গুগলে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুন্দর মহিলা লিখে সার্চ দিলে যে নামটি আসবে তা হল লিজ্জি ভেলাসকুয়েজ। ২৫ বছর বয়সী এই নারীর জন্ম ১৯৮৯ সালে আমেরিকার টেক্সাসে। জন্মের পর থেকেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত লিজ্জি। যে ব্যাধিতে তার দেহের ওজন বাড়েনা কখনই। বর্তমানে জানামতে মাত্র ৩ জন রোগীই এই রোগে আক্রান্ত। মাত্র ৬৫ পাউন্ড ওজনের অধিকারী তিনি। জন্মের সময় ও ছিলেন মাত্র ১২৫২ গ্রাম ওজনের। এক চোখ অন্ধ এই লিজ্জির কপালে জুটেছে দুনিয়ার সবচেয়ে কুৎসিত মহিলার তকমা।
ফারজানা ঊর্মিলিজি ভেলাসকুইজ, ২৩ বছর বয়সে ভালোবাসার ভেলায় যখন ভেসে যাওয়ার কথা তরুণীটির, তখন তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে চরমতম রূঢ়তার। হাইস্কুলে পড়ার সময় কে বা কারা লিজির একটি ভিডিও আপলোড করেছিল ইউটিউবে। মাত্র ৮ সেকেন্ড দীর্ঘ ভিডিওটি পেয়েছিল ৪ মিলিয়নেরও বেশি হিট। দুঃখজনক হলেও সত্যি, ভিডিওটির মাধ্যমে লিজিকে খেতাব দেওয়া হয়েছিল পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত নারী হিসেবে। প্রি-ম্যাচিওর শিশু হিসেবে জন্মানো লিজি জন্মগতভাবে এমন এক অবস্থার শিকার, চিকিৎসাশাস্ত্রে যার নাম স্কিনি বোন সিনড্রোম। তার বয়স তখন ১৭ বছর। ইউটিউব ঘাটাঘাটি করছিলেন লিজ্জি। হঠাৎ চোখে পড়ল আপলোড করা একটি ভিডিও। শিরোনাম, “দুনিয়ার সবচেয়ে কুৎসিত মহিলা।” আর সেখানে নিজেরই ছবি। একজন কমেন্ট করল, “মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মরে যাও, পৃথিবীকে মুক্ত কর।” দুচোখের কোণে জল ছলছল করার কথা ছিল লিজ্জির। কিন্তু সেদিনটিই ছিল তার জীবনের স্মরণীয় দিন। কেমন একটা ক্ষোভ চেপে ধরল তাকে। দুনিয়াকে দেখিয়ে দেবেন তিনি। বিশ্বকে নতুন কিছু উপহার দিতে দারুণ সব প্ল্যান নিয়ে অগ্রসর হতে থাকলেন তিনি।
ডিসেম্বর ৫, ২০১৩। ‘টেড টক’ (আইডিয়া শেয়ারের জন্য ছোট বক্তব্য,যেখানে মানুষ নিজের দুখ প্রকাশ করে) এ কথা বললেন তিনি। অস্টিনে দেয়া তার ওই বক্তব্য বিশ্বের বুকে আলোড়ন তুলল। তার সেই ভিডিও টি এখন পর্যন্ত প্রায় ৫.৯+ মিলিয়ন লোক দেখেছ। একজন সেলিব্রিটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন লিজ্জি। বক্তব্যে তিনি তার ১৭ বছরের মাথায় ঘটা সেই কাহিনী সবাইকে বললেন। ‘আমি স্পেশাল, আর তাই সবাই আমাকে অন্য চোখে দেখে। এই বিশেষ অসুখ আমার জন্য আশীর্বাদ।’ নিজের বাবা মাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা মা হিসেবে আক্ষা দেন এই সেলিব্রিটি। অন্য দুই ভাইবোনের মতই সমান অধিকার দিয়ে লিজ্জিকে বড় করেছেন তার বাবা মা।
ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে আর মাত্র দু’জন এই রোগে আক্রান্ত। আর এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রধান লক্ষণ হলো, এদের ওজন সহজে বাড়ে না। টেক্সাসের সান এন্টোনিওতে নির্দিষ্ট সময়ের ৪ সপ্তাহ আগে লিজি জন্মেছেন মাত্র ২ পাউন্ড ১১ আউন্স ওজন নিয়ে। ৪০ বছর বয়স পেরিয়েও লিজির সর্বোচ্চ ওজন ৬০ পাউন্ড। ডাক্তারের পরামর্শমতো ১৫ মিনিট পরপর নিজের পছন্দমতো খাবার খান লিজি। কিন্তু প্রয়োজনীয় চর্বি সঞ্চয় করতে এবং পেশি গঠন করতে অক্ষম তার শরীর। সে কারণেই তাকে সবসময় জিরো সাইজ কাপড়ই পরতে হয়। মাত্র ৪ বছর বয়সে একটি চোখে অন্ধকার নেমে আসে তার, সীমিত দৃষ্টিশক্তির জন্য অন্য চোখেও পরতে হয় কন্টাক্ট লেন্স।
