এক নজরে বগুড়া জেলা

বগুড়া উত্তরবঙ্গের একটি শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর। এটি রাজশাহী বিভাগ এর অন্তর্গত। বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। ইহা একটি শিল্পের শহর। এখানে ছোট ও মাঝারি ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বগুড়া জেলায় প্রাচীনতম ইতিহাস রয়েছে। বগুড়া জেলা পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানী ছিল। যার বর্তমানে মহাস্থানগড় নামে পরিচিত।বগুড়া শহরের আয়তন ৭১.৫৬ বর্গকিলমিটার যা ২১ টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত । বগুড়া শহরে “শহীদ চান্দু নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে এছাড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (সরকারি) শহর থেকে সামান্য দুরেই অবস্থিত । বগুড়া দইয়ের জন্য খুব বিখ্যাত ।বগুড়া শহরে থেকে ১১ কিঃমিঃ উত্তরে মহাস্থানগড় অবস্থিত, যা একসময় প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল এবং সেসময় পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের প্রধান মেজর জিয়াউর রহমান বগুড়ার জেলার গাবতলী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন।

পটভূমি:
উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত বগুড়া সদর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বিশ্বরোড নামক প্রশসত্ম সড়ক। বাংলাদেশের একমাত্র ফাউন্ড্রি শিল্পখ্যাত বগুড়া সদর উপজেলা। ফাউন্ড্রি শিল্পের পাশাপাশি বর্জ্য তুলা, ঝুট কাপড়, সাবান, বেডসীট মশারী কাপড়, জুট মিলস, পেপার মিলস, ফিড মিলস, সিমেন্ট কারখানা, পোল্ট্রিশিল্প সহ এগ্রো বেসড্ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ সব শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন হয়। যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া, কানাডা সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তান্তি বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।

এ উপজেলায় মহাসড়কের দু’পাশে অবস্থান করছে প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত বগুড়া সদর উপজেলার গ্রামগুলো। উপজেলাটি খাদ্য শস্য ও শাকসবজি উৎপাদনের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত। এ জনপদের জনসাধারণের বহুদিনের আশা-আকাংখার প্রতিক শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শহীদ চাঁন্দু আমত্মর্জাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম, জাতীয় কম্পিউটার প্রশিÿণ ও গবেষণা একাডেমী, এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ অন্যতম নারী সংগঠন পরবর্তীতে এনজিও হিসাবে পরিচিত ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ ( টিএমএসএস) এর সদর দপ্তর এ উপজেলার মধ্যে অবস্থিত। এছাড়া, গোকুল ইউনিয়নে মেধ নামক স্থানে ঐতিহাসিক বেহুলা – লক্ষিনদরের বাসর ঘর, চাঁদমুহা হরিপুর-সাহার বিল এলাকায় চাঁদ সওদাগরের বসতবাড়ি, নামুজা ইউনিয়নের চিংগাসপুরে পদ্মাদেবীর বাড়ি, লাহিড়ীপাড়া ইউনিয়নের রায়-মাঝিড়ায় কালু গাজীর কোর্ট এবং নুনগোলা ইউনিয়নের হাজরাদিঘী এবতেদায়ী মাদ্রাসা সংলগ্ন সাপের ওঝাঁ ধনমত্মরীর বাড়ি অবস্থিত। উপজেলার প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় সার্কিট হাউজ সংলগ্ন নবাববাড়ি যা বর্তমানে প্যালেস মিউজিয়াম ও কারুপলস্নী নামে বহুল পরিচিত। ঐতিহাসিক আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠ ও বগুড়ার উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি যা ১৮৫৪ সালে স্থাপিত হয়েছে। উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি সংলগ্ন স্থানে বৃটেনের রাজ পরিবারের সদস্য এ্যাডওয়ার্ড সপ্তম জজ এর একটি প্রাচীন ভাস্কর রয়েছে। বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে শাহাদৎ বরণকারি দেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট ৭জন বীরশ্রেষ্ট সমত্মানের স্মৃতিসত্মম্ভ স্থাপনা উলেস্নখ্যযোগ্য। উত্তরবঙ্গে সর্বপ্রথম আমত্মর্জাতিক মানের চার তারাকা হোটেল নাজ গার্ডেন এবং শিশুদের চিত্তবিনোদনের স্থান ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক সদর উপজেলাতেই অবস্থিত। এ উপজেলায় তদানিমত্মন পাকিসত্মানের প্রধানমন্ত্রী জনাব সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধূরী, বিশিষ্ট সাহিত্যিক রোমেনা আফাজ, এম.আর আকতার মুকুল, বি.এম ইলিয়াস, ভাষা সৈনিক গাজীউল হক, পলস্নী কবি রোসত্মম আলী কর্ণপুরী, কণ্ঠশিল্পি আঞ্জুমান আরা জম্ম গ্রহণ করেছেন।

ইতিহাসঃ
ইতিহাস থেকে জানা যায় বাংলার প্রাচীনতম একটি শহর বগুড়া। ভারতের রাজা “আশকা” বাংলা জয় করার পর এর নাম রাখেন পুণ্ড্রবর্ধন । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বগুড়া ৭ নং সেক্টরের অধীনে ছিল ।
ভৌগোলিক অবস্থানঃ
বগুড়া শহর করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত । করতোয়া নদী উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বগুড়াকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে । বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা পশ্চিমে নওগাঁ জেলা, দক্ষিনে সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পুর্বে যমুনা নদী ।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ বগুড়া। পৌরাণিক এবং প্রাচীনকালের ইতিহাসে বগুড়া দখল করে আছে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুন্ড্রবর্ধনই হচ্ছে এ বগুড়া জেলা। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি রাজাদের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল প্রাচীন জনপদ বগুড়া ।
বগুড়ার নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো, সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগরা খান ১২৭৯ থেকে ১২৮২ পর্যন্ত এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তাঁর নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে বগরা বা বগুড়া।

ভৌগলিক অবস্থান : ৮৯.০০ ডিগ্রি পূর্ব থেকে ৮৯.৪০ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ২৪.৩০ ডিগ্রি উত্তর থেকে ২৫.১০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে বগুড়া জেলা অবস্থিত।
সীমানা : উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা, দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলা, পূর্বে জামালপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলা।
আয়তন : ২৮৯৮ বর্গ কি: মি: গড় তাপমাত্রা : সর্বোচ্চ ৩৪.৬ ডিগ্রি সে. এবং সর্বনিম্ন ১১.৯ ডিগ্রি সে. গড় বৃষ্টিপাত : বাৎসরিক ১৬১০ মি.মি।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি
বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট
কলেজ
মাধ্যমিক বিদ্যালয়
শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব
প্রাথমিক বিদ্যালয়
মাদ্রাসা
কারিগরী বিদ্যালয়

সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
• প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬০১ টি
• কারিগরী ৫৩ টি (সরকারী ৩ টি এবং বেসরকারী ৫০ টি)
• মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩০ টি (সরকারী ৫ টি এবং বেসরকারী ৪২৫ টি)
• শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ৮৫ টি
• মাদ্রাসা ৩০৮ টি (সরকারী ১ টি এবং বেসরকারী ৩০৭ টি)
• কলেজ ৮২ টি (সরকারী ৮ টি এবং বেসরকারী ৭৪টি)
• মেডিকেল কলেজ ২ টি (সরকারী ১ টি এবং বেসরকারী ১টি)
• বিশ্ববিদ্যালয় ১ টি ( পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি)
• অন্যান্য ৩৯ টি

বগুড়া জেলার কলেজ সমূহ :
সরকারী কলেজ : ৮ টি
বেসরকারী কলেজ : ৭৪ টি
মোট কলেজ : ৮২ টি

বগুড়া জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহ :
সরকারী স্কুল : ৫ টি
বেসরকারী স্কুল : ৪২৫ টি
মোট স্কুল : ৪৩০ টি

বগুড়া জেলার মাদ্রাসা :
সরকারি মাদ্রাসা : ১ টি
বেসরকারি মাদ্রাসা : ৩০৭ টি
মোট মা্দ্রাসা : ৩০৮ টি

বগুড়া জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহ :
মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা : ১৬০১ টি
অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা : ৪২২০০৯ জন
সুবিধাপ্রাপ্ত মাল্টিমিডিয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ৩৮১ টি
মিড-ডে-মিল চালুকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা : ১৬০১ টি।
মিড-ডে-মিল সুবিধাভোগী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা : ২০৬০৩৯ জন
উপবৃত্তি সুবিধাভোগী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা : ২৬৫৮৭১ জন

বগুড়া জেলার কারিগরী বিদ্যালয় :
সরকারি কারিগরি বিদ্যালয় : ৩ টি
বেসরকারি কারিগরি বিদ্যালয় : ৫০ টি
মোট কারিগরি বিদ্যালয় : ৫৩ টি

অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ :
সরকারি : ১ টি
বেসরকারি : ৩৬
মোট : ৩৭ টি

যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ
ট্রেন, বাস উভয় পথেই রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ রয়েছে, এছাড়া শহরের অদূরে কাহালুতে রয়েছে একটি বিমানবন্দর ।
উপজেলাসমূহঃ
1. বগুড়া সদর
2. কাহালু
3. শিবগঞ্জ
4. গাবতলি
5. সোনাতলা
6. ধূনট
7. আদমদীঘি
8. দুপচাচিয়া
9. নন্দীগ্রাম
10. শাহাজানপুর
11. সারিয়াকান্দি
12. শেরপুর
13.
প্রধান নদীসমূহঃ
1. করতোয়া
2. বাঙ্গালী
3. যমুনা
4. নাগর

অর্থনীতিঃ
সাম্প্রতিক বছর গুলোতে বগুড়া শহরের অবকাঠামোগত প্রচুর উন্নতি সাধিত হয়েছে । নতুন শহর পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তাগুলো পুননির্মান এবং দু লেনে উন্নিতকরণ করা হয়েছে । এখানকার মাটি বেশ উর্বর এবং এখানে প্রচুর শস্যের উৎপাদন হয় । বিগত কয়েক বছরে বগুড়ায় লাল মরিচের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা কিনা ১০০ কোটি টাকার ব্যাবসায় পরিণত হয়েছে । ব্যাবসা- বাণিজ্যের উন্নতির সাথে সাথে এখানকার ব্যাংকিং ব্যাবস্থাপনাতেও এসেছে নতুন মাত্রা । সরকারি বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকের একটি করে শাখা রয়েছে এখানে । ২৪ ঘন্টাই শহরের যে কোনো প্রান্তে এটিএম বুথ খোলা পাওয়া যায় । ২০০৮ সালে ফ্রান্সের একটি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান ড্যানোন গ্রুপ গ্রামীণ গ্রুপের সাথে যৌথভাবে শক্তিদই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ।
পর্যটনঃ
পর্যটনের জন্য রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে বিখ্যাত “মহাস্থানগড়” যা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ সবার কাছেই পবিত্র একটি স্থান । এছাড়াও আছে বেহুলা লক্ষ্মীন্দরের বাসর ঘর, গোকুল মেঢ়, ভাসু বিহার, যোগীর ভবণ, বিহার, ভিমের জঙ্গল, খেরুয়া মসজিদ, শেরপুর । বগুড়া শহরে রয়েছে “নওয়াব প্যালেস” যা ব্রিটিশ আমলে “নীলকুঠী” নামে পরিচিত ছিল । এখানে থাকার জন্য রয়েছে চার তারকা বিশিষ্ট হোটেল “নাজ গার্ডেন” ।

সংস্কৃতিঃ
সুফি, মারাঠি, লালন ইত্যাদি নিয়ে বগুড়ার সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বগুড়া থেকে প্রকাশিত কয়েকটি আঞ্চলিক পত্রিকার মধ্যে আছে দৈনিক করতোয়া, দৈনিক বগুড়া, দৈনিক চাঁদনিবাজার, দৈনিক উত্তরাঞ্চল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষাঃ
পড়াশুনার জন্য শহরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে “বগুড়া জিলা স্কুল”, যা ১৮৫৩ সালে স্থাপিত । নারী শিক্ষার জন্য রয়েছে “সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়” যা “ভিক্টোরিয়া মেমরিয়ালস গার্লস স্কুল” নামেও পরিচিত এছাড়া রয়েছে “ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ” । ইংরেজি শিক্ষার জন্য রয়েছে “মিলেনিয়াম স্কলাস্টিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ” । জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত “সরকারি আযিযুল হক কলেজ” বেশ সুপরিচিত । এছাড়া আছে “শাহ সুলতান” কলেজ, মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ । কারিগরি শিক্ষার জন্য রয়েছে বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট।
চিকিৎসার জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন “শহীদ জিয়াউর রহমান” মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯২ । এছাড়াও আছে সরকারি নার্সিং কলেজ, মেডিকাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল, একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ।

প্রতিষ্ঠান সমূহঃ
বগুড়ার অর্থনীতিকে সচল রাখতে এখানে রয়েছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এখানে রয়েছে আকবরিয়ার মতো প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কনফেকশনারী। ভোজন রসিকদের জন্য আছে শ্যামলী,কোয়ালিটি,এশিয়ার মতো খ্যাতিমান রেস্তোরা। থাই,চাইনিজ বা বিদেশী খাবারের জন্য আছে নাজ গার্ডেন(৪ তারকা বিশিষ্ট),সিয়েস্টা,সেফওয়ে,নর্থওয়ে,রেড চিলি-র মতো অভিজাত হোটেল। ব্যাগ , লোহার জিনিস-পত্র তৈরী হইয় এমন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে এ শহরে। স্থানীয়ভাবে এখানে জুতো তৈরীতে বেশ খ্যাতি রয়েছে আমির এন্ড সন্স, সজল, পায়ে পায়ে ইত্যাদি। শহরের বিসিকে রয়েছে বেশ কিছু শিল্প কারখানা। এর মধ্যে সাবান তৈরীর কারখানা অন্যতম।
সবচাইতে আশার বাণী এই যে, বগুড়ার স্থানীয় তরুণেরা যারা বিভিন্ন জায়গা থেকে পড়াশুনা করে এসেছে, তারা তাদের সম্পূর্ণ মেধা দিয়ে গড়ে তুলছে আধুনিক বগুড়া। তেমনই এক প্রতিষ্ঠান শূন্য-আইটি। শূন্য-আইটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৪ প্রকৌশলী উদ্যোক্তার আপ্রাণ প্রচেষ্টায়। আধুনিক বগুড়ার সব ধরনের সফটওয়ার সমাধান দিচ্ছেন তারা (শুন্য আইটি ওয়েব )। সেই সঙ্গে মার্চ,২০১৩ থেকে বগুড়ার সকল মার্কেট একত্রিত হচ্ছে মানুষের দোরগোড়ায়,সাতমাথা ডট কম (Sathmatha.Com ) এর সাহায্যে।।

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বঃ
• প্রফুল্ল চাকী (১৮৮৮-১৯০৮), ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলনের নেতা ।
• মোহাম্মদ আলী বগুড়া (মৃত্যু ১৯৬৯), কূটনীতিক এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ।
• মেজর জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১) বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের প্রধান, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ।
• খাদেমুল বাশার (১৯৩৫-১৯৭৬), বীর উত্তম, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং বিমান বাহিনী প্রধান ।
• আখতারুজ্জমান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭), সাহিত্যিক ও গল্পকার ।
• গাজিউল হক (১৯২৯-২০০৯), ভাষা সৈনিক ।
• এম. আর. আখতার মুকুল (১৯২৯-২০০৪), লেখক এবং সাংবাদিক ।
• মুশফিকুর রহিম জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় ।
• রোমেনা আফাজ সাহিত্যিক ।
• আবু সাইদ চলচিত্র নির্মাতা ।

প্রশাসনিক বিভাগ রাজশাহী

আয়তন (বর্গ কিমি) ২,৯১৯
জনসংখ্যা
মোট: ২৯,৮৮,৫৬৭
পুরুষ:৫০.৮৪%
মহিলা: ৪৯.১৬%
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা: বিশ্ববিদ্যালয়: ০
কলেজ : ৪৪
মাধ্যমিক বিদ্যালয়: ২৯৯
মাদ্রাসা : ৩২৯
শিক্ষার হার ২৮.৪ %
বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আলী বগুড়া
জিয়াউর রহমান
আখতারুজ্জমান ইলিয়াস

প্রধান শস্য ধান, পাট, গম, আলু, মরিচ, সরিষা
উল্লেখযোগ্য শিল্প কৃষি যন্ত্রাংশ ও ফাউন্ড্রি, সিরামিক, সাবান, কটনমিল
রপ্তানী পণ্য সিরামিক সামগ্রী, কৃষি যন্ত্রাংশ, চাল, আলু

জেলার ঐতিহ্য
গোকুল মেধ (বেহুলার বাসরঘর):
বগুড়া শহর থেকে১০কিঃমিঃ উত্তরে এবং মহাস্থানগড় থেকে ২কিঃমিঃ দক্ষিণে গোকুল গ্রামের দক্ষিনপশ্চিম প্রান্তে যে স্মৃতিস্তপটি যুগযুগ ধরে অতীতের অসংখ্য ঘটনাবলীর নিদর্শন বুকে জড়িয়ে শির উঁচু করে দাড়িয়ে আছে ইহাই বেহুলার বাসর ঘর নামে পরিচিত।এ বাসর ঘর মেড় থেকে মেদ এবং বর্তমানে পুরার্কীতি নামে পরিচিত। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মতে আনুমানিক খৃস্টাব্দ সপ্তম শতাব্দি থেকে ১২০০ শতাব্দির মধ্যে এটানির্মিত। ইস্টক নির্মিত এ স্ত্তপটি পূর্ব পশ্চিমে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ এবং ত্রিকোন বিশিষ্ট ১৭২ টি কক্ষ, অকল্পনীয় এ কক্ষগুলোর অসমতা এবং এলোমেলো বুনিয়াদ এর বোধগম্যতাকে আরো দুর্বোধ করে তুলেছে । বেহুলার কাহিনী সেনযুগের অনেক পূর্বেকার ঘটনা। বেহুলার বাসরঘর একটি অকল্পনীয় মনুমেন্ট। বর্তমান গবেষকদের মতে এমনুমেন্ট ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খৃস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। এই স্ত্তপটিই বাসরঘর নয়। এই স্ত্তপটির পশ্চিমার্ধে আছে বাসর ঘরের প্রবাদ স্মৃতিচিহ্ন। পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চাসদৃশ একটি বাথরুম। উক্ত বাথরুমের মধ্যেছিল ৮ ফুট গভীর একটিকুপ। কুপটিতে বেহুলা লক্ষিনদর মধুনিশি যাপনের পর কুপের ক্ষিতজলে স্নান করে তাতে শুদ্ধতা লাভ করতে সক্ষম হতেন।

পুরাকীর্তির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কি.মি উত্তরে মহাস্থান গড় অবস্থিত।

মহাস্থানগড়, বগুড়া:
মহাস্থানগড়ের বিস্তীর্ণ ধবংসাবশেষ প্রাচীর পুন্ড্রবর্ধনভূক্তির রাজধানী পুন্ড্রনগরের সুদীর্ঘ প্রায় আড়াই হাজার বছরের গৌরবোজ্জল ইতিহাসের এক নীরব স্বাক্ষী। এ ধবংসাবশেষ বগুড়া জেলা শহরের ১৩ কিঃমিঃ উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরেঅবস্থিত। সমগ্র বাংলার সর্বপ্রধান ও সর্বপ্রাচীন এ দূর্গনগরী পর্যায়ক্রমে মাটি ও ইটের বেষ্টনী প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত যা উত্তর দক্ষিনে ১৫২৫ মিঃদীর্ঘ এবং পূর্ব পশ্চিমে ১৩৭০মিঃ প্রশস্থ ও চতুপার্শ্বস্থ সমতল ভূমি হতে৫মিঃ উচু। বেস্টনী প্রাচীর ছাড়াও পূর্ব দিকে নদী ও অপর তিনদিকে গভীর পরিখা নগরীর অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন হতে জানা যায় যে, কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান পরাক্রমশালী মৌর্য , গুপ্ত এবং পাল শাসক বর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সমান্ত রাজাগণের রাজধানী ছিল। দূর্গের বাইরে উত্তর , পশ্চিম , দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম ৭/৮ কিলোমিটারের মধ্যে এখনও বিভিন্ন ধরণের বহু প্রাচীন নিদের্শন রয়েছে যা উপ-শহরের সাক্ষ্য বহন করে। উল্লেখ্য, বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হুয়েন সাঙ ভারতবর্ষ ভ্রমণকালে (৬৩৯-৬৪৫) পুন্ড্রনগর পরিদর্শন করেন।প্রখ্যাত বৃটিশ প্রত্নতত্ববিদ স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৭৯ খৃষ্টাব্দে মহাস্থান গড়ের ধ্বংসাবশেষকে ফুয়েন সাঙ বর্ণিত পুন্ডু নগর হিসেবে সঠিক ভাবে সনাক্ত করে

