ব্যবসার ধরণ ও বাস্তবতা
পৃথিবীতে মূলত দুই ধরনের ব্যবসা বিদ্যমান —
১. গতানুগতিক ব্যবসা
২. উদ্ভাবনী বা সমস্যা সমাধানকেন্দ্রিক ব্যবসা
ব্যবসা মানেই বিক্রয়। কেউ পণ্য বিক্রি করে, কেউ সেবা বিক্রি করে। তবে ব্যবসার ধরন নির্ধারণ করে একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তার ভবিষ্যৎ পথ।
১. গতানুগতিক ব্যবসা
এমন ব্যবসা যেটা বহু বছর ধরে চলে আসছে এবং একই ধরণের হাজারো মানুষ সেটি করছে। উদাহরণ হিসেবে মুদির দোকান, কাঁচাবাজার, রেস্টুরেন্ট, মাছ বা সবজির ব্যবসা।
সুবিধা:
-
আগে থেকে প্রতিষ্ঠিত মডেল হওয়ায় শিখে নেওয়া সহজ।
-
একজন অভিজ্ঞ মালিকের অধীনে কাজ করলে ব্যবসার খুঁটিনাটি শেখা যায়।
-
বিনিয়োগ কম এবং ঝুঁকি তুলনামূলক কম।
-
অল্প সময়েই কিছুটা লাভ দেখা যায়।
-
পরিবার চালানোর মতো স্থিতিশীল আয়ের নিশ্চয়তা থাকে।
অসুবিধা:
-
সীমিত লাভের মার্জিন। যেমন ৫ টাকায় কিনে ৭ টাকায় বিক্রি করা।
-
দ্বিতীয় দোকান খোলার মতো পুঁজি জমাতে অনেক বছর সময় লাগে।
-
সামাজিক মর্যাদা মিললেও “উদ্যোক্তা” হিসেবে আলাদা পরিচিতি পাওয়া যায় না।
-
বাজার প্রতিযোগিতা বেশি, তাই দ্রুত বড় হওয়া কঠিন।
২. উদ্ভাবনী বা সমস্যা সমাধানকেন্দ্রিক ব্যবসা
এমন ব্যবসা যা পৃথিবীকে নতুন কিছু দেয়, কোনো জটিল সমস্যার সমাধান করে বা ভিন্নধর্মী পণ্য-সেবা তৈরি করে।
চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য:
-
আগে কেউ করেনি এমন কিছু করার সাহস।
-
একটি বাস্তব সমস্যা খুঁজে বের করে সমাধান তৈরি করা।
-
এমন প্রোডাক্ট/সার্ভিস তৈরি করা যা উৎপাদনে খরচ ৫ টাকা হলেও ক্রেতা আনন্দের সাথে ৩০ টাকা দেবে কারণ সে ৩০০ টাকার সমাধান পেয়ে যাচ্ছে।
-
ব্যবসার একচ্ছত্র সুবিধা পাওয়া — ক্রেতার জন্য বিকল্প নেই।
-
তবে ঝুঁকি বেশি — বছরের পর বছর চেষ্টা করেও সফল নাও হতে পারে।
উদাহরণ:
ধরা যাক, আপনি বায়োটেকনোলজি বা কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। একদিন দেখলেন আপনার গ্রামে কচুরিপানার কারণে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এখন উদ্ভাবনী মস্তিষ্ক প্রশ্ন করবে—
-
কচুরিপানা অন্য দেশে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় কি না, হলে এক্সপোর্টের সুযোগ আছে কি?
-
এতে ঔষধি গুণাগুণ আছে কি না, যা প্রক্রিয়াজাত করে ন্যাচারাল রিমেডি হিসেবে বিক্রি করা যায় কি না?
