⭐ সরকারি Secondary School —সংকটের মাঝেও জাতির মেরুদণ্ড: শিক্ষক কর্মবিরতিতে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত
সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আজ সোমবার থেকে সহকারী ও সিনিয়র শিক্ষকদের চার দফা দাবিতে ঘোষিত লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।
এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বার্ষিক পরীক্ষায়—ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দীর্ঘদিনই দেশের মধ্যবিত্ত ও সাধারণ মানুষের নির্ভরশীলতা ও গুণগত শিক্ষার প্রতীক। সেখানে কর্মরত শিক্ষকরা শুধু পাঠদান করেন না, বরং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নাগরিক তৈরিতে মূল নেতৃত্ব দেন। ঠিক সেই জায়গাতেই অধিকাংশ শিক্ষক মনে করছেন—যোগ্যতা, মর্যাদা ও কাঠামোর দিক থেকে তারা দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার।

🎓 বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত—প্রতিষ্ঠিত সরকারি বিদ্যালয়গুলোও ব্যতিক্রম নয়
কর্মবিরতির ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান আজ পরীক্ষা নিতে পারেনি, তার মধ্যে রয়েছে:
-
ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল
-
সরকারি করোনেশন গার্লস হাইস্কুল, খুলনা
-
গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, ঢাকা
-
শেরেবাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়
এটি প্রমাণ করে কর্মবিরতি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো সরকারি মাধ্যমিক ব্যবস্থায়, যেটি দেশের মানসম্মত শিক্ষার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।
অনেক বিদ্যালয় গতকালই নোটিশ দিয়ে পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানিয়েছে—এটি শিক্ষকরা হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেননি; বরং দীর্ঘদিনের বঞ্চনার পর বাধ্য হয়েছেন।
📌 সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির অবস্থান: “রূপরেখা দিলে আমরা কর্মবিরতি তুলে নেব”
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সমন্বয়ক মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন—
মন্ত্রণালয় যদি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ও লিখিত রূপরেখাসহ দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে তাঁরা জাতীয় স্বার্থে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন।
তিনি বলেন—
“আমরা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি চাই না। আমরা শুধু ন্যায্য কাঠামো চাই—যা সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষার ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করবে।”
একজন আন্দোলনকারী শিক্ষক আরও জানান—
যদি সরকার দাবি পূরণে উদ্যোগ নেয়, তারা শুক্রবার-শনিবার ছুটির মধ্যেও পরীক্ষা সম্পন্ন করবেন এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই ফল প্রকাশ করবেন।
🎯 মাধ্যমিক শিক্ষকদের চার দফা দাবি — যা শুধু ‘বেতন’ নয়, বরং ‘শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত রূপান্তর’
১️⃣ সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’-এর গেজেট প্রকাশ
এটি কেবল মর্যাদার বিষয় নয়—এটি ভবিষ্যতে বিদ্যালয়ে মেধাবী, প্রশিক্ষিত ও যোগ্য শিক্ষক আকৃষ্ট করার পূর্বশর্ত।
২️⃣ বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন
মাধ্যমিক শিক্ষা কাঠামোর উল্লেখযোগ্য অংশ দীর্ঘদিন ধরে শূন্যপদে চলছে — এতে শিক্ষার মান ও প্রশাসনিক সক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৩️⃣ সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান
এটি আইনগত অধিকার; তা না দেওয়া শিক্ষক সমাজকে অবমূল্যায়নের শামিল।
৪️⃣ ২০১৫ সালের আগে প্রচলিত অগ্রিম ইনক্রিমেন্ট ও বাড়তি সুবিধা পুনর্বহাল
সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত — অথচ অন্যান্য সমমানের সরকারি পদে এগুলো বহাল আছে।
🏫 সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর? (গ্লোরিফাইড বিশ্লেষণ)
✔ এখানে শিক্ষকরা তৈরি করেন দেশের ভবিষ্যৎ মানবসম্পদ।
✔ মধ্যবিত্তের সন্তানদের সর্বোত্তম সুলভ মানসম্মত শিক্ষা এখানেই।
✔ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে মেধাবী শিক্ষকদের মাধ্যমে দেশের প্রশাসন, বিচার, প্রকৌশল, চিকিৎসা—সব সেক্টরে নেতৃত্ব তৈরি করেছে।
✔ এই বিদ্যালয়গুলোই জাতীয় শিক্ষার মানদণ্ড।
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা যখন বঞ্চনার মুখে পড়েন—
তখন তা শুধু তাদের ক্ষতি নয়, পুরো জাতির সক্ষমতার ক্ষতি।
🏛 মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পদক্ষেপ—তথ্য চেয়েছে শিক্ষা বিভাগ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ সকালেই বলা হয়েছে—
-
১ ডিসেম্বরের বার্ষিক পরীক্ষার অগ্রগতি
-
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের উপস্থিতি
এসব তথ্য দুপুর ১২টার মধ্যে পাঠাতে হবে।
এতে বোঝা যায়, সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নজরদারি করছে।
🧒 প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতিও চলমান—তবে রাজধানীতে পরীক্ষা হয়েছে
প্রাথমিক শিক্ষা খাতে অন্য একটি অংশ সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডসহ তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে।
তবে ঢাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আজ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, কারণ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশনা রয়েছে।
📍 দেশের প্রাথমিক শিক্ষার পরিসংখ্যান (তথ্য অপরিবর্তিত):
-
সরকারি বিদ্যালয় — ৬৫,৫৬৯
-
শিক্ষার্থী — ১ কোটির বেশি
-
শিক্ষক — প্রায় ৩.৫ লাখ
-
সহকারী শিক্ষক পদ — ৩,৬৯,২১৬ (কর্মরত ৩,৫২,২০৮ জন)
-
বর্তমান গ্রেড — ১৩তম
🏆 উপসংহার — সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাকে শক্তিশালী করা মানেই জাতিকে শক্তিশালী করা
আজকের কর্মবিরতি কেবল শ্রমিক আন্দোলন নয়;
এটি শিক্ষার গুণগত মান, শিক্ষক মর্যাদা, প্রশাসনিক কাঠামো, এবং জাতীয় ভবিষ্যতের স্থায়িত্ব পুনর্গঠনের দাবি।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শুধু স্কুল নয়—এটি জাতির মেধা প্রস্তুতকারক কারখানা।
সে কারখানার শ্রমিকরা যদি বঞ্চনার শিকার হন, তাহলে দেশ এগোয় কীভাবে?
অতএব, সরকারের উচিত দ্রুত আলোচনায় বসে এই চার দফা ন্যায়সঙ্গত দাবি সমাধান করা।
শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে নয়—
ক্লাসরুমেই তাদের প্রকৃত জায়গা,
আর
সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাই জাতির ভবিষ্যতের সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।
Leave A Comment