ভাসু- বিহার:
স্থানীয়ভাবে নরপতির ধাপ নামে পরিচিত এ প্রত্নস্থলে ১৯৭৩-৭৪ সনে উৎখনন শুরু করা হয় এবং পরবর্তী দুই মৌসুম তা অব্যাহত থাকে দুটি মধ্যম আকৃতির সংঘারাম ও একটি মন্দিরের স্থাপতিক কাঠামোসহ প্রচুর পরিমান প্রত্নবস্ত্ত উম্মোচিত হয়। অপেক্ষাকৃত ছোট সংঘারামটির আয়তন উত্তর-দক্ষিনে ৪৯ মিঃ ও পূর্ব পশ্চিমে ৪৬ মিঃ। এর চার বাহুতে ভিক্ষুদের বসবাসের জন্য ২৬টি কক্ষ এবং কক্ষগুলোর সামনে চর্তুপার্শ্বে ঘোরানো বারান্দা এবং পূর্ববাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ পথ রয়েছে। বৃহদায়তনের বিহারটির ভূমি পরিকল্পনা ও স্থাপত্য কৌশল প্রথমটির অনুরুপ পরিমাপ পূর্ব পশ্চিমে ৫৬মিঃ ×উত্তর দক্ষিনে ৪৯ মিঃ এর চার বাহুতে ৩০টি ভিক্ষু কক্ষ এবং দক্ষিন বাহুর কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ পথ অবস্থিত। বিহারের অদুরে উত্তরমূখী মন্দিরটির আয়তন উত্তর -দক্ষিণে ৩৮মিঃ এবং পূর্ব পশ্চিমে ২৭মিঃ মন্দিরের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটি বর্গাকার মন্ডপ এর চতুর্দিকে ধাপে ধাপে উন্নীত প্রদক্ষিণ পথ। প্রায় ৮০০ প্রত্নবস্ত্তর মধ্যে ব্রোঞ্জের ক্ষুদ্রাকৃতির মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক এবং পোড়ামাটির সীল খুবই গুরুত্বপূর্ণ এছাড়াও সংগৃহীত হয়েছে মূল্যবান পাথরের গুটিকা, লোহার পেরেক, মাটির গুটিকা, নকসাংকিত ইট, মাটির প্রদীপ ও অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যবহারের দ্রব্যাদি এবং প্রচুর মৃম্ময় পাথর টুকরা। এ সমস্ত বিভিন্ন ধরণের প্রত্নবস্ত্তর থেকে ভাসু বিহারের শেষ যুগের (দশ/একাদশ শতক) শিল্পকর্ম ও দৈনন্দিন যাত্রার একটি পরিচয় পাওয়া যায়।

করতোয়া নদী:
রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত একটি ছোট নদী যা একসময় একটি বড় ও পবিত্র নদী ছিল। এর একটি গতিপথ বর্তমানে বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় দিয়ে (যা পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ও প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধন নগরীর রাজধানী) প্রবাহমান। করতোয়া মাহাত্ম্য এর অতীত ঐতিহ্যের প্রমাণ করে। মহাভারতে বলা আছে যে, তিনদিন উপবাসের পর করতোয়া নদীতে ভ্রমণ করা অশ্বমেধা (ঘোড়া বলিদান) এর সমান পূণ্যের সমান।আরেকটি প্রাচীন শহর শ্রাবস্তী, খুব সম্ভবত মহাস্থানগড়ের উত্তরে করতোয়ার পাড়ে অবস্থিত ছিল। অবশ্য শ্রাবস্তীর সম্ভাব্য অবস্থান নিয়ে বিতর্ক আছে

বগুড়ার দই :
কথা শিল্পী সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘রসগোল্লা’ গল্প থেকে জানা যায় আমাদের রসগোল্লা নিয়ে বিদেশের ইমিগ্রেশনে কি লঙ্কা কান্ডই না ঘটে ছিল। রসগোল্লা মুখে দিয়ে ইমিগ্রেশনের বড় বাবু আড়াই মিনিট নাকি মুখ বন্ধ করে রেখেছিল অভিভূত হয়ে। বঙ্গ দেশের রসগোল্লার মত আমাদের বগুড়ার দই নিয়ে আছে অনেক মজার কান্ড।

পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বগুড়ায় এসে দইয়ের স্বাদ পেয়ে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠান এই দই।

বিদেশে বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি সর্বপ্রথম ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। ওই বছরের গোড়ার দিকে তৎকালীন বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন এন্ডারসন বগুড়া নওয়াববাড়ি বেড়াতে এসে প্রথম দইয়ের স্বাদ গ্রহণ করেন। তাকে কাচের পাত্রে তৈরি করা বিশেষ ধরনের দই খেতে দেওয়া হয়। লোভনীয় স্বাদের কারণে গভর্নর এন্ডারসন বগুড়ার দই ইংল্যান্ডে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

বগুড়ার দই এর স্বাদ পেতে এখন ভারত উঠে পড়ে লেগেছে। গত বছর জলপাইগুড়ি জেলার চেম্বার কর্মকর্তাদের মধ্যে বগুড়ার দই নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। ওই সময়ে সেখানে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমেলায় বগুড়ার দইয়ের কদর এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে বগুড়া থেকে ১০ মেট্রিক টন (প্রতিটি ৬শ’ গ্রাম ওজনের ১৭ হাজারেরও বেশি সরা) দই সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। পরে অবশ্য অল্প সময়ের মধ্যে এত দই পাঠানো যায়নি। গত বছর ডিসেম্বরে জলপাইগুড়িতে অনুষ্ঠিত নর্থ বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনবিএনসিসিআই) আয়োজিত বাণিজ্যমেলায় পরীক্ষামূলকভাবে ৫শ’ কেজি দই পাঠানো হয় বগুড়া থেকে। আর যায় কোথায়! দইয়ের স্বাদ পেয়ে সেখানকার লোক পিপড়ের মতো লাইন ধরে। ভিড় করতে থাকে স্টলে। এত চাহিদা পূরণ করা যায়নি।

বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা কিংবা অঞ্চলে উৎপাদিত হলেও কিছু বিশেষত্বের কারণে ‘বগুড়ার দই’-এর খ্যাতি দেশজুড়ে। উৎপাদন ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে কারিগরদের (উৎপাদক) বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তারা যত্নবান হওয়ায় বগুড়ার দই স্বাদে-গুণে তুলনাহীন। প্রায় দেড়শ’ বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোষ পরিবারের হাত ধরে বগুড়ায় দইয়ের উৎপাদন শুরু। পরবর্তী সময়ে বগুড়ার নওয়াব আলতাফ আলী চৌধুরীর (পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীর বাবা) পৃষ্ঠপোষকতায় শেরপুরের ঘোষ পরিবারের অন্যতম সদস্য গৌর গোপাল বগুড়া শহরে দই উৎপাদন শুরু করেন।

বগুড়ার দই ব্রিটেনের রানী ভিক্টোরিয়া, রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকে পৌছে গেলেও আমরা এই দই বড় পরিসরে রপ্তানী করতে পারছি না। রফতানির সম্ভাবনা থাকলেও কাস্টমসের ট্যারিফ সিডিউলে পণ্যের তালিকায় দইয়ের নাম অন্তর্ভুক্ত না থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের বাইরে বাজার সৃষ্টি করা সম্ভব হচ্ছে না।

আশা করছি সরকার এই বিষয়ে আন্তরিক হবে। আমাদের দেশীয় খাবারের এত সুনাম তারপরও কেন আমরা এ থেকে মুনাফা অর্জন করতে পারছি না তা এক বড় দুঃখ।

খেড়ুয়া মসজিদ, শেরপুর:
এটি সুলতানী ও মোগল আমলে নির্মিতএকটি ঐতিহাসিক মসজিদ।

খেরুয়া মসজিদ বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন। মোগল-পূর্ব সুলতানি আমলের স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মোগল স্থাপত্যশৈলীর সমন্বয়ে নির্মিত এই মসজিদ। প্রায় ৪৩০ বছর ধরে টিকে থাকা এই মসজিদের অবস্থান বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা সদরের খোন্দকার টোলা মহল্লায়।মসজিদটি টিকে আছে চার কোণের প্রকাণ্ড আকারের মিনার আর চওড়া দেয়ালের কারণে। ইটে খোদাই করা নকশা ক্ষয়ে গেছে এবং চুন-সুরকির প্রলেপ ঝরে গেছে। চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা পাতলা লাল ইটের দেয়ালগুলো ১.৮১ মিটার চওড়া। তার ওপর ভর করেই ছাদের ওপর টিকে আছে খেরুয়া মসজিদের তিনটি গম্বুজ। খেরুয়া মসজিদ বাইরের দিক থেকে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ১৭.২৭ মিটার, প্রস্থ ৭.৪২ মিটার। পূর্ব দেয়ালে তিনটি খিলান দরজা। মাঝেরটি আকারে বড়। উত্তর-দক্ষিণে একটি করে খিলান দরজা। কোনোটিতেই চৌকাঠ নেই। ফলে দরজার পাল্লা ছিল না। পূর্বের বড় দরজাটির নিচে কালো পাথরের পাটাতন। পূর্বের দরজা বরাবর পশ্চিমের দেয়ালের ভেতরের অংশে তিনটি মেহরাব। মেহরাবগুলোর ওপরের অংশ চমৎকার কারুকাজখচিত। মসজিদটির নিচের অংশে ভূমি পরিকল্পনা মোগল স্থাপত্যরীতির। ওপরের অংশ মোগল-পূর্ব সুলতানিরীতিতে। চার কোণে দেয়াল থেকে খানিকটা সামনে চারটি বিশাল মিনার। ছাদের ওপর তিনটি ৩.৭১ মিটার ব্যাসের অর্ধ গোলাকৃতির গম্বুজ। কার্নিশ ধনুকের মতো বাঁকা। তার তলায় সারিবদ্ধ খিলান আকৃতির প্যানেলের অলংকরণ। অত্যন্ত সুন্দর এর দেয়ালের গাঁথুনি। নান্দনিক বৈচিত্র্য আনা হয়েছে ইটের বিন্যাস ও খাড়া প্যানেল তৈরি করে। সামনের অংশের ইটে আছে ফুল-লতা-পাতা খোদাই করা নকশা। মিনার, গম্বুজ, নকশা ও ইটের বৈচিত্র্যময় গাঁথুনিতে পুরো স্থাপত্যটি অত্যন্ত নান্দনিক হয়ে উঠেছে। মসজিদের সামনে সবুজ ঘাসে ঢাকা আয়তাকার মাঠ। মসজিদের কিনার দিয়ে তাল, নারকেল, আম, কদমগাছের সারি। এক পাশে মৌসুমি ফুলের গাছও আছে। ইটের প্রাচীরের ওপর লোহার রেলিং দিয়ে পুরো চত্বর ঘেরা। মোট জায়গার পরিমাণ প্রায় ৫৯ শতাংশ। নামাজের সময় মুসল্লিরা ছাড়া সাধারণত কেউ ভেতরে প্রবেশ করে না। তাই প্রাঙ্গণটি নিরিবিলি এবং খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। গাছগাছালিঘেরা সবুজ পরিবেশে তিন গম্বুজওয়ালা প্রাচীন স্থাপত্যটিকে মনোরম দেখায়

জেলা ব্রান্ডিং
বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার দেশ । এদেশে বিরাজমান প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশের কাতারে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন অঞ্চলভিত্তিক সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং কেন্দ্রমুখী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে এসে অঞ্চলভিত্তিক অবকাঠামো উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ। বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলই ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের দিক দিয়ে স্বকীয় বা অনন্য। এই নিজ ঐতিহ্য, স্বাতন্ত্র্যবোধ এবং আবহমান সংস্কৃতিকে স্বদেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার মাধ্যমে একটি জেলাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হচ্ছে জেলা ব্রান্ডিং এর লক্ষ্য। দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী ও উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত এক ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জনপদ হিসেবে ঐতিহ্যের বগুড়া দখল করে আছে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। প্রাচীন পুন্ড্র রাজ্যের রাজধানী পুন্ড্রবর্ধনই হচ্ছে এ বগুড়া জেলা। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন প্রভৃতি রাজাদের প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল প্রাচীন জনপদ বগুড়া। জেলার সুদীর্ঘ ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিবেচনা করে জেলা ব্রান্ডিং হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে ঐতিহাসিক পুণ্ড্রনগর মহাস্থানগড়কে।
যমুনা, করতোয়া, বাঙালী ও নাগর নদ বিধৌত এ জেলার ঐতিহ্যবাহী দই, লাল মরিচ, আঠালো আলু ও কৃষি যন্ত্রপাতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিতি লাভ করেছে। জেলার উল্লেখযোগ্য পর্যটন আকর্ষণ যেমন মহাস্থানগড়, শীলাদেবীর ঘাট, খেরুয়া মসজিদ, শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (রঃ) এর মাজার, জিয়ৎ কুণ্ড, গোকুল মেধ, উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি ও ভাসু বিহার এ জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অন্যতম পরিচায়ক। বাঙালি ঐতিহ্যের মধ্যে পোড়াদহ মেলা ও ৪৫৭ বছরের পুরোনো কেল্লাপোষী মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব
বগুড়ার ইতিহাস, ঐতিহ্য যেমন সমৃদ্ধশালি তেমনি যুগে যুগে এ অঞ্চলে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ জন্ম গ্রহণ করেছেন। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাদের অবদান অপরিসিম। উল্লেখযোগ্য কিছু প্রখ্যাত ব্যক্তিবর্গ যাদের অবদানের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো :
১। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বঃ

ক্রমিক সংখ্যা নাম জন্ম ও জন্মস্থান অবদান
১ মোহাম্মদ আলী ১৯০৯ সালের ১৯ অক্টোবর ১৯৫৩ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তৎকালীনরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার অবদান স্মরণীয়।
২ সাবেক রাষ্ট্রপতি
লেফট্যানেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি, বগুড়া জেলার গাবতলি উপজেলাধীন বাগবাড়িতে স্বাধীনতা মুক্তিযোদ্ধাকালীন জেড ফোর্সের অধিনায়ক ও ১নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা।তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ থেকে ৩০ মে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত অধিষ্ঠিত ছিলেন।৩০ মে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তিনিকতিপয় আততায়িদের হাতে নিহত হন।
৩ বেগম খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট ১৯৪৬ সালে দিনাজপুর জেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী।বর্তমান বিরোধি দলীয় নেত্রী এবং চেয়ারপার্সন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।
৪ হাবিবুর রহমান (বুলু মিঞা) ১৯০৮ সালে জন্ম ৫০ ও ৬০ দশকে তিনি অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, যগোস্লাভিয়া ও বার্মায় রাষ্ট্রদুত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৫ রজিব উদ্দীন তরফদার ১৮৯১ সালে, সারিয়াকান্দি ১৯২২ সালে তিনি প্রজা আন্দোলনের গোড়া পত্তন করেন এবং বগুড়া জেলা প্রজা সমিতি গঠন করেন।তিনি প্রজা আন্দোলনে ব্যপক ভূমিকা রাখেন।
৬ ফজলুল বারী ১৯২২ সালে, শিবগঞ্জ পাকিস্তান আমলে তিনি স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ পদেমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে হাবিবুর রহমান ভান্ডারি, প্রফুল্ল চাকি, মজিবর রহমান, মামদুদুর রহমান চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, তারেক রহমান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
২। সমাজসেবক
ক্রমিক সংখ্যা নাম জন্ম ও জন্মস্থান অবদান
১ ডাঃ হাবিবুর রহমান ১৮৯৩ সালে গাবতলি চিকিৎসা ও সমাজ সেবায় তার ব্যাপক অবদানরয়েছে।
২ আব্দুল বারী বি, এল গাবতলি থানার জয়ভোগা গ্রামে ১৯৪৫ সাল হতে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বগুড়ামিউনিসিপালিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এ সময় বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজ করেন।
৩ ওয়াজেদ হোসেন তরফদার ১৯২৯ সালে সারিয়াকান্দি জনগণের কল্যানে বগুড়া-সায়িাকান্দি রোডে সংকস্কার, ব্রীজ নির্মান ও যমুনা নদীতে বাঁধ নির্মানে অসামান্য ভূমিকা রাখেন।
৪ আজিজুল হক কাহালু থানার দেওগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। সাবেক সংসদ সদস্য।বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন।
৫ কবিরাজ শেখ আব্দুল আজিজ ১৮৮১ সালে, বগুড়া সদর ১৯২১ সালে খেলাফত অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন।
১৯২৪ সালে প্রজা আন্দোলনে যোগদান করেন এবং কৃষকদের অধিকার আদায়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
৬ এ,কে মুজিবর রহমান ১৯২২ সালে, বগুড়া সদর জনসাধারণের সুবির্ধার্থে করতোয়া নদীর উপর ব্রীজ, ০১টি মেডিক্যাল কলেজ, মহিলা কলেজ, বিমান বন্দর ও সুগারমিল স্থাপনের জন্য ব্যাপক অবদান রাখেন।
৭ বেগম মাহমুদা সাদেক ১৯২৯ সালে, বগুড়া সদর
বাগবাড়িতে ১টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।১৯৪৫ সালে ইন্ডিয়ান রেটক্রস সোসাইটির সভ্য নির্বাচিত হন।বগুড়া জেলা মহিলা আত্মরক্ষা সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।কুঠির শিল্প কেন্দ্র স্থাপন করে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেন।
এছাড়া অন্যান্য সমাজসেবকের মধ্যে ডাঃ মফিজ উদ্দিন আহম্মদ, মোহম্মদ ইসাহাক, বিএম ইলিয়াস, সিরাজুল হক , আব্দুল আলীম, আব্দুল হামিদ খান, মাহবুবর রহমান চৌধুরী, মনির উদ্দীন চৌধুরী, এমএম পাইকাড়, গোলাম রববানী সরকার, হাম্মাদ আলী, মোহাম্মদ মুরাদুজ্জামান, আমজাদ হোসেন তালুকদার, শাহ মোজাম্মেল হক, ইছাহাক গোকুলী, বেগম জিয়াউন্নাহার তালুকদার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
৩। চিকিৎসাবিদঃ
ক্রমিক সংখ্যা নাম জন্ম ও জন্মস্থান অবদান
১ ডাঃ মহম্মদ ইয়াছিন ১৯২৬ সালে, বগুড়া সদর থানা বগুড়া রেটক্রসের সহ-সভাপতি ছিলেন বগুড়া মুক ও বধির স্কুলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।পাকিস্তান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন, বগুড়া শাখার
সহ-সভাপতি ছিলেন।বগুড়া স্কাউটের সহকারি স্কাউট কমিশনার ছিলেন।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সোশ্যাল ওয়েল ফেয়ারের সদস্য ছিলেন।
২ ডাঃ ননী গোপাল দেবদাস ১৯১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি , বগুড়া সদর ১৯৩৬ সালে কলকাতা কারমাইকেল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম,বি পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় এবং স্ত্রী বিদ্যায় স্বর্ণপদক লাভ করেন।১৯৪৭ সালে A hand book of pediatrics নামে শিশু বিষয়ক চিকিৎসার বই প্রকাশ করেন। দুর্ভিক্ষ ও মহামারির সময় তিনি আর্তমানবতার সেবায় ব্যাপক অবদান রাখেন।
৩ ডাক্তার টি, আহম্মদ ১৯০৬ সালে, গাবতলি তিনি চক্ষু চিকিৎসা বিষারদ হিসেবে এ অঞ্চলে খ্যাতি অর্জন করেন।
৪ ডাক্তার এস.আই.এম গোলাম মান্নান ১৯১৮ সাল ২৫মে, সারিয়াকান্দি ১৯৫০ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এনাটমি বিভগের এ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর ও ১৯৫৯ সালে প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।১৯৬৮ সালে পাকিস্তান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন।
এছাড়া অন্যান্য চিকিৎসকদের মধ্যে ডাঃ কছির উদ্দিন তালুকদার, ডাঃ রাবেয়া আহম্মদ, ডাঃ মোঃ আব্দুল লতিফ, ডাঃ মুনসুর রহমান, ডাঃ মোজাফফর রহমান, ডাঃ এ এইচ সাজেদুর রহমান, ডাঃ প্যারি শংকর দাশ গুপ্ত, ডাঃ লতিফা সামসুদ্দীন, ডাঃ মোহাম্মদ হেদায়েতুল ইসলাম প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
৪। আইনবিদঃ
ক্রমিক সংখ্যা নাম জন্ম ও জন্মস্থান অবদান
১ কলিম উদ্দীন আহম্মদ ১৮৯০ সালে, কাহালু থানায় একজন প্রসিদ্ধ আইনবিদ হিসেবে বগুড়া বারে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হন।
২ খান বাহাদুর ইব্রাহিম ১৮৭১ সালে গাবতলি ১৯১১ সালে সার্টিফিকেট অব অর্নার প্রাপ্ত হন। ১৯১২ সালে দিল্লী দরবার মেডেল ১৯১৬ সালে কাইসার হিন্দ সিলভর মেডেল লাভ করেন।
৩ মজিবর রহমান ১৯৩৬ সালে ১জুলাই, বগুড়া সদর ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ‘ল’ ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৯৬২ সালে আইনজীবি হিসেবে বগুড়া বারে যোগদান করেন। ১৯৬৪ সালে সরকারি পাবলিক প্রসিকিউটর নিযুক্ত হন।
৪ গাজীউল হক — ১৯৫২সালের ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দান করেন। বগুড়া বারের বিশিষ্ট আইনজিবি হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছেন।

