ভূমিকা
ডিজিটাল বাংলাদেশে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT) পদ্ধতির মাধ্যমে বেতন প্রদানের এই পরিকল্পনা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলেও বাস্তবায়নে নানা বাধা আর ত্রুটির কারণে শিক্ষক সমাজ আজ বিশাল অর্থনৈতিক সংকটে পতিত হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের অদক্ষতায় এপ্রিল মাসের বেতন পাননি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চার লাখের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী। অনেক শিক্ষকের দুই-চার মাসের বেতনও আটকে গেছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা সরকার থেকে শুধু মূল বেতন ও নামমাত্র ভাতা পান। সেটাও সময়মতো না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
আরোও পড়ুন
শিক্ষা জীবন ও বাস্তব জীবনের সম্পর্ক : নতুন প্রজন্মের জন্য আধুনিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
ইএফটি বেতন প্রদানে সমস্যা: মূল কারণসমূহ
১. তথ্য ভান্ডারে বিশৃঙ্খলা
শিক্ষক তথ্যভাণ্ডারে নাম, জন্মতারিখ, ইনডেক্স নম্বর সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুল থাকার কারণে সঠিক যাচাই হচ্ছে না।
২. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত জটিলতা
অনেক শিক্ষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তথ্য ভুল, অ্যাকাউন্ট বন্ধ, বা EFT-র জন্য অনুপযোগী হওয়ায় বেতন স্থানান্তর বাধাগ্রস্ত।
৩. প্রযুক্তিগত ত্রুটি
EFT সিস্টেমে সার্ভার লোড, সফটওয়্যার বাগ এবং ডেটা আপডেটে বিলম্বের কারণে বেতন পরিশোধ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
৪. মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি
শিক্ষকদের বেতন সমস্যার ওপর পর্যাপ্ত নজরদারি ও মনিটরিং না থাকায় সমস্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
শিক্ষক ও তাদের পরিবারে আর্থিক প্রভাব
বেতনবিহীন থাকায় প্রায় ৪ লক্ষ শিক্ষক ও তাদের পরিবার গভীর আর্থিক সংকটে পড়েছে। ঋণের বোঝা, বাড়ি ভাড়া, সন্তানদের পড়াশোনা চালানো, দৈনন্দিন খাবার-দাবার জোগানো সবই কঠিন হয়ে পড়েছে। তদুপরি, ঈদুল আযহার পীড়াতো আছেই !!!
সরকারের অবস্থান ও শিক্ষা প্রশাসনের ভূমিকা
সরকার ডিজিটালাইজেশন লক্ষ্যে EFT পদ্ধতি চালু করলেও যথাযথ প্রস্তুতি ও বাস্তবায়ন না করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক শিক্ষক অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
করণীয় ও সুপারিশ
-
বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন: শিক্ষক প্রতিনিধি, ব্যাংক ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি নিয়ে দ্রুত কাজ করার জন্য টিম গঠন করা।
-
সিস্টেম আপডেট ও উন্নয়ন: EFT সফটওয়্যার ও সার্ভার ক্যাপাসিটি বাড়ানো।
-
অন্তর্বর্তীকালীন ম্যানুয়াল বেতন প্রদানের ব্যবস্থা: তথ্য সমস্যার কারণে যাদের EFT হচ্ছে না তাদের ম্যানুয়ালি বেতন প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া।
-
তথ্য হালনাগাদ: শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সময়মতো তথ্য সংশোধন ও যাচাই করা।
-
দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি: দফতর ও কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে কঠোর মনিটরিং ও ব্যবস্থা গ্রহণ।
-
শিক্ষক বেতন ত্বরান্বিত করা: বেতন বন্ধ হওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষকদের বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করা।
উপসংহার
৪ লক্ষ শিক্ষক দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার অগ্রণী শক্তি। তাদের বেতন সমস্যা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক অবস্থা ও সরকারের শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতির স্বচ্ছ প্রতিবিম্ব। অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে দেশের শিক্ষা খাতের অগ্রগতি ঝুঁকির মুখে পড়বে। শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাদের মর্যাদা ও কর্মপ্রতিষ্ঠা রক্ষা করাই এখন সময়ের দাবি।
Leave A Comment