যদিও পেশাগত কাজের বাইরে ফ্রিল্যান্স কাজ করার কারণে সময় খুব একটা পাইনা, তবুও কোনদিন ডাক পেলে . . .।

কিন্তু জানি, কোনদিনও ডাক পাবোনা। এমনকী, ট্রেইনি হিসেবেও না !!!
 
জেলা শিক্ষা অফিসের শুভাকাঙ্খী একজন ম্যাডাম। কেন যেন, কী যেন কী মনে করে ফোন করে জানান দিলেন দু’এক এর মধ্যেই কম্পিউটার-ইন্টারনেট-আইসিটি বিষয়ক একটা ট্রেনিং প্রোগ্রাম। আপনাকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। ট্রেইনার হিসেবে। কিছু টিপস দিবেন। সম্ভাব্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন। আর, ট্রেনিংয়ের বিষয় সম্পর্কে জানতে, পারলে স্যারের সাথে একটু দেখা করে যাবেন।
পরদিন দুপুর বেলা দেখা করলাম। কথাবার্তা সব ঠিকঠাক। সম্ভাব্য দিন তারিখও প্রায় চূড়ান্ত। সালাম জানিয়ে চলে এলাম।

ঘন্টা দু’য়েক পর।
ম্যাডামের ফোন- আপনার কি ইতোপূর্বে কম্পিউটারের উপর কোন ধরণের, কোন প্রকার ট্রেনিং আছে ? মানে- চৌদ্দদিন, সাতদিন . . .
বললাম- “না”। আমার এই চাকুরি জীবনে এক ঘন্টারও কোন ট্রেনিং নাই আমার।

বড়মুখ করে আসা ম্যাডামকে মনে হলো কিছুটা আশাহত হলেন।

বললেন- স্যার, তাহলে স্যরি। আপনাকে প্রোগ্রামটায় রাখতে পারছিনা। অন্যকোন একজনের নাম দেন।

আমি বললাম- কেন ? আমি নাম দিতে যাবো কেন !!! আমি কেন অন্যজনের নাম দিতে যাবো ?
বললাম- আমাকে রাখতে বলেছে কে আপনাকে ? আপনি যাকে ইচ্ছে তাকে নিন। আমি কোথায় গিয়ে কার নাম পাব; কার নাম দিতে যাবো !!!

জানতে চাইলেন- কার কাছ থেকে নাম নিতে পারি ?
প্রধান শিক্ষক স্যারের নাম বলে দিয়ে ঘুমাতে গেলাম !!!

মিনিট কুড়ি পরে। চিনিনা-জানিনা, এমন কে একজনে ফোন দিয়ে পরিচয় না বলেই, সালাম-কালাম না দিয়েই সরাসরি জানতে চাইলেন-
আপনার কি আসলেই কোন ট্রেনিং নাই ? তাহলে আপনি শিখলেন কোথায় ?

আধ ঘুমে মেজাজ এবার আমার তুঙ্গে !!!
বললাম- কেন আপনার কাছে শিখেছি, আপনার মনে নাই !!! জানেন না !!!

বললাম- ভাই, ট্রেনিং আমি প্রতিদিনই করি। প্রতিদিনই আটদশ ঘন্টা-ই ট্রেনিং করি। কিন্তু কাউরো কাছে না।
লোকটার সাথে কথা বলতে আর ভাল্লাগলোনা। ফোনটা সাই্লেন্ট করে রেখে আবারও দিলাম ঘুম।

তারমানে ট্রেনিং-ফেনিংয়ের বিষয়টা থেকে এবারও বাদ পড়লাম !!!

মাস্টার ট্রেইনার হতে হলে নাকি অন্ততঃ দু’একটা ট্রেনিং -এর দরকার হয়। যেমনঃ চৌদ্দদিন, সাতদিন, ফলোআপ ইত্যাদি ইত্যাদি। যেগুলোর নাম ম্যাডামের মুখে আজই প্রথম শুনলাম (জ্বী, এর আগে কাউরো মুখে এই কোর্সের নামগুলোও শুনিনি কোনদিন; কেবল বিভিন্ন পেইজ/গ্রুপ/প্রোফাইলে লেখা দেখেছি) !!!
 
হুমম, তাহলে যাঁরা মাস্টার ট্রেইনার হবেন বা হয়েছেন তাঁদের অনেকেইযে রাতের আঁধারে আমার কাছে শিখে যায়, টিপস নিয়ে যায়, প্রস্তুতি নিয়ে যায় ট্রেনিং অবস্থায়ও সমস্যায় পড়ে আমাকে ফোন করে সমাধান চায় তার কী হবে ???
 
তাদের অনেকেই মস্তবড় ট্রেইনার- মাস্টার ট্রেইনার, তাই মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই তাদেরকে অপ্রকাশযোগ্য কিছু কথা বলে ফেলি। যা প্রকাশ করলে হয়তো তাদের জন্য কিঞ্চিত সম্মানহানীকর বিষয় হতে পারে। অধিকাংশ চাইলে অটো রেকর্ডেড ফোনকলগুলো প্রকাশ করতে পারি।
 
এক।
আজ একজন স্যার, জানতে চাইলেন অমুক টিটি কলেজের তমুক স্যারকে চিনেন ?
বললাম- নাতোহ ! এই নামে কতো স্যারইতো আছে কার কথা বলবো যে, তাকে চিনি ? তিনি যদি আমাকে না চিনেন !!! তিনি যদি বলেন- আমি তাকে চিনি না !!! সো, তিনি যদি আমাকে চিনেন, তাহলে আমিও তাঁকে চিনি !!!
 
