এক নজরে, এক ঝলকে . . .
অনাহূত প্রেম ও পরামর্শ!
অনেকদিন যাবতই দেখা হয়। কেমন আছেন ? ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ? ভালো . . . হাই হ্যালো এই জাতীয় টুকটাক কথা হয়। শ্রদ্ধা সম্মান মিশিয়ে দূরে থাকতেই চেষ্টা করেছি সবসময়ই। কখন যে অজান্তেই মনে গেঁথে গেছে বুঝতে পারিনি। বুঝতেও সময় গেছে বহুদিন। তারপরও বিদ্ধ তীর নিয়েও বয়ে বেড়িয়েছি বহুকাল। তারপর একান্ত নিরিবিলি বেলায় আস্তে আস্তে ভাবনার শুরু। কারনে অকারনে ভাবতে বসা। অনুভব করা। চোখ বন্ধ করে ভাবা . . .
অডিও
হৃদয়ে প্রশান্তি আনতে, মনকে বুঝ দিতে তাকে শুধু এক নজরে এক ঝলক দেখার জন্য।
তার বাসায় যাতায়াতের রাস্তার মোড়ে নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ম করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মশা আর পাশের খোলা ডাস্টবীনের পঁচা ময়লার ধারে দুর্গন্ধের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা। দিন যায় সপ্তাহ যায় মাসও পেরিয়ে যায়। কদাচিত তার ফেরার পথে কিংবা বের হওয়ার পথে দেখা হয়। সাথে তার ছোট্ট ছোট্ট সন্তানদের কেউ কিংবা স্বামী সন্তান সবাই। কদাচিৎ সে একাও থাকে। প্রতিবারই দেখা হলে সে-ই আগ বাড়িয়ে কথা বলে। বাসায় যেতে খুউব মিনতি করে। পাশের চা’র দোকান থেকে কিছু না কিছু খাওয়ানোর বায়না ধরে। খেতে না চাইলে জোরাজুড়ি করে। সব কিছুকে না করা যায়; কিন্তু সহজ সরল আদরের আবদার রক্ষা না করে কোনবারই রেহাই পাওয়া যায়না। শেষে অন্ততঃ একটা সিগারেট হলেও অফার করে। সম্মত হই। প্রচণ্ড নিষেধ আপত্তি করেও সিগ্রেটটা এনে দেয়। ধরাই। বলতে থাকে- বেঁচে থাকার জন্য, নিজের জন্য, স্ত্রী সন্তানদের জন্য হলেও সিগ্রেটটা ছেড়ে দেন। কমিয়ে খান।
প্রতিবারই সামনে আসলেই মুখের নেকাব খুলে ফেলে। যেন আমি তাকে ভালো করে দেখতে পারি। যেন সে বলতে চায়- এই দেখুন, এইযে এখানেই আমি, ভালো করে, মন ভরে দেখে নিন- হৃদয়কে ঠাণ্ডা শীতল করুন- মনকে শান্ত করুন . . .।
অতঃপর বড় মায়াবী কণ্ঠে কুশল জিজ্ঞাসা-
. . . আপনি কেমন আছেন ?
দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে শক্ত সামর্থ মন-প্রাণশক্তি আছে বুঝাতে ঠোঁটের কোণে স্মীত এক টুকরো কৃত্রিম হাসির রেখা টেনে উত্তর দেই-
আলহাম-দু-লিল্লাহ! ভালো আছি, আল্লাহ ভালো রেখেছেন, খুব ভালো রেখেছেন . . .
আপনি কেমন আছেন?
কোন কথা বলেনা . . .
বেশ ক’দিন যাবতই বলবো বলবে ভাবছিলাম। বলতে পারিনি। ঠোঁট কেঁপে উঠতো।
ফোনে একদিন হালকা করে আভাস দিয়ে পরক্ষণেই চলে গিয়েছিলাম অন্য প্রসঙ্গে। সে-ও পজেটিভলী নিয়েছিলো। বলেছিলো এখন না। পাশে স্বামী আছে . . .
