#বাংলা_সাহিত্য_পোস্ট_০১
#বাংলা_সাহিত্য_ও_সাহিত্যের_ইতিহাস:
আমরা জানি ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি-৬৫০ খ্রি. কিন্তু ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়- ৯৫০ খ্রি.। এটাই স্বাভাবিক যে তাহলে বাংলা সাহিত্যের উৎপত্তিও হয় ৬৫০/৯৫০ খ্রি.।
পঠন ও পাঠনের সুবিধার্থে বাংলা সাহিত্যের এ দীর্ঘ সময়/কালকে ভাষাবিজ্ঞানী ও সাহিত্যিকগণ ৩ টি যুগে বিভক্ত করেছেন।
✅ প্রাচীন যুগ (ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, ৬৫০-১২০০ খ্রি. কিন্তু ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ৯৫০-১২০০খ্রি.)
✅ মধ্যযুগ (১২০১-১৮০০ খ্রি.)
✅ আধুনিক যুগ (১৮০১-বর্তমান)
এ ছাড়াও ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকগণ আরো দুটি যুগের কথা উল্লেখ করেছেন।
০১. অবক্ষয় যুগ/ যুগ সন্ধিক্ষণ (১৭৬০-১৮৬০)
✅ অবক্ষয় যুগ/ যুগ সন্ধিক্ষণ (১৭৬০-১৮৬০):
এটি মূলত শুরু হয় মধ্যযুগের শেষ ও শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্র রায় গুণাকরের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ১৭৬০ সাল। যুগ সন্ধিক্ষণ শব্দের শাব্দিক অর্থ- যুগ মিলনের সময়।
প্রসঙ্গত ১৮০১ থেকে আধুনিক যুগ শুরু হয়, তার মানে যুগ সন্ধিক্ষণের প্রথম ৪০ বছর মধ্যযুগের আর পরবর্তী ৬০ বছর হল আধুনিক যুগের। যেহেতু এই ১০০ বছর সময়ে, মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের মিলন বা সন্ধিকাল তাই এ সময়কে যুগ সন্ধিক্ষণ বলা হয়।
এ যুগকে সৈয়দ আলী আহসান “প্রায় শূন্যতার যুগ” বলেছেন।
যুগ সন্ধিক্ষণ বা অবক্ষয় যুগে তেমন কোন বিখ্যাত সাহিত্য রচিত হয় নি, কারণ-
✅ ১৭৫৭ সালের পলাশী যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে বাঙালী জাতির ভাগ্যে নেমে আসা বিপর্যয়ের প্রভাব।
✅ ১৭৬৫ সালে লর্ড ক্লাইভের দেওয়ানি লাভ ও দ্বৈত শাসনের কুফলে নেমে আসা ১৭৭০ সালের ছিয়াত্তোরের মন্বন্তরের প্রভাব।
✅ ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও সূর্যাস্ত আইনের ফলে রায়তে বা ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হওয়ার প্রভাব।
✅মনে রাখতে হবে, যুগ সন্ধিক্ষণের কবি- ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
✅ ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (১৮১২-১৮৫৯): চব্বিশ পরগনা জেলার কাঁচরাপাড়া গ্রামে জন্মে গ্রহন করেন।
✅ তার বিখ্যাত উক্তি:
ক. কতরূপ স্নেহ করি, দেশের কুকুর ধরি, বিদেশের ঠাকুর ফেলিয়া (কবিতা- স্বদেশ)
খ. নগরের লোক সব এই কয় মাস, তোমার কৃপায় করে মহাসুখে বাস (কবিতা: তাপসে মাছ)
গ. বল দেখি এ জগতে সাধু বলি কারে,
পরের যে ভালো করে, সাধু বলি তারে।
বল দেখি এ জগতে জ্ঞানী বলি কারে,
নিজ বোধ আছে যার, জ্ঞানী বলি তারে। (কবিতা- কে? )
বি.দ্র. আপনাকে বড় বলে বড় সেই নয়, লোকে যাকে বলে বড় সেই হয় (হরিশ্চন্দ্র মিত্রের কবিতা- বড় কে)।
✅ পত্রিকা: তার সম্পাদিত সাপ্তাহিক পত্রিকা- সংবাদ (সম্ভাদ) প্রভাকর প্রকাশিত হয় ১৮৩১ সালের ২৮ জানুয়ারি।এটি মাঝখানে বন্ধ হয়ে যাওয়ার বছর তিনের পর পুনরায় প্রকাশিত হয়-১৮৩৬ সালের ১৩ আগস্ট।
✅ পরবর্তীতে ১৮৩৯ সালের ১৪ জুন তার সম্পাদনায় পত্রিকাটি দৈনিক পত্রিকায় রুপান্তরিত হয়।
০২. অন্ধকার যুগ (১২০১-১৩৫০)
✅ অন্ধকার যুগ (১২০১-১৩৫০):
এটি মূলত তুর্কি শাসনামল। ১২০৪ সালে তুর্কি সেনানায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির আগমনে বাংলার সর্বশেষ হিন্দু রাজা লক্ষ্মণ সেনের পতন হয় এবং মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
নতুন শাসকদের শাসনের ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্ষমতার পালাবদলে দেশের অভ্যন্তরে সামাজিক বিশৃঙ্খলা বিরাজ করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সাহিত্য চর্চা বিঘ্নিত হয়।
