#বাংলা_সাহিত্য_মধ্যযুগ_পোস্ট_৫
#শ্রীকৃষ্ণকীর্তন_কাব্য_আদ্যোপান্ত

 শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য:
আমরা জানি, বাংলা সাহিত্যের প্রথম নিদর্শন- চর্যাপদ মূলত প্রাচীন বাংলা ভাষায় রচিত যা রচনা করেছিলেন ২৩/২৪ জন কবি।

🖌তাই খাঁটি বাংলা ভাষায় রচিত বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের আদি নিদর্শন- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য।

🖌 বাংলা সাহিত্যে একক লেখকের প্রথম সাহিত্যও- শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য।

 রচনা ও রচয়িতা:
🖌 শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচয়িতা- বড়ু চণ্ডীদাস। তার আসল নাম অনন্ত বড়ুয়া বা অনন্ত বড়াই।
🖌 উক্ত কাব্যে কবির নাম কোথাও চণ্ডীদাস আবার কোথাও (সাতবার) অনন্ত বড়ু চণ্ডীদাস উল্লেখ আছে। তিনি শাক্তদেবী বাঁসুলীর ভক্ত বা সেবক ছিলেন
🖌 কারও মতে, কবি বড়ু চণ্ডীদাসের জন্মস্থান বীরভূমের নান্নুর গ্রামে। কারণ অনেক প্রবাদ ও সহজিয়াতে উল্লেখ আছে সেখানেই রয়েছে বাঁসুলী দেবীর পীঠস্থান ও কবির জন্মস্থান।
আবার কারও মতে, কবির জন্মস্থান বাঁকুড়ার ছাতনা গ্রামে। কারণ সেখানে বাঁসুলী দেবীর মন্দির ও চণ্ডীদাসের জন্মস্থান বলে প্রবাদ আছে।

🖌 সম্পাদক বসন্তরঞ্জন রায়ের মতে- কবি বড়ু চণ্ডীদাসের জন্ম ১৩৮৬-১৪০০ খ্রি. কোন এক সময়।
🖌 ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র মতে, ১৩৭০-১৪৩৩ খ্রি. সময়ের মাঝে।

 রচনাকাল:
🖌 শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রাপ্ত পুঁথিটি কবির স্বহস্তে লেখা নয়। পরবর্তী এক বা একাধিক লিপিকারের লেখা। পুঁথিতে প্রাপ্ত চিরকুটটি ১০৮৯ বঙ্গাব্দের। সে হিসেবে অবশ্যই ১৬৮২ খ্রি. পুঁথিখানি বনবিষ্ণপুরের রাজগ্রন্থাগারে সংরক্ষিত ছিল। তাই পুঁথিটি অবশ্যই এর আগে লেখা।-

🖌 ড. রাখালদাসের মতে, “এই পুঁথিখানি ১৩৫৮ খ্রি. পূর্বে সম্ভবত চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে লিখিত।”

🖌 ড. সুকুমার সেনের মতে, ” কৃষ্ণকীর্তনের লিপিকাল অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে।”

🖌 তবে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র মতে, কাব্যটি রচিত হয় ১৩৪০-১৪৪০ খ্রি. সময়ের মাঝে।

 পুঁথি আবিষ্কারের ইতিহাস:
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি মূলত লেখা হয় চতুর্দশ শতকের শেষের দিকে। তার আগের দেড়শো বছর বাংলায় তুর্কি শাসন ছিল। তুর্কি শাসনামলে নতুন ক্ষমতার পালাবদল ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে বাংলা সাহিত্যের তেমন কোন নিদর্শন পাওয়া যায় না। তাই সে সময়টাকে আমরা বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ হিসেবে চিহ্নিত করি।

প্রসঙ্গত চতুর্দশ শতকের শেষের দিকে যখন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি রচিত তখন কেবল তুর্কি শাসনের অবসানে বাংলায় সুলতানী শাসন শুরু হয়। এ সময়টাতে বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে। কিন্তু সুলতানি শাসনের গোড়ার দিকে নতুন শাসকদের আবির্ভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয়।

যার ফলশ্রুতিতে অযত্ন-অবহেলায় বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের আদি নিদর্শন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটি হারিয়ে যায়।

🖌 ১৯০৯ সালে (১৩১৬ বঙ্গাব্দ) বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ পশ্চিম বঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কাকিল্যা গ্রামের ‘বৈষ্ণব মহান্ত শ্রীনিবাস আচার্যের দৌহিত্র বংশজাত- শ্রী দেবেন্দ্রনাথ মুখপাধ্যায়ের গোয়াল ঘর’ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের পুঁথিটি। আবিষ্কার করেন।
🖌 বি.দ্র: বসন্তরঞ্জন রায় ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও পুঁথিশালার অধ্যক্ষ।