“আপনাকে আজ খুবই সুন্দর লাগছে, অসাধারণ ভালো লাগছে আপনাকে”।
সেভাবে কোন দিনও বলা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই আজ মনের অজান্তেই কখন যে, কী মনে করে বলে ফেলেছি; ঘোর কাটার আগ পর্যন্ত বুঝতেই পারিনি।
শুনে মুচকী একটা হাসি দিয়ে মুহূর্তেই এক ঝলক বিদ্যুৎ চমকিয়ে দিলো যেন! রাস্তার মাঝখান থেকে আরেকটু কাছাকাছি আসলো- আরোও একটু কাছে।
কুশলাদী আদান-প্রদান হলো। কিছু খাওয়াতে চাইলো। মানা করলাম। মানতেই চাচ্ছেনা। আজ মানাতে পারলাম। বাসায় ডাকলো। অনীহা প্রকাশ করে বললাম-মাঝে মধ্যে একটু আধটু আসবেন প্লিজ। দু’একটা কথা বলবো। শুধু আপনার সাথেই দুটো কথা বলতে ভালো লাগে। তাছাড়া আর কাউরো সাথেতো তেমন কোন কথা বলিনা। আপনার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে। বললো-
“যাবো”।
বললাম বাসায় যান। চলে গেলো . . .
সে চলে গেলো . . . আর আমি দাঁড়িয়ে রইলাম— ধীরে ধীরে সন্ধ্যার আলোর নিচে মিলিয়ে যেতে থাকা তার ছায়া দেখছিলাম আর ভাবছিলাম . . .
প্রিয় সুহৃদ,
আপনার কথাগুলো খুব মনযোগ দিয়ে পড়লাম। বুঝতে পারলাম, আপনি খুব আবেগী আর সংবেদনশীল মানুষ। কাউরো প্রতি ভালোলাগা, মায়া, মমতা হওয়া অতি স্বাভাবিক। তবে যেহেতু এই সম্পর্কটার একটা স্পর্শকাতর বাস্তবতা আছে— কারণ তিনি বিবাহিত, তার সন্তানাদি আছে, আছে স্বামী-সংসার— সেখান থেকে আপনার জন্য কিছু গভীর পরামর্শ দিতে চাই। আপনি আমার সুহৃদ, তাই মন খুলে লিখলাম।
🔍 আসল বিষয়টা কী?
আপনি তার প্রতি ভালোবাসা-মায়া-মুগ্ধতা অনুভব করেন। তাকে কাছে পেতে চান। তার চোখে মুখে, কথায় এমন কিছু পেয়েছেন, যেটা আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যায়- কখনও কখনও চুরমার করেও যায়। ভালো লাগা তো নিষিদ্ধ নয়। তবে এই ভালো লাগা কতটা এগোবে, কতটা সীমানা পেরোবে— সেটা জানা বুঝাই আসল সিদ্ধান্ত।
🔥 যে ব্যাপারটা বুঝতে হবে:
-
তিনি বিবাহিত। তার স্বামী আছে, সন্তান আছে। আপনি তাকে যতই আপন ভাবেননা কেন, সামাজিকভাবে তিনি একজন স্ত্রী, একজন মা।
-
তিনি যদি আপনার প্রতি অতিরিক্ত সময় দেন, কথা বলেন, চোখে চোখ রাখেন— এগুলোর মানে এটা নয় যে, তিনি আপনাকে ভালোবাসেন। অনেক সময় কেউ কেউ একটু সহানুভূতি বা ভালো আচরণ করলেও আমরা সেটাকে বাড়িয়ে ফেলি।
-
তার স্বামীর ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। সে যত ‘হ্যাবলাকান্তই’ হোক, তবুও তিনি তার একজন স্বামী। সে মানুষটার সম্মান আছে। তার পেছনে, তার পাশের মানুষটার সাথে অন্যরকম কিছু তৈরি করা আপনার নিজের চরিত্র, নীতিবোধ এবং ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
📌 যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন:
১. নিজেকে সামলান।
