নবীজীর জুব্বা  মোবারক, জুতা মোবারক, চুল মোবারক, দাড়ি মোবারক ইত্যাদি এগুলোর সবই শিয়াদের ধোঁকা।
অতএব, ইমানদারগণ আপনার ইমান রক্ষার্থে সাবধান !!!

১৯৮৯ সালে নাটকীয়ভাবে বার্লিন ওয়াল ভেঙ্গে ফেলা হয়। “কম্যিউনিস্ট দানবদের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদীদের পবিত্র ক্রুসেড জয়ের ঘটনা সেটি।

নবীজীর জুব্বা (1)

ঘটনার কিছুদিন পর থেকে, যত্ন করে পলিথিনের ছোট প্যাকেটে ভরা রাবিশ বিক্রি শুরু হয়; সেগুলো নাকি ভাঙ্গা বার্লিন ওয়ালের টুকরা! পুঁজিবাদী ধর্মের লোকজন সেই পবিত্র রেলিক পরম যত্নে কিনে নিয়ে বাসায় মর্যাদার সাথে সাজিয়ে রাখতে শুরু করে।

নিষিদ্ধ কিছু কাজ

কিছুদিন পরে খবর আসে, বিশ্বের দেশে দেশে বার্লিন ওয়ালের টুকরা বিক্রির বেশ রমরমা পুঁজিবাদী উৎসব চলছে, তবে, সেগুলো সবই নকল! . . .

নবীজীর জুব্বা (2)

তুরস্কে এক বিরাট মেলা বসেছে, দলে দলে লোক সেখানে ভীড় করছে। নবী মোহাম্মাদ (সঃ) -এর জোব্বা নাকি প্রদর্শিত হচ্ছে! টার্কি এই কাজে খুব চালু; সেখানে ওমুক নবীর লাঠি, তমুক নবীর তরবারি এসব সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ভালো ব্যাবসা চালু আছে।

এক মসজিদের এক কামরায় সংরক্ষিত নবী মোহাম্মাদ (সঃ) -এর জোব্বা এক নজর দেখার অবস্থা খেয়াল করুন। তৃতীয় ছবিতে দেখুন, এই রমজান মাসের অতি মূল্যবান সময় তারা ব্যায় করছেন এই জোব্বা দেখার জন্যে মসজিদের বাইরের কত লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে!

নবীজীর জুব্বা (3)

কাশ্মীরে নবী মোহাম্মাদ (সঃ) -এর চুল নাকি সংরক্ষিত আছে, হজরতবাল মসজিদে।

স্থান সংকুলান না হওয়ায়, মক্কা-মদীনায় হেরেম শরীফ দুটোর সম্প্রসারণ কাজ চলাকালে, “এটা ভাঙ্গা পড়েছে”, “ওটাও সৌদীরা ভাঙতে পারলো” -টাইপের আহাজারি শোনা গেছে। এমনকি, “মক্কা-মদীনার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংরক্ষণ কমিটি” না কী যেনো নাম দিয়ে একপাল লোক দেশে দেশে সংবাদ সম্মেলনের নামে সৌদী বিদ্বেষ ছড়িয়ে বেড়িয়েছে।

অথচ, কেউ হজ্জ্ব করতে গিয়ে থাকলে, উপলব্ধি করার কথা যে, হেরেম শরীফ সম্প্রসারণ করা ছাড়া উপায় নাই এবং, ইসলামে, “বস্তু”র দাম একেবারেই তুচ্ছ। ইসলামে স্মৃতি সংরক্ষণ হয় সুরম্য সমাধিতে নয়, দোয়ার মাধ্যমে।

নবীজীর জুব্বা (4)

নবী মোহাম্মাদ (সঃ) -এর জোব্বা বা চুল নিয়ে মাতামাতি করার কী মূল্য! কর্তব্যতো হলো গিয়ে নবী মোহাম্মাদ (সঃ) এ-র শিক্ষা নিজ জীবনে প্রতিষ্ঠার সাধনা করে যাওয়া।