এছাড়াও আইনবিদদের মধ্যে আব্দুল জোববার, কাবেজ উদ্দিন আহম্মেদ, আব্দুস সাত্তার তরফদার, নারায়ন দাশ ভৌমিক, আই.এস এম কেরামত আলী, মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম, আকবর হোসেন আকন্দ, রইস উদ্দীন আহম্মদ, সুরেশ চন্দ্র নন্দি, একেএম মকবুল হোসেন, মোজাফ্ফর হোসেন খন্দকার, আবেদুর রহমান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
৫। শিক্ষাবিদঃ
ক্রমিক সংখ্যা নাম জন্ম ও জন্মস্থান অবদান
১ অধ্যক্ষ খোদেজা খাতুন ১৯১৭ সালের ১৫ আগস্ট, বগুড়া সদর ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র তিনি প্রেসিডেন্ট পদক লাভ করেন। তিনি রাজশাহী গভর্ণমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষা ছিলেন।
২ অধ্যাপক এ.কে.এম নুরুল ইসলাম ১৯২৮ সালে, বগুড়া সদর রাজশাহী বিভাগ তথা উত্তরবঙ্গে প্রথম ছাত্র হিসেবে উর্দু ভাষায় এম ডিগ্রি লাভ করেন। উর্দু ও বাংলাসহ তিনি ৬টি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।
৩ অধ্যাপক এ.কে আজাদ ১৯৩০ সালে ১৯৬১ সালে তিনি ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর ভাইস প্রিন্সিপাল ছিলেন। ১৯৬৮ সালে রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের
অধ্যাপক ছিলেন।
এছাড়াও অন্যান্য শিক্ষাবিদদের মধ্যে অধ্যাপক আতাউর রহমান, এস.এম খলিলুর রহমান, অধ্যাপিকা ছালেহা খাতুন, ছমির উদ্দীন আহম্মদ, সুজ্জাত আলী, মহসিন আলী দেওয়ান, জসীম উদ্দীন আহমেদ, হুসনেআরা বেগম, মোজাম্মেল হক তালুকদার প্রমুখ নাম উল্লেখযোগ্য।
৫। কবি, লেখক ও সাহিত্যিকঃ
ক্রমিক সংখ্যা নাম জন্ম ও জন্মস্থান অবদান
১ কে এম শমসের আলী বাংলা ১৩১৬ সাল কবি প্রতিভার কারণে তাকে কবিরত্ন ও সনেট বিষারদ উপাধি দেয়া হয়। আলিম্পন, পাকিস্তানের গান, সুরের মায়া, স্বাক্ষর, সোনার কমল, রমনার কবি প্রভৃতি কাব্য ও গীতিনাট্য রচনা করেন।
২ এম. শামছুল হক ১৯২৭ সালে তিনি পল্লী তরুণী, অগ্নিশিখা, ফরিয়াদ, সাজেদা, পলাতকের চিঠি, উৎসর্গ, ভালবাসা, খাল বিল নদী উপন্যাস এবং মিতালি পাঠাগার, শিল্পীর সাধনা, মিথ্যার খেসারত ইত্যাদি নাটক রচনা করেন।
তিনি সাহিত্য কুঠিরের প্রতিষ্ঠা করেন।
৩ তাজমিলুর রহমান ১৯২৫ সাল, বগুড়া জেলার কর্ণপূর কলির জ্বীন, রুপচাঁদ, সুবেহ উম্মিদ, কারিগর(নাটক), অমৎসর, লঘুগুরু(ব্যঙ্গ রচনা) প্রভৃতি রচনা করেন।
৪ রোমেনা আফাজ ১৯২৬ সালে, বগুড়া শেরপুর দেশের মেয়ে, কাগজের নৌকা, শেষ মিলন, আলেয়ার আলো, জানি তুমি আসবে, প্রিয়ার কন্ঠস্বর, ভুলের শেষে, রক্তে অাঁকা ম্যাপ, মান্দিগড়ের বাড়ি, রঙ্গিয়া, হারানো মানিক, হুসনা, নীল আকাশ, কুন্ডী বাঈ প্রভৃতি উপন্যাস রচনা করেন।
৫ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৪৩ সালে বগুড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি গল্পকার ও ঔপন্যাসিক ছিলেন। তাঁর উপন্যাস :চিলেকোঠার সেপাই, খোয়াাব নামা। গল্প : দুধে ভাতে উৎপাত, দোজখের ওম, অন্য ঘরে অন্যস্বর গ্রন্থ :সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু।
এছাড়া অন্যান্য কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে নাজিরুল ইসলাম, মোঃ সুফিয়ান, এ বিএম ফজলুর রহমান, এম এ হান্নান, রেজাউল করিম চৌধুরী, সুশীল চন্দ্র নিয়োগী, আমজাদ হোসেন, রিয়াজ উদ্দীন, কে,এম মিছের, আয়েন উদ্দীন কবিরত্ন, ধীরেন্দ্র নাথ ভৌমিক, মোস্তাফিজুর রহমান, মহসিন আলী খান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
৬। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বঃ
ক্রমিক সংখ্যা নাম জন্ম ও জন্মস্থান অবদান
১ ওস্তাদ আলা উদ্দীন সরকার ১৯০৬ সালে বগুড়া জেলার বৃন্দাবন পাড়া তাঁর অনেক গান কলিকাতায় হিজ মাস্টারর্স ভয়েস
ও মেগাফন কোম্পানীর দ্বারা রেকর্ড হয়। এছাড়াও
তার অভিনিত চিত্রগুলি সাপুড়ে, অভিনেত্রী, রজত
জয়ন্তি
২ বেদার উদ্দীন আহম্মদ বগুড়া জেলার শেরপুর তিনি রেডিও পাকিস্তানের একজন বিশিষ্ট বেতার
শিল্পি ছিলেন।
৩ আঞ্জুমানআরা বেগম বগুড়া শহরে তিনি অনেক বাংলা ও উর্দু ছায়াছবিতে প্লে ব্যাক
করেন।
তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন নিয়মিত
শিল্পী।
৪ খুরশীদ আলম বগুড়া একজন খ্যাতনামা গায়ক হিসেবে আধুনিক গান,
রবীন্দ্র সংগীত এবং চলচিত্রের গান করেন।
৫ আজিজুল জলিল (পাশা) ১৯৩৩ সালে, বগুড়া শহরে বৃন্দাবন পাড় পূর্ব পাকিস্তানের শ্রেষ্ঠ চিত্র শিল্পী হিসেবে গণ্য করা
হয়।
এছাড়া অন্যান্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে শিবেন্দ্রনাথ কুন্ডু, অনিল কুমার বিশ্বাস, রেজাউল মোস্তফা, মোঃ আসাফুদ্দৌলা, রওশনআরা মাসুদ, জেবুননেছা জামাল, খন্দকার ফারুক আহম্মেদ, শওকত হায়াত খান, মমতাজুর রহমান, গোলেনুর খান, রীণা সাঈদা, আবু মোহাম্মদ জহুরুল, আমিনুর রহমান, আছাদ আলী, কফিল উদ্দীন আহম্মদ, আওলাদ হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, নুরুল ইসলাম বুলু, এএফএম সাইফুদ্দীন, সামছুদ্দীন আহম্মদ, তৌফিক হাসান ময়না প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

বগুড়াঃ ইতিহাসের প্রেক্ষিত:
বগরা খাঁর নামানুসারে বগুড়া জেলা উত্তরবঙ্গের একটি প্রচীন জনপদ। করতোয়া নদীর তীরসংলগ্ন যে-ভূমিটি ছিল হিন্দু আমলের গৌড়েশ্বরের রাজধানী পুন্ড্রবর্ধন, হযরত শাহ্ সুলতান বলখী মাহীসাওয়ারের তীর্থভূমি আজাকের মহাস্থান, একদা অনেক মনীষী, পর্যটক, পীর-ফকির-আউলিয়ার পদপাতে ধন্য হয়ে উঠেছিল এই ছোট্ট জনপদ। ব্যবসা-বাণিজ্যের তীর্থকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বগুড়া। হিন্দু আমল, সুলতানী আমল, নবাবী আমল, বৃটিশ আমল ও পাকিস্তান আমল পেরিয়ে এই বাংলাদেশ পর্যন্ত বগুড়ার ইতিহাস বৈচিত্র্যের ইতিহাস, বহু শাসকের উত্থান-পতনের ইতিহাস, অত্যাচার, শোষণের ইতিহাস, বিদ্রোহ-আন্দোলনের ইতিহাস,বহু রক্ত-ত্যাগ-তিতিক্ষা-যুদ্ধ-স্বাধীনতার ইতিহাস।সব মিলিয়ে বগুড়া জেলার ঐতিহাসিক ভূমিকা অনিবার্যভাবে দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। এই বিশাল ইতিহাসের পরিধিতে করতোয়াস্রোত বগুড়ার ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছেন,প্রোথিতযশা অনেক কবি-সাহিত্যিক। তাঁদের রচনাকর্ম একদিকে যেমন একই জেলার গৌরবসময় ভূমিকাকে উজ্জ্বল করেছে,তেমনি এদেশের সাহিত্যাঙ্গনকে করেছে গতিশীল ও সমৃদ্ধ। শুধু তাই নয়,বগুড়ার প্রাচীনকালের কবি-সাহিত্যকদের রচনাবলীর দ্বারা যেমন আমরা আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যকে বারবার ফিরে পাই,তেমনি আধুনিককালের কবি-সাহিত্যকদের রচনাবলী দেশের তথা সাহিত্যের বিশ্ব-ইতিহাস অনুসন্ধানে আমাদের অনুপ্রাণিত করে। অতীত ও বর্তমানের এই মহামিলনের মধ্যে সেতু রচনা করতে আমরা যদি ব্যর্থ হই তাহলে আমাদের সকল ইতিহাস একদিন বিস্মৃতির অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার প্রয়োজন-একথা শুধু মুখে বললেই হবে না, সঠিক ইতিহাস রচনার মাধ্যমে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, বিকৃত ইতিহাসের মধ্যে নয়। আমি মনে করি, জেলার ইতিহাস লেখার পাশাপাশি আলাদা গ্রন্থে বগুড়া জেলার কবি-সাহিত্যেকদের জীবন ও তাঁদের রচনাকর্মের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন, প্রয়োজন আমাদের মূল্যায়নের। আজ বগুড়াবাসীর অনেকেই বগুড়ার কবি-সাহিত্যকদের নাম জানেন না, চেনন না। জানেন না বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করে চাকরিসূত্রে বা অন্যান্য কারণে জেলার বাইরে অবস্থান করেও সাহিত্যক্ষেত্রে অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন এমন ব্যক্তির নাম এই জানাটা অত্যন্ত জরুরি। অন্তত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আমরা আশা করবো,ভবিষ্যতে এ ধরনের দায়িত্ববান কেউ এগিয়ে আসবেন। ভাবতে অবাক লাগে প্রভাস সেনের বগুড়ার ইতিহাস, কে. এম. মেছেরের ‘বগুড়ার ইতিকাহিনী’ আমানউল্লাহ খানের ‘আজকের বগুড়া’ শামসুদ্দীন তরফদারের ‘দুই শতাব্দীর বুকে’ এবং এ ধরনের লেখা বইগুলো শুধু পুনমুদ্রণের অভাবে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে কে. এম. মেছেরের ‘বগুড়ার ইতিকাহিনী’ বইটি নতুন সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে। প্রভাস সেনের বইটি উডবার্ণ পাবলিক লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক সাহেব নিজের হেফাজতে রেখেছেন হারিয়ে যাবার ভয়ে। প্রভাস সেনের বইটি [প্রায়াত সাংবাদিক দুর্গাদাস মুখার্জীর তত্ত্বাবধানে] দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ পেলেও ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু পাঠ গ্রন্থটির সন্ধান জানেন কি-না আমার জানা নেই। এই যদি হয় বগুড়ার ইতিহাস গ্রন্থের অবস্থা তবে আমরা কীভাবে খুঁজে পাবো আমাদের ঐতিহ্য-ইতিহাস?

বগুড়ার সাহিত্যঃ হিন্দু আমল:
১১৩৪ খৃস্টাব্দ থেকে ১১৮৭ খৃস্টাব্দের মধ্যে বগুড়া দু’জন কবির সাক্ষাৎ পাই। গৌড়ের রাজা মদন পালদেবের সময়ে কবি সন্ধ্যাকার নন্দীর জন্মস্থান উল্লেখ করেছেন মহাস্থান সন্নিকটবর্তী পৌন্ড্রবর্ধনপুর। তাঁর পিতা কায়স্তদের অগ্রণী ছিলেন। পিতার নাম প্রজাপতি নন্দী বলে উল্লেখ করেছেন ঐতিহাসিক রমেশ চন্দ্র মজুমদার। পিতামহের নাম পিনাক নন্দী। সন্ধ্যাকর নন্দীর কাব্যগ্রন্থের নাম ‘রামচরিয়তম’। রামচন্দ্রের সীতাউদ্ধার কাহিনী গ্রন্থটির মূল বিষয়। ঐতিহাসিকগণ তাঁর কাব্যের ভাষাকে মার্জিত ও সুরুচিকর বলে অভিহিত করেছেন। অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্যর জন্মস্থান শিবগঞ্জ থানার বিহার গ্রামে। তাঁর কাব্যগ্রন্থের নাম ‘হারলতা’। রমেশ চন্দ্র মজুমদার ‘পিতৃদয়িতা’নামে আরেকখানি গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি রাজা বল্লাল সেনের সাহিত্যগুরু ছিলেন বলে ঐতিহাসিকগণ মত প্রকাশ করেন।
বগুড়ার সাহিত্যঃ সুলতানী আমল:
১৪০৮ সালের দিকে উদয়নাচার্য ভাদুড়ী নামে একজন গ্রন্থকারের পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর জন্মস্থান কাহালু থানার নিশিন্দ্রা গ্রামে। কারো কারো মতে, নন্দীগ্রাম থানার নিশিন্দারা গ্রামে তাঁর জন্ম। উদয়নাচার্যের গ্রন্থের নাম ‘কুসুমাঞ্জলি’। কাশীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