অর্থাৎ, যেখানে অন্যরা কচুরিপানাকে “সমস্যা” দেখছে, একজন উদ্ভাবনী উদ্যোক্তা সেটিকে “সুযোগ” হিসেবে দেখছে।
ব্যবসায়ী বনাম উদ্যোক্তা
বিষয় | ব্যবসায়ী (Conventional) | উদ্যোক্তা (Innovative) |
---|---|---|
আয় | সীমিত ও ধীরগতির বৃদ্ধি | দ্রুত বৃদ্ধি ও স্কেলেবল |
ঝুঁকি | কম | বেশি |
পরিচিতি | সমাজে সম্মানিত ব্যবসায়ী | বৈশ্বিক বা জাতীয় উদ্যোক্তা |
অবদান | নিজ ও পরিবারের জন্য আয় | নতুন সমাধান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি |
উদাহরণ | মুদির দোকান, রেস্টুরেন্ট | স্টার্টআপ, টেকনোলজি সলিউশন |
বিক্রয় দক্ষতা: ব্যবসার প্রাণ
যেকোনো ব্যবসার মূল হলো বিক্রয়।
-
কথা বলার ভঙ্গি
-
যুক্তি দিয়ে মানুষকে কনভিন্স করার ক্ষমতা
-
প্রোডাক্ট সঠিকভাবে উপস্থাপন
এই দক্ষতাই ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
বাস্তব অভিজ্ঞতা:
স্কটল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে কফি খাওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি দোকানে কার্ডমেশিন ও ব্রডব্যান্ড বিক্রি করেছি। আমার স্ত্রী মজা করে বলল, “হলিডের খরচ তো উঠে গেল!”
👉 শিক্ষা: যেখানেই থাকুন, ব্যবসার সুযোগ সবসময় আপনার চারপাশেই থাকে।
উদ্যোক্তা বনাম ব্যবসায়ী
-
একজন সাধারণ ব্যবসায়ী সমাজে সম্মানিত হলেও সীমিত আয় আর সাধারণ পরিচয়ে আটকে থাকেন।
-
একজন উদ্যোক্তা নতুন কিছু আবিষ্কার করে সমাজ ও পৃথিবীতে অবদান রাখেন, আলাদা পরিচিতি পান, অনেকের কর্মসংস্থান তৈরি করেন এবং নিজের আর্থিক স্বাধীনতা গড়ে তোলেন।
বাস্তব অভিজ্ঞতা: বিক্রয় দক্ষতার গুরুত্ব
উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি বিক্রয় দক্ষতা (Sales Skill) যেকোনো ব্যবসার প্রাণ। কথা বলার ভঙ্গি, যুক্তি দিয়ে মানুষকে কনভিন্স করার ক্ষমতা এবং প্রোডাক্ট সঠিকভাবে উপস্থাপন করার দক্ষতা থাকলে ব্যবসায় সফলতা নিশ্চিত।
আমি নিজেই উদাহরণ দিই— স্কটল্যান্ডে বেড়াতে গিয়ে বিভিন্ন দোকানে কফি খাওয়ার পাশাপাশি কয়েকটি দোকানে কার্ডমেশিন ও ব্রডব্যান্ড বিক্রি করেছি। আমার স্ত্রী মজা করে বলে, “হলিডের খরচ তো উঠে গেল!”
এখানেই মূল শিক্ষা— যেখানেই যান, ব্যবসার সুযোগ সবসময় আপনার চারপাশেই থাকে।
ট্রেনিং ও সুযোগ
যারা টেকনোলজি বা B2B সেলস শিখে বাস্তবে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তারা চাইলে রিসেলার ট্রেনিং নিতে পারেন। নিয়মিত ৮ ঘণ্টা কাজ করলে শুরুতে মাসে £৩০০০ পাউন্ড ইনকাম করা কঠিন কিছু নয়। ধৈর্য ধরে ৩–৬ মাস কাজ করলে £৫০০০–£৭০০০ পাউন্ডেও পৌঁছানো সম্ভব।
এই সুযোগ কারা নিতে পারবেন?
-
যারা মানুষের সাথে কথা বলতে ভয় পান না।
-
যারা যুক্তি দিয়ে কাউকে কনভিন্স করতে পারেন।
-
বিক্রয় নিয়ে সংকোচবোধ করেন না।
-
যারা এখনো ২০০০০ টাকার কম ইনকাম করছেন অথচ ভালো পড়াশোনা সত্ত্বেও অড জব করছেন।
ফি: ৳৫00 (কারণ, বিনা মূল্যে দিলে মানুষ সিরিয়াস হয় না।)
শেষ কথা
👉 গতানুগতিক ব্যবসা জীবিকা দেয়, স্থিতিশীলতা দেয়।
👉 উদ্ভাবনী ব্যবসা চ্যালেঞ্জিং, তবে বিশ্বকে নতুন কিছু দেয় এবং উদ্যোক্তাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।
👉 দুই ধরনের ব্যবসারই আলাদা সুবিধা-অসুবিধা আছে। তবে যারা পৃথিবীতে নতুন কিছু তৈরি করতে চান, তাদের ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতা রাখতে হবে।
Leave A Comment