গণিত শেখার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীরা যে কুঅভ্যাসগুলো গড়ে তোলে, তা প্রকৃতপক্ষে তাদের শিক্ষার অগ্রগতিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এসব অভ্যাসের মধ্যে “শিক্ষক মহোদয়গন বুঝিয়ে দেয়ার সময় না বুঝলে লুকিয়ে যাওয়া, বাড়ির কাজ দিলে গাইডবই দেখে করা, পরীক্ষা নিলে অন্যেরটা দেখে করা” অন্যতম।
এই অভ্যাসগুলো শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ দক্ষতা, আত্মবিশ্বাস এবং মেধা বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এখানে এই অভ্যাসগুলোর ভয়াবহতা এবং এগুলোর পরিণতির পাশাপাশি উত্তরণের উপায় আলোচনা করা হলো।

১. শিক্ষকের কাছে না বুঝলে লুকিয়ে যাওয়া:
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা বিষয়টি না বুঝলেও শিক্ষকের কাছে তা প্রকাশ করে না। তারা মনে করে, শিক্ষকের সামনে নিজেদের অক্ষমতা প্রকাশ করা লজ্জাজনক বা অসম্মানজনক। কিন্তু এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। যদি ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশ্ন না করে, তাহলে তারা অজানা বিষয়গুলো বুঝতে পারবে না, এবং পরবর্তী সময়ে সেই বিষয়গুলো আরও জটিল হয়ে উঠবে।

ভয়াবহতা:
– গণিতের মৌলিক ধারণাগুলি পরিষ্কার না হওয়ায়, পরবর্তী শিখন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
– দীর্ঘ সময় ধরে ভুল ধারণা থেকে যায়, যা পরে সমস্যা সৃষ্টি করে।
– অজ্ঞতা অজানা থেকে গেলেও সমস্যা সহজেই মেটানো যায় না।

উত্তরণের উপায়:
– ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রশ্ন করার সাহস তৈরি করা উচিত। শিক্ষকদের উচিত তাদেরকে উৎসাহিত করা এবং মনে করিয়ে দেওয়া যে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা একটি সাহসিকতা এবং শেখার অংশ।
– “আমি বুঝিনি” বলাটা কোনো দোষের বিষয় নয়, বরং এটি শেখার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

২. গাইডবই দেখে বাড়ির কাজ করা:
এটি একটি সাধারণ অভ্যাস যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা বাড়ির কাজ বা হোমওয়ার্ক গাইডবই থেকে করে নেয়, অর্থাৎ তারা নিজের মেধা ব্যবহার না করে সরাসরি গাইডের উত্তর অনুকরণ করে। এতে করে তারা সমস্যা সমাধানের প্রকৃত দক্ষতা অর্জন করতে পারে না।

ভয়াবহতা:
– ছাত্র-ছাত্রীরা বাস্তবে গণিতের সমস্যাগুলি সমাধান করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
– পরীক্ষার সময় যখন গাইডবই ব্যবহার করা যাবে না, তখন তারা কোনো কাজের উত্তর বের করতে পারবে না।
– আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি হয়, কারণ তারা জানে না আসলেই তারা কতটা জানে।

উত্তরণের উপায়:
– ছাত্রদেরকে প্রকৃত সমস্যাগুলোর সমাধান করার প্রক্রিয়া শেখাতে হবে, যাতে তারা নিজেদের চিন্তা এবং দক্ষতা ব্যবহার করতে শেখে।
– গাইডবই এবং অন্যান্য সহায়ক বই ব্যবহার করার সময়, শিক্ষকের উচিত ছাত্রদেরকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নীতির মাধ্যমে শিখিয়ে দেওয়া, যাতে তারা সঠিকভাবে এসব সম্পদ ব্যবহার করতে পারে।

৩. পরীক্ষায় অন্যের উত্তর দেখে করা:
এটি একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর অভ্যাস, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজের অক্ষমতা ঢাকার জন্য পরীক্ষায় অন্যের উত্তর দেখে। এই অভ্যাসে ছাত্র-ছাত্রীরা হয়তো কিছুটা সময়ের জন্য সফল হতে পারে, কিন্তু এটি তাদের দীর্ঘমেয়াদী উন্নতি এবং আত্মবিশ্বাসের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ভয়াবহতা:
– একে তো এটি নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যায়, অন্যদিকে এটি শিক্ষার্থীর সঠিক মূল্যায়ন এবং নিজস্ব দক্ষতার বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
– পরীক্ষায় এক্ষেত্রে ভালো ফল পাওয়া গেলেও ভবিষ্যতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, কারণ তারা কখনো নিজের দক্ষতা অর্জন করেনি।

উত্তরণের উপায়:
– সঠিক মূল্যায়ন পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত, যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায় এবং তাদের ত্রুটিগুলো শনাক্ত করা যায়।
– শিক্ষকদের উচিত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে ইতিবাচক ফিডব্যাক প্রদান করা, যাতে ছাত্ররা তাদের ভুল থেকে শিখতে পারে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারে।

উপসংহার:
গণিত শেখার ক্ষেত্রে এই অভ্যাসগুলো একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো শুধুমাত্র ছাত্রদের শেখার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে না, বরং তাদের ভবিষ্যৎ সাফল্যকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব। শিক্ষকদের উচিত এসব অভ্যাস শনাক্ত করে সংশোধন করতে সাহায্য করা, এবং ছাত্রদের মাঝে সঠিক শিক্ষার চর্চা এবং প্রশ্ন করার মনোভাব তৈরি করা। শিক্ষার্থীরা যদি নিজের মেধা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে চলে, তবে তাদের গণিতের প্রতি ভালোবাসা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, যা তাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান হবে।