কাশ্মীরে হজরতবাল মসজিদ থেকে নবী মোহাম্মাদ (সঃ) -এর চুলটি চুরি হয়েছে, ১৯৬৪ সালে এই সংবাদটি চিলে কান নিয়ে যাওয়ার মতো করে ছড়িয়েছিল; এই নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক দাঙ্গা হয়। দাঙ্গা শব্দটি দ্বিপাক্ষিক; তাই, এই ক্ষেত্রে আসলে প্রতারণামূলক -চুলের প্রেমে দিওয়ানা মুসলিমরা হিন্দুদেরকে আক্রমণ করে, নির্বিচারে খুন করে, হিন্দুদের উপাসনালয়ে আক্রমণ করে ভাংচুর করেছে!

নবীজীর জুব্বা (5)

হ্যাঁ, আবেগের জোশে যখন হুঁশ হারায়, তখন মুসলিমরা নবীর (সা:) শিক্ষা, আল্লাহ্‌র নির্দেশের বিরুদ্ধে গিয়ে এইরকম পশুর মতো আচরণ করে।

এছাড়া, এমনিতেই মুসলিমদের ধর্মাচরণকে কলুষিত করতে বিভিন্ন মতলববাজ সক্রিয় হয়ে আছে। বড়দিনে কৃশ্চিয়ানদের প্রভূ যীশুর জন্মদিন ক্রিসমাস উৎসবের নকল করে, মুসলিমদের মধ্যে নবী (সঃ) এর বার্থডে পার্টি “ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী”র প্রচলন ঘটানো হয়েছে।

নবীজীর জুব্বা (6)

প্রভূ যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, সেটা এতো বড় ঘটনা যে, কৃশ্চিয়ানরা মেটালের হলিক্রস গলায় ঝোলান। এছাড়া, পবিত্র জ্ঞানে, ট্রু ক্রস বিশ্বাসে, সুন্দরভাবে প্যাকেট করা ছোট কাঠের টুকরা কিনে এনে ঘরে যত্নের সাথে সাজিয়ে রাখেন। এতো শত বছর গেলো, যীশুকে হত্যা করা ক্রুশের টুকরা এখনও বিক্রি হয়েই যাচ্ছে, শেষ হয়ে যাচ্ছে না!

মুসলিমরাও (বাংলাদেশী), মক্কায় গিয়ে ক্বাবার গিলাফ কেটে আনতো, সেই চুরি করা গিলাফের টুকরা কাফনের ভিতর দিয়ে দিতো, গিলাফের পবিত্রতা মাইয়্যাতকে পাপের শাস্তি থেকে রক্ষা করবে – এই বিশ্বাসে!

হজ্জে গিয়ে আরেকটি কাজ করেন দক্ষিন এশিয়ার কিউট মুসলিমরা, জান্নাতুল বাক্বী কবরস্থানের মাটি চুরি করে আনেন; সেই মাটি ঘরের প্রবেশ দ্বারে লেপে দিলে নাকি অশুভ শয়তান প্রবেশ করতে পারবে না! এই টাইপের মুসলিমরাই আবার, সনাতনীদের গোবর লেপা নিয়ে কুৎসিত হাসাহাসি করেন!

মাঝে খাজা বাবার নামে একটি কয়েক রঙে রঙ্গীন সুতা বিক্রি হতো খুব, এখনও হিন্দুরূপী অনেক মুসলমান যুবকের হাতে তা শ্রীবৃদ্ধি করতে দেখা যায়। রাখী বন্ধনের নকল করে সেটা কব্জিতে বাঁধা হত! এখনও হয়, তবে আমি খেয়াল করি না।

মুসলিমরা এতো কিউট অবোধ কেনো? ধর্ম কেন কোরআন সুন্নাহ্‌তে খুঁজে বা যাচাই করে দেখে না ???