মা রিতা ভেলাসকুয়েজ বলেন, ডাক্তার আমাকে বলে মেয়ের অসুখের কথা। নির্ধারিত সময়ের ৪ সপ্তাহ আগেই দুনিয়াতে আসে লিজ্জি। তার অসুখের কথা শুনে আমি কাঁদছিলাম। প্রথম কোলে পেয়ে জড়িয়ে আদর করছিলাম তাকে। বাবা বললেন, কিন্টার গার্ডেন এর প্রথম দিন কেও খেলা করছিলনা লিজ্জির সাথে। তাও সে দেখিয়েছে অসাধারণ আচরণ। তিনি ও তার মা মিলে ২০১০ সালে প্রথম বই প্রকাশ করেন যার নাম ” লিজ্জি বিউটিফুল:দ্যা লিজ্জি ভেলাসকুয়েজ স্টোরি। এরপর তিনি তরুন-তরুনীদের উজ্জীবিত করার জন্য আরো দুটি বই লিখেন। বইগুলো হচ্ছে ‘বি বিউটিফুল, বি ইউ'(২০১২), চুজিং হ্যাপিনেস(২০১৪) যার প্রথমটা স্প্যানিশ ভাষায় ও অনুবাদিত হয়। তখনকার বেস্ট সেলার বই ছিল এটি।
এক সাক্ষাৎকারে লিজির মা বলেন, এ মেয়ে জন্মের পর আমার হাতের তালুর মধ্যে এঁটে যেত। আমি আর আমার স্বামী ওর জন্য পুতুলের কাপড় কিনতাম, কারণ স্বাভাবিক বাচ্চাদের কাপড় ওর গায়ে অনেক ঢিলে হতো_ বলতে বলতে একবার হাসেন তো আরেকবার কাঁদেন তার মা। ছোটবেলায় লিজির ডাক্তাররা বলেছিলেন, বেঁচে থাকলেও চলাফেরা করার কিংবা চিন্তা-ভাবনা করার ক্ষমতা হয়তো থাকবে না তার। ডাক্তারের কথাকে ভুল প্রমাণিত করে লিজি এখন দু’দুটি বইয়ের (তৃতীয় বইটিও প্রকাশ পাবে এ বছরই) লেখিকা। শুধু তাই নয়, একসময় সবচেয়ে কুৎসিত নারী হিসেবে খেতাব পাওয়া লিজি এখন অন্যদের প্রেরণা দিয়ে থাকেন তার লেখা এবং বক্তব্যের মাধ্যমে। ইউটিউবে ডাউনলোড করা ভিডিওটি দেখে একসময় খুব ভেঙে পড়েছিলেন লিজি।
কেউ কেউ তো এমনও বলত_ ‘তোমার মাথায় একটা গুলি করে কেউ কি পৃথিবীটার একটা উপকার করবে!’হতাশার ছাই-ভস্ম থেকে নিজেকে একসময় টেনে তোলেন লিজি। বুঝতে পারেন তার জীবনের একটা মহান উদ্দেশ্য আছে। আর সেটা হচ্ছে আশা ও প্রেরণার দূত হওয়া’কিন্তু এটা আমার জন্য খুব একটা সহজ ছিল না।’ এক সাক্ষাৎকারে লিজি বলেন, ‘আমি জানতাম, আমি যখন কোনো রুমে ঢুকব তখন লোকজন আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকবে। কিন্তু এর মধ্যেও আমাকে আমার কাজ করে যেতে হবে।’লিজি অসম্ভব ভাগ্যবতী যে, তিনি একটি অসাধারণ পরিবার পেয়েছেন। বাবা-মা আর ছোট দুই ভাইবোনের এ পরিবার তাকে অসম্ভব ভালোবাসে, সব দুঃসময়ে তার পাশে থেকেছে এবং লিজিকে নিয়ে তার পরিবার সত্যিই গর্বিত। নিজের লক্ষ্য স্থির করার পরপরই লিজি একটি ভিডিও রেকর্ড করেন, যেটার নাম দেন ‘কারেজ অ্যান্ড ডিটারমিনেশন’। ‘প্রতিটা দিনই একটা যুদ্ধ’_ এই হৃদয় নিংড়ানো বাক্যটি দিয়ে শুরু হয়েছে তার এই ভিডিও। সব কষ্টকে অতিক্রম করে লিজি ভিডিওটিতে তার চারটি লক্ষ্য তুলে ধরেন_প্রেরণাদায়ক বক্তা হওয়া।বই প্রকাশ করা।কলেজ গ্র্যাজুয়েট হওয়া। এবংনিজের পরিবার এবং ক্যারিয়ার গড়ে তোলা।