তারচে’ বরং তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন- ছয়/সাত বছর আগে আপনি কতরাত অমুকের কাছে ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর, পাওয়ার পয়েন্ট সহ কী কী শিখেছেন !!!
 
তিনি পদাধিকার বলে এখন হয়তো মাস্টার ট্রেইনার বা তারচে’ও বড় কিছু। সংগত কারণে সে কৃতজ্ঞতাবোধটুকুও হয়তো তার আর অবশিষ্ট নেই। তাই অধিকাংশ চাইলে তার-ও কিছু প্রকাশ করতে পারি।
img_2259-1
দুই।
এসিআর সাইন করতে আমার প্রধান শিক্ষক মন্তব্যের ঘরে লিখেছিলেন-
 
সাইন করা শেষে রিভিউ করতে গিয়ে স্যার দেখলেন- “বিশেষ প্রশিক্ষণ” -এর ঘরে- কেবল “নাই” কথাটি লেখা !!!
 
রাগতঃ স্বরে স্যার আমাকে ডেকে বললেন- আপনার কি কোনই প্রশিক্ষণ নাই !!!???
বললাম- “নাতোহ”।
চাকুরি করছেন কদ্দিন হয় ?
বললাম- দশ বছর।
দ-শ ব-ছ-র !!!
 
আপনি এতই অভাগা যে, দশ বছর চাকুরি করেও একটা ট্রেনিং পান নাই !!!??? আসলে দোষ আমাদেরই। ভুলটা আমাদেরই হয়েছে . . .।
 
আজ আবার দেড়টাকার কোন এক প্রশিক্ষণ না থাকার কারনে সম্মানীত একজন শুভাকাঙ্খী ডেকে নিয়ে পাঁচসিকি’র মাস্টার ট্রেইনার হওয়া থেকে বাদ দিয়ে দিলেন !!!
 
 
আইসিটিতো দূরে থাক।
কম্পিউটার, আইসিটি, ডিজিটাল কন্টেন্ট ইত্যাদি সহ সিপিডি, TOT, ফলোআপ ইত্যাদি (ইত্যাদি আরো কত কত কী কী যেন আছে নামও জানিনা, শুধু পড়ি ! এগুলো নেট থেকে কালেক্ট করা) শিক্ষা বিষয়ক নূন্যতম একদিনের একটা ট্রেনিংও করার সুযোগ পাইনি সরকারি স্কুলে ১০ বছর শিক্ষকতার চাকুরী জীবনে। এমনকী জানিওনা এই ধরণের ট্রেনিংগুলো কারা দেয়, কোথায় দেয় !!!
আর কম্পিউটার, আইসিটি, ডিজিটাল কন্টেন্ট ইত্যাদি আমার শিখন-শিক্ষণের বিষয়ও না।
 
সো, শিক্ষক বাতায়নে আদৌ আমার কোন এ্যাকাউন্ট আছে কি-না, মনে নেই। অথচ যেখানে নয় শতাধিক এ্যাকাউন্ট করে দিতে সহায়তা দিয়েছি স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে !
 
যার একক হাতে ডিজাইন/ডেভেলপ করা আছে দেশ-বিদেশের প্রায় দুই শতাধিক ওয়েব সাইট, যার মধ্যে শতাধিক আছে সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপিত স্কুল/কলেজ/মাদ্রাসার ওয়েব সাইট। যার নিজ হাতে তৈরি প্রায় ত্রিশোর্ধ কন্টেন্ট আছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমণ্ডলীর সংগ্রহে। যার তৈরি কন্টেন্ট দেখিয়ে জেলায় প্রথম হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক/ডিইও।
 
যার আয়ের অধিকাংই আসে অনলাইন ফ্রীল্যান্সিং করে, ওয়েব সাইট ডিজাইন করে, গ্রাফিক্স ডিজাইন করে, কন্টেন্ট তৈরি করে। ২০০৯ সালে ‍যিনি বি. এড. প্রশিক্ষণের ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ফরমায়েসী ভিন্ন ভিন্ন কন্টেন্ট তৈরি করে দিতেন তাঁদের ক্লাসের এ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে ! তখন, যখন যেখানে দেখা গেছে শিক্ষকদের মধ্যে হয়তো ১০-১২% ও জানতেন কি না সন্দেহ পাওয়ার পয়েন্ট, ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর . . .  কী বিষয় !
 
তিনি, একাধিক গ্রুপ/পেইজ/প্রোফাইলের একমাত্র এ্যাডমিন, ‍যিনি দেশের অন্যতম সেরা স্কুল সহ সরকারি স্কুলে প্রায় দশ বছর চাকরি জীবনে আজ পর্যন্ত চিনেনা, জানেওনা এই ধরণের ট্রেনিংগুলো কোথায় দে’য়া হয়, কারা দেন এই ট্রেনিংগুলো !!!
 
তিনি, যিনি জানেওনা তার কাছে হাতে খড়ি নিয়ে কখন বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন উচ্চতর ট্রেনিং নিতে !!!
 
আহা, শিক্ষায় কী ট্রেনিং !!!
আহা, কী অপার সাম্যবাদ নীতি !!!
২রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