বগুড়ার সাহিত্যঃ নবাবী আমল:
এই আমলে বগুড়া জেলায় বেশকিছু কবি-সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে। ১৫৭৬ খৃস্টাব্দের সময় থেকে তাঁদের পদচারণা। সেই সময়ে যাঁদের নাম পাই তাঁরা হলেন-গদাধর ভট্টাচার্য, রামনারায়ণ ভট্টাচার্য, নিত্যানন্দ আচার্য, কবি বল্লভ এবং জীবনকৃষ্ণ চৈত্র। গদাধর ভট্টাচার্যের নাম প্রসঙ্গে বগুড়ার দুই ঐতিহাসিক দুই ধরনের নামোল্লেখ করেছেন। প্রভাস সেনের গ্রন্থে তাঁর নাম গঙ্গাধর ভট্টাচার্য কিন্তু কে. এম. মেছেরের গ্রন্থে গদাধর ভট্টাচার্য বলা হয়েছে। বগুড়া জেলার লক্ষীচাপড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর দুই গ্রন্থের নাম ‘ব্রহ্মনির্ণয়’ ও ‘গদাধরী টীকা’। আদমদীঘি থানার ‘তালসন’ গ্রামে রামনারায়ণ ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেন। ‘কৃতভাষ্য’ তাঁর রচনাকর্ম। কবি বল্বভের জন্ম মহাস্থানের কাছে আড়োয়া গ্রামে। পিতার নাম রাজবল্লভ, মাতার নাম বৈষ্ণবী। ‘রসকদম্ব’ তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ। ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে ফাল্গুনী পূর্ণিমায় তিনি এই কাব্যটি রচনা করেন। তাঁর গ্রন্থটি এত দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, কবি বল্লভ ‘রসকদম্ব’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর গ্রন্থটি শ্রীকৃষ্ণ এবং গোপিকাদের শৃঙ্গার রসে পরিপূর্ণ। কবি নিত্যানন্দ আচার্য অদ্ভুতাচার্য নামে পরিচিত। তিনি আদমদীঘি থানার কুন্ডুগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মধ্যযুগের কবিদের মধ্যে সবেচেয়ে খ্যাতি অর্জন করেন মহাস্থানের লাহিড়ীপাড়া গ্রামের কবি জীবনকৃষ্ণ মৈত্র। তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মনসা মঙ্গলের কবি হিসেবে পরিচিত। জীবনকৃষ্ণ মৈত্রের কাব্যের নাম ‘পদ্মপূরাণ’। এতে চাঁদ সওদাগর, মনসা, বেহুলা-লক্ষিন্দরের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। কবি তাঁর বংশপরিচয় দিয়েছেন এভাবে-‘শ্রী বংশীবদন মৈত্র নাম মহাশয়,চৌধুরী অনন্তরায় তাহার তনয়/অনন্ত নন্দন কবি শ্রী মৈত্র জীবন/লাহিড়ীপাড়াতে বাস ‘বরেন্দ্র ব্রাহ্মণ’। তিনি ‘পাগলা জীবন’নামে পরিচিত ছিলেন। নিজস্ব কাব্যপ্রতিভার দ্বারা জীবন মৈত্র সাহিত্যের ইতিহাসে নিজের স্থান করে নিয়েছেন। সে গৌরবের অংশীদার বগুড়াবাসীও।
বগুড়ার সাহিত্যঃ বৃটিশ আমল-মধ্যভাগ:
মূলত এই আমল থেকেই বগুড়ার সাহিতাঙ্গনে কবি-সাহিত্যিকদের পদচারণার ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। বৃটিশ আমলের মধ্যভাগ এবং শেষভাগ অর্থাৎ ১৯৪৮ খৃস্টাব্দের পরবর্তী সময় পর্যন্ত যে সমস্ত কবি-লেখকরা নিজেদের রচনাকর্মের দ্বারা খ্যাতি অর্জন করেন তাঁদের মধ্যে মুসলিম লেখকদের অবদানও কম ছিল না। বৃটিশ আমলের শেষ পর্যায়ের যাঁরা সাহিত্যক্ষেত্রে প্রসারিত করতে পেরেছিলেন, বাংলাদেশ আমলেও তাঁদের খ্যাতি একেবারে ম্লান হয়নি। বৃটিশআমলের মধ্যপর্যায় থেকে যাঁরা সাহিত্য রচনা শুরু করেন তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়। এরা হলেন-হরগোপাল দাস কুন্ডু, প্রাণগোবিন্দ দেব, প্রভাসচন্দ্র সেন, দেববর্শন বিএল, সারদানাথ খাঁ বিএল, মুনশী হামেদ আলী শহরউল্লা, কাজী কলিমুদ্দিন, সৈয়দ বাহার উদ্দিন, কোববাদ হোসেন, ডাঃ কহরউল্লা। হরগোপাল দাস কুন্ডুর জন্মস্থান শেরপুর। তিনি ‘ইতিহাস বগুড়া’নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। প্রভাসচন্দ্র সেন মূলত ঐতিহাসিক। বগুড়া জেলার প্রথম ইতিহাস লেখক হিসেবে তিনি সর্বজন পরিচিত। তিনি ‘বগুড়ার ইতিহাস’নামে যে-গ্রন্থটি রচনা করেছেন তা বগুড়ার পূর্বাপর ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অবদান হিসেবে স্বীকৃত। তিনি কাহালু থানার মহেশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ‘বরেন্দ্র কাহিনী কৃষ্ণচরিত’ নামেও তাঁর গ্রন্থ আছে। সারদানাথ খাঁ ‘অশোক কাব্য’ নামে অমিত্রাক্ষর ছন্দে একটি কাব্য রচনা করেন। ‘সতী বিমলা’ নামে তিনি একটি উপন্যাসও রচনা করেন। কাহালু থানার নারহট্ট নিবাসী মুনশী হামেদ আলী ‘মুসলিম কর্মবীর চরিতমালা’ ‘মহসীনচরিত’ লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর গদ্যের ভাষা ছিল অতি উচ্চাঙ্গের। হাজী কলিমুদ্দীন ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি ‘লায়লী’ নামে একটি উপন্যাস রচনা করেন। ডাঃ কহরউল্লাহ পেশায় চিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। তাঁর গ্রামের বাড়ি মহাস্থানের রামশহরে। তিনি ‘মহাস্থান’ নামে যে ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখেছেন তাতে মহাস্থানগড়ের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া যায়। এছাড়াও এ সময় যাঁদের নাম পাওয়া যায়-শাহ মামুদ খন্দকার’র রচনা-শাহ কলন্দর (১৮৭৯)। নাজের মোহাম্মদ-মোনাই যাত্রা (১৮৭৯)। মোহাম্মদ আরিফ-রঙিন বাহার কাব্য (১৮৮১)। আজমতুল্লাহ খন্দকার-‘ফাতেমার জহুরানাম’ নামে হযরত মুহম্মদ (সাঃ) কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর জীবন (১৮৯৩)। খলিল উদ্দিন গাইন-‘ভানুমতীর লড়াই’ (১৮৯৮)। সঙ্গীতেও তাঁর যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। দুর্গতিয়া সরকার-সম্ভবত তাঁর নিবাস পূর্ব বগুড়ার সারিয়াকান্দি থানায়। ‘ইমামযাত্রা’ (১৯০২)। মোহাম্মদ রহিম বক্স, ‘শোকার্ণব’ নামে একটি কবিতার বই প্রকাশ করেন। বইটি শেখ আব্দুল লতিফ কর্তৃক বগুড়ার চৌধুরী প্রেসে মুদ্রতি (১৮৯৭ সালের ১২ জুন-এর ভূমিকম্পের উপর পথ কবিতা পৃষ্ঠা-৭০। মূলঃ ৪ আনা। মুদ্রণ সংখ্যাঃ ১০০০, প্রকাশকালঃ ১৮৯৮ সাল।)
বৃটিশ শাসনের মধ্যভাগে আজীমদ্দিন মহাম্মদ চৌধুরী নামে এক যুবক লেখাপড়া ও জীবিকা অন্বেষণের নিমিত্তে পাবনা থেকে বগুড়া এসেছিলেন। তিনি তাঁর জীবনরচিত গ্রন্থে বলেছেন আমি বগুড়া যাওয়ার সময় আমার বয়ক্রম প্রায় ১৭/১৮ বছর। দাড়ি মোছের রেখামাত্র হইয়াছে। এই বয়সের গোড়া হইতে বিদ্যাভ্যাস করা নিতান্ত ঘৃণা ও লজ্জাজনক বিবেচনায় এই দাড়ি গোপনে নিজেই ধারালো ছুড়ি দিয়া চাঁচিয়া, ছিলিয়া বালক প্রায় হইলাম। ছেলেকে সাহায্য করার জন্য বগুড়ার জনৈতিক নাজির সাহেবকে পিতা লিখেছেন-‘বেয়াদব আজীবন কদরেসু শ্রীমানকে আপনার নিকট পাঠাইলাম ইহার প্রতি নেক নজর রাখিবেন ও যাহাতে লেখাপড়া শিক্ষা হয় তাহা করিবেন। পরে আজিমদ্দিন চৌধুরী পুলিশে চাকুরি পেয়েছিলেন। বগুড়া থাকাকালে তিনি ‘জীবনরচিত’ সমাপ্ত করেন ও পরে বরিশাল থেকে এটি প্রকাশ করেন। আত্মজীবনীমূলক রচনার লেখক হিসেবে আজিমদ্দিন মহাম্মদ বাংলা সাহিত্যে প্রথম এবং উনবিংশ শতাব্দীর একমাত্র মুসলমান আত্মজীবনী লেখক। সাদেকুল্লাহ খাঁ জীবনীমূলক কাব্য ‘যুগীকাছের’ (১৮২৭) রচনা করেন।
বাতাসু সরকার বর্তমান জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলালের অধিবাসী। তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘ছত্ররাজার জঙ্গ’এবং মোনই যাত্রা (১৮৩৮)। রায়হান উদ্দিন ও সাদুল্লা সরকার-‘গোলে আরজান’১৮৭৫ খৃস্টাব্দের দিকে রচনা বলে ধারণা করা হয়। জমশের আলী তালুকদার ‘হোসেন বধ কাব্য’। তিনি ক্ষেতলালের অধিবাসী। কাব্যটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত। সৈয়দ আকতার হোসেন-অংশুরেখা।
বৃটিশ আমলের মধ্যভাগে বগুড়ার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ প্যারীশঙ্কর দাসগুপ্ত প্রায় ১৮টি গ্রন্থ রচনা করেন। সামাজিক উপন্যাস, ধর্মীয় গ্রন্থ এবং চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থ অন্যতম। তিনি ১৮৫৪ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৩১ খৃস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর গ্রন্থগুলোর নাম-আর্য বিধবা, কমলিনী, ফুল ও মুকুল, প্রতাপ সিংহ, যমুনা, রত্নাকর, গার্গী, কর্ণ, লক্ষ্মী, অর্জুন, প্রহলাদ, উমা, গীতা, প্রসাদ ও কুঠির, কৃষ্ণাশ্রম, সংগ্রাম সিংহ, স্ত্রী শিক্ষা, রাধা। চিকিৎসার বই-‘ওলাওঠা’। বগুড়ার দত্তবাড়ী মোড় থেকে নামাজগড় মোড় পর্যন্ত পশ্চিমমুখী রাস্তাটি তাঁর নামানুসারে ডাঃ প্যারীশঙ্কর স্ট্রিট নামে পরিচিত।
মানিক উদ্দিন আহমদ, আদমদীঘি থানার অধিবাসী। তাঁর রচিত গ্রন্থটি-খনার বচন, ইসলাম সুহৃদ, উপদেশ লহরী, বাংলা শব্দকোষ বা ছাত্র সহচর অভিধান, শোকোচ্ছ্বাস বা বিদায়গীতি।
সুজাত আলী সদর থানার তেলিহারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর লেখা শিশুতোষ গ্রন্থ-‘চাঁদের হাট’।

বগুড়ার সাহিত্যঃ বৃটিশ আমলের শেষ ভাগ-ত্রিশ ও চল্লিশ এর দশক:
এই সময় যাদের নাম পাওয়া যায় তাঁরা হলেন-সোনাউল্লাহ সরকার, কাজী বহরউল্লাহ, হাজী জামালউদ্দিন, চাঁদ মহম্মদ, আছমত আলী, সৈয়দ আফতাব উদ্দিন, মওলবী আয়েন উদ্দিন, কবি একেএম রোস্তম আলী কর্ণপুরী, সাদত আলী আখন্দ, কবি কে. এম শমশের আলী, কে. এম মেছের, নাজিরুল ইসলাম মোহাম্মদ সুফিয়ান। কাহালু থানার অধিবাসী কাজী বহরউল্লাহ ‘ফুলের ডালা’ নামক গজলগীতি গ্রন্থ রচনা করেন। মাতৃভাষার প্রতি কবির আকর্ষণের নমুনা-‘সুশিক্ষার শুভ ফল যদি ভোগ কর/যত্ন করে মাতৃভাষা আগে শিক্ষা কর।’ শিকারপুর নিবাসী হাজী জামাল উদ্দীনের ‘বেণুবন’, ছাতিয়ান গ্রামের আয়েন উদ্দিনের ‘পরিণাম’উপন্যাস-এগুলো মোটামুটি সেই সময়ে পাঠক সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। সাদত আলী আখন্দ শিবগঞ্জ থানার চিঙ্গাসপুরে জন্মগ্রহণ করেন। চাকুরি করতেন পুলিশ বিভাগে, চাকুরি থেকে অবসর গ্রহণের পর ওকালতি পেশা শুরু করেন। ‘তের নম্বরে পাঁচ বছর’ ও ‘অন্যদিন অন্য জীবন’ তাঁর সুলিখিত অভিজ্ঞতামন্ডিত গ্রন্থ। বগুড়ার দুই স্বনামখ্যাত লেখক ভ্রাতৃদ্বয় ড. মুস্তফা নূরউল ইসলাম এবং ‘চরমপত্র’ খ্যাত এম. আর আখতার মুকুলের পিতা ছিলেন সাদত আলী আখন্দ। ১৯৭১ খৃস্টাব্দে অসুস্থতার কারণে মৃত্যুবরণ করেন।
এই সময়ে বগুড়ার যে দু’জন কবি খ্যাতি অর্জন করেন তাঁরা হলেন-কবি রোস্তম আলী কর্ণপুরী এবং কবি কে. এম শমশের আলী। কবি কর্ণপুরী আমৃত্যু সাহিত্যকে ভালোবেসে গেছেন। কোনো সাহিত্যসভায় ডাক পড়লে সুদূর গ্রাম কর্ণপুর থেকে পায়ে হেঁটে চলে আসতেন। সদর থানার কর্ণপুর গ্রামের এই মানুষটি কাব্যভাবনায় নিজেকে উজাড় করে দেন। খেলাফত ও কংগ্রেস আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ‘বিশ্বনবী’, ‘বগুড়ার ফুলমালঞ্চ’, ‘সোহরাব-রুস্তম’সহ অনেক গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। ‘সোহরাব-রুস্তম’ কাব্যখানি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত। তাঁর কবিতার মধ্যে নজরুলের প্রভাব বিদ্যমান। রবীন্দ্রনাথ প্রভাবিত আরেক কবি কে. এম শমশরে আলী সদর থানার মন্ডলধরণ গ্রামে জন্ম। ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি কাব্য রচনার প্রয়াস পান। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আলিঙ্গন’ ছাত্রজীবনে প্রকাশ পায়। এটি তিনি রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রেরণ করেন এবং পরে কবির আশীর্বাদ লাভ করেন। ‘স্বাক্ষর’ সনেট গ্রন্থ এবং অল্পসময়ে তিনি ‘সনেট বিশারদ’ হিসেবে সারাদেশে সুনাম অর্জন করেন। ‘কল্লোল’ আর একটি সন্টে সংকলন। আধুনিক কবিতা, যাকে অনেকে গদ্য-কবিতা বলে আখ্যায়িত করেন, সেই গদ্যকবিতা লেখার প্রচেষ্টার স্বাক্ষর তার আরেকটি গ্রন্থ ‘রমনার কবি’। তিনি কাব্যে এক নিবেদিত প্রাণ কবি ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ খৃস্টাব্দের ১৭ এপ্রিল পরলোকগমন করেন। তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কারও লাভ করেন।
১৯৪৭-এ পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্রের বিতর্কিত অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপটে চল্লিশ দশকের অনেক কবি-লেখক নতুন চেতনায় সাহিত্যচর্চা শুরু করেছিলেন তাঁদেরই একজন নাজিরুল ইসলাম মোহাম্মদ সুফিয়ান। তাঁর রচিত ‘বাংলা সাহিত্যের নতুন ইতিহাস’ সাহিত্যের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে ভিন্নমতের সন্ধান দিয়েছে। তিনি ড. সুনীতিকুমার, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতকে গ্রহণ না করে নিজের ধারণাকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস পেয়েছেন। তবে তাঁর এই মতকে সাহিত্য বিশেষজ্ঞরা কেউই সমর্থন না দেওয়ায় পুস্তকটি মোটেই পাঠকের কাছে সমাদর পায়নি। আরেকজন লেখক, তবে ঐতিহাসিক হিসেবে তিনি পরিচিত, কাজী মোহাম্মদ মেছের, ‘বগুড়ার ইতিকাহিনী’ তাঁর অবদান। রাজশাহী জেলার ইতিহাস লেখকও তিনি। এছাড়াও ‘দাওয়াত-ই-ইসলাম’ নামেও একটি গ্রন্থ আছে তাঁর। প্রবন্ধগুলো পঞ্চাশ-এর দশকের মধ্যেই প্রকাশিত হয়।
পূর্বজদের ভূমিকাঃ চল্লিশ দশক:
‘কত না সাহিত্য রথী, কবি, শিল্প গুণী জ্ঞানী/বিজয় পতাকা তুলি কত লক্ষ বিদ্যা অভিমানী/ঘঘারিয়া চলিয়াছে-জয়ারথ করে দিগ্বিজয়/দিকে দিকে, দিশে দিশে। বিশ্বজন গায় জয়/জয় প্রতিধ্বনি আসে তার বগুড়ারো নিভৃত প্রান্তরে।’
তাই তো বিম্ময় আমি মান তরুণের স্পর্ধা দেখে, তবে জানি আমি জানি/হোক না গঙ্গার স্রোত খরতর, হোক না পদ্মার/বিশাল বিপুল বক্ষ, তবু যারা করতোয়া মা’র/মাতৃসত্মন্য করে পান- জানে তারা ক্ষুদ্রের মহিমা, দীনের বিত্ত-বৈভব। ফোটায়েছে হেরো শ্যামলিয়া, ভানুমতী মন্ত্র দিয়া গন্ডীমাঝে যে-লীলা ভঙ্গীতে, তেমনি মুখর হোক এ অঞ্চল ও ‘পত্র’ সঙ্গীতে।
১৯৪৯ সালের ১৫ মার্চ বগুড়ার মালতিনগরের এক বাসায় এই ক্ষুদ্র কবিতাটি রচিত হয়েছিল বগুড়া আযিযুল হক কলেজ বার্ষিকীর অধ্যক্ষের আশীর্বাণী হিসেবে। কবিতাটি লিখেছিলেন আযিযুল হক কলেজে সদ্য যোগদানকারী অধ্যক্ষ উপমহাদেশের অন্যতম সুসাহিত্যিক- রম্যলেখক-দার্শনিক চর্চাকাহিনী, দেশে-বিদেশে, শবনম প্রভৃতি গ্রন্থের রচয়িতা ড. সৈয়দ মুজতবা আলী। তিনি কলেজে যোগদান করে অল্প সময়েই লক্ষ্য করেছিলেন বগুড়ার অনেক তরুণের মধ্যে সাহিত্যের প্রাণবহ্নির দীপ্তি। আরও আগে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ভাষা পন্ডিত, জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আযিযুল হক কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন বগুড়ার সাহিত্যিক পরিবেশ সৃষ্টিতে ‘সাহিত্য আড্ডা’র প্রচলন করেন। মনি সান্যাল নামে এক সাহিত্যমোদীর বাসভবন স্যানাল বাড়ি’তে প্রতি রবিবার বসতো এই সাহিত্য আড্ডা। ড. শহীদুল্লাহ বগুড়া থাকাকালীন পাক্ষিক ‘তকবীর’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সৈয়দ মুজতবা আলীর অনুরূপ ‘সাহিত্য বাসর’ বসাতেন প্রতি বৃহস্পতিবার। এ সময়ের একটি চিত্র পাওয়া যায় কবি আতাউর রহমানের স্মৃতি লেখনীতে- ‘বগুড়া কলেজের কয়েকজন তরুণ অধ্যাপকের কাছে আমরা সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতির পাঠ দিয়েছিলাম। তাঁদের মধ্যে বিশেষভাবে মনে পড়ে অধ্যাপক আবুল খায়ের, অধ্যাপক গোলাম রসুল, অধ্যাপক সৌমিত্র শঙ্কর দাশগুপ্ত, অধ্যাপক প্রতিশ দত্ত প্রমুখকে। অধ্যাপক খায়ের এবং গোলাম রসুল সাহেবের বাসায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বসতো আমাদের সাহিত্য আড্ডা। এই সাহিত্য আড্ডার নাম ছিল ‘শিল্পায়ন’। এই সভায় গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ এমন কি একাংকিকা ধরনের নাটকও পড়া হতো।

পূর্বজদের ভূমিকা : পঞ্চাশ থেকে আশির মধ্যবর্তী দশক:
পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে ষাটের প্রথমার্ধ সময়ে অধ্যাপক মোহসিন আলী দেওয়ান সম্পাদিত মাসিক ‘অতএব’ পত্রিকাকে ঘিরে একটি সাহিত্য পরিমন্ডল গড়ে ওঠে বগুড়ায়। পঞ্চাশ দশকের অনেক তরুণ লেখক লিখেছেন এই পত্রিকায়। এঁদের মধ্যে আছেন কবি আতাউর রহমান, লুৎফর রহমান সরকার, কমলেশ সেন, খাজা জহুরুল ইসলাম, শাহ আনিসুর রহমান প্রমুখ। ষাটের তরুণদের মধ্যে ফারুক সিদ্দিকী, আনওয়ার আহমদ, বজলুল করিম বাহার সহ অনেকেই লিখেছেন ‘অতএব’ পত্রিকায়। ষাটের মাঝামাঝি ফারুক সিদ্দিকী সম্পাদিত ‘বিপ্রতীক’ কবিতাপত্রকে ঘিরে বেশ কিছু তরুণ তাদের সাহিত্য প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যান। স্বাধীনতার পর ছড়া সংসদ ও কবিতা সংসদ নামে সংগঠনকে ঘিরে সত্তর দশকের অনেক তরুণ নিজেদের সাহিত্য ভূমিতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। তবে সংগঠনের চাইতে পত্র-পত্রিকাকে ঘিরেই সাহিত্যের আতপ্ত ভূমিতে তাঁরা পা রাখতে সচেষ্ট হন। ১৯৭৪ -এ এবং ১৯৭৯-তে যথাক্রমে অনুকাল সাহিত্য গোষ্ঠী এবং বগুড়া লেখক গোষ্ঠী ষাট ও সত্তর দশকের লেখকদের একত্রিত করার প্রয়াস চালায়। তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম বগুড়ার সাহিত্যমোদী এবং সুধী সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। বিশেষ করে ১৯৮১-র ১৫ মার্চে বগুড়া লেখক গোষ্ঠী আয়োজিত দর্শনীর বিনিময়ে কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছিল। ১৯৮১-তে এবং ১৯৮৫-তে যথাক্রমে কবি শামসুর রহমান এবং কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দকে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা জানানো হয়। ১৯৮৬ পর্যমত্ম এর কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।

