প্রশিক্ষণ ক্লাসের দ্বিতীয় হপ্তা পূর্ণ হলো কাল। আমাদের ব্যাচে আমরা মোট ৪৩৪ জন প্রশিক্ষণার্থী। চারটি গ্রুপ। তিস্তা, ঘাগট, টাঙ্গন, মহানন্দা। উত্তরাঞ্চলের চারটি নদীর নামে নামকরণ। আমি মহানন্দা গ্রুপে। এই গ্রুপেই আমরা সবচে’ বেশি। ১৩৪ জন।

081203-N-2147L-390
NORFOLK, Va. (Dec. 3, 2008) Sailors on the watch-floor of the Navy Cyber Defense Operations Command monitor, analyze, detect and defensively respond to unauthorized activity within U.S. Navy information systems and computer networks. (U.S. Navy photo by Mass Communications Specialist 1st Class Corey Lewis/Released)

আমাদের পঠিতব্য একটা বিষয়ের নাম আইসিটি (ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি)। বিষয়টা সকল গ্রুপের জন্যই নৈর্বাচনিক। মনে হয় একটু জটিল। কম্পিউটার বিষয়ক তো, তাই হয়তো। তাই অতি উৎসাহী হলেও জটিল বলে কেউ নিতে চায়না। বেশীর ভাগ প্রশিক্ষণার্থীই নিয়েছেন অপেক্ষাকৃত সহজ বিষয়টা- কৃষি শিক্ষা। এই নেননি নিবেননা করে করেই এই বিষয়ে আমরা মোট ৯৮ জন হয়ে গেছি।

চতুর্থ নম্বর ক্লাস। স্যার এসে প্রশিক্ষণার্থী বেশি বলে কয়েকটা গ্রুপে ভাগ করতে চাইলেন। কারন ল্যাবঃ -এ কম্পিউটার সংখ্যা মাত্র ১২।
কীভাবে, কী করবেন ? কীভাবে করবেন ? হঠাৎ সবার উদ্দেশ্যে-
আপনাদের মধ্যে কম্পিউটার বিষয়ের শিক্ষক কে কে ?
প্রায় সবাই।
মোটামুটি কম্পিউটার চালাতে (অন-অফ করতে) জানেন কে কে ?
উত্তোলিত হাত দেখে- বেশীর ভাগই।
মোটামুটি একটু ভালো পারেন কে কে ?
গুনে গুনে- ৬ জন।
এটার (একটা কম্পিউটার হাত দিয়ে দেখিয়ে) সব পার্টস খুলে আবার লাগাতে পারবেন কে কে ?
খুউউউব কষ্টে-সৃষ্টে- ২ জন।
এবার (স্যার হাসতে হাসতে) বলেনতো কোন কম্পিউটার কোনদিন হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখেননি এমন কে কে আছেন ?
সর্বনাশ !

বাংলাদেশের প্রায় ৭/৮ টি জেলার বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের প্রায় প্রত্যেকটি থানার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক এই গ্র“পে। কেউ সরকারি কেউ বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। ৪/৫ জন আছেন যারা শিক্ষক নন। তাদের কেউ ডিগ্রী, অনার্স, মাস্টার্স পাস করেছেন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। এখানে এমন শিক্ষকও আছেন যার চাকুরী আছে আর মাত্র ৬ বছর।

সরকারি/বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮-২১ বছরের শিক্ষকতার জীবনেও কোন দিন একটা কম্পিউটার ছুঁয়ে দেখেননি ৯৮ জনের মধ্যে এমন শিক্ষক আমরা-
মাআআআত্র ১৬ জন।

আমার বিশ্বাষ- খোঁজ নিলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের এরকম ১৪ টি ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণার্থীদের চিত্রটা সম্ভবতঃ এরকম প্রায় কাছাকাছিই।

এই আমরাই স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কারিগর- মানুষ গড়ার কারিগর। যারা সীমিত কয়েক দিনের হাতে গুনা কয়েকটি থিওরী লেকচার শুনে একেক জন হয়ে উঠব বিশাল বিশাল আইটি বিশেষজ্ঞ। যারা এই ক’দিনে কম্পিউটারটা ছুঁয়ে দেখব হাতে গুনা কয়েকবার, কয়েক ঘন্টা মাত্র।

সার্থক হউক আমাদের স্বপ্নের যাত্রা।

___________
প্রথম লিখেছিলামঃ
৩১ শে জুলাই
২০০৯ বিকাল ৫:১৭
এখানে-
http://bit.ly/2F9ca4Z