রশ্ন ( ৮ ) :
যদি আপনার বলে থাকেন যে , পৃথিবীতে সকল জায়গায় একইসাথে একই তারিখ থাকেনা তাহলে আপনাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন ? রসূলুল্লাহ্ ( সা:) যে , আমাদেরকে বলেছেন ” জুমুআহ্’র দিনে ক্বিয়ামাত সংগঠিত হবে ” [-মুসলিম , আ.লা. ১৪০১ ] তাহলে এই হাদিসটি কি ভুল ( নাউযুবিল্লাহ্ ) ?
যদি সমগ্র পৃথিবীতে ২৪ ঘন্টার কোনো একটা সময়ে একইসাথে একই তারিখ না হয় তাহলে সারা বিশ্বে একইসাথে কিভাবে জুমুআহ্’র দিন হবে? আমরা হিসাব করে দেখেছি ২৪ ঘন্টার কোনো একটা সময়ে এসে সমগ্র পৃথিবীতে একই তারিখ অবস্থান করে । যদি আপনারা তা না মানেন তাহলে ” জুমুআহ্’র দিনে ক্বিয়ামাত সংগঠিত হবে ” এই হাদিসটির কি উত্তরদিবেন ? এবং ২৪ ঘন্টার কোনো একটা সময়ে সারা পৃথিবীতে একই তারিখ হয় না তার প্রমাণ আপনারা পেশ করবেন ?
প্রশ্ন ( ৯ ) :
যদি আপনারা বলেন , সারা বিশ্বে একইসাথে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন সম্ভব হলে আমরা তা পালন করতাম যেহেতু তা সম্ভব নয় এই কারণে আমরা সৌদি আরবের নতুন চাঁদের হিসেবে একইসাথে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করিনা । তাহলে আপনাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন আপনারা কি নিজ দেশে সকল অঞ্চলের লোকেরা একই সময়ে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে পারেন ? যেমন ঢাকার সাথে চট্টগ্রামের ৯ মিনিট পার্থক্য রয়েছে ! এই দুই শহরের লোকেরা একইসাথে সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করতে না পারলে কেন ঢাকার নতুন চাঁদ উদয়ের সংবাদ অনুযায়ী চট্টগ্রামের মানুষ সওম ( রোজা ) ও ঈদ পালন করে থাকে ?
_________________________________________________
শেষে কিছু কথা
আলহামদুলিল্লাহ!  লেখাটি নিয়ে অনেক গবেষণা ও পরিশ্রম করতে হয়েছে বিশেষ করে সব দলিল যাচাই বাছাই করতে।  যাইহোক সব পরিশ্রম শুধুমাত্র আল্লাহ সুবাহানুতা’লা কে খুশি করার জন্য।  আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা যদি আপনার জন্য উপকারী মনে করেন তাহলে অবশ্যই আমার জন্য দোয়া করবেন। আর লেখার মধ্যে কোন ভূল ত্রুটি থাকলে ভূলগুলো অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শুধরিয়ে দিবেন। যাযাকআল্লাহ খায়ের।  আসসালামু আলাইকুম।
সংকলন ও ডিজাইন 
মো: জামিল আহমেদ (রনি)
ফ্রিল্যান্সার,  অনলাইন একটিভিস্ট। 
যোগাযোগ : mrjamilahmed43@gmail.com

 সার্বিক সহযোগিতায় :
বড় ভাই মো: ইকবাল
বন্ধু জুনাইদ আল হাবিব।