বগুড়ার সাহিত্য : আধুনিককাল-পঞ্চাশ-এর দশক:
পঞ্চাশ-এর দশকে বগুড়ার উল্লেখযোগ্য কবি-লেখকদের আবির্ভাব বগুড়ার সাহিত্যাঙ্গনকে সচল করে তোলে। তাঁরা মননে-মেধায় ছিলেন তাঁদের পূর্বজদের চেয়ে অগ্রগামী। তাঁদের অর্জিত শিক্ষাকে যেমন তারা সামাজিক সত্মরে আত্মপ্রতিষ্ঠার কাজে লাগিয়েছিলেন, তেমনি সাহিত্যের ক্ষেত্রকে উন্নত চিমত্মার আধার করে তুলেছিলেন। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক ধারায় তাঁরা স্নাত হয়েছিলেন। পঞ্চাশ-এর দশকে এদের সাহিত্য নতুন করে গতি পেতে শুরু করে। সাতচল্লিশে পাকিসত্মান সৃষ্টি, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন, আটান্নতে সামরিক শাসন-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ছিল বিস্তৃত। সামাজিক সত্মরে চলেছে নানা পরিবর্তন। সাহিত্যচর্চা যাঁরা করেছেন তাঁদের রচনায় আছে সমাজ, মানুষ, রাজনীতি, সামাজিক প্রেক্ষাপট। এই সময় বগুড়ায় যাঁরা সাহিত্যচর্চা করেছেন তাঁরাও এসব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। তাঁরা কবিতায়, গল্পে, নাটক ও অন্যান্য লেখায় বিষয়ের বিস্তৃতি ঘটাতে পেরেছেন। বগুড়ায় এই সময় যাঁদের পাচ্ছি তাঁরা হলেন- অধ্যক্ষ খোদেজা খাতুন, রোমেনা আফাজ, আতাউর রহমান, লুৎফর রহমান সরকার, তাজমিলুর রহমান, এম শামসুল হক, মীর্জা আমজাদ হোসেন, মুহম্মদ আব্দুল মতীন, সাইফুল বারী, ড. মুসত্মাফা নূরউল ইসলাম, খোন্দকার আজিজুল হক, এম আর আখতার মুকুল, শামস রশীদ, আনোয়ারা রহমান এ্যানা, টিপু সুলতান, মুহম্মদ নুরুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম মন্ডল, শেফালী রহমান, ডাঃ আব্দুল করিম, একে মজিবর রহমান, সৈয়দ ওমর আলী চৌধুরী, মতিয়র রহমান কবিরাজ, বিলোরা চৌধুরী, সৈয়দ আফতাব হোসেন, অধ্যাপক মোহসীন আলী দেওয়ান, শাহ আনিসুর রহমান, জাহাঙ্গীর চৌধুরী, মাফরুহা চৌধুরী, সাজেদুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক, আসাফ-উদ-দৌলা রেজা, ডাঃ নীন গোপাল দেবদাস, হাসনা আকরাম, গাজীউল হক, জগলুল হায়দার আফরিফ, মমতাজুর রহমান, আব্দুল মজিদ, আতাউল হক, সুলতানা রহমান, শামসুদ্দীন তরফদার, আব্দুল মজিদ ফকির, প্রসাদ বিশ্বাস, আমজাদ হোসেন, মুহম্মদ ফজলুল হক, আবেদ আলী আহমদ প্রমুখ।

প্রতিকৃতির কিছু তথ্যায়ন:
অধ্যক্ষা খোদেজা খাতুন ১৯১৭ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কবি কেএম শমসের আলীর ছোট ভগ্নি। তিনি এই জেলার প্রথম মুসলিম মহিলা এম, এ। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলী- বেদনার এই বালুচরে (কবিতাগ্রন্থ), গল্পগ্রন্থ- সাগরিকা, রূপকথার রাজ্যে, শেষ প্রহরের আলো, একটি সুর একটি গান। প্রবন্ধ- বগুড়ার লোকসাহিত্য, সাহিত্যভাবনা, আমার দীর্ঘতম ভ্রমণ, রম্যরচনা, অরণ্যমঞ্জরী। এছাড়াও ‘শতপুষ্পা’ নামে ৩ খন্ডে কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ সংকলন সম্পাদনা করেন। ঢাকা ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর ১৯৯০ খৃষ্টাব্দে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রোমেনা আফাজের জন্ম ১৯২৬ খৃষ্টাব্দে। মূরত ‘দস্যু বনহুর’ সিরিজ কাহিনী লিখে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু উপন্যাস রচনাতেও তাঁর ছিল সমান দক্ষতা। ‘বনহুর’ সিরিজের মোট সংখ্যা ১৩২। ‘দস্যুরাণী’ সিরিজ ১২টি। উপন্যাসের সংখ্যা ৬০। ‘কাগজের নৌকা’ সহ প্রায় ছয়টি উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। ‘মান্দীগড়ের বাড়ি’ নামে একটি কিশোর উপন্যাসও তিনি লিখেছেন। সাহিত্যে নিবেদিতপ্রাণ রোমেনা আফাজ ২০০৩ সালে লোকামত্মরিত হন।
তাজমিলুর রহমানের জন্ম ১৯২৫ সালে। তিনি নাট্যকার হিসেবে সুপরিচিত। তাঁর রচিত কয়েকটি নাটকের মধ্যে অন্যতম- কলির জিন, ভাই, রূপচাঁন, সুবেহ উম্মিদ, কারিগর, অনেক আঁধার পেরিয়ে, টোপ যেমন খুশি সাজো। কিশোরদের জন্য লিখেছেন উপন্যাস- জুলফিকারের অভিযান, সুন্দরবনে জুলফিকার, ভূতের কবলে জুলফিকার। রম্যরচনা- অমৎসর, লঘুগুরু। তাঁর রচিত প্রবন্ধ গ্রন্থের নাম- প্রবন্ধ সংগ্রহ।
আতাউর রহমান, জন্ম ১৯২৫। বর্তমানে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুরে। বাংলাদেশে পঞ্চাশ-এর দশকে ত্রিশ-এর দশক লালিত আধুনিক কাব্যভাবনা বগুড়ার কবি আতাউর রহমানের কবিতায় ব্যাপ্তি লাভ করে। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দুই ঋতু’ প্রকাশিত হয় ১৯৬০ খৃষ্টাব্দে। ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘নিষাদ নগরে আছি’, ‘ভালবাসা চিরশত্রু’, ‘ইদানিং রঙ্গমঞ্চ’, ‘ভালবাসা এবং তারপর’ ও ‘সারাটা জীবন ধরে’। তিনি নজরুল বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে সুপরিচিত। তাঁর গবেষণাগ্রন্থ- আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, নজরুল কাব্য সমীক্ষা, নজরুল জীবনে প্রেম ও বিবাহ উল্লেখযোগ্য। ১৯৭০ খৃষ্টাব্দে তিনি বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পান। তিনি ১৯৯৯ খৃষ্টাব্দের ৩০ জুন মৃত্যুবরণ করেন।
শিবগঞ্জ থানার লেখক আতাউর হক। জন্ম ১৯২৯। তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ ‘অঙ্গীকার, মহানবীর অমর বাণী, রক্তশিখা, মুসলিম দর্শন ইত্যাদি।
শামসুদ্দীন তরফদার। তাঁর জন্ম ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে সারিয়াকান্দি থানার নারচী গ্রাম। তিনি ‘দুই শতাব্দীর বুকে’ গ্রন্থখানিতে বগুড়ার ইতিহাস ও জেলার জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিদের পরিচিতি তুলে ধরেছেন। ‘পল্লীচিত্র’ নামে একটি নাটকও লিখেছেন।
শামস্ রশীদ অজস্র উপন্যাস রচনা করেছেন। জন্ম ১৯২০ খৃষ্টাব্দে। উপল উপকূলে (২য় খন্ড), নীলাঞ্জনা, প্রাণ বসমত্ম, হৃদয় উপবনেসহ প্রায় ১৫টি উপন্যাস এবং শিশুতোষ গ্রন্থ ‘সমুদ্র নাবিক’ রচনা করেন। তিনি পরবর্তীতে বাংলা একাডেমী পুরষ্কার লাভ করেন।
ড. মমতাজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। ইতিহাস বিষয়ক বেশক’টি গ্রন্থ প্রণেতা। ১৯৭৭ খৃষ্টাব্দে বাংলা একাডেমী পুরষ্কার লভ করেন। তাঁর জন্ম ১৯২৮ সালে সদরের মেঘাগাছা গ্রামে।
মীর্জা আমজাদ হোসেন সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত অর্জন করলেও লেখক হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। শিশুতোষ রচনা- কচিদের মহানবী, কচিদের আবু বকর, কচিদের ওমর ও আলী, হিরা মানিকের দেশ, বড় হওয়ার গোপন কথা, মরু ভাস্কর, পাহাড়ী দেশে স্বপন কুমার, অবমত্মীপুরে স্বপন কুমার ইত্যাদি। রঙের বাজারে পঁয়তাল্লিশ বছর, আত্মজীবনীমূলক রচনা লেখার সময় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আনোয়ারা রহমান এ্যানা ১৯৩৮ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। কবি আতাউর রহমানের স্ত্রী, তাঁর রচিত উপন্যাস- আমার বধূয়া, গল্পগ্রন্থ- অমত্মলীন, গল্পমঞ্জরী, পুষ্পবাগ এবং কাব্যগ্রন্থ- প্রিয় পঙক্তিমালা, জননী আমার অহঙ্কার। তিনি ‘উত্তর নক্ষত্র’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
টিপু সুলতান এক সময় ভালো গল্প লিখতেন। তাঁর সম্পর্কে কবি বেলাল চৌধুরীর উক্তিটি স্মরণীয়-‘হাসান হাফিজুর রহমানের সূত্রে পরিচয় হলো এক উজ্জ্বল মেধাবী যুবকের সঙ্গে। অভিভাবকের একামত্ম বাধ্যগত ছেলে বগুড়ার টিপু সুলতান এসেছে ঢাকায় পড়াশুনার ব্রত নিয়ে। টিপু তখন বেশ কয়েকটি নজরকাড়া গল্প লিখে ফেলেছেন। ‘সমকাল’-এ প্রকাশিত ‘ডাহুক’ তো রীতিমতো একটা ভালো গল্প। জহির রায়হান সম্পাদিত ‘প্রবাহতেও’ একটি চমৎকার গল্প বেরিয়েছিল টিপু’র। এরকম এক সম্ভাবনাময় লেখকজীবন কেন যে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে গেল তা আজও আমার কাছে এক বিস্ময়।’ কয়েক বছর আগে তিনি লোকামত্মরিত হয়েছেন।
খন্দকার মুহম্মদ আজিজুল হক। ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে দুপচাঁচিয়া থানার তালোড়ায় জন্মগ্রহণ করে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ‘হয়তো নক্ষত্র নয়’ তাঁর একমাত্র গল্পগ্রন্থ। তাঁর গবেষণাগ্রন্থ-ভাষাতত্ত্বের নতুন দিগমত্ম ও আধুনিক ভাষাতত্ত্বের, নৈরাজ্য, অসঙ্গতি ইত্যাদি। তিনি ভাষার সরসতায় তুলে ধরতে অভ্যসত্ম। ‘দৈনন্দিন’, ‘জীবন যেখানে যেমন’ গ্রন্থগুলো তারই উজ্জ্বল উদাহরণ।
সাইফুল বারী কবিতা, নাটক এবং ছোটগল্প লিখেছেন। কবিতা গ্রন্থ- ‘দুই বিপরীত মেরুতে’, ‘একটি জীবন, জীবনের দৃষ্টিকোণ, ‘ভাগ্য কে ফেরাবে আমার’, ‘ক্রমাগত আমি’। টেলিভিশনের জন্যে তিনি নাটক লিখেছেন। ‘জোনাকী জ্বলে’ সিরিজ নাটকটি অন্যতম। গানও রচনা করেছেন। ১৯৯০ খৃষ্টাব্দে পর্যমত্ম তিনি জাতীয় সম্প্রচার কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্তব্যরত ছিলেন।
বগুড়া সাহিত্য কুটির-এর কর্ণধার এম শামসুল হক নাটক ও উপন্যাস লিখেছেন বেশ কয়েকটি। ‘একদিনের কাহিনী’, ‘মিথ্যার খেসারত’ তাঁর রচিত নাটক। একজন নাট্যমোদী এবং নাটকসহ অনেক গ্রন্থ তিনি প্রকাশ করেছেন। তাঁর উপন্যাসের নাম- ‘ফরিয়াদ’, ‘প্রেমের শেষ চিঠি’, ‘পলাতকের চিঠি’।
মুহম্মদ আব্দুল মতীন সাংবাদিক হলেও তিনি একজন ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু। প্রবন্ধ রচনায় সিদ্ধহসত্ম। তাঁর অনেক প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে সুধী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের প্রতি তাঁর প্রগাঢ় আকর্ষণ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তার ‘দাঁড়কাকের ডায়েরী, বুড়ো পৃথিবী’ উল্লেখযোগ্য রচনা।
ড.মুসত্মাফা নুরউল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর রচিত ‘মুসলিম বাংলা সাময়িক পাঠকদের মধ্যে দারুণ আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল। রওশন আখতার, যিনি এম আর আখতার মুকুল নামে পরিচিত। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত ‘চরমপত্র’ পাঠক। যাঁর কণ্ঠ মুক্তিযোদ্ধাদের মনে উৎসাহ যোগাতো,সেই এম আর আ্খতার মুকুল স্বাধীনতার পরে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি একজন স্পষ্টবাদী লেখক হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর অসংখ্য গ্রন্থের মধ্যে ‘আমি বিজয় দেখেছি’, ‘কোলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী’ বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে।
ড. মুসত্মফা নূরউল ইসলাম এখন ঢাকা থেকে ‘সুন্দরবন’ নামে সৃজনশীল একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান এবং শিল্পকলা একাডেমী মহাপরিচালকের পদ অলংকৃত করেন।
শাহ আনিসুর রহমান প্রথমে অধ্যাপনা ও পরে সাংবাদিকতায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি রাজশাহী থেকে দৈনিক বার্তার সিনিয়র সহ-সম্পাদরেক দায়িত্ব পালন করেন। ‘আড্ডা’ নামেতাঁর গল্পগ্রন্থ আছে।
ড. এনামূল হক ১৯৩৭ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘরের মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি ষাট দশকের প্রথমাবধি সিকান্দার আবু জাফরের ‘সমকাল’ সাহিত্য পত্রিকার পাশাপাশি ‘উত্তরণ’ নামে সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। উত্তরণের দেশে, হাজার তারের বীণাসহ তাঁর প্রায় ১২টি কাব্যগ্রন্থ এবং ইসলামী কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিষয়ক বেশকিছু গ্রন্থ বিদ্যমান। টেলিভিশনে তাঁর উপস্থাপনায় ১দেখা যায় নাই চক্ষু মেলিয়া’বাংলাদেশের পুরাকীর্তি বিষয়ক চমৎকার অনুষ্ঠান হিসেবে সুনাম অর্জন করেছিল। ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ধমীয় গ্রন্থ রচনায় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি সারিয়াকান্দি থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রচিত ‘পৃথিবী ঘোরে না সূর্য ঘোরে, বৈজ্ঞানিক মুহম্মদ, বিজ্ঞান না কোরান, ঝংকার’ ইত্যাদি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। নূরুল ইসলাম মন্ডল জন্ম ১৯৩৩, ১লা অক্টোবরে সারিয়াকান্দ উপজেলার হাটশেরপুরে। মনীষী একাদশ, নারীর মূল্যায়ন ও আল্লাহর ভাষায় রাসুল (সঃ) নামে তিনখানি গ্রন্থ রচনা করেন।
মাফরুহা চৌধুরী ১৯৩৬-এ কাটনারপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কবি তালিম হোসেনের স্ত্রী এবং প্রখ্যাত নজরুল সঙ্গীত শিল্পী শবনম মুসত্মারীর মাতা। মূলত গল্পকার হিসেবে তিনি খ্যাত। অরণ্যগাথা ও অন্যান্য গল্প,স্মলিত নক্ষত্র সহ প্রায় ১০টি গল্পগ্রন্থ, দু’টি উপন্যাস এবং তিনটি কাব্যগ্রন্থ আছে। প্রবন্ধ গ্রন্থ-ক্রামিত্মকালের ছায়া, সঙ্গ-প্রসঙ্গ। শিশুতোষ রচনা- একটি ফুলের জন্য, পানিতে কখনো আগুন লাগে। তাঁর দুটি অনুবাদগ্রন্থ আছে।
জাহাঙ্গীর চৌধুরী যাঁর মূল নাম মফিজ চৌধুরী,জয়পুরহাট জেলার মঙ্গলবাড়ী গ্রামে ১৯১৪ খৃষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এক সময় বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীত্ব পদ অলংকৃত করেন। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও সাহিত্যে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। তাঁর অনুদিত ‘আধুনিক কোরিয়ার কবিতা’বেশ সুনাম অর্জন করে। এছাড়াও শেক্সপীয়রের কিং লিয়র,রোমিও জুলিয়েট, এন্টনী ও ক্লিওপেট্টা তিনি অনুবাদ করেন। তাঁর উপন্যাসের নাম সোনালী প্রহর, বটতলার ঝড় এবং স্মৃতিকথাঃ বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভায়। ১৯৯৩ খৃষ্টাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন। শহীদ অধ্যাপক মোহসীন আলী দেওয়ান অধ্যাপনা পেশার পাশাপাশি সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের একজন নিবেদিতপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তিনি ১৯৩৯ খৃষ্টাব্দে জয়পুরহাট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বগুড়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। শিশুতোষ রচনা ‘গল্পের চিড়িয়াখানা ও প্রথমা’চমৎকার গ্রন্থ। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক ইতিহাস,ছন্দ পরিচয় তাঁর প্রবন্ধ গ্রন্থ। নাটিকা-নীলরক্ত। তার সম্পাদনায় ষাট দশকের প্রথমার্ধে ‘অতএব’সাহিত্য পত্রিকা লেখক সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাঁর সম্পাদনায় বগুড়া বুলেটিন, উত্তরবঙ্গ বুলেটন, বগুড়া বার্তা ইত্যাদি সংবাদ-নিবন্ধজাতীয় পত্রিকা বেশ সুনাম অর্জন করে। শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষা থাকাকালীন ১৯৭১ খৃষ্টাব্দে পাকিসত্মানী হানাদার বাহিনীর হাতে ধৃত এবং নিহত হন।
কবি জেব-উন-নেছা জামাল ১৯২৬-এ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মূলত গীতিকার হিসেবে সুপরিচিত। তিনি কল্পশিল্পী আঞ্জুমান আরা বেগমের বড় বোন এবং কণ্ঠশিল্পী জিনাত রেহানার মা। তাঁর রচিত গ্রন্থ- আমার যত গান, গান এল মোর মনে, সাগরের তীর থেকে। অনুবাদ গ্রন্থ- ‘বেল সাহেবের টেলিফোন আবিষ্কার’ এবং গল্পগ্রন্থ- ‘হারানো দিনের গল্প’। গাজীউল হক ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা এবং রাজনীতিবিদ। পেশায় একজন আইনজীবী হলেও তিনি ‘জেলের কবিতা’ লিখে সুনাম অর্জন করেন। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের নাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, বাংলাদেশ আন চেইনড ইত্যাদি। জন্ম: ১৯২৯ খৃষ্টাব্দে।
হাসনা আকরাম ১৯৩৩ খৃষ্টাব্দে জয়পুরহাটে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রচনার মধ্যে কবিতাগ্রন্থ- সংবতীকা, গল্পগ্রন্থ-হাসি কাশী বিড়ালী, উপন্যাস- এক পলকে, এক নদীর দুই কিনারা, শিশুতোষ রচনা- ছবি দেখে ছড়া, রঙিন প্রজাপতি উল্লেখযোগ্য।
আবেদ আলী আহমদ, স্বভাব কবি। জন্ম ২রা ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ খৃষ্টাব্দে বগুড়ার গাবতলীতে। তাঁর কাব্যগ্রন্থ- প্রেমের বাঁশরী (১৯৬২), স্বর্গের মত বেঁচে থাকা, রক্তে ভেজানো বাংলা আমার, গীতিমঞ্জরী, আমার প্রিয়া আর আমি দু’জনে একজন ইত্যাদি। মৃত্যুঃ ১৯শে এপ্রিল ২০০৭।
মাহমুদা আখন্দের ‘বিজয়ননী’ ও ‘রঙ-বেরঙ’, শেফালী রহমানের ‘প্রীতি নয় স্মৃতি’ ও ‘শ্লো পয়জন’ এবং জাহানারা হকের ‘ফুলের বিয়ে’, আবু হায়দার সাজেদুর রহমানের মডেল, বিচিত্রা-উপন্যাস ও রহস্যোপন্যাস কালনাগিনী, ভাইপারের মরণ ছোবল, মৃত্যুলোভী ভাইপার। সৈয়দ ওমর আরী চৌধুরীর ‘প্রিলুড ইন বাংলাদেশ’। আব্দুর রাজ্জাকের ‘কন্যাকুমারী’ উপন্যাস, সাংবাদিক আসফ-উদ-দৌলা রেজার রাজনীতি ও সরকার, মুহম্মদ ফজলুল হকের ‘তৃষ্ণার্ত বিহঙ্গ’ কাব্যগ্রন্থ, জগলুল হায়দার আফরিকের বিপ্লবী নায়িকা, সিন্ধু নামার দেশে এই সময়ের উল্লেখযোগ্য রচনা হিসেবে পাঠক মহলে স্বীকৃতি লাভ করতে পেরেছে। ডাঃ আব্দুল করিমের ‘ভ্রমণ কাহিনী’ পথে প্রবাসে, আব্দুল মজিদ ফকীরের নিউইয়র্ক ভ্রমণ’ উল্লেখযোগ্য রচনা।
এই সময় এডওয়ার্ড ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চকে ঘিরে বেশকিছু নাট্যকার নাটক রচনায় মনোনিবেশ করেন। প্রসাদ বিশ্বাসের নাজেহাল, উত্তরের স্বপ্ন, অবাক পৃথিবী, অবিচার, জবাবদিহিতা, পাকা রাসত্মা, আমজাদ হোসেনের স্বামী-স্ত্রী, ফিফটি ফিফটি, জালাল উদ্দিনের শহীদ তিতুমীর, শোণিতধারা উল্লেখযোগ্য।
বগুড়ার সাহিত্য : ষাট-এর দশক : প্রথমার্ধ :
বগুড়ায় ষাট-এর দশকের প্রথমার্ধে অধ্যাপক মোহসিন আলী দেওয়ানের ‘অতএব পত্রিকাকে ঘিরে একটি সাহিত্য পরিমন্ডল গড়ে উঠেছিল। ‘অতএব’ আধুনিক সাহিত্যয়ীতিকে পুরোপুরি ধারণ করেনি। রহীম চৌধুর, কমলেশ সেন, খাজা জহুরুল হক, মহীউদ্দীন, আবু আফতাব, মোহসিন আলী দেওয়ান, শাহ আনিসুর রহমান এবং পরবর্তীতে ষাটের শক্তিধর কবিদের মধ্যে ফারুক সিদ্দিকী, মহাদেব সাহা, বজলুল করিম বাহারের লেখা প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৬২ তে ‘অতএব’ সাহিত্য পুরষ্কার দেওয়ার কতা ঘোষণা করা হয়েছিল এবং বগুড়া জেলার কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী সংগ্রহের এক মহতী উদ্যোগ ‘অতএব’-এর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ জাতীয় উদ্যোগ সাথর্ক হয়েছিল কি-না সে সম্পর্কে বেশি কিচু জানা যায় না। আমান উল্লাহ খান, রহিম চৌধুরী দু’জনে ষাট-এর দশকের তুখোর ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আমান উল্লাহ খান রাজনীতির সাথে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাকের উত্তরাঞ্চল প্রতিনিধি। তাঁর রচিত ‘আজকের বগুাড় জেলার পরিচিতিমূলক একটি চমৎকার গ্রন্থ। অনেক মেঘ, লাল মাটির আর্তনাদ তাঁর রচিত গ্রন্থ। তিনি ১৯৬৮ তে ‘নতুন দিন’নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন। স্বাধীনতা উত্তরকালে তার সম্পাদিত ‘দৈনিক বাংলাদেশ’ উত্তরাঞ্চলের প্রথম দৈনিক হিসেবে পরিচিত। রহিম চৌধুরী চাকুরিসূত্রে বগুড়া ত্যাগ করেছিলেন। তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ ‘প্রতীক্ষা’ অনেক পরে প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমানে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখক হিসেবে পরিচিত। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক ক্রিয়াকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। আবু বকর সিদ্দিক-এর ‘পূর্ব বগুড়ার পল্লী সাহিত্য (গবেষণা গ্রন্থ) (১৯৬৩), বন্ধু বিচ্ছেদ (১৯৬৮), বান্ধব বডি (নাটক) ১৯৭০ প্রকাশিত হয়। খাজা জহুরুল হক বর্তমানে জয়পুরহাটে আইন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁর কয়েকটি ছোটগল্প সেই সময় বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি লেখালেখি ছেড়ে দেন।
১৯৬২-তে মোহসীন আলী দেওয়ান সম্পাদিত ২টি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। একটির নাম ‘গল্পের চিড়িয়াখানা ও ‘প্রথমা’। ‘গল্পের চিড়িয়াখানা সেই সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠ্যপুসত্মক হিসেবে পঠিত। এই গ্রন্থে মোট ৯টি গল্প আছে। লিখেছেন- রহীম চৌধুরী, কমলেশ সেন, মোহসীন আলী দেওয়ান, লুৎফর রহমান, শাহ আনিসুর রহমান প্রমুখ।
প্রফেসর মুহ. মাহফুজুর রহমান বগুড়া জেলার ধুনট থানার ঝিনাই গ্রামে ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার লেখা ‘ফকীর সন্ন্যাসী বিদ্রোহ’, ‘ওয়াহ্হাবী আন্দোলন ও বগুড়া’ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মহাতাব উদ্দিন আহম্মেদ। যার ৫টি কাব্যগ্রন্থ ও ৫টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। কাব্য ‘জীবন বীণা’ ‘বাশের বাঁশরী’, ‘সুর তরঙ্গ’, ‘স্ফুলিঙ্গ ও ঝংকার’ উপন্যাস-‘মৃগ-তৃষ্ণিকা’, ‘পুনর্মিলনী’, অমিত্মম মিলন ও দুখিনী বঙ্গ জননী মুক্তিযুদ্ধ ও একটি বিপর্যসত্ম প্রেম। তিনি সাহিত্যে ‘কবি জসিম উদ্দিন সাহিত্য পুরস্কার’ ১৯৯৫ পেয়েছেন।

