ভোর রাত ৫ টা। আমার জন্য রাত। কারণ আমি (ভোর) ৯ টার আগে বিছানা ত্যাগ করতে পারিনা, প্রয়োজনও পড়েনা। মোচড় দিয়ে ঘুম থেকে উঠেই খাতা আর ড্রয়িং বোর্ডটা হাতে নিয়েই দিলাম দৌঁড় স্ট্যান্ডের দিকে। হাত-মুখ না ধুয়েই। একটা সিএনজি অটোরিক্সা পেতে হবে। সময় মতো না পেলে বাসটা মিস করবো। যেতে হবে অনেক দূর।

কুঁয়াশার অন্ধকারে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা। স্ট্যান্ডের কাছে এসে দেখলাম একখান অটো দাঁড়িয়ে আছে। মনে হলো খালী। অদূর থেকেই হাঁক ছাড়লাম-
এই সিএনজি যাবা নাকী ? আমাকে নিয়ে যাও।
ডাকতে ডাকতে কাছে এসে উঁকি দিয়ে দেখি ড্রাইভার ভিতরে নাই। পেছনের সীটে শীতের ঠান্ডায় জড়ো হয়ে বসে আছেন একজন। কলেজ/ইউনিভারসিটি পড়ুয়া হবে হয়তো। একটি মেয়ে শীতে জবু-থবু হয়ে বসে আছে।
জিজ্ঞেস করলাম-
ড্রাইভার কোথায় ?
মেয়েটি জবাব দিলেন-
এটা যাবেনা। আমি এটা রিজার্ভ নিয়েছি। এটায় নে’য়া যাবেনা।
তাহলে তো ভালই হলো। পরিচয় দিয়ে বললাম-
আপা, আমার একটু জরুরী তাড়া আছে। আমাকে কী সামনের সীটে নে’য়া যাবে ? আমি নাহয় আপনার ভাড়ার অর্ধেকটাই দিয়ে দেব।
মেয়েটির উত্তর-
না। এটা রিজার্ভ যাবে।
বললাম-
ওওও আচ্ছা।

mexican-ambassador

ছবিঃ ইন্টারনেট

ভগ্ন মনোরথে সামনের দিকে দ্রুত এগুতে লাগলাম। রাস্তার ওপাশে কে একজন দোকান থেকে কী যেন কিনছেন। মনে হলো এই লোকটাই ঐ সিএনজি অটোরিক্সার ড্রাইভার। ভাবলাম উনাকে গিয়ে অনুরোধ করি। পরক্ষণেই মেয়েটির কথা মনে আসতেই আর সাহস হলোনা। একটা সিগারেট ধরাতে প্রচণ্ড ইচ্ছে করছে, তবুও গেলাম না ড্রাইভারটার সামনে।
দ্রুত সামনে এগুচ্ছি। জমে যাওয়া ঠান্ডার মধ্যেও ঘেমে যাচ্ছি, তাড়াতাড়ী যাওয়ার উত্তেজনা আর দ্রুত হাঁটার কারণে। মনে হচ্ছে দৌঁড়েই যাই বাস স্ট্যান্ডে। কিন্তু তা আর সম্ভব না। রাস্তায় অবশ্য বৃদ্ধ চাচা এক রিকসাওয়ালা আছেন। তার দিকে মন টানছেনা। অনেক সময় লাগবে তার যেতে।

দাঁড়িয়ে থাকারচে’ চাচার রিক্সায় উঠে বসলাম। ভাড়াও দ্বিগুণ। চাচার পিছনে বসে চললাম।
দু’/এক মিনিট পরই খেয়াল করলাম। আমাদের রিকশা ক্রস করে একটি সিএনজি অটো শাঁ-শাঁ করে চলে গেল। চেয়ে চেয়ে দেখলাম আর ভাবলাম … … …।

১৫/১৬ মিনিটের রাস্তা আসার পর বানারের পাড় ব্রীজ থেকে নামতেই দেখি একটা সিএনজি অটো দাঁড়িয়ে আছে। ভাবলাম এবার এটা দিয়েই যাওয়া যাবে। রিক্সা সিএনজি’র কাছে আসতেই আমি অবাক ! ওমা একি !
স্ট্যান্ডের ঐ মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে সিএনজি ঘেঁষে। লজ্জায় হয়তো বলতে পারছিলোনা সিএনজি পাশ কাটাতেই ডাক দিলো এইযে ভাইয়া আমাকে একটু নে’য়া যাবে ? আমি কোন কথা বললাম না। চাচা এবার রিক্সার গতি কমিয়ে আমাকে বলছেন-

নিবেন ?
বললাম-
চাচা আমি উনাকে চিনিনা। আপনি যানতো তাড়াতাড়ী !
চাচা বললেন-
উনাকে চিনেনা ? উনিতো আমাদের অমুকের মেয়ে … … …।

বললাম-
আচ্ছা। আপনি পারলে নেন।
( মনে মনে ভাবলাম এই সকাল বেলায় অমন সুন্দরীকে কোন বোকায় রিক্সায় নিতে না চাইবে ? )

