“স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ও ইনসিকিউরিটির গল্প : বাস্তবের আয়নায় একটুখানি কথা”

যারা স্বামী নিয়ে ইনসিকিউর ফিল করেন, তাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা — আর পুরুষেরও কিছু দায়িত্ব

বিয়ের পরে অনেক নারী অযথা ইনসিকিউর ফিল করেন। স্বামী অন্যদিকে তাকালো, কারও পোস্টে রিয়্যাক্ট দিলো, একটু হাসলো — মানেই বুঝি সংসারে অশান্তি। আসলে এই ইনসিকিউরিটি তৈরি হয় নিজেদের ভুল বোঝাবুঝি আর সমাজের প্রচলিত কিছু ধ্যানধারণা থেকে।

একটা বিষয় খেয়াল করলেই বুঝবেন —
অবিবাহিত ছেলেরা যখন প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়, তখন তারা হয়তো চেহারা, গড়ন, ফ্যাশান, গ্ল্যামার এসবের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তবে বিয়ের পর একজন স্বামীর চোখে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হয় মায়াবী, মার্জিত, শান্ত, ঘরোয়া স্বভাবের স্ত্রী। কারণ সংসার আর প্রেম এক নয়। প্রেমে মোহ কাজ করে, আর সংসারে মানুষ ভালোবাসা আর শান্তি খোঁজে।

ধরে নিন আপনি অসম্ভব সুন্দরী। কিন্তু স্বভাবে রুক্ষ, কথায় বিদ্বেষ, কাজকর্মে অনিয়ম, তর্কে পটু, কিংবা আচার-আচরণে বেয়াদবি থাকলে — বিশ্বাস করুন, আপনার রূপের জৌলুস খুব বেশিদিন স্বামীর চোখে ধরা পড়বে না। তিনি আপনাকে ভাত-কাপড় দেবেন ঠিকই, কিন্তু মনের শান্তির জায়গাটা অন্য কোথাও খুঁজে নেবেন।

অন্যদিকে, আপনি যদি ততটা চমৎকার চেহারার না-ও হন, তবে মায়াবতী, সৎ, অনুগত, স্বামী-সন্তানের প্রতি যত্নশীল, নম্রভাষী আর শান্ত মনের মানুষ হন — তাহলে আপনার স্বামী আপনাকেই ভালোবাসবে, আপনাকেই মায়া করবে। রাস্তায় তাকাবে হয়তো অন্যের দিকে — পুরুষ মানুষ নেহাতই ভিন্ন চোখের — তবে ভালোবাসা কিন্তু আপনাকেই দেবে। কারণ শান্তি সবার আগে।

এখানে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে — কারও দৃষ্টি হেফাজত করা আপনার হাতে নেই। দৃষ্টি হেফাজত যার চোখ, তার দায়িত্ব। আপনি শুধু নিজের চরিত্র আর নিজের অবস্থান শক্ত রাখুন। সংসারে আনুগত্য মানে নিজের সম্মান হারানো নয়। স্বামীর রাগের কথায় জবাব না দিয়ে, মনমালিন্যের পর এক কাপ চা হাতে এগিয়ে গেলে আপনি ছোট হন না, বরং সম্পর্ক বড় হয়।

এমনও দেখেছি — চোখ ধাঁধানো রূপের অধিকারিনী সুন্দরীরা তালাকপ্রাপ্ত হয়েছেন শুধুমাত্র অহংকার আর অনর্থক অশান্তির কারণে। আবার কারও কাছে ‘কালো’, ‘বেঁটে’,  ‘ব্রণওয়ালা’ যাদের বলে — এমন অনেক নারীকে দেখেছি স্বামীর আদরের সংসার করতে। কারণ একটাই — তারা শান্তিপ্রিয়, সংসার গোছানো আর স্বামীর প্রতি আন্তরিক।

📌 পুরুষেরও দায়িত্ব আছে

শুধু স্ত্রী অনুগত হবে, স্নেহময়ী হবে — এমনটা কাম্য নয়। একজন স্বামীরও কর্তব্য স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হওয়া। স্ত্রীর সম্মান, মানসিক শান্তি, আত্মবিশ্বাস এবং ভালোবাসার প্রতি দায়িত্বশীল থাকা। কারণ সংসার একপক্ষের নয়।

স্বামীরও উচিত স্ত্রীর প্রশংসা করা, সময় দেওয়া, তার আবেগ বোঝা। অন্যের দিকে তাকানো কিংবা অকারণে স্ত্রীকে অবহেলা করা কোনো ভদ্র পুরুষের কাজ হতে পারে না। কারও চোখ ধাঁধানো রূপের মোহে পড়ে নিজের সংসার ভাঙা, কিংবা স্ত্রীর মূল্যায়ন না করা — এটা যে নিজের জন্যও বিষ হয়ে দাঁড়ায়, সে শিক্ষা অনেক দেরিতে হলেও অধিকাংশ পুরুষ এক সময় বুঝে।

তবে কিছু লুচ্চা চরিত্রের পুরুষ সব সময়ই থাকবে। এরা সুন্দরী পেলেও অশান্তি খোঁজে, না পেলেও অভিযোগ করে। সমাজের এই গুটি কয়েক নোংরা চরিত্রকে বাদ দিলে — অধিকাংশ পুরুষ শান্তি আর অনুগত জীবনসঙ্গিনী খোঁজে।

📌 শেষ কথা

সংসারে সুখের মূল মন্ত্র —
দুই পক্ষের দায়িত্বশীলতা, মায়া, সম্মান, এবং একে অপরকে বোঝার মানসিকতা।

একজন স্ত্রী অনুগত, মার্জিত হলে স্বামীকেও হতে হবে যত্নবান, সহনশীল এবং সম্মানিত আচরণকারী।
শুধু স্ত্রীর কর্তব্য নয়, স্বামীরও দায়িত্ব আছে সংসার ভালোবাসা আর নারীর মনের মূল্য দিতে।

তবেই সংসার হবে পরিপূর্ণ শান্তির নীড়।