✅ তাই ড. হুমায়ূন আজাদ “লাল নীল দীপাবলী” বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠার লিখেছেন, ১২০১ থেকে ১৩৫০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রচিত সাহিত্যকর্মের পরিচিত পাওয়া যায় না বলে এ সময়টাকে বলা হয় অন্ধকার যুগ। (৩৪ তম বিসিএস)
✅ তবে ড. ওয়াকিল আহমেদ তার “বাংলা সাহিত্যের পুরাবৃত্ত” গ্রন্থের ১০৫ পৃষ্ঠার লিখেছেন, এই সময়টা মোটেও সাংস্কৃতিক বন্ধ্যত্বের যুগ ছিল না। সীমিত আকারে লোকভাষায় সাহিত্য রচিত হয়েছে। লোকভাষার বাংলা সাহিত্যগুলো মুসলমান কিংবা হিন্দু ব্যক্তিরা কেউই গ্রহন করেনি তাই এ যুগের সাহিত্য পাওয়া যায় না।
তবে গদ্য-পদ্য মিশ্রিত অশুদ্ধ সংস্কৃত ভাষায় কিছু সাহিত্য পাওয়া যায়। যেমন:
✅ প্রাকৃত ভাষায় গীতিকবিতার সংকলন- প্রাকৃত পিঙ্গল
✅ ত্রয়োদশ শতকে লেখা, রামাই পণ্ডিতের চম্পুকাব্য- শূন্যপুরাণ। এটি মূলত বৌদ্ধদের শূন্যবাদ ও হিন্দুদের লৌকিকবাদের মিশ্রণে সৃষ্ট ধর্মপূজার শাস্ত্রগ্রন্থ। এতে বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণদের অত্যাচার, ব্রাহ্মণ শাসনের অবসানে সন্তোষ ও মুসলমানদের আগমনের স্বাগত জানানো হয়েছে।
বি.দ্র: এ কাব্যের বাংলা কবিতা- নিরন্জনের উষ্মা বা রুম্মা।
✅ গদ্য-পদ্য মিশ্রিত কাব্য- চম্পুকাব্য
✅ রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি হলায়ূধ মিশ্রের চম্পুকাব্য- সেক শুভদয়া (শেখদের গৌরবগাঁথা)। এতে স্থান পেয়েছে সুফি সাধকদের বিশেষভাবে জালালুদ্দীন তাবরীজীর অলৌকিক মাহাত্ম্য।
বি.দ্র: রাজা লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিল দুইজন- গীতগোবিন্দ গ্রন্থের রচয়িতা জয়দেব এবং অপরজন- হলায়ূধ মিশ্র।
✅ ডাক ও খনার বচন:
ডাক ও খনার বাংলা সাহিত্যের প্রথম দিকে রচিত ছড়া জাতীয় প্রাচীন লোকসাহিত্যের নমুনা। এগুলো মৌখিক সাহিত্য, এদের কোন লিখিত নিদর্শন বর্তমানে নেই। তাই কালের প্রেক্ষাপটে এর ভাষারও পরিবর্তন হয়ে ভাষার আধুনিক রূপের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এদের মধ্যে আবহাওয়া ও কৃষি সম্পর্কিত বহু উপদেশ ও নীতিকথার বিচিত্র রূপায়ন ঘটেছে।
🖌 ড. দীনেশচন্দ্র সেনের মতে, “এগুলো অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতকে রচিত।”
🖌 ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, “এগুলোকে বৌদ্ধ যুগের সাহিত্য বলে অনুমান করেছেন।”
🖌 ড. সুকুমার সেনের মতে, “নীতিবাক্য, বহুদর্শী উপদেশ, আবহাওয়া ও কৃষি সম্বন্ধে। অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয়ে ছড়া অবহটঠেও প্রচলিত ছিল, এগুলি বরাবর চলে আসছে কালোচিত ভাষার পরিবর্তন নিয়ে।”
🖌 আধুনিক পণ্ডিতগণের মতে সর্বজন গৃহিত মত হলো, “এগুলো মধ্যযুগ তথা অন্ধকার যুগের সাহিত্য কারণ কোথাও প্রাচীন যুগের সাহিত্যের সাথে এগুলোর আলোচনা বা মিল পাওয়া যায় না।”
✅ ডাকের বচন:
ডাক নামে কোন পণ্ডিত ছিল কি না তা জানা যায়ি। তবে প্রাচীনকালে এক শ্রেণীর বৌদ্ধতান্ত্রিকদের বলা হত ডাক।
🖌 ড. দীনেশচন্দ্র সেনের মতে, ” ডাক নামক জনৈক গোপ ডাকের বচন প্রণয়ন করিয়াছেন বলিয়া কথিত আছে।
ডাক ও খনার বচনে বিষয়গত ঐক্যমান থাকলেও ডাকের বচনে জ্যোতিষ ও ক্ষেত্রতত্বের কথা ও মানব চরিত্রর ব্যাখ্যা প্রাধান্য পেয়েছে।
🖌 ডাকের বচন:
নিয়ড় পোখরী দূরে যায়।
পথিক দেখিয়া আওড়ে চায়।।
পর সম্ভাসে বাটে থিকে।
ডাকে বলে ও নারী ঘরে না টীকে।।
✅ খনার বচন:
কথিত আছে লঙ্কাদীপের অনিন্দ্যসুন্দর বিদুষী রাজকুমারী লীলাবতীর ডাকনাম ছিল খনা। খনা শব্দের অর্থ বোবা। তার শ্বশুর পণ্ডিত বরাহমিহির আদেশে স্বামী মিহির তার জিব কেটে দিয়েছিল বলে সে বোবা ছিল। জিব কাটার পূর্বে লীলাবতী, কৃষি ও আবহাওয়া সম্পর্কে যা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল তাই মূলত খনার বচন হিসেবে পরিচিত।