বগুড়ার সাহিত্য : ষাট-এর দশক : দ্বিতীয়ার্থ
ষাট দশকের মধ্যবর্তী সময়ে পঞ্চাশ-এর দশকের কবিতা ও গল্পকে পাশ কাটিয়ে ভিন্ন আঙ্গিক এবং বিষয় বৈচিত্র্য নিয়ে প্রাণবমত্ম একদল তরুণ হাত রাখেন সাহিত্যের উত্তপ্ত ভূমিতে। সাহিত্যের এই পালাবদলে নিঃসন্দেহে চমক ছিল, ছিল ভিন্নতর স্বাদ। এদের খোলামেলা বক্তব্যের সহায়ক ছিল নিজেদেরই সম্পাদিত কবিতা ও গল্প পত্রিকা যা ‘লিটল ম্যাগাজিন’ নামে অভিহিত। ষাটের প্রথমার্ধে ঢাকা থেকে প্রকাশিত হচ্ছিল- বক্তব্য, স্বাক্ষর, সাম্প্রতিক, কালবেলা, না, কণ্ঠস্বরসহ আরো কিছু পত্রিকা। সাহিত্যের উদ্দীপ্ত তারুণ্য নিয়ে তখন আব্দুল মান্নান সৈয়দ, আসাদ চৌধুরী, রফিক আজাদ, নির্মলেন্দু গুণ, আবুল হাসান, সিকদার আমিনুল হক প্রমুখ এগিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য জেলার মতো বগুড়া জেলাতেও ষাট-এর দশকের মধ্যবর্তী সময় থেকে একদলউচ্চাকাঙ্ক্ষী সাহিত্যপ্রেমী তরুণ তাদের স্বল্প ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন, গড়ে তুলেছিলেন সাহিত্যের এক অনুকূল আবহাওয়া।

বগুড়ার সাহিত্যঃ লিটল ম্যাগাজিন ও ষাটদশকী লেখকবৃন্দ:
আধুনিক সাহিত্যের দিগ্বলয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়ে বগুড়ার কিছু সাহিত্যকর্মী ষাট দশকের মধ্যবর্তী সময়ে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন। বয়সে এরা ছিলেন সবাই তরুণ। তারুণ্যের সেই রক্তিম উচ্ছ্বাসের উদ্বেলিত হয়ে নিজেরাই পত্রিকা সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁদের শক্তিমত্তা জানিয়ে দিতে থাকেন। বগুড়ার সাহিত্যের অঙ্গন হয়ে ওঠে মুখরিত। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনে নিজেদের সম্পৃক্ত করে ষাট দশকে যাঁরা আত্মপ্রকাশ করেন তাঁরা হলেন-ফররুক সিদ্দিকী, কাজী রব, সাহেদুর রহমান, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মনোজ দাশগুপ্ত, বজলুল বাহার করিম বাহুর, সাইফুল ইসলাম, সাম হেদায়েতুল্লাহ, রেজাউল করিম চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল রহিম হীরু। এখানে আরো দু’জন তরুণের নামোল্লেখ করতে চাই, তাঁরা বিভিন্ন জেলার অধিবাসী হলেও তাঁদের সাহিত্যযাত্রা শুরু বগুড়ায়। তাঁরা হলেন-কবি মহাদেব সাহা এবং প্রয়াত কবি শাহনূর খান। বগুড়ায় নতুন কাব্যান্দোলনে তাঁরাও ছিলেন সক্রিয়। ষাট দশকের মধ্যবর্তী সময়ে লিটল ম্যাগাজিন ‘বিপ্রতীক’ ও ‘পদধ্বনি’ আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়েই বগুড়ায় নতুন কাব্যযাত্রা শুরু হয়। বিপ্রতীক সম্পাদনা করেছেন ফারুক সিদ্দিকী, কাজী রব এবং মহাদেব সাহা। পরবর্তীতে শুধু ফারুক সিদ্দিকী। ‘পদধ্বনি’ সম্পাদক ছিলেন মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ও মনোজ দাশগুপ্ত। আরো কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিন এই সময় বের হয়। নূর মোহাম্মদ তালুকদার সম্পাদিত ‘স্বরক্ষেপ’, রেজাউল করিম চৌধুরী ও সাইফুল ইসলাম সম্পাদিত ‘অপরাহ্ন’, শাহনূর খান ও আরেফুল ইসলাম সম্পাদিত ‘অবেলা’। ফারুক সিদ্দিকীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘স্বরচিহ্নে’ ফুলের শব প্রকাশিত হয় ১৯৭২-এ।

গ্রন্থটির প্রকাশক ছিলেন রেজাউল করিম চৌধুরী। তাঁর কবিতা আপাত জটিল হলেও স্বভাবে ‘রোমান্টিক’ শব্দতাড়িত। এই কবির আর কোনো কাব্যগ্রন্থ বের হয়নি। অনুবাদ কর্মেও তিনি সিদ্ধহসত্ম। প্রবন্ধেও তাঁর সমান দক্ষতা। সম্প্রতি বেরিয়েছে তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘তামসিক নিসর্গে ঈশ্বরনামা ও অন্যান্য’। তাঁর সম্পদিত ‘বিপ্রতীক’কবিতাপত্রটির ইতোমধ্যেই ছাবিবশটি সংখ্যা বেরিয়ে গেছে। ফারুক সিদ্দিকী পত্রিকা সম্পাদনার জন্য ১৯৮৯-এ বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার পেয়েছেন।

একজন বহুপ্রসূ কবি হিসেবে কাজী রবের পরিচয়। তাঁর কবিতায় একই সঙ্গে রাজনীতি, প্রেম, আমত্মর্জাতিকতা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৪ এই পাঁচ বছরের তাঁর ৫টি কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে। গ্রন্থগুলোর নাম ‘ফণিমনসার সানগ্লাস’, ‘তুমি হে দুধের মাছি’, ‘আবাবিল ও বিশল্যকরণীর মার্চ এপ্রিল’, ‘পাখির পার্লামেন্ট’ ও নক্ষত্রের নিকোটিন’। মৃত্যুর পর তাঁর সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ‘চোখ এক জলের সংসার’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৬ খৃস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল তিনি পরলোক গমন করেন।

বজলুল করিম বাহার বগুড়ার সাহিত্যাঙ্গনের একজন সক্রিয়া লেখক। অনুবাদেও তিনি পারঙ্গম। তাঁর কোনো কবিতার বই বের হয়নি। তিনটি প্রবন্ধের বই আছে-‘সমকালীন কবিতার দিগ্বলয়’ ‘নানা অনুভবে’ ও ‘কথার মেওয়াসকল’। ছো গল্পের বই ‘হে বৃক্ষলতা’ লেখক হিসেবে ১৯৮৯ বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার লাভ করেন।
সাহেদুর রহমান ছাত্রাবস্থায়-‘বিপ্রতীক’ কবিতাপত্রে বগুড়ার পাঁচজন কবির ৫টি কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ আছে। কাব্যগ্রন্থ ‘প্রচ্ছদপট’। প্রবন্ধ ‘অভিনয়ে নড়াচড়া ও কথা বলা’। অধ্যাপনা পেশা ছেড়ে দিয়ে বর্তমানে চলচ্চিত্র জগতের কাহিনী লেখক হিসেবে জীবকা বেছে নিয়েছেন।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কবিতা-প্রবন্ধ রচনা করেন। তাঁর সাতটি কাব্যগ্রন্থ-ভিজে মাঠের রাখাল বালক (১৯৯০), দুই প্রহরের রোদ (১৯৯২), বাদামী বৃক্ষলিপি (১৯৯৪), বিচূর্ণ কবিতা (১৯৯৬), দূর থেকে আরো দূর (২০০০), অমত্মর্গত কবিতা সকল (২২০৩), হে কবিতা জীবন (২০০৭), প্রবন্ধ গ্রন্থ ৫টিঃ কবিতা অনুষঙ্গ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৯১), জহির রায়হান ও তাঁর শিল্প ভূবন (২০০১), শব্দ ও নৈঃশব্দ্য (২০০৪), দুই কবিঃ রৌদ্র দিনের সহযাত্রী (২০০৫) ও কয়েকজন কবিঃ অমত্মরঙ্গ আলোকে (২০০৬)। সম্পাদনাঃ কবি কাজী রব নিবেদিত কথামালা (২০০০)। তাঁর সম্পদিত পত্রিকার নাম ‘দধ্বনি’, ‘অনুকাল’, ‘অর্কেস্ট্রা’, ‘ঐতিহ্য’, ‘আত্মপ্রকাশ’, ‘নির্বাচিত কবিতা’। ১৯৮৯-এ বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

মনোজ দাশগুপ্ত ষাট দশকের একজন রোমান্টিক জীবনবাদী কবি। তাঁর একমাত্র কবিতাগ্রন্থ ‘সজল বৃক্ষের দিকে’ তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৯৭ খৃস্টাব্দে ৬ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম গল্প ও কবিতা লিখতেন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের প্রেক্ষিতে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। ‘বাংলা সাহিত্য সারণি’ তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা। সাহিত্যের কাল নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এটি সহায়ক। মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম, স, ম হেদায়েতুল্লাহ এবং রেজাউল করিম চৌধুরীর মিলিত প্রচেষ্টা সাহিত্য পত্রিকা ‘অপরাহ্ন’। স, ম হেদায়তুল্লাহর কবিতা ও আলোচনার তীক্ষ্ণ হাত ছিল। রেজাউল করিম চৌধুরী ষাট-এর দশকের আরেক শক্তিশালী কবি। কবিতার ভাষা ও শব্দচয়নে তিনি পরিশ্রমী। ‘ভালমন্দের অপরাহ্ন’, ‘পরাজিত শালিকের অনুশোচনা’, চাঁদের হাতে তরবারি’, সহ ছয়টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর বলিষ্ঠ সম্পাদনায় ‘অর্কেস্ট্রা’ সাহিত্যপত্র ইত্যেমধ্যে পাঠ মহলে আদৃম হয়েছে। খন্দকার আব্দুর রহিম ছোটগল্প লেখক। ষাট দশকে বগুড়া জেলার লেখক যাঁরা জীবিকাসূত্রে বাইরে অবস্থান করেছেন তাঁদের মধ্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আনওয়ার আহমত অন্যতম। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাংলাদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত কথা সাহিত্যিক। তাঁর গল্পগ্রন্থের সংখ্যা চারঃ ‘অন্যঘরে অন্যস্বর’, ‘খোঁয়ারি’, ‘দুধেভাতে উৎপাত’ এবং ‘দোজখের ওম’। উপন্যাসের নাম ‘চিলেকোঠার সেপাই’ ও ‘খোয়াব নামা’। আন্ওয়ার আহমদ কবি এবং ছোটগল্প লেখক এবং সর্বোপরি একজন সম্পদক। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে-রিলকের গোলাপ, মানবসম্মত বিরোধ, নির্মাণে আছি, হঠাৎ চলে যাবো, শেষ সম্বল শেষ দান, অঙ্গ তোমার কাব্য করে, নীল কষ্টের ডাক, প্রেম পদাবলী, উনষাটের পদাবলী, ষাটের প্রামত্ম ছুঁয়ে, অটর থাকা ধীর সন্যাস, উড়ো খই গোবিন্দ নমঃ। গল্পগ্রন্থ-অন্ধকারের সীমানা, আন্ওয়ার আহমদের গল্প, অন্ধকার, সতর্ক প্রহরা ও অন্যান্য গল্প। সম্পাদিত গ্রন্থ-পঞ্চশর, আজকের কবিতা, সিলেক্টেড পয়েমস অব আবদুল মান্নান সৈয়দ, একজন কবি দিলওয়ার, কবি আতাউর রহমান, একজন কবি আহমদ রফিক, একজন গল্পকার (আবদুল মান্নান সৈয়দ)। তিনি সুদীর্ঘ ৩৮ বছর যাবৎ কবিতা পত্রিকা ‘কিছুধ্বনি’, গল্প পত্রিকা ‘রূপম’ সম্পাদনা করেছেন এবং মৃত্যুঅবধি সম্পাদনা করেছেন। তাঁর রূপম প্রকাশনী থেকে শতাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে এদেশের অসংখ্য তরুণের প্রথম বই তাঁর রূপম প্রকাশনী প্রকাশ করেছে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৯৪-এর জানুয়ারি এবং আন্ওয়ার আহমদ ২০০৩ খৃস্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর লোকামত্মরিত হন।
জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত বগুড়া আযিজুল হক কলেজে অধ্যয়নকালীণ সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তীকালে ষাট দশকের একজন গল্পকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। বহে না সুবাতাস, দুর্বিনীত কাল, সিতাংশু তোর সমসত্ম কথা’ অন্যতম গল্পগ্রন্থ। এখন আমেরিকা প্রবাসী। রবি ভট্টাচার্য, শ্যামল ভট্টাচার্য ভ্রাতৃদ্বয় মূলত নাটক রচনায় পারদর্শী। রবি ভট্টাচার্যের দাইনেম ইজ, মেডেল, আলোয় খুঁজে ফেরা মঞ্চ সফল নাটক, শ্যামল ভট্টাচার্য নাট্য রচনা, নির্দেশনার পাশাপাশি অভিনয়েও সমান দক্ষ।