এবার আসুন হাদিস থেকে দেখে নেই রাসুল (সাঃ) কী ধরণের পোষাক পরিধান করতেন- 

১) অধিকাংশ সময় রাসুল (সা.) একটি চাদর আর সেলাইবিহীন একটি কাপড় পরিধান করতেন। (শামায়েলে তিরমিজি : ৮)

২) মুহাম্মাদ ইব্‌নুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা জাবির (রাঃ) কাঁধে লুঙ্গি বেঁধে সালাত আদায় করেন। আর তাঁর কাপড় (জামা) আলনায় রাখা ছিল। তখন তাঁকে এক ব্যক্তি বললোঃ আপনি যে এক লুঙ্গি পরে সালাত আদায় করলেন? তিনি জবাবে বললেনঃ তোমার মত আহাম্মকদের দেখানোর জন্য আমি এমন করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর যুগে আমাদের কার দু’টো কাপড় ছিল? (৩৫৩, ৩৬১, ৩৭০ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ৩৩৯ , ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৫)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৫২ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

নোটঃ উক্ত প্রশ্ন দ্বারা বুঝা যায় রাসুল (সাঃ) -এঁর যুগে অধিকাংশেরই মাত্র একটি কাপড় ছিল।

৩) পরবর্তী হাদিসটি আরো পরিষ্কার

মুহাম্মাদ ইব্‌নুল মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) -কে এক কাপড়ে সালাত আদায় করতে দেখেছি। আর তিনি বলেছেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এক কাপড়ে সালাত আদায় করতে দেখেছি। (৩৫২; মুসলিম, ৪/৫২, হাঃ ৫১৮, আহমাদ ১৫১৩৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ৩৪০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৩৪৬)

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৫৩

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

৪) উমর ইব্‌নু আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উম্মু সালামা (রাঃ)-এর ঘরে একটি মাত্র কাপড় পরিধান করে সালাত আদায় করতে দেখেছেন। তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] সে পাড়ের উভয় প্রান্ত নিজের উভয় কাঁধে রেখেছিলেন।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৫৫

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

১) পবিত্র কোরানে মহান আল্লাহ বলেন

Al-A’raf 7:26

يَٰبَنِىٓ ءَادَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَٰرِى سَوْءَٰتِكُمْ وَرِيشًاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌۚ ذَٰلِكَ مِنْ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

হে বনী-আদম আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবর্তীণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং অবর্তীণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র এবং পরহেযগারীর পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর কুদরতেরঅন্যতম নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।

সুরা আল আরাফ, আয়াত ২৬

[][] এখন উপরের চিত্রে দেওয়া পোশাকটি দেখুন, সেটি পরিধান করে সিজদাহ দিলে কোমড় বা সতর দেখা যাবে এবং লজ্জাস্থান ঢাকার জন্যও যথেষ্ট নয়।

২) পোষাক ঢিলে ঢালা হতে হবে। পাতলা কাপড় যা সতর দেখা যায়, বা এমন কাপড় যা পড়ার পরও সতর দেখা যায় এইসব নিষেধ)।

দলিলঃ সুনানে বাইহাকী; পৃঃ ৪৭৮ হাদীস নং ৭৩৯৯, সহীহ মুসলিম হাঃ নং ৫৪১৯।

৩) পুরুষদের নারীদের মত পোষাক পরা, আর নারীদের পুরুষদের মত পোষাক পরা যাবেনা।

দলিলঃ আবু দাউদ হাঃ নং ৪০৯৮।

[] অথচ দেখুন উপরের চিত্রে দেওয়া তিনটি পোশাকই একই রকম।

৪) বিধর্মীদের মত পোষাক পরিধান করা যাবেনা।

দলিলঃ তাবরানী- মু’জামে আওসাত হাঃ নং ৩৯২১, সহীহ মুসলিম; হাদীস নং ৫৩৭৩।

৫) বিজাতির সাথে সাদৃশ্য হয় এমন পোষাক পরিধান করা যাবেনা।

দলিলঃ আবু দাউদ ২য় পৃঃ ৫৫৯, মুসনাদে আহমদ ২য় পৃঃ ৫০

[] এখন উপরের চিত্রের  পোশাকটির সাথে বিজাতিদের পোশাকের সাথে মিলিয়ে নিন।

৬) পুরুষদের জন্য জাফরানী রং, রেশমী কাপড়, গাঢ় লাল, হলুদ পোশাক পরিধান করা যাবেনা।

