>> উনবিংশ শতাব্দীর অপারেশন থিয়েটারগুলোর পরিবেশ ছিল অতি নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। অবর্ণনীয় যন্ত্রণায় কাতর রোগীদের কান্না চিৎকার চেঁচামেচিতে-পূর্ণ ভয়াবহ ব্যাপার ছিল কারণ তখন অনুভূতিনাশকের ব্যবহার শুরু হয়নি।
>> চেতনানাশক না থাকার কারণে উনবিংশ শতাব্দীতে অস্ত্রোপচারে দক্ষতার চেয়ে দ্রুততা বেশি গুরুত্ব পেত। কোন সার্জন কত দ্রুত অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করতে পারত, তার উপর ভিত্তি করে তার সাফল্য এবং সুনাম ছড়িয়ে পড়ত। ফলে এমন অনেক সার্জন সে সময় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, যাদের আসলে কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতাও ছিল না। এরকম একজন বিখ্যাত অস্ত্রোপচারকারী ছিলেন রবার্ট লিস্টন, যিনি মাত্র ৩০ সেকেন্ডে আহত রোগীর পা কেটে ফেলার ব্যাপারে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন!
>> এক কুখ্যাত অপারেশনের সময় তিনি এত দ্রুত রোগীর শরীরের অঙ্গচ্ছেদ করছিলেন যে, বেখেয়ালে হাতের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার এক সহকারীর হাতের আঙ্গুল কেটে গিয়েছিল এবং একজন দর্শকের কোট ফেঁড়ে গিয়েছিল। কথিত আছে, দর্শকটি ভয়েই মৃত্যুবরণ করেছিল, অন্যদিকে রোগী এবং সহকারীর গ্যাংগ্রীন ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল!
>> আরেক রোগী মূত্রাশয়ের পাথর অপসারণ করাতে লিস্টনের কাছে এসে অপরাশেন থিয়েটারের পরিবেশ এবং লিস্টারের ক্ষিপ্রতা দেখে ভীত হয়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিয়েছিল। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার বিশালদেহী লিস্টন বাথরুমের দরজা ভেঙে তাকে বের করে এনেছিলেন এবং বিছানার সাথে তাকে বেঁধে এরপর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছিলেন।
>> উনবিংশ শতাব্দীতে চিকিৎসকদের আণুবীক্ষণিক জীবাণু এবং তাদের সংক্রমণ প্রণালী সম্পর্কে কোনো পরিষ্কার ধারণা ছিল না। চোখে দেখা যায় না, এরকম অনুজীবের কারণেও যে রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে, তার সাথে চিকিৎসকরা পরিচিত ছিলেন না। ফলে হাসপাতাল কক্ষগুলোতে রোগীদের আশেপাশেই পোকামাকড় এবং কীটপতঙ্গ ঘুরে বেড়াত। কিছু কিছু হাসপাতাল অবশ্য পোকামাকড় নির্মূল করার জন্য কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই কর্মচারীদের বেতন ছিল সার্জনদের চেয়েও বেশি!
>> সেই যুগে চিকিৎসকদের পরনে থাকত রক্তমাখা অ্যাপ্রন। অ্যাপ্রন পরিবর্তন তো দূরের কথা, তারা পরপর একাধিক অস্ত্রপচারের মাঝের সময়ে নিজেদের রক্তমাখা হাতও পরিষ্কার করতেন না। একই ছুরি-কাঁচি দিয়ে একের পর এক অস্ত্রপচার করে যেতেন। তাদের ধারণা ছিল, পরিষ্কার করার পরে তো আবারও রক্ত লাগবে, তাহলে পরিষ্কার করে কী লাভ! অ্যাপ্রনের রক্ত পরিষ্কার না করার আরেকটি কারণ ছিল, যার অ্যাপ্রনে যত বেশি রক্ত থাকত, তাকে তত চাহিদাসম্পন্ন সার্জন হিসেবে দেখা হতো।
>> অধিকাংশ রোগীই রক্তের অভাবে অথবা অস্ত্রোপচার পরবর্তী ইনফেকশনের কারণে মৃত্যুবরণ করত। অস্ত্রপচারের পরে রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা এত কম ছিল যে, হাসপাতালগুলো প্রায়ই রোগীদেরকে অগ্রীম টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য করত। লন্ডনের কিছু কিছু হাসপাতালে সে সময় অপারেশন পরবর্তী মৃত্যুর হার ছিল ৮০ শতাংশের চেয়েও বেশি।
>> সেই যুগে অস্ত্রপচার ছিল একইসাথে দর্শনীয় একটি ব্যাপার। অনেকেই সে সময়ের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে উৎসাহের কারণে অস্ত্রোপচারগুলো স্বচক্ষে দেখার জন্য হাসপাতালে যেত। তবে এছাড়াও টেলিভিশন এবং সিনেমা আবিষ্কার হওয়ার পূর্বে সে সময় অনেকেই জীবন-মৃত্যুর মধ্যকার সংগ্রাম উপভোগ করার জন্য হাসপাতালগুলোতে ভিড় জমাত। কিছু কিছু হাসপাতালে টিকেট কেটে অপারেশন দেখানোর বন্দোবস্তও ছিল।