এতদিনে হয়তো বুঝে ফেলেছেন, তার প্রতি আপনার টানটা একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে। সময় থাকতে সেটা একটু কাটছাঁট করতে হবে- করে ফেলুন। সম্পর্কের গতি, রশি টেনে ধরুন। নয়তো একদিন এমন জায়গায় পৌঁছে যাবেন, যেখান থেকে ফেরার পথ পাবেননা।
২. দূরত্ব বজায় রাখুন।
দেখা হলে সৌজন্যতা দেখান। বাসায় যেতে বললে, খাবার অফার করলে বিনয়ের সাথে এড়িয়ে যান। কোথাও-ও আসতে, কোথাও দেখা করতে বলার দরকার নেই।
৩. নিজের অভ্যাস বদলান।
যে অভ্যাস আপনাকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে— সেই বাসার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা, অপেক্ষা করা— এগুলো বন্ধ করুন। এগুলো আপনাকে মানসিক দিক থেকে দুর্বল করে ফেলবে- ফেলেছেও।
৪. মনকে ব্যস্ত রাখুন।
নিজের কাজ, লেখালেখি, গান শোনা কবিতা পড়া-লেখা, আপনার ব্লগ, ইউটিউব দেখা, বই পড়া— এগুলোতে সময় দিন। নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন। কোন এক বিবাহিত নারীর জন্য নিজের জীবন থমকে দেওয়া উচিত না।
৫. দো’য়া করুন।
তাকে ভালো রাখার- ভালো থাকার দো’য়া করুন। তার সংসার ভালো থাকুক, তিনি সুখে থাকুক— এটাই আসল ভালোবাসা।
সত্যিকারের ভালোবাসা দাবি করতে শেখায় না, সে শুধু চায় প্রিয় মানুষটা সুখে থাকুক- ভালো থাকুক।
🔥 কঠিন বাস্তবতা:
এমন রাস্তায় গেলে শেষ পর্যন্ত নিজের মনেই কষ্ট বাড়বে। অপূর্ণ ভালোবাসা, না বলা কথা, গোপন দেখা, একদিন হয়তো কারও সংসার ভেঙে দিবে, কিংবা আপনার নিজেরই মানসিক শান্তি নষ্ট হবে।
📖 আমার মতামত:
ভালো লাগা থাকুক মনের ভেতরই। মনে রাখবেন— কিছু কিছু ভালো লাগা, ভালোবাসা নিজের ভেতর রেখে দেওয়াই উত্তম। সবার কাছে- সব জায়গায় প্রকাশ করতে নেই। আবার সেই ভালো লাগাকে সম্মান, দো’য়া, প্রার্থনায় রূপান্তর করা যায়।
যদি পারেন, নিজের জন্য “ঘুরে দাঁড়ানোর সিঁড়ি” নামের ডায়েরিটা চালু রাখুন। সেখানে এই কথাগুলো লিখে রাখুন। কারণ, এগুলো মন থেকে বের করে ফেলার উপায় হলো লিখে ফেলা।
📌 শেষ কথা:
প্রিয় সুহৃদ,
আপনি অনেক ট্যালেন্টেড, আবেগী আর বাস্তবিক বুদ্ধিমান একজন মানুষ। আপনার ভেতরে অসাধারণ এক প্রাণ শক্তি আছে- আছে বিরল কিছু প্রতিভা। সেই শক্তিকে এভাবে কারও জন্য ভুলপথে খরচ করবেননা। বরং সেই শক্তি দিয়ে নিজের লক্ষ্য পূরণ করতে সামনে এগিয়ে যান।
“ভালোবাসা কখনও দাবি করে না, শুধু প্রিয় মানুষটার শান্তি চায়”
চলুন, নতুন করে নিজের স্বপ্নগুলোতে ফেরত যাই। আপনি চাইলে, আমি আপনার পাশে আছি- থাকব।
⚠️ দ্রষ্টব্য: ঘটনা বা সমস্যাটি লেখকের কল্পনাপ্রসূত মনের একান্ত উপলব্ধির প্রকাশ। সমাধান বা পরামর্শটি লেখকের নিজস্ব চিন্তা থেকে। কারও ব্যক্তিগত জীবনাচারের সাথে এতটুকুও মিলে গেলে তা সম্পূর্ণ কাকতালীয়।
১ মার্চ, ২০০৭
নান্দিনা, জামালপুর

Leave A Comment