দলিলঃ সহীহ মুসলিম হাঃ নং ৫৩৪৬, সহীহ মুসলিম হাদিস নম্বর : ৫২৪৫, সহীহ বুখারী হাঃ নং ৫৪১৭, ৫৪২০।

রাসূল ﷺ এর জুব্বা বিষয়ক সংবাদ ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট, এগুলি কখনোই বিশ্বাস করবেন না। স্যোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল হবার জন্য মানুষ নিজের পরকাল হারাতেও দ্বিধাবোধ করে না! মহান আল্লাহ এদের হেদায়েত দিন।

রাসূল (ﷺ) -এর নামে মিথ্যাচারের জন্যই জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। তাই আবেগের বশবর্তী হয়ে সত্য-মিথ্যা যাচাই-বাছাই না করেই এসব প্রচার করা থেকে বিরত থাকুন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

لا تَكْذِبُوا عَلَيَّ فَإِنَّهُ مَنْ كَذَبَ [يَكْذِبْ] عَلَيَّ فَلْيَلِجِ النَّارَ.

‘‘তোমরা আমার নামে মিথ্যা বলবে না; কারণ যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তাকে জাহান্নামে যেতে হবে।’’[১]

যুবাইর ইবনুল আউয়াম (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :

مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

‘‘যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা বলবে তার আবাসস্থল জাহান্নাম।’’[২]

সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রা) বলেন: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :

مَنْ يَقُلْ عَلَىَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

‘‘আমি যা বলি নি তা যে আমার নামে বলবে তার আবাসস্থল জাহান্নাম।’’[৩] এভাবেই রাসূলুল্লাহ ﷺ উম্মাতকে তাঁর নামে মিথ্যা বলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন এবং প্রায় ১০০ জন সাহাবী এ অর্থে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর কোন হাদীস এত বেশি সংখ্যক সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়নি।[৪]

দলিলঃ[১] বুখারী, আস-সহীহ ১/৫২; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ১/১৯৯, মুসলিম, আস-সহীহ ১/৯।

[২] বুখারী, আস-সহীহ ১/৫২।

[৩] বুখারী, আস-সহীহ ১/৫২।

[৪] নাবাবী, শারহু সাহীহ মুসলিম ১/৬৮, ইবনুল জাওযী, আল-মাউযূ‘আত ২৮-৫৬।

প্রশ্ন : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন (যেমন, মাথার চুল, জুতা, জামা, লাঠি, পাগড়ি ইত্যাদি) আসলেই কি এগুলো রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর ব্যবহৃত আসবাব-সমগ্রী? এবং এ বিষয়ে আমাদের করণীয়।

উত্তর: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যেমন তা বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হওয়া জরুরি ঠিক তদ্রূপ তাঁর ব্যবহৃত পোশাক, জুতা, জামা, জুব্বা, চাদর, পাগড়ি, মাথার চুল, লাঠি, ঘটি-বাটি ও অন্যান্য ব্যবহৃত আসবাব-পত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রেও তা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত হওয়া জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হল, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যে সব বস্তুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধ করা হচ্ছে সেগুলোর পেছনে বিশুদ্ধ কোন সনদ নেই যে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ছবির ক্ষেত্রেও একই কথা।

সুতরাং সু-সাব্যস্ত দলিল ছাড়া এ সব স্মৃতি চিহ্ন বা সেগুলোর ছবিকে শতভাগ বিশ্বাস করার কোনো সুযোগ নাই। সঠিকও হতে পারে; বেঠিকও পারে। নিশ্চিতভাবে কোন কিছুই বলা যাবেনা। ছবির ব্যাপারটা আরও অনিশ্চিত। কারণ বর্তমানে এডিটিং -এর মাধ্যমে ইন্টারনেট জগতে শতশত ফেইক ছবি ছড়িয়ে পড়েছে- যেগুলোর সত্যতা নিরূপণ খুবই দু:সাধ্য বিষয়।

যাহোক, ঐতিহাসিক ও মুহাদ্দিসগণ লিখেছেন, যুগের বিবর্তনে বিভিন্ন বড় বড় যুদ্ধ ও ফেতনা-ফ্যাসাদের কবলে পড়ে (যেমন, তাতারদের বাগদাদ আক্রমণ, তৈমুরলং এর ঘটনা ইত্যাদিতে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট বা নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে।