>> চেতনানাশক না থাকায় রোগীদেরকে সে সময় অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হতো। ফিটজহ্যারিস তার গবেষণায় দেখতে পান, শুধু রোগীরা না, তাদের কষ্ট এবং আর্তনাদ দেখে অনেক সময় সার্জনরাও ভেঙ্গে পড়তেন এবং কাঁদতে শুরু করতেন। ১৮৪০ সালে এরকম অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যাওয়া এক মহিলা তার মেয়ের কাছে লেখা একটি চিঠিতে অপারেশনটিকে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, অপারেশনের পূর্বে সার্জন তার রুমে এসে তাকে ছুরি দেখিয়ে বলেছিল মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে।
>> উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে অস্ত্রোপচার প্রযুক্তি ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করতে শুরু করে। ১৮৪৬ সালে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে জন কলিন্স ওয়ারেন সর্বপ্রথম ইথার গ্যাস ব্যবহার করে রোগীকে অনুভূতিশূণ্য করে অপারেশন পরিচালনা করেন। ফলে সার্জনদের সামনে দ্রুত অপারেশনের পরিবর্তে ধীরে-সুস্থে ঠান্ডা মাথায় জটিল অপারেশনের পথ উন্মুক্ত হয়। কিন্তু প্রথম দিকে অনেকদিন পর্যন্ত এর কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বরং এর ফলাফল হয়েছিল আরো ঋণাত্মক। কারণ দীর্ঘসময় ধরে অপারেশন করার অর্থ ছিল রোগ-জীবাণুগুলোকে কাটা এবং ক্ষতস্থানে বিস্তার লাভ করার জন্য আরো বেশি সময় দেওয়া।
>> এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে, যখন জোসেফ লিস্টার নামে এক অল্পবয়সী সার্জন লুই পাস্তুরের ব্যাকটেরিয়ার আবিষ্কার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার পরে হাসপাতালে রোগীদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে অদৃশ্য জীবাণুর ধারণা দেন এবং বলেন যে, এই জীবাণুগুলোর কারণেই অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার পরেও অনেক রোগীই শেষ পর্যন্ত ইনফেকশন হয়ে মারা যাচ্ছে। জীবাণু প্রতিরোধের জন্য তিনি বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং সর্বপ্রথম কার্বলিক এসিডের মাধ্যমে ক্ষতস্থান এবং ছুরি-কাঁচি পরিষ্কার করে জীবাণু দূর করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
>> ১৮৬৫ সালে তিনি সর্বপ্রথম জীবাণুনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার পরিচালনা করেন। প্রথমদিকে অবশ্য এই অদৃশ্য জীবাণু এবং তাকে প্রতিরোধের জন্য জীবাণুনাশক হিসেবে রাসায়নিকের ব্যবহারের ধারণা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করাতে তাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। কিন্তু কলিন্স এবং লিস্টারের দুটি ভিন্ন ভিন্ন আবিষ্কার শেষপর্যন্ত অস্ত্রোপচারের সফলতার হার এবং রোগীদের কষ্ট লাঘবের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে।
সূত্র : ‘দ্য বুচারিং আর্টস’ এবং আর বাংলা।
________________________________________
শেয়ার করতে পারেন।
ধন্যবাদ
www.saifoddowla.com
________________________________________
আপনার ব্লগ দেখতে ক্লিক করুন এখানে
আপনার বয়স সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর পেতে ক্লিক করে সহযোগিতা নিন এখান থেকে
সকল সংবাদপত্রগুলির লিংক
====================================================================
প্রয়োজনীয়, জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু যোগাযোগ নম্বরের লিংক
====================================================================
শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য, পুরষরা উঁকি দিতে চেষ্টা করবেন না . . . ২
====================================================================
অভ্র বা বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইন্টারনেট জগতে অতি সহজে বাংলা লেখার উপায় . . .
====================================================================
যারা অভ্রতে লেখেন তারা ক্লিক করতে পারেন লিংকটিতে
====================================================================
একহাজার . . . একটি টিপস
====================================================================
ঘুরে আসুন ইন্টারনেটের অন্ধকার দুনিয়ার ডীপ ওয়েব, ডার্ক ওয়েব সাইটগুলো থেকে।
====================================================================
ইংরেজি বিষয় সহ জেনে নিন প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ১
Leave A Comment