 নামকরণ:
পুঁথিটি রচিত হওয়ার প্রায় পাঁচশত বছর পর খুঁজে পাওয়া যায়। তাই প্রথম দিকের ২ টি পাতা, শেষের পাতা ও ৪৫২ পৃষ্ঠার এ কাব্যের মাঝের ৪৫ পৃষ্ঠা ছেড়া ছিল। সাধারণ রীতিতে যে কোন পুঁথির প্রথম দিকে দেবতার প্রশংসা, কবির পরিচয় ও গ্রন্থনাম ও শেষের দিকে পুঁথির রচনাকাল ও লিপিকাল উল্লেখ থাকে। যেহেতু পুঁথিটির প্রথম ও শেষের দিকের পাতা ছেড়া ছিল তাই এ কাব্যের মূল নাম সম্পর্কে জানা যায় নি।

🖌 আবিষ্কারক ও সম্পাদক বসন্তরঞ্জন রায় এ ব্যাপারে বলেন, ” পুঁথিটির আদ্যন্তহীন খণ্ডিতাংশে কবির দেশকালাদির কথা দূরে থাকুক, পুঁথির নাম পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই।”
তাই তিনি কৃষ্ণলীলা সম্পর্কিত বিষয়বস্তু দেখে এর নাম দেন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’।

🖌 ড. বিমানবিহারী মজুমদার বলেন, “কীর্তন শব্দের একটি অর্থ কীর্তি, খ্যাতি ও যশ বিষয়ক স্তুতি গান।এ কাব্যের সার্বিক বৈশিষ্ট ও কৃষ্ণের চরিত্র বিশ্লেষণে করে বলা যায়, বসন্তরন্জন বাবুর আবিষ্কৃত পুঁথিটির নাম রাধাকৃষ্ণের ধামালী বলিলে অধিকতর সঙ্গত হয়।”

🖌 কাব্যের ১২ টি স্থানে ধামালী কথাটির প্রয়োগ আছে। তাই গবেষকদের মতে এ কাব্যের নামা ‘রাধাকৃষ্ণের ধামালী’ হতে পারে।

🖌 তবে পুঁথিতে প্রাপ্ত চিরকুট অনুসারে এ কাব্যের প্রকৃত নাম- শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ।

 প্রকাশ ও সংরক্ষণ:
🖌আবিষ্কারের ৭ বছর পর দীর্ঘ গবেষণা শেষে আবিষ্কারক বসন্তরঞ্জন রায় তার নিজের সম্পাদনায় পুঁথিটি কলকাতার ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামে প্রকাশ করেন- ১৯১৬ সালে।

🖌 বর্তমানে এটি সংরক্ষিত আছে- কলকাতার ২৪৩/১, আচার্য প্রফুল্ল রায় রোডস্থ ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের’ পুঁথিশালায়।

 শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মূল কাহিনি:
রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস এ কাব্যের মূল কাহিনি নিয়েছেন ভাগবত পুরাণের কাহিনি থেকে। কিন্তু কিছু পঙক্তি ও কাব্যবস্তু নিয়েছেন জয়দেবের গীতগোবিন্দ কাব্য থেকে। তবে গীতগোবিন্দ কাব্য তথা বৈষ্ণব পদাবলিতে রাধাকে জীবাত্মা ও কৃষ্ণকে পরমাত্মা কল্পনা করে ইশ্বরের সাথে জীবের মিলিত হবার ব্যাকুলতাকে আধ্যাত্মিক পরিমর্যাদায় এক শৈল্পিক গুণে গুণান্বিত করা হয়েছে। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে আধ্যাত্মিকতার পরিবর্তে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলী তথা মানবলীলাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ফলে এ কাব্যে স্পষ্টভাবে চিত্রাঙ্কিত হয়েছে দেহবাদী রগরগে প্রেমের কাহিনি। তাই পরবর্তীতে বৈষ্ণব দর্শনের নতুন ব্যাখ্যা দেয়ায় ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি তার জনপ্রিয়তা হারায়। ফলে এ কাব্যটি কেবল পুঁথির পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।

 প্রধান চরিত্র:
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের মূল চরিত্র তিনটি। যথা:
🖌 রাধা:
এ কাব্যের মূল চরিত্র হল রাধা। পৌরাণিক কাহিনিতে রাধা হল মানবত্মার প্রতীক যে পরমাত্মাকে নিজের করে পেতে ব্যাকুল। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে রাধা হল অপূর্ব সুন্দরী গোপবালিকা যার আয়েন ঘোষের (ন-পংসুক) সাথে বিয়ে হয়েছিল। তাকে দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল আয়েন ঘোষের পিসিমার উপর যে পরবর্তীতে রাধা-কৃষ্ণের সম্পর্ক স্খাপনে সহযোগিতা করে।