✪ শাইখ আলবানী রহ. বলেন:

نحن نعلم أن آثاره صلى الله عليه وسلم، من ثياب، أو شعر، أو فضلات، قد فقدت، وليس بإمكان أحد إثبات وجود شيء منها على وجه القطع واليقين

“আমরা জানি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিভিন্ন স্মৃতি চিহ্ন যেমন, কাপড়, চুল বা ব্যবহৃত বস্তু-সামগ্রী হারিয়ে গেছে। এখন এগুলো থেকে কোনো কিছু অবশিষ্ট রয়েছে তা কারো দ্বারাই সুনিশ্চিত ভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়।” (আত তাওয়াসসুল,পৃষ্ঠা ১৪৬)

✪ ‘আল আসার আন নববিয়া’ তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্মৃতিচিহ্ন শীর্ষক বইয়ের লেখক উসমানী খেলাফতের রাজধানী কুসতুনতুনিয়া (কনস্টান্টিনোপল) এর যাদুঘরে সংরক্ষিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিকে সম্বন্ধকৃত বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন উল্লেখ করার পর বলেন:

“একথা স্পষ্ট যে, কিছু স্মৃতিচিহ্ন সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আমরা এমন কোন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিকে দেখিনি যে, এগুলোকে সঠিক বা বেঠিক বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলাই এ সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো জানেন। আর এমন কিছু স্মৃতিচিহ্ন আছে যে ব্যাপারে একথা গোপনের কোনো সুযোগ নাই যে, এগুলোর ব্যাপারে মনের মধ্যে সংশয় ও সন্দেহের দোলাচল ঘুরপাক খায়।” (গ্রন্থ: আল আসার আন নববিয়া, লেখক: আহমদ তৈমুর বাশা, পৃষ্ঠা নং ৭৩)

অতএব, ভারতের কেরালায় কতগুলো লম্বা লম্বা চুলকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ‘চুল মোবারক’ বলে ধুয়ে পানি বিক্রয়ের ব্যবসায় প্রতারিত হওয়া বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর লাঠি, পাগড়ি, তলোয়ার, ঘটি-বাটি ইত্যাদির ছবি বিক্রয় করা বা সেগুলো কিনে এনে ঘরে ঝুলিয়ে রেখে বরকতের আশা করা, কথিত ‘নালাইন শরীফ’ তথা ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেন্ডেল/খড়ম শরিফ’ ইত্যাদির ছবি তাবিজ বানিয়ে গলায় ঝুলানোর ফযিলতে বিশ্বাস করা নেহায়েত জিলাপী সিন্নীখোরদের বাড়াবাড়ি, অজ্ঞতা ও শরিয়ত বহির্ভূত কাজ ছাড়া আর কিছুই নয়।

মনে রাখতে হবে, প্রকৃত বরকত ও কল্যাণ রয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা, তাঁর হাদিস ও সুন্নতের প্রতি সম্মান জানানো, তাঁর সুন্নতের অনুসরণ-অনুকরণ করা, তাঁর নিষেধ থেকে দুরে থাকা এবং তাঁর আদর্শের আলোকে আমাদের সামগ্রিক জীবন ঢেলে সাজানোর মধ্যে।

সুতরাং আসুন, আমরা এ সব স্মৃতিচিহ্ন ও ছবি (যা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত নয়) এর পেছনে না ছুটে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর রেখে যাওয়া বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত সুন্নাহর আলোকে আমাদের ঈমান, আকীদা, চরিত্র, আচার-আচরণ তথা পুরো জীবনকে ঢেলে সাজাই। মূলতঃ এতেই রয়েছে অবারিত কল্যাণ ও সফলতা। আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমীন।

উত্তর প্রদানে:
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব KSA.

শেষকথা : পোশাক নিয়ে এতো মাতামাতির কিছুই নাই। রাসুল (সাঃ) -এঁর হাদীস-সুন্নাহ পালন নিয়ে মাতামাতি করুন, কাজে লাগবে ইনশা আল্লাহ।