ডাক ও খনার বচনে বিষয়গত ঐক্যমান থাকলেও খনার বচনে কৃষি ও আবহাওয়ার কথা প্রাধান্য পেয়েছে।
🖌 খনার বচন:
দিনে রোদ রাতে জল।
তাতে বাডে ধানের বল।।
কাতিফের উনজলে।
খনা বলে দুন ফলে।।
প্রশ্ন: চম্পুকাব্য কোন যুগের সাহিত্য?
বি.দ্র: এ টপিকের উপর প্রশ্ন/পোস্ট করুন। ৩ দিন পর এ পোস্টের উপর ২০ মার্কের পরীক্ষা হবে। আশা করি প্রতিটি বিষয়ের আলোচনায় গতানুগতিক যে কোন বইয়ের তুলনায় অনেক বেশি গুছানো তথ্য পাবেন। আর বন্ধুদের invite করুন এবং অনুধাবনের সঙ্গেই থাকুন।
ধন্যবাদান্তে
তারিফুল ইসলাম (তারিফ)
লেখক- অনুধাবন (বাংলা ব্যাকরণ ও সাহিত্য)
শেয়ার করতে পারেন।
ধন্যবাদ
www.compuartsdigital.com
________________________________________
এ্যাডভান্সড আইসিটি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য টিপস / সমাধান সহ 418 পৃষ্ঠার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল- 1
এ্যাডভান্সড আইসিটি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য টিপস / সমাধান সহ 418 পৃষ্ঠার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল- 2
====================================================================
আপনার বয়স সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তর পেতে / সাহায্য পেতে ক্লিক করুন এখানে।
====================================================================
আপনার ব্লগ দেখতে ক্লিক করুন এখানে
এ্যাডভান্সড আইসিটি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য টিপস / সমাধান সহ 418 পৃষ্ঠার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল- 1
এ্যাডভান্সড আইসিটি প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য টিপস / সমাধান সহ 418 পৃষ্ঠার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল- 2
সকল সংবাদপত্রগুলির লিংক
====================================================================
প্রয়োজনীয়, জরুরি, গুরুত্বপূর্ণ কিছু যোগাযোগ নম্বরের লিংক
====================================================================
শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য, পুরষরা উঁকি দিতে চেষ্টা করবেন না . . . ২
====================================================================
অভ্র বা বিজয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইন্টারনেট জগতে অতি সহজে বাংলা লেখার উপায় . . .
====================================================================
যারা অভ্রতে লেখেন তারা ক্লিক করতে পারেন লিংকটিতে
====================================================================
একহাজার . . . একটি টিপস
====================================================================
ঘুরে আসুন ইন্টারনেটের অন্ধকার দুনিয়ার ডীপ ওয়েব, ডার্ক ওয়েব সাইটগুলো থেকে।
====================================================================
ইংরেজি বিষয় সহ জেনে নিন প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ১
====================================================================
ইংরেজি বিষয় সহ জেনে নিন প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ২
====================================================================
জেনে নিন ইংরেজি সহ প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ৩
====================================================================
জেনে নিন ইংরেজি সহ প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ৪
====================================================================
Leave A Comment