আলাউদ্দীন অনেক নাটক রচনা করেছেন। বোবা কান্না, নকল মানুষ, বিষের পেয়ালা, মন্টুর পাঠশালা সুনাম অর্জন করেছে। তিনি ক্ষেতলাল থানার অধিবাসী। মৃণালকামিত্ম সাহা একজন সঙ্গীতশিল্পী হলেও নাটক রচনাতেও তিনি সমান দক্ষ। নাট্য বিষয় আলোচনাও তাঁর আছে। তাঁর রচিত নাটক-‘ককটেল’।

রবিউল আলম জন্ম বারপুর, বগুড়া ১লা ১৯৪৮। নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা এবং গল্পকার। চাকরি সুবাদে ঢাকায় বসবাস করছেন। তাঁর অনেকগুলো নাটক বেতার ও টিভিতে প্রচারিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। টেলিভিশন ও বেতারে উল্লেখযোগ্য নাটক-নাপুস, সমাপ্তি অন্য রকম, এক যে ছিল দুই হুজুর, কখনো সৈকতে, আরো একজন রাবেয়া, পরবাসী, সবুজিয়া, বিপ্রতীপ, আমি যখন বন্দী, এক সকালে, যার সাথে যার, উল্টো ফাঁদ, একজন মিশার ঈদ, তোমরা আমার ইত্যাদি।

ষাটের আরো যাঁরাঃ
ষাট-এর দশকে আরো যাঁরা সাহিত্যভূমিতে পা রেখেছিলেন তাঁরা হলেন-নূর মোহাম্মদ তালুকদার, মুহম্মদ রহমতুল বারী, মোসত্মফা নূরউল ইসলাম, মিনতি কুমার রায় প্রমুখ। নূর মোহাম্মদ তালুকদার ছাত্রাবস্থায় ১৯৬৭ খৃস্টাব্দের শেষে দিকে ‘স্বরক্ষেপ’ নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের মাধ্যমে সাহিত্যচর্চা শুরু করেন।। তাঁর দু’টি কাব্যগ্রন্থ-বিবাগী কাল ও শুক্লাতিথির চিঠি। উপন্যাস-জঠরে আগুন জ্বলে। মুহম্মদ রহমতুল বারী পেশায় ডাক্তার, শেরপুর নিবাসী। তিনটি কাব্যগ্রন্থ তাঁর-স্বপ্নের সোনালী আবীর, জেগে থাকি, সুখ-দুঃখ পদাবলী। একমাত্র গল্পগ্রন্থ-বিকাউ। অধ্যক্ষ মোসত্মফা নূরউল ইসলামের একমাত্র কাব্যগ্রন্থের নাম-‘আমাকে আসতে বললে না’। অধ্যাপক মিনতি কুমার রায় লিখেছেন একটি গবেষণাগ্রন্থ-সমালোচনাতত্ত্ব। ষাটের একেবারে শেষ পর্যঅয়ে আরো দু’একজন লেখকের নাম পাচ্ছি-এঁরা হলেন-আব্দুর রফিক খান, তাঁর গ্রন্থ-তবুও মানুষ (১ম ও ২য় খন্ড), তিনি কবি কে এম শমশের আলী কনিষ্ঠ ভ্রাতা, বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী। ফজলুল আলম-এর গ্রন্থ-সাহসিনী নারী, মনের ব্যভিচার, পরবাস, প্রশ্ন থেকে যায় ইত্যাদি। আরেকজন লেখক সালেহা চৌধুরী বর্তমানে লন্ডনে প্রবাসী। তিনি উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ছড়া লিখেছেন। যখন নিঃসঙ্গ, উষ্ণতর প্রপাতে, তাহিতি এবং অন্যান্য। উপন্যাস-আনন্দ, বিন্নি ধানের খই, ময়ূরীর মুখ, প্রবন্ধ-সাহিত্য প্রসঙ্গে, পরমা, প্রবাস চিমত্মা।

বগুড়ার সাহিত্যঃ সত্তর-এক দশকঃ স্বাধীনতাত্তোর আকাঙ্ক্ষা:
স্বাধীন বাংলাদেশে শুরুতেই নতুন লেখকদের আমরা পাইনি। দেশের বিপর্যসত্ম অর্থনৈতিক অবস্থা, চারদিকে ধবংশ আর সত্মূপের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একদিকে স্বাধীনতা পাওয়ার আনন্দ, অন্যদিকে স্বজন হারানোর হাহাকার সাহিত্যের ভুবনকে সিত্মমিত করে রেখেছিল। ১৯৭২-এ ৬ জুন আমাদের এক কাব্যসহচর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের কনিষ্ঠ অধ্যাপক ষাটের অন্যতম তরুণ কবি হুমায়ন কবির আততায়ীর গুলিতে নিহত হলেন। আগস্টে কবি ফারুক সিদ্দিকী ‘বিপ্রতীক’ কবিতাপত্রের অষ্টম সংখ্যা প্রকাশ করেন এবং সেখানে কবি হুমায়ুন কবিরের মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করা হয় এভাবে-‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বকনিষ্ঠ অধ্যাপক ও তরুণ কবি বিপ্রতীক গোষ্ঠীর অন্যতম শুভানুধ্যায়ী হুমায়ুন কবিরকে ছয়ই জুন রাত্রি ন’টায় রহস্যজনকভাবে হত্যায় আমরা গভীরভাবে ব্যথিত হয়েছি, মর্মাহত হয়েছি। সব সময় সকল হত্যাকান্ড নিন্দনীয়।’

১৯৭৪-এ ‘অনুকাল লেখ গোষ্ঠী’র ছায়াতলে বেশ কিছু তরুণ লেখক একত্রিত হন। সমাজ, প্রেম এবং যুদ্ধোত্তর নতুন স্বদেশ চেতনায় তাঁদের লেখালেখি এগুতে থাকে। এই দশকে যাঁরা সাহিত্যচর্চা শুরু করেন তাঁরা হলেন-মনজু রহমান, রায়হান রহমান, আবদুর রাজ্জাক, শোয়ের শাহরিয়ার, জি, এম হারূন, মাহমুদ হাসান, পুটু আখতা, মোসত্মফা আলী, সজীব শামত্মা হীরু, আফরুজ জাহান, সুজন হাজারী অমিয় সাহা, খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, ফারুক ফয়সল প্রমুখ। এদের মধ্যে অনেকে লেখালেখি থেকে সরে গেছেন, কেউ নতুন চেতনায় গ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছেন।

মনজু রহমান কবিতা চর্চায় এখনও নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তাঁর একমাত্র কাব্যগ্রন্থ ‘জলের নূপুর’। ‘পান্ডব’ ও ‘টাঙ’ নামে কবিতা পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত আছেন। তাঁর সম্পাদনায় এই দশকে অনড়, এ্যালবাম, যুগল জানালা, নির্বাচিত কবিতা ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। রায়হান রহমান কবিতা চর্চায় নিজেকে একাগ্রভাবে নিমগ্ন রেখেছিলেন। তাঁর কোনো কাব্যগ্রন্থ এখনও বের হয়নি। এই সময় তাঁর সম্পাদনায় অনড় এবং যুগল জানালানসহ বেশ ক’টি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। শোয়েব শাহরিয়ার তাঁর চারটি কাব্যগ্রন্থ-শোকগুচ্ছ শ্লোক গুচ্ছ (১৯৯১), মণীষার জন্য পঙ্ক্তিমালা (ডিসেঃ ০৭) প্রত্নরোধে শরীর পোড়ে, কোরতে লদীর বুকের উসুম (বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষার কবিতা)। প্রবন্ধ গ্রন্থ-আখতারুজ্জামান ও খন্ডিত চেতনার নান্দীপাঠ। তাঁর সম্পাদনায় ‘মনোসরনী’ নামে একটি চমৎকার পত্রিকা প্রকাশ পায়। সরকার আশরাফ-সম্পাদিত ‘নিসর্গ’ পত্রিকাটির প্রকাশকও তিনি। আবদুর রাজ্জাকের একটি মাত্র কাব্যগ্রন্থ-কে গ্রহণ করে অসিত্মত্ব আমার। তাঁর সম্পাদনায় ‘শতবর্ষী’ পত্রিকাটির ৭টি সংখ্যা প্রকাশ পায়।

১২টি উপন্যাস ৪টি গল্পগ্রন্থ, ৮টি কবিতাগ্রন্থ, ৫টি ছড়াগ্রন্থ ও একটি সম্পাদিত গ্রন্থসহ প্রায় ৫০টি গ্রন্থের জনক জি. এম হারুন। উপন্যাস-নীল চোখে নীল যন্ত্রণা, যে ছিল মনে, তুমি আসবে বলে, যে ছিল অমত্মরে। গল্পগ্রন্থ-সরবে নীরবে, অধিবৃত্তে অাঁধার, স্মৃতি নির্ভর, চোখের আয়তনে। কাব্যগ্রন্থ-ভালাবাসা একদিন, মগ্ন রব মাটির প্রেমে, বিষ্টি নামে নামে না ইত্যাদি। ছড়াগ্রন্থ-হেই সামালো, কেচ্ছাকান্ড, এক বসত্মা ছড়া। তাঁর সম্পাদিত ‘স্মৃতিতে জলপড়ে টুপটাপ’ নামে বগুড়ার কবি-লেখকদের জীবনীমূলক গ্রন্থ। তিনি ‘তূণ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। ‘মল্লিকা’ বগুড়া লেখক চক্র পুরস্কার পেয়েছেন। অবসর ও অাঁচল নামেও দুটো পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, প্রয়াত কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়ামের অনুজ। খালিকুজ্জামান ইলিয়াস গালিভারের ভ্রমণ কাহিনী, রসোমন, মিখাইল সলোকভের প্রথম জীবনের গল্প, মিথ্যের শক্তি নামে কয়েকটি গ্রন্থ প্রণেতা। তিনি ২ খন্ডে ‘আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সমগ্র’ সম্পাদনা করেছেন।

সুজন হাজারী কবি হিসেবেই উত্থান। তাঁর বেশ কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ, ছড়াগ্রন্থ আছে। একজন জীবনবাদী কবি হিসেবে তিনি পরিচিত। তিনি জয়পুরহাটউচ্চারণরণ সাহিত্য গোষ্ঠীর অন্যতম সংগঠক। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-কৃষ্ণপক্ষ সংক্রামত্ম ও ভালোবেসে রাজা হবো।

অমিয় সাহা, আযিযুল হক কলেজে পড়াশুনাকালে প্রচুর কবিতা লিখতেন। তার অনেক কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে আছে। এই কবি পরবর্তীতে আইন ব্যবসাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। এই কবি আকস্মিকভাবে পরলোকগমন করেন।

শহীদ অধ্যাপক মোহসিন আলী দেওয়ানের জ্যেষ্ঠপুত্র ফারুক ফয়সল ছোটবেলা থেকেই পিতার অনুপ্রেরণায় লেখালেখি শুরু করেন। পেশা বেছে দেন সাংবাদিকতা। ছোটগল্প ও উপন্যাস তাঁর বিচরণ ক্ষেত্র। উপন্যাস-তার নীল চোখ এবং প্রবন্ধ-রাজধানীর রাজনীতি। দীর্ঘকাল কানাডায় প্রবাস জীবন শেষে এখন দেশে অবস্থান করছে। পুটু আখতা এ সময়ের এক তরুণ লেখক। নাটক ও ছোটগল্প লেখক। নাটক-বিভ্রাট, আমি কে, স্বয়ং ভূত ইত্যাদি তাঁর নাটক। বিশেষ রচনা ‘বগুড়ার নবাববাড়ীর, সেকাল-একাল ও একজন মুক্তিযোদ্ধার ডায়রি থেকে।
মোসত্মফা আলী, প্রবন্ধ ও নাটক লিখেছেন বেশ ক’টি। মানিক চেতনাঃ ভিন্ন প্রেক্ষিত, মানিক ও জীবনান্দ, নৈঃশব্দের কোলাহল, হেনরিক ইবসেন ও তাঁর শিল্পচেতনা, উপন্যাস-‘নীলকন্ঠ পাখি’ গল্প সংকলন-সময়ের শেষ প্রহর, কাব্যগ্রন্থ-প্রত্ন হৃদয়ের জ্বালা (যৌথ)।

বগুড়ার সাহিত্যঃ আশির দশকঃ উজ্জ্বল তারুণ্য:
আশির দশকে এক ঝাঁক উজ্জ্বল তরুণ লেখকের সাহিত্য অঙ্গনে সদম্ভ পদাপাত আমাদের আশান্বিত করলো। এই সময়ে যাঁরা এসেছেন তাঁরা হলেন-শেখ ফিরোজ আহমদ, আশীস-উর-রহমান শুভ, আজিজার রহমান তাজ, সুকুমার দাস, প্রদীপ মিত্র, পলাশ খন্দকার, ফখরুল আহসান, জয়মত্ম দেব, শিবলী মোকতাদির, বিদ্যুৎ সরকার, আব্দুল্লাহ ইকবাল, মাহমুদ হোসেন পিন্টু, পিয়াল খন্ডদার, রোহন রহমান, সৈয়দ মাহবুব, পান্না করিম, হাবীবুল্লাহ জুয়েল, শের আফগান শেরা, ড্যারিন পারভেজ, মিঠু হোসেন, খন্দকার আমিনুল করিম দুলাল, খন্দকার রেজাউল করিম হীরু, আশিক সারওয়অর, গাজী সারোয়ার, খাদিজা এলমিস, আব্দুর রউফ খান, খন্দকার বজলুর রহিম, সারোয়ার হোসেন বিকাশ, বায়েজীদ মাহবুব, আরিফ রেহমান, সুপান্থ মল্লিক, মনসুর রহমান, আব্দুর রশিদ, আব্দুর রহিম বগরা, আব্দুস সামাদ, মতিউল ইসলাম, ফেরদৌসুর রহমান রিটা, তৌফিক হাসান ময়না, ফরিদুর রহমান, রোকেয়া মাহবুব, রেজাউল করিম মুন্টু, সরকার সাইফুল মাহমুদ, নবী নাজমূল হক তালুকদার, (ন, না, হক তালুদকার), তাঁর সম্পাদিত শিশু-কিশোর পত্রিকা ‘ভোর হলো দোর খোল’।

প্রদীপ মিত্রের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-পতাকার অহংকার (১৯৯৯), দেখি সেই দগ্ধগ্রাম (২০০১), তার হাতে দীর্ঘ এক হাত (২০০২), আকাশের সুবিসত্মার (২০০৩), অগ্নিত অঙ্গার (২০০৪) ও জনতার সিংহ নাম (২০০৬)।
শেখ ফিরোজ আহমদের জন্ম চাঁদপুরে কিন্তু অধ্যাপক পিতার বদলীসূত্রে তিনি আশির দশকে বগুড়াতে স্থায়ীভাবে অবস্থানের সময়ে বগুড়ার সাহিত্য জগতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন। ষাট ও সত্তর দশকের লেখকদের সঙ্গে তিনি সু-সম্পক গড়ে তুলতে সমর্থ হন। ছাত্রাবস্থাতেই প্রচুর লেখালেখি এবং পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পাতকীর ছায়া’ প্রকাশিত হয়। এছাড়া তিনি রক্তারুণ, চত্বর, ঈক্ষণ নামে লিটন ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ‘বগুড়া লেখক চক্র’ প্রতিষ্ঠা ও এই সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার পিছনে শেখ ফিরোজ আহমদের অবদান সবচেয়ে বেশি।

সাজাহান সাকিদার একজন প্রতিশ্রুতিশীল গল্পকার ও ভিন্নমাত্রার ঔপন্যাসিক। তাঁর প্রকাশিত বই-উপন্যাসঃ শ্মশানযাত্রীর নরক উল্লাস-১৯৯৫, বত্রিশ বিঘা ধানী জমি-২০০০, স্বপ্ন বিক্রেতাদের গল্প-২০০৭, আবারও জেগে উঠবে এই ডুবোচর-২০০৭, গল্পগ্রন্থঃ পাতালে এক বর্গ-২০০৪, উল্টোরথ-২০০৫, বলি ও অন্যান্য তীরের সমীকরণ-২০০৮।

ফখরুল আহসান এক তরুণ কবিতাকর্মী। কোনো কবিতাগ্রন্থ বেরোয়নি, তবে প্রকাশ অপেক্ষায় আছে। সম্পাদনা করেছেন ‘মর্মর’ এবং ‘পথ’ কবিতা পত্রিকা। পান্না করিমের একমাত্র কাব্যগ্রন্থঃ আকরিক সুখ-দুঃখের জার্নাল। জয়মত্ম দেব কবিতায় নিবেদিত প্রাণ। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ-‘করতোয়ার জল ছুঁয়ে বেড়ে ওঠে বেহুলার ছেলে’। ‘দ্যুতি’ নমে একটি পত্রিকা তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে।

পিয়াল খন্দকার ছোটগল্প এবং উপন্যাসই বেশি লিখেছেন। তাঁর ছয়টি উপন্যাস-শুধু তোমাকেই ভালবাসি, প্রেম তুমি তোমাকে, ভালবাসার তিন রং, ফিরে এসো হৃদয়ে আমার, ধন্যবাদ, হে ভালবাসা, শ্রাবণে তোমাকে চাই। গল্পগ্রন্থ-প্রেম ও স্বপ্নের পাখিরা।
আব্দুল্লাহ ইকবালের একটি কাব্যগ্রন্থ-গোল গোল রাত। সম্পাদনা করেছেন- মাইলস্টোন, অতিক্রম, নোয়াজার্ক। মাহমুদ হোসেন পিন্টুর কাব্যগ্রন্থ-কেউ নেয় না গোলাপ, এসো একাকীত্বের অরণ্যে। উপন্যাস-কষ্ট বিলা। সম্প্রতি একটি প্রবন্ধের বই বেরিয়েছে।

আজিজার রহমান তাজ আশির দশকে বগুড়ার সাহিত্য জগতে যার সরব পদচারণা। লেখালেখির বিষয় ‘আশয় গদ্য, কবিতা, ছড়া। এসব মিলিয়ে তার প্রকাশনা গ্রন্থের সংখ্যা সাত। মল্লিাকা সাহিত্য পত্রিকা ২১ বছর ধরে প্রকাশনা অব্যাহত রেখেছেন। মল্লিকা’র প্রকাশনা সংখ্যা ৩৬টি। ছড়ায় তার হাত খোলে চমৎকার। ‘জননেত্রীর প্রতিকৃতি’ ও ‘আমাদের হুমায়ুন আহমেদ’ নাম দু’টি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। তাঁর কবিতার বই-ইস্যু সংকট, কবিতা কার্ডঃ ‘ভালোবাসা সোনার হরিণ’, ‘ভালোবাসা বুকের বকুল’। তাঁর কাব্যগ্রন্থ অরণ্যের ভেতরে পা, বিষাক্ত ফুলের মধু, জননী আমার অহঙ্কার। গল্প গ্রন্থঃ ঐকতান, গল্পমঞ্জরী।

অকালপ্রয়াত খন্দকার আমিনুল করিম দুলাল। বগুড়া কারূপল্লীর প্রতিষ্ঠাতা। মূলত কারুশিল্পী ও শিল্পকর্মের ফাঁকে ফাঁকে লিখতেন ছড়া, নাটক, কবিতা। অতৃপ্ত অন্ধকার, অথচ চলছে, স্বয়ং ভূত, তাঁর রচিত মঞ্চসফল নাটক। বগুড়াসহ বাংলাদেশের অনেক লেখকের প্রচ্ছদ তিনি করেছেন। শিল্পকর্মের জন্য তিনি ভারতের অশোকা ফেলোশিপ লাভ করেন। খাদিজা এলমিস। তাঁর একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে-এই ফুলবন, অন্য জনম। খন্দকার বজলুর রহিম কবিতা, গল্প, উপন্যাস রচনায় সিদ্ধহসত্ম। শিশু সাহিত্যে তাঁর বেশ দখল আছে। কাব্যগ্রন্থ-হৃদয়ের কাছাকছি, আজো ভালবাসি গল্পগ্রন্থ, প্রিয় বান্ধবী। উপন্যাস-হৃদয়ের স্পন্দন, ইডিয়েট, ইয়েস ম্যাডাম, একটু ছুঁয়ে দেখি। ছোটদের বই-কুমারীরের রাজা, ভূতের বাড়ি।