🖌 কৃষ্ণ:
পৌরাণিক কাহিনিতে কৃষ্ণ হল পরমাত্মা কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে সুদর্শন রাখাল যাকে বড়ু চণ্ডীদাস আপাদমস্তক কামুক চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছেন যার ঝোঁক কেবল রাঁধার দেহের উপর উপর।রাধার দেহভগের পর যে রাঁধার প্রতি আকর্ষণ হারায় এবং নিজেকে রাধা থেকে আলাদা করে নেয় যার করুণরসে শেষ হয় এ কাব্যের শেষ পরিণতি। তার বিশেষগুণ সে বংশীবাদক হিসেবে সিদ্ধহস্ত।
🖌 গোপাল হালদার বলেন, “শ্রীকৃষ্ণ যতই আপনার দেবত্বের বড়াই করুক সে ধূর্ত গ্রাম্য লম্পট ছাড়া আর কিছুই নয়।”

🖌 বড়ায়ি:
বড়ায়ি হল রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের দূতী বা অনুঘটক। বয়সের ভাঁড়ে শক্তি নেই বলে যে এঁকেবেঁকে হাটে। এমনকি সে চোখেও কম দেখে। সে জানত কৃষ্ণ হল দেবতা। তাই সে কৃষ্ণের প্রেমের প্রস্তাবস্বরূপ ফুল-তাম্বুলাদি রাঁধার নিকট পৌছে দিত। তিনিই রাধাকে কৃষ্ণের বাঁশি চুরির পরামর্শ দেন এবং রাধাকে কৃষ্ণের কাছে পৌছে দিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যে প্রথমে তাকে কুট্টিনী চরিত্রে উপস্থাপন করলেও পরে তা স্নেহ-মমতার অপার মানবিকতার প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে

 তথ্য বিশ্লেষণ:
🖌 এটি ১৩ খণ্ডে বিভক্ত: জন্ম, তাম্বুল, গান, নৌকা, ভার, ছত্র, বৃন্দাবন, কালিয়দমন, যমুনা, হর, বান, বংশীখণ্ড ও রাধাবিরহ।
🖌 সর্বশেষ তথা ১৩ তম খণ্ডে ‘খণ্ড’ শব্দটি উল্লেখ ছিলনা।
🖌 শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের খণ্ডিত পদসহ মোট পদসংখ্যা- ৪১৮ টি
🖌 পুঁথিতে সংস্কৃত শ্লোক আছে- ১৬১ টি
🖌 পুঁথির পাতার সংখ্যা- ২২৬ তার মানে পৃষ্ঠা আছে ৪৫২ টি। মাঝখানের ৪৫ পৃষ্ঠা পাওয়া যায় নি।
🖌 ৪১৮ টি পদের মধ্যে কবির ভণিতা আছে- ৪০৯ টি।

বাংলার হ্যান্ডনোটভিত্তিক ধারাবাহিক আলোচনা পেতে ‘অনুধাবন- বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য’- এর সঙ্গেই থাকুন। বাড়িতে থাকুন , নিরাপদ থাকুন।

ধন্যবাদান্তে
তারিফুল ইসলাম (তারিফ)
বিএসএস (সম্মান), এমএসএস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলা লেকচারার- অ্যাচিভমেন্ট ক্যারিয়ার কেয়ার
লেখক- অনুধাবন (বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য)

AliDropship is the best solution for drop shipping

________________________________________

শেয়ার করতে পারেন।
ধন্যবাদ
www.compuartsdigital.com
________________________________________

ডিজিটাল কন্টেন্ট ফ্রী সংগ্রহ করতে চাইলে যোগাযোগ করুন- 01711 353 363

এ্যাডভান্সড আইসিটি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য টিপস / সমাধান সহ 418 পৃষ্ঠার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল- 1

এ্যাডভান্সড আইসিটি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য টিপস / সমাধান সহ 418 পৃষ্ঠার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল- 2


header-2আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েব সাইটটি পূর্ণাঙ্গরূপে তৈরি করতে
যোগাযোগ করতে পারেন উপরের ঠিকানায ক্লিক করে।


====================================================================
সকল সংবাদপত্রগুলির লিংক
====================================================================
প্রয়োজনীয়, জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু যোগাযোগ নম্বরের লিংক
====================================================================
শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য, পুরষরা উঁকি দিতে চেষ্টা করবেন না . . . ২
====================================================================
অভ্র বা বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইন্টারনেট জগতে অতি সহজে বাংলা লেখার উপায় . . .
====================================================================
যারা অভ্রতে লেখেন তারা ক্লিক করতে পারেন লিংকটিতে
====================================================================
একহাজার . . . একটি টিপস
====================================================================
ঘুরে আসুন ইন্টারনেটের অন্ধকার দুনিয়ার ডীপ ওয়েব, ডার্ক ওয়েব সাইটগুলো থেকে।
====================================================================
ইংরেজি বিষয় সহ জেনে নিন প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ১
====================================================================
ইংরেজি বিষয় সহ জেনে নিন প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ২
====================================================================
জেনে নিন ইংরেজি সহ প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ৩
====================================================================
জেনে নিন ইংরেজি সহ প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ৪
====================================================================