মেয়েটি মাথা নিচু করে নিঃশব্দে আস্তে এসে রিক্সায় বসলো।
একটু পর নিরবতা ভেঙ্গে-
আপনি কোন পর্যন্ত যাবেন ? আমার আসলে খুব জরুরী যেতে হবে।
কিছু বললাম না চুপ করে আছি।
আবার কিছক্ষণ পর-
বললেন-

আপনি কি ছবি আঁকেন (সম্ভবতঃ আমার বোর্ড, স্কেচ খাতাটা দেখে অনুমান করে) ? আমার ছবি আঁকার খুব শখ হয়, কিন্তু পারিনা।
আমি চুপ করেই আছি, রাগে দুঃখে। ইচ্ছে করছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই। কারণ উনিই আমাকে সিএনজিতে নিতে চায়নি।
জানতে চাইলাম-
কী করেন আপনি ?
প্রশ্ন করার আগেই আবার শুরু করলেন-
ঢাকা মেডিকেলে পড়ি। আমার বাসা ঐটা (বর্ণনা দিয়ে)। আপনি কোথায় থাকেন ?
বুঝাই যাচ্ছে আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বকবক করছে।
বললাম-
আমি আপনাদের বাসার পাশের পাইলট স্কুলে আছি। থাকি হোস্টেলে। হোস্টেলের দায়িত্বে আছি।

ইতোমধ্যে রিকসা ভাঙ্গাচুড়া রাস্তায় এসে গেছে। ঝাঁকি লাগছে। রিকসা গর্তে পড়লে কিংবা গর্ত সাইড দিতে মোড় ঘুরালে অসর্তকতা বশতঃ নয়তো ইচ্ছাকৃতভাবেই মেয়েটি ঝুঁকে পড়ছে আমার দিকে। বুঝা যায় এটা তার কৃতজ্ঞতা কিংবা পূর্বের কৃতকর্মের লজ্জার প্রকাশ।
হঠাৎ নড়েচড়ে উঠলাম। হাতের আর্টবোর্ডটা নিয়ে ঢুকিয়ে দিলাম দু’জনের মাঝখান দিয়ে। আশ্চর্য্য হলেন !

চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করে উঠলেন !
এটা কী করলেন ? এটা এখানে রাখলেন কেন ?
বললাম-
আমিতো অচ্ছ্যুত ! আপনার সাথে যেন আমার গা না লাগে তাই এই ব্যবস্থা ! চুপ করে থাকুনতো। কোথায় নামবেন আপনি ?
মুচকী একটা হাসি দিলেন। লজ্জামাখা হাসি। লজ্জা পেলেন কিছুটা। বললেন-
আপনি খুব অহঙ্কারী- মুডি। এখনোও আমার উপর রেগে আছেন ?
বললাম-
না, আমি খুব্ব খুশী আপনার উপর, আর আপনার এলাকার মানুষদের উপরও। আপনার এলাকার মানুষদের যা ব্যবহারনা, মাশা আল্লাহ্।
এবার আরও বেশী লজ্জিত হলেন।
বাকী পথ- বাকী সময় আর একটা কথাও বললেন না। আমিও না।

এবার তাকে নামতে হবে। দু’জনের পথ দুইদিকে।
নামলেন। নেমে রিকসাওয়ালা চাচাকে জিজ্ঞেস করলেন-
চাচা, ভাড়া কতো ? চাচা উত্তর দিলেন।
রিকসা ভাড়া বের করতেই বললাম-
এখানে আর বড়লোকী ফলাতে হবেনা, আপনি যান।

যাবার সময় বলে গেলেন-
আমি আপনার স্কুলে আসব।

এবার চাচার বকবকানী শুরু হলো-
আফনে মানুষটা এমুন ক্যান ? কুনু রস কস নাই। আফনে খুব মেজাজী মানুষ তাইনা ? ইত্যাদি ইত্যাদি . . .

আমি মনে মনে কেবল হাসতে লাগলাম … … …।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:২৫

====================================================================
ইংরেজি বিষয় সহ জেনে নিন প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মজার কিছু তথ্য . . . ১
====================================================================
যারা অভ্রতে লেখেন তারা ক্লিক করতে পারেন লিংকটিতে
====================================================================


payoneerডোমেইন, হোস্টিং সহ ইন্টারনেট জগতের যাবতীয় বিল নিজে নিজে পরিশোধের জন্য
২৫ ডলার একদম ফ্রি সহ নিয়ে নিন Payoneer -এর ইন্টারন্যশনাল মাস্টারকার্ড।
কীভাবে পাবেন Payoneer -এর ইন্টারন্যশনাল মাস্টারকার্ড ?
দেখতে ক্লিক করুন এই লেখা কিংবা ছবির উপর।


unlimited-1আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েব সাইটটি পূর্ণাঙ্গরূপে তৈরি করতে
যোগাযোগ করতে পারেন উপরের ঠিকানায় ক্লিক করে।