সুকামার দাস সাহিত্য নিবেদিত প্রাণ মানুষ। শয়নে-স্বপনে-জাগরণে লেখা তার লেখা। আশির দশকে তার লেখা নাটক মঞ্চস্থ হত শহরতলী ও শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে। তার দর্শক নন্দিত নাটক-‘আবার ফিরে গেলাম’ কে বড় চোর, জরিনার পেটে কার পোলা, কার কান্না, বিচারের বাণী ইত্যাদি মঞ্চ সফল নাটক। তার নাটক ‘আবার ফিরে গেলাম, ৩৬ বার মঞ্চস্থ হয়। তার সম্পাদিত পত্রিকা ‘রক্তিম সূর্য’ ১১ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। তার কবিতা গ্রন্থ ‘বুভুক্ষ মানুষের মিছিল’ প্রকাশের অপেক্ষায়। এ ছাড়াও জনকন্ঠ ও ভোরের কাজগে তার সাম্প্রতিক রাজনীতি ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আলোকে লেখা প্রায়শঃ প্রকাশিত হয়ে থাকে। তিনি প্রতিবাদী কবিতা লেখায় সিদ্ধহসত্ম।
গাজী সারোয়ার কবিতা, গল্প রচনা করেন। ‘বৈশাখী মেলা’ নামে একটি কাব্য সংকলন সম্পাদন করেছেন। তিনি বগুড়া লেখক সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। ‘লেখক’ নামে পত্রিকা তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হচ্ছে। আব্দুস সামাদ মূলত ঔপন্যাসিক। তাঁন তিনটি উপন্যাস-মেঘে ঢাকা শশী, মেঘে ঢাকা রবি এবং প্রকাশকের মৃত্যু। তাঁর ইংরেজিতে একটি কাব্যপুসিত্মকা প্রকাশ পেয়েছে-‘টু পোয়েমস টু বিল ক্লিনটন’। হাবীবুল্লাহ জয়েল-এর কাব্যগ্রন্থ-এঞ্জেলিক ভয়েস, মহাপ্রলয়, ফতোয়া, রক্তাক্ত ইতিহাস বগুড়ার নওয়াব বাড়ির ইতিহাস, হযরত শাহ ফতেহ আলী (রঃ), জিয়াউর রহমানঃ জীবন থেকে নেওয়া। ফেরদৌসুর রহমান রিটার একটি মাত্র কবিতাগ্রন্থ-‘লাল চিঠি’। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর আকস্মিক তিরোধান কাব্যাঙ্গনের জন্য সত্যিই শোকাবহ ঘটনা। আব্দুর রশীদ। তাঁর তিনটি কাব্যগ্রন্থ-রূপসী প্রামত্মর, আকাশ গ্রামের পাখি, বর্ষার দেহে কাব্যের আগুন। তিনি পুন্ড্রতোয়া’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। তৌফিক হাসান ময়না মূলত সংগঠক ও নাট্যকার। তিনি বগুড়া থিয়েটারের প্রধান সংগঠক। অভিনেতা, নাট্যকার ও নাট্য নির্দেশক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। তার নাটক-যে গল্পের শেষ নেই, যুদ্ধ স্বাধীনতা, সোনাভানের পালা, হল্লাবোল, স্বাধীনতা কাঁদে আজো। তাঁর রচিত নাটক টেলিভিশন ও বেতারে প্রচারিত হয়েছে। আশির দশকে অন্যান্যরা এখনও বই প্রকাশ করেননি। তাঁরা লিখছেন, কেউ কেউ লেখার জগৎ থেকে দূরে সরে গেছেন। এসময় শেরপুর সাহিত্য চক্রের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু লেখকের উত্থান ঘটে। এদের মধ্যে আজিজুল হক, সুব্রত ঠাকুর, দীপংকর চক্রবর্তী, কাজল দত্ত, সদানন্দ লাহিড়ী, আব্দুর রউফ, গৌতম সরকার প্রমুখ।

বগুড়ার সাহিত্যঃ নববই ও শূন্য দশকঃ নব যাত্রাপথ
নববই-দশক এই দশকেই সাহিত্য পথযাত্রায় এক নতুন চেতনা আমাদের বুদ্ধিবিভায় তুলেছে ঝড়ো হাওয়ার মাতম। যে প্রক্রিয়ায় আধুনিক সাহিত্যতত্ত্ব পূর্ণ জঙ্গমতা নিয়ে অগ্রসর ছিল, সেখানে বিংশ শতাব্দীর শেষ লগ্নে এই নতুন সাহিত্যতত্ত্ব এযাবতকালের ধ্যান-ধারণায় অভিঘাত সৃষ্টি করলো, যার সূচনা ষাট-সত্তর দশকে। এই নতুন সাহিত্যতত্ত্বে অভিমুখীন যাত্রায় ভাষাতত্ত্ব, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, মনোসমীক্ষা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব, নারীবাদী তত্ত্ব, শৈলীবিজ্ঞান একাকার হতে চায়-এসবেরই একটি উল্লেখযোগ্য নামকরণ ‘উত্তর আধুনিকতা’ যা বলা বার্থের সাহিত্য সমালোচনা, আলথুসারের মার্কসের রচনাপাঠ, লেভি স্ট্রুসের নৃতত্ত্ব, মিখাইল বাখতিনের উপন্যাসতত্ত্ব, জাঁক দেরিদার বিনির্মাণের শীর্ষচূড়ায় আরোহণ করেছে। এসবেরই ধারাবাহিকতা রাজধানী ঢাকাসহ সব জেলাতেই উত্তর আধুনিকতার তথ্য তালাশ চলছে কবিতায়, গল্পে, উপন্যাসে, নাটকে। বগুড়াতে বেশ কিছু লেখা উত্তর আধুনিকতার তত্ত্বে পুষ্ট হয়ে সে-ধারণা থেকে লিখছেন, কেউ কেউ প্রথাগত সাহিত্যে আশ্রয় নিয়েছেন। নববই দশকের কম্পমান তরুণ লেখকদের মধ্যে শামীম কবীর, আপলু, জামরুজ্জামান মাসুম, মামুন রশীদ, অমিত রেজা চৌধুরী, আবু রায়হান চঞ্চল, লিটন সাহা, টটুল রহমান, নীলুফার নাসির নীলা, শাহন-ই-জেসমিন ডরোথী, মতলেবুর রহমান, সায়রা হেলাল, এস, এম, শাজাহান, মহল আরা, হিমেল সরকার, সাইফুল ইসলাম, সিরাজুল হক মন্টু, মোহসিম বিল্লাহ সবুজ, সেলিম রেজা সেন্টু, স্বাতী রহমান, মুমিনুর স্বপন, অরবিন্দ দাস, নূরুন্নবী খান জুয়েল, সাহাব উদ্দিন হিজল, কামরুল নাহার, রায়হান রানা, কাজল আহমদে খৈয়াম কাদের, সাজ্জাদ বিপ্লব, রহমান তাওহীদ প্রমুখ। এদের মধ্যে অনেকেই কমবেশি লেখার জগতে বিচরণ করছেন। খৈয়াম কাদেরের কাব্যগ্রন্থ ‘পারদ বিশ্বাস’ প্রবন্ধ, কবিতার এষন-ভূষন। তার সম্পাদিত পেশায় ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক।
তরুণ কবি শামী কবীর নীরিক্ষামূলক কবিতা রচনায় পারদর্শী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে ‘শামীম কবীর কবিতা সমগ্র’। আপলু লিখেছেন একজন, তবুও তুমি আমার, সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে, ও একটি যৌথ কবিতার বই’ সেই তুমি এবং একটি কবিতার কার্ড ‘তোমাকে স্পর্শ করবো বলে। কামরুজ্জামান মাসুমের যুগল সংলাপ, নীলুফার নাসির নীলার গল্পগ্রন্থ-আপন বলয়, মহল আরার উপন্যাস-সুখের সন্ধানে, স্বাতী রহমানের গ্রন্থ-বিউগিল বনভূমি, গল্পমঞ্জুরী এ সময়ের উল্লেখযোগ্য রচনা। অন্যরা এখনো লিখে যাচ্ছেন, সম্ভাবনাময় প্রতিশ্রুতিশীল লেখকগণ আগামী দিনে বগুড়ার সাহিত্যাঙ্গনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন এ আশাবাদ ব্যক্ত করা যায়। নববই দশক সম্পর্কে এখনই চরম মমত্মব্য করা উচিত নয় বলে মনে করি। তবে সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র ক্ষেত্র তৈরিতে তারা সচেষ্ট আছেন। তিরিশের পরে ষাটে যেমন ছিল চমকে দেবার প্রবণতা, সাহিত্যের পরীক্ষা নিরীক্ষায় এগিয়ে যাওয়ার উদ্দাম আকাঙ্ক্ষা, অনুরূপ সত্তর আশি পেরিয়ে নববই-শূন্য দশক আমাদের সাহিত্যের বিলোড়নের দশক বলে চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

শতাব্দীর প্রথম দশক হিসেবে ইতোমধ্যেই পেরিয়ে গেছে সাতটি বছর। বগুড়ার তরুণরাও তাদের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছে। এসময়ে যারা উজ্জ্বল পদাচারণায় মুখর কুরে তুলেছেন সাহিত্যের অঙ্গন তাঁরা হলেন-অনমত্ম সুজন, এমরান কবির, মাহমুদ শাওন, ইসলাম রফিক, তালাশ তালুকদার, সরফরাজ স্বয়ম, প্রামিত্মক অরণ্য, কামরুন নাহার-এর প্রকাশিত গ্রন্থ ‘খোলা আকাশ (২০০৩), জল রঙের স্বপ্ন (২০০৩) দুটি উপন্যাস। আরো লিখছেন হান্নান সৈকত, শাহাজ শাহী, অজমত্মা শ্রাবণী, রুবী রুমানা, ইশান সামী, বিধান সাহা, আমিনুর রহমান আকাশ, সৌম্য সজীব অনিন্দ আউয়াল, ফাল্গুনী রহমান সেলিনা শিউলি, মিতানূর, তাসলিমা পারভীন বিউটি, সাকিল আহাম্মেদ ফৌজিয়া। মুহম্মদ আব্দুর রশিদ তাঁর তিনটি কাব্যগ্রন্থ ঝরাপাতার কান্না (২০০৫), নদীর ঘাট দেখেছি (২০০৬), স্বপ্নচারী (২০০৬)। সায়রা হেলাল-এর উপন্যাস-হৃদয় জুড়ে তুমি, কষ্টে ভেজা উপহার, অগ্নিক্ষরা বসমত্মঃ সাহাব উদ্দিন হিজল-এর উপন্যাস-মেঘ ভাঙ্গা রোদ, নয়না। গল্পগ্রন্থ-‘নতুন পথে’, ছোটদের গল্প-ইচ্ছে পুরণ। কাজী রাফি-কাব্যগ্রন্থ সুতীক্ষা’০৩, ঝিঁ ঝিঁ ডাকা এক রাতে’০৬, গল্পগ্রন্থঃ রূপডাঙ্গার সন্ধানে’০৭, উপন্যাসঃ নিসর্গে নিরুদ্ধ’০৭ প্রকাশিত।

শূন্য দশকের তরুণেরা পূর্ববর্তী দশকের অভিজ্ঞতা ও অর্জন ধারণ করে এবং বিশেষ প্রস্ত্ততি নিয়েই এসেছে। তাঁদের চেতনা ও রুচির প্রকাশ সে-কথাই বলে। এ দশকের তরুণেরা কবিতায়, গল্পে, প্রবন্ধে, গদ্যে, সম্পাদনায় অনেক বেশি পরিশীলিত। ইতোমধ্যেই বেরিয়েছে মাহমুদ শাওনের ছড়াগ্রন্থ ‘টাপুর টুপুর মেঘের দুপুর’। তিনি ‘সুতরাং’ নামের একটি লিটল ম্যাগাজিনও সম্পাদনা করেন। ইসলাম রফিকের কাব্যগ্রন্থ ‘বিজন দ্বীপে বিশ্বাসী বালি হাঁস। সে দোঅাঁশ নামে একটি ম্যাগানিজ সম্পাদনা করেন ‘মিতানূরের কাব্যগ্রন্থঃ পাথর হৃদয় (২০০৩), শ্রাবণের অশ্রু বিন্দু, নির্বাচিত কবিতা, দুঃখগুলো তো দূরেই ছিল, গল্পগ্রন্থঃ সুখ দুঃখ, পাথরের চোখে জল (২০০৫), প্রবন্ধ গ্রন্থঃ আকাশে অনেক মেঘ (২০০৪) ইত্যাদি। তাসলিমা পারভীন বিউটি’র কাব্যগ্রন্থঃ অন্য রকম প্রেম, (২০০৭), সাকিল আহাম্মেদের-একটু কাছে একটু দূরে (২০০৭), ফৌজিয়ার উপন্যাস-এক ফোঁটা ভালবাসার জন্য, পেলাম অবশেষে। আরো কিছু তরুণের গ্রন্থ বইমেলায় প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন এ দশকের তরুণেরা। তারা হলেন-অনমত্ম সুজন, এমরান কবির, মাহমুদ শাওন। অনমত্ম সুজনের সম্পাদনায় ‘সুবিল’ এবং এমরান কবিরের সম্পাদনায় বের হয় ‘থার্ডম্যাগ’ যা ভিন্নমাত্রিক ছোট কাগজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
বগুড়ার সঙ্গীত জগৎ:
১। বৈদ্যনাথ দত্ত ৫০ দশক
২। শিবেন কুন্ডু ’’
৩। শৈলেন পোদ্দার ২৭/৩ সত্মব্দ আলাউদ্দিন সরকার (৫০ দশক)
৪। তারাপদ ব্যানার্জী ’’
৫। অনিল বিশ্বাস ৬০ দশক
৬। রামগোপাল মহন্ত ’’
৭। এমদাদুল হক ’’
৮। মোস্তফা নুরউল মোহসিন ’’
৯। জাহানারা লাইজু ’’
১০। হোসনে আরা ’’
১১। আঞ্জুমান আরা বেগম ’’
১২। জিনাত রেহানা ’’
১৩। সাইফুল ইসলাম ’’
১৪। শামন্ত সেনগুপ্ত ’’
১৫। শামসুন্নাহার ’’
১৬। নিজামূল হক (নৃত্য) ’’
১৭। অর্জুন কুমার মোহমন্ত ’’ (বেহালা বাদক)
১৮। মমতাজ উদ্দিন ’’ (বাঁশী)
১৯। সারদাকিঙ্কা মজুমদার ’’ (তবলা)
২০। রফিকুল আলম দুলু ’’ (বাঁশী)
২১। আজমল হুদা মিঠু ’’
২২। কামরুল হুদা টুটু ’’
২৩। খন্দকার ফারুক আহমদ ’’
২৪। শওকত হায়াত খান ’’
২৫। অনুপ ভট্টাচার্য ’’
২৬। মৃণাল কান্তি সাহা ’’
২৭। ওস্তাদ খাজা গোলাম মইনুদ্দিন ৭০ দশক
২৮। সুইটি খান ’’
২৯। ছায়া কুন্ডু ’’
৩০। স্বপন কুন্ডু ’’
৩১। গুরুদাস পোদ্দার ’’
৩২। তৌফিকুল আলম টিপু ’’
৩৩। শেখ নুরুল আলম লাল ’’
৩৪। হেলাল উদ্দিন ’’
৩৫। মুস্তারি জাহান ’’
৩৬। নুরুল ইসলাম ৮০ দশক
৩৭। শাহানাজ পারভীন ’’
৩৮। এনামূল হক ’’
৩৯। স্বপন সিংহ ’’
৪০। আব্দুল আউয়াল ৯০ দশক
৪১। জিনিয়া জাফরিন লুইপা ’’

বগুড়ার শিল্পীবৃন্দ (চিত্রশিল্পী):
কাজী আব্দুর রউফ, আমিনুর রহমান, সুলতানুল ইসলাম, জাহিদ হোসেন, নিয়ামুল আরিফ, স.ম. বক্তিয়ার, মনিরুল ইসলাম নান্টু, হেলেনা খানম ইরানী, আমিনুল করিম দুলাল, মযহারুল করিম নীরু, এমদাদুল হক (ঘেরা বকুল), প্রভাত সরকার কাঞ্চু।

ছোট কাগজগুলো হচ্ছে-বিপ্রতীক, দ্রষ্টব্য, ঈক্ষণ, পদধ্বনি, স্বরক্ষেপ, অবেলা, অপরাহ্ন, প্রাচী, অধোরেখ, নতুন দিন, রক্তশব্দ, অকেস্ট্রা, অনড়, এ্যালবান, শব্দাবলী, অনুকাল, সারাক্ষণ, আত্মপ্রকাশ, যুগল জানালা, ঝুলন, চিত্রক, সোমবার, শতবর্ষী, রক্তারুণ, অমত্মরঙ্গ, বিতর্ক, চেতনা, সিস্ফনী এবং প্রেম, চোখ, চিরকুট, শাদাশার্ট, যন্ত্রণা, নানান, একতারা, সন্ধ্যাতারা, শরনী সূর্যতোরণ স্ফুলিঙ্গ, শাশ্বাত বাংলা, প্রেক্ষিত, দ্যুতি, তূণ, পথ, ভোর হলো দোর খোল, মল্লিকা, কবি, তুমি, রক্তিম, সূর্য, নিসর্গ, স্পর্ধা, তর্জন, সচেতন, সাধ, সুতরাং, অবয়ব, প্রতীতী, উদ্যান, পরমা, জলছাপ, দীঘি, লেখক, কাকতাড়ুয়া, অতিক্রম, নোয়াজার্ক, ডামি, এডিশন, প্রতিকাগজ, থার্ডম্যাগ, সুবিল, পরিধি, দ্বিবাচ্য, দেউড়ি, পুন্ড্র, পুন্ড্রতোয়া, বাতিঘর, খোলাদশক, ধনুক, দোঅাঁশ। এছাড়াও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিকগুলোর সাহিত্যপাতা সাহিত্যক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

AliDropship is the best solution for drop shipping

________________________________________

শেয়ার করতে পারেন।
ধন্যবাদ
www.compuartsdigital.com
________________________________________

ডিজিটাল কন্টেন্ট ফ্রী সংগ্রহ করতে চাইলে যোগাযোগ করুন- 01711 353 363

এ্যাডভান্সড আইসিটি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য টিপস / সমাধান সহ 418 পৃষ্ঠার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল- 1

এ্যাডভান্সড আইসিটি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য টিপস / সমাধান সহ 418 পৃষ্ঠার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল- 2


header-2আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েব সাইটটি পূর্ণাঙ্গরূপে তৈরি করতে
যোগাযোগ করতে পারেন উপরের ঠিকানায ক্লিক করে।


====================================================================
সকল সংবাদপত্রগুলির লিংক
====================================================================
প্রয়োজনীয়, জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু যোগাযোগ নম্বরের লিংক
====================================================================
শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য, পুরষরা উঁকি দিতে চেষ্টা করবেন না . . . ২
====================================================================
অভ্র বা বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইন্টারনেট জগতে অতি সহজে বাংলা লেখার উপায় . . .
====================================================================
যারা অভ্রতে লেখেন তারা ক্লিক করতে পারেন লিংকটিতে
====================================================================
একহাজার . . . একটি টিপস
====================================================================
ঘুরে আসুন ইন্টারনেটের অন্ধকার দুনিয়ার ডীপ ওয়েব, ডার্ক ওয়েব সাইটগুলো থেকে।
====================================================================
ইংরেজি বিষয় সহ জেনে নিন প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ১
====================================================================
ইংরেজি বিষয় সহ জেনে নিন প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ২
====================================================================
জেনে নিন ইংরেজি সহ প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ৩
====================================================================
জেনে নিন ইংরেজি সহ প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ৪
====================================================================