লিজ্জি তার ডকুমেন্টারি ফিল্ম ‘দ্যা লিজ্জি প্রজেক্ট’ এর জন্য খেটে যাচ্ছেন অবিরাম। তিনি বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাক্তি ও সংস্থা থেকে ডোনেশান পাচ্ছেন যা তিনি জনসেবা মুলিক কাজে লাগাচ্ছেন। তার এই অর্থের পরিমাণ ১কোটি ডলারের ওপরে। জীবনযুদ্ধে হার না মানা এই সাহসী নারী আজ কোটি কোটি তরুণের আদর্শ।
আজ লিজি একজন অভিজ্ঞ প্রেরণাদায়ক বক্তা। গত ৬ বছরে তিনি ২০০টিরও বেশি ওয়ার্কশপ করেছেন। দুটি বইয়ের লেখক এখন তিনি। প্রথম বই ‘লিজি বিউটিফুল’-এ তিনি তার নিজের কথা তুলে ধরেছেন। ‘বি বিউটিফুল, বি ইউ’ নামের তার দ্বিতীয় বইটিও প্রকাশিত হয়েছে। খুব শিগগিরই লিজি বেরুবেন গ্র্যাজুয়েট হয়ে। ‘কারেজ অ্যান্ড ডিটারমিনেশন’ নামের ভিডিওটিতে লিজির শেষ কথাটি ছিল এ রকম_ ‘পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত নারী এবং ভিডিওর মধ্যে যে যুদ্ধ, আমার ধারণা আমি সে যুদ্ধে জিতেছি। ‘আমরাও দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই_ হ্যাঁ লিজি ভেলাসকুইজ, আপনি সত্যিই জিতেছেন।
ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে লাখ ফলোয়ার তার। বিশ্বের বুকে এক দৃষ্টান্তের নাম লিজ্জি !
তার আপলোড করা সর্বশেষ ইউটিব ভিডিওটিঃ
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
________________________________________
শেয়ার করতে পারেন।
ধন্যবাদ
www.saifoddowla.com
________________________________________
আপনার ব্লগ দেখতে ক্লিক করুন এখানে
আপনার বয়স সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর পেতে ক্লিক করে সহযোগিতা নিন এখান থেকে
সকল সংবাদপত্রগুলির লিংক
====================================================================
প্রয়োজনীয়, জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু যোগাযোগ নম্বরের লিংক
====================================================================
শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য, পুরষরা উঁকি দিতে চেষ্টা করবেন না . . . ২
====================================================================
অভ্র বা বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইন্টারনেট জগতে অতি সহজে বাংলা লেখার উপায় . . .
====================================================================
যারা অভ্রতে লেখেন তারা ক্লিক করতে পারেন লিংকটিতে
====================================================================
একহাজার . . . একটি টিপস
====================================================================
ঘুরে আসুন ইন্টারনেটের অন্ধকার দুনিয়ার ডীপ ওয়েব, ডার্ক ওয়েব সাইটগুলো থেকে।
====================================================================
ইংরেজি বিষয় সহ জেনে নিন প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ১
Leave A Comment